ডুমুরের ফুল ৩১.
মিম্মা বেশ রূঢ় স্বরেই বলল
– মানে কোনো কমনসেন্স নেই তোর? চাচী চলে যাওয়াতে মোবাইল এক আংকেলের কাছে রাখলাম আমরা। ভয় যদি এতোই পাচ্ছিলি তাহলে নিজের নাম্বারে তো ফোন দিতে পারতি অন্য কারো কাছ থেকে মোবাইল চেয়ে?
হেমলতা ভয়ে ভয়ে বলল
– আমার মাথায় এতোটা আসেনাই। ভয়ে হাত পা কাঁপছিল। আর অচেনা কারো কাছ থেকে মোবাইল চেয়ে ফোন দিতে চাইলেও তো পারবোনা।
– কেন পারবিনা?
– তারা তো আমাকে চিনে না তাহলে মোবাইল দিয়ে ফোন কেন দিতে দিবে?
মিম্মা এবার রেগে গিয়ে বলল
– এতো গাধা মানুষ হয় কীভাবে? তুই মানে….হেমলতা তোর….
হামজা ঠাট্টার সুরে বলল
– হইছে মিম্মা আর রাগ কইরো না। জাদিদ এখানে তোমার উপর রেগে যাচ্ছে।
জাদিদ ভ্রু কুঁচকে বলল
– হামজা আমি মোটেও মিম্মার উপর রেগে যাচ্ছিনা। হেমের উপর আমি খুব একটা রাগ খাটাতে পারিনা কিন্তু এই অবস্থায় ওকে রাগ করা দরকার। এতো হাবাগোবা হলে হয়, বল? আজকে যদি খারাপ কিছু হয়ে যেতো? আশেপাশে কম হচ্ছে রেপ?
হামজা বলল
– আরে এতো ডিপ ভাবছিস কেন?
হেমলতা কী বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। যাই বলতে যাবে তাতেই মিম্মার রাগ শুনতে হবে।
হামজা মজা করে বলল
– একদিকে ভালোই হয়েছে তোদের ভেতরে হাবুডুবু প্রেমলীলা চলছে সেটা তো জানতে পারলাম।
– আমি এমনিতেই বলতাম। ( জাদিদ )
– মামা তুমি কবে বলতা? বিয়ে করে কয়েক বাচ্চার বাপ হওয়ার পরে? ( হামজা )
– আসলে হেমলতার সাথে আমার রিলেশন জানার পরে অনেকে ঝামেলা করতে পারে বা বাজে কথা বলতে পারে। তাই আমি গোপন রেখেছি। ( জাদিদ )
– মানুষের কাজই তো বলা। সেটা সহ্য করা তো লাগবেই। ( হামজা )
– আমার সহ্য ক্ষমতা আছে কিন্তু হেম ঠিক আলাদা। ( জাদিদ )
হামজা জাদিদের চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো
– সিরিয়াস লেভেলের রিলেশনশিপ নাকি?
জাদিদ চশমাটা হাতে নিয়ে বললো
– কী মনে হয় তোর?
হেমলতা মিম্মাকে জিজ্ঞেস করল
– বাসায় যাবো কখন?
মিম্মা স্বর স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে বলল
– বাসায় যাবো রাতে এখন জাদিদের বাসায় যাচ্ছি আমরা।
হেম আৎকে উঠে বলল
– রাতে গেলে আমাকে মেরে ফেলবে নানী। আর জাদিদের বাসায় কী করতে যাবো?
– জাদিদ আর তোকে একরুমে দিয়ে দরজা লক করে দিবো। তারপর তোর মামাকে ফোন করে বলবো, মামা দেখে যান আপনার ভাগ্নী কী করছে!
– ফাজলামি না মিম্মা।
– জাদিদের বাসায় আমরা আজকে দুপুরে খাবো তারপর বিকালে একসাথে ঘোরাঘুরি করে যার যার বাসায় চলে যাবো।
– আমাকে আগে বলিসনি কেন?
– জাদিদ তোকে সারপ্রাইজ দিতে চাইছিল বাট তুমিই তো সারপ্রাইজ দিয়ে দিলা।
পাব্লিক প্লেসে একে অপরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরছিস। চেনাজানা কেউ দেখলে আজকে খবর ছিলো।
– হামজা তো দেখে ফেলছে।
– হামজা আর কতটুকু বা করবে? হায়েস্ট ফ্রেন্ড সার্কেলে ছড়াবে। আমি ভাবছিলাম গার্ডিয়ানদের কথা।
– – হুম।
– তবে আজকে লাইভ রোমান্টিক সিন দেখলাম। জাদিদ তোর কপালে যেভাবে কিস করলোনা বাবারে….
