ডুমুরের ফুল ২৯.

0
2684

ডুমুরের ফুল ২৯.

– আমি একটা মেয়ে জাদিদ। প্লিজ বোঝার চেষ্টা করো।
– আমার যে কষ্টটা হয়েছে সেটা কি তুমি কখনো ফিল করতে পারবা?
– আমি তো খুব সুখে ছিলাম না।
– তোমার সাথে কথা বলার ইচ্ছা আমার নেই। আমাকে আর ফোন দিবা না।
– সামান্য একটা কারণে….
– মোটেও এটা সামান্য কারণ না।
– স্টপ লতা জাস্ট স্টপ।
– এতো রেগে যাচ্ছো কেনো?
– আমাকে কেউই ভালোবাসে না। মাইমুনা ইফতিও না। মাইমুনা ইফতি তো বেশ আনন্দেই আছে। নতুন বিয়ে করেছে…

হেমলতা থমকে গেলো। জাদিদের মায়ের নাম মাইমুনা ইফতি। আন্টি আবার বিয়ে করেছেন! সেপারেশন তো অনেক আগেই হয়েছে সেক্ষেত্রে আবার বিয়ে করাটা দোষের কিছু নেই। তাহলে জাদিদ বিষয়টা পছন্দ করছেনা কেনো?

– মাথা ঠান্ডা করো।
– ঠান্ডা করে কি সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে?
– হ্যাঁ হবে।
– কিছুই ঠিক হবেনা লতা।
– সবকিছু ঠিক হবে সবকিছু। তুমি মাথা ঠান্ডা করে এক কাপ চা খাবে। তারপর আমার সাথে কথা বলবে। ঠিক আছে?
– আমি চা টা কিছুই করে খেতে পারবোনা। তুমি এসে বানিয়ে দিয়ে যাও।
– আমি ফরিদপুরে জাদিদ।
– আমিই ফরিদপুরে আসবো। তারপর একসাথে পুরো একটা দিন কাটাবো।
– সেটা কোনো একটা ইউনিভার্সিটিতে চান্স পাওয়ার পরে।
– উঁহু সেতো অনেক দেরিতে।
জাদিদের মেজাজ হালকা হয়েছে বুঝতে পেরে হেমলতা ধীরে ধীরে বললো
– এখন শুধু পড়াশোনা আর পড়াশোনা। তা নাহলে হামজা, লাবিব, সাগর এরা তোমাকে লুজার ভাববে।
– ওরকম দুই একটা লেজুর লাইফে দরকার আছে। তাহলে ভুল কাজ করার পরপরই সংকেত পাওয়া যাবে।
কথাটা বলে জাদিদ হাসতে শুরু করলো।

কোচিং-এ শাম্মীকে দেখে জাদিদের মনে হলো সরি বলা দরকার। মেয়েটার সাথে বিনা কারণে সে বাজে বিহেভ করেছে।
শাম্মীকে হ্যালো বলাতে, শাম্মী একবার ভ্রু কুঁচকে তাকালো কিন্তু কোনো উত্তর দিলো না।
ক্লাস শেষে জাদিদ মেইন গেটের সামনে শাম্মীর জন্য অপেক্ষা করছিলো৷ একই ব্যাচের অরূপ কুমার নামের হাসিখুশি ছেলেটা জাদিদের কাঁধে হাত দিয়ে বললো
– কী দাদা, জিএফ রাগ করেছে?
জাদিদ মনে মনে ভাবতে লাগলো, লতা তো রাগ করেনি। গতকাল রাতে সে পরিমাণ ঝাড়ছে হেমকে তাতে হেমের রাগ করার কথা ছিলো কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি মেয়েটা খুব ঠান্ডা মাথায় ওসব হজম করেছে। এমনকি রাতে তাকে অদ্ভুত সুরের কর্কশ কণ্ঠের গানও শুনিয়েছে। যদিও সে মিথ্যা প্রশংসা করেছে। কাকের কণ্ঠকে এক লাফে কোকিল কণ্ঠে রূপ দিয়েছে । হামজা বলে, এরকম ভুয়া প্রশংসা না করলে মেয়েরা পটে না। হেমলতাকে পটানোর কোনো দরকার নেই। ও আগে থেকেই আমার প্রতি হাফ পাগল। প্রথমদিন যেভাবে হা করে তাকিয়ে ছিলো তাতে ৯৮% শিওর ছিলো মেয়ে তার উপর ক্রাশ খেয়েছে।
এরকম হাবাগোবা, সিম্পল মেয়ে তার উপর ক্রাশ খেয়েছে ভেবে প্রথম দিকে কেমন খচখচ শব্দ হতো মনে। এখন অবশ্য হয়না। হাবাগোবাই ভালো, অতি চালাক হলে ঝামেলা বেশি।

