ডুমুরের ফুল ৩৩.
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সাম দিয়ে ঢাকায় ফিরে আসলো জাদিদ। জগন্নাথ আর ঢাবির এডমিশন টেস্ট দিয়ে ফরিদপুরে ফিরে এসেছে। মিসেস জয়নাবের অসুস্থতা বেড়েছে। ডাক্তার দেখিয়েও তেমন একটা কাজ হচ্ছে না।
ঢাবির রেজাল্ট বের হবার পরে জাদিদের মন খারাপ হলো। প্রথম ১০০ জনের মধ্যে জাদিদের রোল নাম্বার থাকলেও হেমলতার সিরিয়াল ৩৫০০ এর পরে। চান্স হবার সম্ভাবনা ক্ষীণ। হেমলতার জগন্নাথেও সিরিয়াল অনেক পেছনে। হেমলতাকে এই নিয়েও অনেক কথা শুনতে হয়েছে জয়নাব বিবির কাছে। মনোজ রেজাল্টের পরে মেয়ের সাথে দেখা করতে আসেনি। শ্বাশুড়ির সাথে ধরা যায় এক প্রকার যুদ্ধ করেই কোচিং-এ ভর্তি করিয়েছিলেন। মেয়েকে অনেক বার বুঝিয়ে বলেছেন, যেকোনো ভাবেই হোক চান্স পাওয়া চাই। কিন্তু ফলাফল শূন্য।
ঢাবিতে ভর্তি কমপ্লিট করে বাসায় এসে জাদিদ অবাক হলো। তার বাবার তো এখন শিপে থাকার কথা। ছেলেকে দেখে ইমরান মোল্লা হেসে বললেন
– তোমার এডমিশন কমপ্লিট?
জাদিদ মাথা নাড়িয়ে হা জানাল।
ইমরান মোল্লা ছেলের চেহারা দেখে বুঝতে পেরেছেন তাকে এখানে দেখে রীতিমতো অবাক হয়েছে জাদিদ।
কিন্তু কীভাবে কী প্রশ্ন করবে সেটা বুঝতে পারছেনা। ইমরান মোল্লা নিজ থেকেই বললেন
– তুমি কি আমাকে কোনো প্রশ্ন করতে চাচ্ছো?
– তোমার তো এখন শিপে থাকার কথা কিন্তু ….
– একটা জরুরি কাজের জন্য এসেছি। তোমার ক্লাস কবে থেকে শুরু?
– এখনো জানায়নি।
– কবে নাগাত শুরু হবে?
– এক সপ্তাহ তো লাগবেই।
ইমরান মোল্লা খবরের কাগজ ভাজ করে রেখে বললেন
– তাহলে ফরিদপুরে চলো।
জাদিদ অবাক হয়ে বলল
– কিন্তু এখানে আমার কিছু কাজ আছে। সেগুলো শেষ না করে তো সম্ভব না।
– একদিনের ব্যপার বাবা।
বিকালে ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হলো জাদিদ আর ইমরান মোল্লা। জাদিদ বুঝতে পারছেনা কেনো এভাবে বাবা তাকে নিয়ে যাচ্ছে। দাদীর কিছু হয়েছে নাকি?
হেমলতার সাথে সকাল থেকে কথা হয়নি। রাজেন্দ্র কলেজে রসায়ন ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হয়েছে। এদিক থেকে তার সাথে হেমের মিল আছে। সেও রসায়ন ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হয়েছে। আজকে ওর ওরিয়েন্টেশন ক্লাস। তাই ফোন দেয়ার সুযোগ হয়নি হেমের।
বাসায় এসে জাদিদ হতভম্ব হয়ে গেছে। পুরো ফ্ল্যাট ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। বাসায় তিল পরিমাণ জায়গা নেই। কোনোমতে নিজের রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নিল। ঘড়ির কাটা ৯ টা ৫ মিনিটে এসে থমকে আছে। তার রুমটাতে মাকড়সার জাল থেকে শুরু করে সবরকমের ময়লার চিহ্ন আছে। সেও নাই তার ঘরের সবকিছুই শূন্যতায় ভরে গেছে। ঘড়িটা কতদিন যাবত নষ্ট কে জানে।
ডাইনিং টেবিলে খেতে বসার পরে জাদিদ আসল ঘটনা বুঝতে পারলো। তার বাবার বিয়ে আগামীকাল আর সেই উপলক্ষে তার দাদী গ্রামের, শহরের সব আত্মীয়কে বাসায় আনার চেষ্টা করেছেন। কিছুটা হলেও সফল হয়েছেন।
জাদিদ কোনোমতে খেয়ে তার রুমে গিয়ে চুপচাপ শুয়ে পড়লো।
জোহরের আজানের পরে বর যাত্রী রওনা হলো নগরকান্দার পথে। জাদিদ যন্ত্রের মতো সবার হুকুম পালন করে যাচ্ছে। বৃদ্ধা সবার সামনে জাদিদের সাথে মাখনের মতো ব্যবহার করছে। জাদিদ তার বাবার কবুল বলা দেখল, সবার সাথে মোনাজাত ধরলো। তার বাবার সাথে সক্কর খানা খেলো। সন্ধ্যায় নতুন মা’কে নিয়ে বাসায় ফিরে আসলো।
হেমলতাকে ফোন দিল। তিন বার রিং বাজার পরে ফোন রিসিভ করলো হেমলতা।
জাদিদ গম্ভীর স্বরে বলল
– হেম এখন কি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের দিকে আসতে পারবা?