– মিম্মা চুপ করনা প্লিজ।
– বাহ, তোমরা করতে পারবা আর আমি বললেই সমস্যা!
হেমলতা লজ্জায় লাল থেকে নীল হবার পথে। হেমলতার কপালে এখনো জাদিদের ঠোঁটের স্পর্শ লেগে আছে।
দুপুরের খাবার পেটপুরে খেয়ে হামজা এক গাল হাসি নিয়ে বলল
– যাহ, জাদিদ তোর আর হেমলতার ব্যাপারটা আমি চেপে গেলাম।
মিম্মা বলল
– এতো অল্পতে জাদিদকে ছাড়লি?
– এতো অল্প কই? তিন প্লেট পোলাও, দুই পিস রোস্ট, আধা কেজির মতো গরুর গোস্ত আর এক বাটি সালাদ, ডেজার্ট হিসেবে বগুড়ার দই….
জাদিদ বলল
– আবার তাকে সুলতানি ডাইনে ট্রিট দিতে হবে।
হামজা তার ভরা পেটে হাত বুলাতে বুলতার বলল
– রিলেশনের ব্যাপারটা জানালে কী সমস্যা?
– আমার পছন্দ না।
হেমলতা জাদিদের বাসায় আসার পর থেকে মুখে কুলুপ এঁটে আছে।
জাদিদের রুমটা ওর খুব বেশি পছন্দ হয়েছে। পুরো ফ্ল্যাট একা একাই ঘুরে ঘুরে দেখেছে। সবকিছু ছিমছাম করে সাজানো।
হেমলতা ড্রয়িংরুমে বসে আছে। একটু আগেই নানী ফোন করে রাগারাগি করেছে তাকে। না বলে এভাবে ফ্রেন্ডের বাসায় আসা নিয়ে।
সোফায় বসে হেমলতা মন খারাপ করে বসে ছিলো। বারান্দায় মিম্মা আর হামজা জমিয়ে গল্প করছে। জাদিদ হেমলতা কে মন খারাপ করে বসে থাকতে দেখে নিজের উপর রাগ হলো। ওই ঘটনার পর থেকে হেমের সাথে সে খুব একটা কথা বলেনি।
হেম খেয়াল করলো জাদিদ কালো রঙের থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট আর কালো রঙের টি শার্ট পরেছে। চুল গুলো এলোমেলো ভাবে কপালের উপর দিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। খুব সম্ভব গোসলের পর চুল আঁচড়ান হয়নি। জাদিদকে আজকে একটু বেশি ফরশা লাগছে। চশমার ভেতর দিয়ে চোখ দুটোকে অসম্ভব রকমের সুন্দর লাগছে। হেমলতার মনে হলো, জাদিদ দেবদূত নয়তো?
ছোটো বেলায় লাঈলী বানুর কাছ থেকে রূপকথার গল্প শোনার সময় শুনেছিল, দেবদূতরা নাকি খুব সুন্দর হয়। লাঈলী বানু জাদিদকে দেখলে বলেই বসতেন,
– হায় হায় এতো সাক্ষাৎ দেবদূত !
হেমলতার পাশে বসলো জাদিদ। এক হাত দিয়ে হেমকে জড়িয়ে ধরে বলল
– মন খারাপ কেনো?
– নানী ফোন করে অনেক অনেক রাগারাগি করছে।
– কেনো?
– এখানে না বলে এসছি।
জাদিদ চিন্তিত হয়ে বলল
– তুমি কি আবার বলেছো নাকি যে সাথে দুইজন ছেলে ফ্রেন্ডও আছে?
– না মাথা খারাপ নাকি!