– না, দাদা।
– তাহলে হ্যালোর উত্তর দিলো না যে?
– তুমি কার কথা বলছো?
– তোমার জিএফ শাম্মীর কথা।
জাদিদ বেশ বিরক্ত হলো কথাটা শুনে। এই মেয়ে তার জিএফ হলো কীভাবে? দুইদিন ঘোরাঘুরি করলেই কি সব হয়ে যায় নাকি?
– কে বলেছে তোমাকে দাদা?
– এগুলা বলা লাগেনা দাদা। টোনা টুনির ঘোরা ফেরা দেখলেই বোঝা যায়।
– আমার জিএফ ফরিদপুরে থাকে। শাম্মী মোটেও আমার জিএফ না। গতকাল ঝাড়ি দিয়েছিলাম তাই আজকে রাগ করে বসে আছে। দয়া করে তিল কে তাল বানাবেন না।
– তুমি শিওর সে তোমার জিএফ না?
– হ্যাঁ।
অরূপ কুমার হাস্যোজ্জ্বল মুখে বললো
– বাঁচালে দাদা, আমার ন্যাওটা দোস্ত ওই মেয়ের উপর ভয়াবহ ভাবে ক্রাশড। তোমাদের মধ্যে রিলেশন ভেবে বেচারার ছ্যাকা খাওয়া ভাব হয়ে গেছিলো।
– আমার জিএফ জানলে তুলকালাম ঘটে যাবে। খবরদার ওসব নাম আর নিয়ো না।

শাম্মীকে সরি বলেও লাভ হলো না । চোখ মুখ শক্ত করে কিছুক্ষণ জাদিদের দিকে তাকিয়ে থেকে নিঃশব্দে চলে গেলো।

হেমলতা নিয়মিত কোচিংএ যাচ্ছে, পড়াশোনা করছে আর জাদিদেরও বেশ ভালোভাবে কাটছে সময়। মাইমুনা ইফতি কোনো যোগাযোগ করার চেষ্টা করেননি জাদিদের সাথে। এইচএসসি রেজাল্ট আউট হলো। জাদিদ তার সেরাটা এবারও ধরে রেখেছে। সরকারি হিসাবে জিপিএ – ফাইভ আর প্রচলিত মতে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে এইচএসসি পাশ করলো।
আর হেমলতাও আহামরি কিছু করে উঠতে পারেনি। সারাবছর টুকটাক ফাঁকি দেয়ার ফলাফল স্বরূপ রেজাল্ট থেকেও কিছু অংশ ফাঁকি দিয়ে দিলো তাকে। জিপিএ – ৪.৭৫ পেয়ে বেশ হাসিখুশি ছিলো হেমলতা। কিন্তু তার মায়ের বান্ধবী এসে মিসেস জয়নাবের কান ভাঙানী দিয়ে লম্বা চওড়া ভাষণ শুনালো।
মিসেস জয়নাবের মুখে যা আসলো তাই বলতে লাগলেন। তার একটা নমুনা উল্লেখ করা হলো।
– তোমাকে ভাত না সবুজ ঘাস খেতে দেয়া উচিৎ। গরু তোমার থেকেও অতি উত্তম শ্রেণির প্রাণী। সে প্রতিদিন ঘাস খেয়ে দুধ আর তুমি কী দাও শুনি? এতো টাকাপয়সা গরুর পেছনে লাগালেও কাজে দিতো। সারাদিন শুধু মোবাইল টিপাটিপি। মনোজকে কতোবার না করলাম মোবাইল না দিতে। কে শুনে আমার কথা? এতো টাকা খরচ করে কোচিং এ তো ঢ্যাং ঢ্যাং করার জন্য ভর্তি করিয়েছে। দেখবো কোথায় ঠাই হয় তোমার! মাথায় ব্রেইন তো নাই আছে গোবর। দেখোনা চুল কতো ঘন হয়েছে!