সন্ধ্যার আজান দিছে ৫ মিনিট হলো। এখন বাসা থেকে এক পাও বের হবার উপায় নেই।
হেমলতা ভয়ে ভয়ে বলল
– জাদিদ, সন্ধ্যা হয়ে গেছে কীভাবে বের হবো?
জাদিদ অনুরোধের সুরে বলল
– প্লিজ হেম। আমার কিচ্ছু ভালো লাগছেনা। কেমন দমবন্ধ লাগছে, প্লিজ।
লাঈলী বানু রান্নাঘরে ব্যস্ত আর মিসেস জয়নাব অসময়ে ঘুমুচ্ছেন। এই সুযোগে হেমলতা নীরবে বের হয়ে আসলো।
রেল লাইন পার হয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের দিকে আসতেই জাদিদকে দেখতে পারলো হেম। জাদিদ রাস্তার ধারে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। হেম বিড়ালের মতো পা টিপে টিপে জাদিদের পাশে এসে দাড়ালো। জাদিদ হেমলতার উপস্থিতি বুঝতে পেরে হেমলতাকে জড়িয়ে ধরলো।
গতকাল রাত থেকে আটকে রাখা কান্নাটা এবার আর আটকে রাখতে পারলোনা জাদিদ। ফুপিয়ে ফুপিয়ে বাচ্চাদের মতো কাঁদতে শুরু করলো।
আচমকা এভাবে পাব্লিক প্লেসে জড়িয়ে ধরাতে হেমলতা অস্বস্তিতে পড়েছে। তার উপর জাদিদ বাচ্চাদের মতো কাঁদতে শুরু করেছে।
হেমলতা কী বলবে ভেবে পাচ্ছেনা।
৩ বছর পরে…..
মূল দরজার কাছে বিদ্যুৎ বিলের কাগজটা উঠিয়ে নিলো হেম। বিদ্যুৎ বিল এসেছে ১২৪৫ টাকা। এতো আসার তো কোনো কারণই নেই। গত মাসেও এরকম এসেছে। টিভিও চলেনা, ফ্যান চলে একটা আর ফ্রিজ আছে তাতে মাছ মাংস তো নাই বললেই চলে। তাহলে এতো বিল আসলো কীভাবে?
নানীর প্রেশারের ওষুধ টাও তিন দিন হয়েছে শেষ হয়েছে কিন্তু কেনার মতো টাকা হাতে নেই। নিচতলার ম্যাসের মেয়েরাও ভাড়াটা দিতে লেট করছে। ভাড়া চাইতেও হেমলতার লজ্জা লাগে। মেয়ে গুলা তার দিকে কৌতূহল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। খুব অসহ্য লাগে ওরকম দৃষ্টি।
শাম্মী জাদিদের নাম্বারে কল দিয়ে বিরক্ত হয়ে শাহীনকে বলল
– বুঝলাম না ওর হয়েছে টা কী?
শাহীন মোবাইলের স্ক্রিনে তাকিয়ে থেকেই বলল
– ক্লাস না থাকলে জাদিদকেও পাওয়া যায়না।
– কই যায় তুই কিছু জানিস?
– ওকে জিজ্ঞেস করেছি কয়েকবার। কোনো উত্তর দেয়না। আবালের মতো তাকায় থাকে।
রেহান পাশ থেকে বললো
– ছ্যাকা খাইয়া ব্যাকা হয়ে গেছে তাই এই অবস্থা। আমি বুঝিনা দোস্ত মাইয়া ওরে ছাইড়া গেছে আজ তিন বছর হয়ে গেলো। কিন্তু মজনুর তো প্রেম ফুড়ায় না।
শাম্মী ফোন লক করে বলল
– ওইরকম থার্ড ক্লাস মাইয়ার পাল্লায় ওরমতো ছেলে পড়লো কীভাবে সেটাই বুঝিনা। মাইয়ার চেহারা দেখলে শাহীন তুই অবাক হবি।
শাহীন হাসতে হাসতে বলল
– যার চোখে যারে লাগে ভালো, বুঝেছো মনু?
চলবে…….
” লেখিকা মারিয়া কবির এর সকল লেখা দ্রুত পেতে অবশ্যই এ্যাড হোন তার ফেসবুক পেইজ ‘Maria Kabir -মারিয়া কবির’(এখানে পেইজ লিংক) এর সাথে।
( যেখানে সীমান্ত তোমার আমার – উপন্যাসের প্রি-অর্ডার চলছে )
~ Maria Kabir