– যাক বাঁচিয়েছ।
হেমলতার কপালে আলতো করে চুমু দিলো জাদিদ।
হেম লজ্জায় জাদিদের বুকে মুখ লুকালো।
জাদিদ ফিসফিস করে বলল
– গোসল করে নাও।
– জামা কাপড় কিছুই আনিনি।
– আমার প্যান্ট আর গেঞ্জি পড়ে বাথরুমে গোসলটা করে নাও।
– না, বাসায় গিয়ে করবো।
– এখনই করবা।
হেমলতাকে জোর করে গোসলে পাঠিয়ে জাদিদ রান্নাঘরে কফি বানানোর জন্য গেলো।
কফির পানি চুলায় দিয়ে বারান্দায় হামজা আর মিম্মার সাথে যোগ দিলো।
কফি বানানো শেষ করে হেমলতা কী করছে দেখার জন্য বেডরুমে এলো।
এখনো হেমলতা বাথরুমে। ২০ মিনিটের মতো হয়েছে হেমের গোসলে যাওয়ার পরে। চুলায় আচ কমিয়ে দিয়েছিল যাতে ও গোসল সেড়ে বের হওয়ার সাথে সাথে গরম গরম কফি খেতে পারে। একটু অবেলায় গোসল করার পরে এক মগ ধোয়া ওঠা কফির তুলনা হয়না।
জাদিদ বাথরুমের দরজায় নক দিতে যাবে আর তখনই দরজা খুলে গেলো। হেমলতা চুল মুছতে মুছতে জাদিদের দিকে এগিয়ে আসলো। জাদিদের গাল টেনে দিয়ে বলল
– এখন অনেকটা ফ্রেশ আর ভালো লাগছে। সব তোমার জন্য।
জাদিদ দুষ্ট হাসি মুখে এনে বলল
– যেহেতু আমার জন্য এতো কিছু হলো সেই আমাকে কিছু দেয়ার প্রয়োজন হয়না?
– কী প্রয়োজন তোমার শুনি?
– অন্য একদিন চেয়ে নিবো। আচ্ছা বলোতো তোমাকে আমি গোসল কেনো করতে বলেছি?
– যাতে আমার মন ভালো হয়।
– না হয়নি।
– তাহলে?
– গোসল করার পরে সদ্য ভেজা চুলে তোমাকে দেখার অনেক স্বাদ ছিলো আমার। তোমার লম্বা চুল বেয়ে পানি টপটপ করে পরবে আর বাতাসে চুল গুলো হালকা দুলবে। মিষ্টি একটা ঘ্রাণ আসবে নাকে।
হেমলতা লজ্জা পেয়ে জাদিদের সামনে থেকে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। জাদিদ খপ করে হেমের হাত ধরে নিজের দিকে টেনে নিয়ে বলল
– আহা, যাচ্ছো কোথায়? একটু থাকো না এভাবে সামনে দাঁড়িয়ে। কতদিন পরে দেখলাম মনে আছে? আবার কবে দেখবো তারও ঠিক নেই।
– তুমি এভাবে কেনো কথা বলছো?
– তাহলে কে বলবে?
চলবে……
” লেখিকা মারিয়া কবির এর সকল লেখা দ্রুত পেতে অবশ্যই এ্যাড হোন তার ফেসবুক পেইজ ‘Maria Kabir -মারিয়া কবির’(এখানে পেইজ লিংক) এর সাথে।
~ Maria Kabir
We use cookies on our website to give you the most relevant experience by remembering your preferences and repeat visits. By clicking “Accept All”, you consent to the use of ALL the cookies. However, you may visit "Cookie Settings" to provide a controlled consent.
This website uses cookies to improve your experience while you navigate through the website. Out of these, the cookies that are categorized as necessary are stored on your browser as they are essential for the working of basic functionalities of the website. We also use third-party cookies that help us analyze and understand how you use this website. These cookies will be stored in your browser only with your consent. You also have the option to opt-out of these cookies. But opting out of some of these cookies may affect your browsing experience.
Necessary cookies are absolutely essential for the website to function properly. These cookies ensure basic functionalities and security features of the website, anonymously.
Cookie
Duration
Description
cookielawinfo-checkbox-analytics
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Analytics".
cookielawinfo-checkbox-functional
11 months
The cookie is set by GDPR cookie consent to record the user consent for the cookies in the category "Functional".
cookielawinfo-checkbox-necessary
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookies is used to store the user consent for the cookies in the category "Necessary".
cookielawinfo-checkbox-others
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Other.
cookielawinfo-checkbox-performance
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Performance".
viewed_cookie_policy
11 months
The cookie is set by the GDPR Cookie Consent plugin and is used to store whether or not user has consented to the use of cookies. It does not store any personal data.
Functional cookies help to perform certain functionalities like sharing the content of the website on social media platforms, collect feedbacks, and other third-party features.
Performance cookies are used to understand and analyze the key performance indexes of the website which helps in delivering a better user experience for the visitors.
Analytical cookies are used to understand how visitors interact with the website. These cookies help provide information on metrics the number of visitors, bounce rate, traffic source, etc.
Advertisement cookies are used to provide visitors with relevant ads and marketing campaigns. These cookies track visitors across websites and collect information to provide customized ads.