এটা ঠিক বলেছেন নানী। হেমলতা সহমত প্রকাশ করলো। জাদিদের সাথে সামনা-সামনি কথা বলার এক পর্যায়ে হেমলতা খেয়াল করে, জাদিদ তার চুলের দিকে তাকিয়ে আছে। যতক্ষণ কথা বলবে ঠিক ততক্ষণ ওভাবে তাকিয়ে থাকবে। এজন্য আজকাল চুল গুলোর বেশ যত্ন নেয়া হয়।

রেজাল্টের পরপর এডমিশন টেস্টের জন্য ইউনিভার্সিটি গুলো ফর্ম ছাড়তে শুরু করে। হেমলতা মাত্র দুটো ফর্ম কিনলো। জয়নাব তাকে ঢাকার বাইরে কোনো ইউনিভার্সিটিতে পড়তে দিবেন না। এদিকে জাদিদ একটার পর একটা ফর্ম কিনেই যাচ্ছে। তার কথা পড়তে পারবো মাত্র একটাতে আর গুলার ক্যাম্পাস ঘুরে দেখার একটা ব্যাপার আছেনা।

জাদিদ রাত জেগে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। লতা আর তার একই ক্যাম্পাসে কাটানো সময় নিয়ে। তাদের দুজনেই একই ক্যাম্পাসে একসাথে পড়াশোনা শেষ করে বিয়ের কথা ভাববে। হেমলতা যদিও সাহস পায়না এ-ই স্বপ্ন দেখার। সে এভারেজ স্টুডেন্ট, ঢাবিতে চান্স পাওয়া তার হবেনা। আর ভাগ্যের কথাও বলা যায়না। জাদিদেরও ঢাবি নাও হতে পারে।
হেমলতা যদিও জাদিদকে কখনো এ কথাগুলো বলেনি। বলেও বা লাভ কী? তাতে তো আর ভাগ্য চেঞ্জ হবেনা।
ভাগ্যের রেখা নিজের মতোই চলতে থাকবে।

ইমরান মোল্লা তার ছোট মামাকে বুঝিয়ে বলেছেন। জাদিদের এডমিশন টেস্ট শেষ হোক তারপর সে বিয়ে করবে। তার এই বিয়ে ছেলের উপর নেগেটিভ ইফেক্টও ফেলতে পারে। তাই রিস্ক নেয়া ঠিক হবেনা। ছেলের এডমিশন টেস্ট, ভর্তি সব ভালোভাবে হবার পরেই দ্বিতীয় বিয়ে করবেন। বৃদ্ধা মায়ের কথা আর ফেলতে পারছেননা তিনি।

চলবে……
” লেখিকা মারিয়া কবির এর সকল লেখা দ্রুত পেতে অবশ্যই এ্যাড হোন তার ফেসবুক পেইজ ‘Maria Kabir -মারিয়া কবির’(এখানে পেইজ লিংক) এর সাথে।

২০২০ বই মেলায় প্রকাশ পেতে যাচ্ছে মারিয়া কবির এর প্রথম উপন্যাস ‘যেখানে সীমান্ত তোমার আমার’।
মারিয়া কবির এর নতুন সব গল্প উপন্যাস পেতে আমাদের।সাথেই থাকুন।
ধন্যবাদ।

~ Maria Kabir

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে