ডুমুরের ফুল ২৮.
রেদমি সেভেন প্রো মডেলের মোবাইল হাতে নিয়ে হেমলতা অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো বাবার দিকে। নানীর নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও বাবা এন্ড্রয়েড সেট কিনে দিলো তাকে?
মেয়ের অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়ে থাকা দেখে মনোজ বললেন
– আম্মা তোমাকে কিছুই বলবেনা।
– যদি কিছু বলে?
– বলবা বাবা কিনে দিছে।
হেমলতা ভয়ে ভয়ে বাসায় এসে সোজা নিজের রুমে চলে গেলো।
মোবাইলটা হাতে পাওয়ার পর থেকে হেমলতা দোটানায় আছে। একদিকে মন খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে নানীর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার ফলাফল ভেবে শিহরিত হচ্ছে।
এমনকি মনোজ তাকে ইউসিসির কোচিং সেন্টারে ভর্তি করে রেখেছেন। আগামীকাল থেকে ক্লাসে যেতে হবে। নানীকে কীভাবে কী বলবে ভেবে পাচ্ছেনা।
মনোজ মিসেস জয়নাবকে ফোন দিলেন। হেমলতা তার মেয়ে। মেয়ের জীবনের সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার তারও আছে।
অসময়ে মনোজের নাম্বার দেখে জয়নাব বিরক্ত হলেন। রিসিভ করে বললেন
– হঠাৎ এসময়ে ফোন দিলে, কোনো কিছু দরকার?
– হেমলতার মোবাইল দরকার ছিলো। আমি কিনে দিছি।
– আর কিছু?
– ওকে ইউসিসিতে ভর্তি করাইছি। আগামীকাল থেকে ক্লাস।
জয়নাব কিছু সময় চুপ থেকে বললেন
– তোমার মেয়ে তুমি যেটা ভালো মনে হয় করবা। আমার কাছে বলার কোনো প্রয়োজন নেই।
– আপনার কাছে যেহেতু ও থাকে সেহেতু আপনাকে বলাটা প্রয়োজন।
– মনোজ, সে আমার মেয়ের মেয়ে। তার উপর আমার তেমন কোনো অধিকার নেই। তোমার যা ইচ্ছা হয় করতে পারো। আমার কাছে ও যতোদিন ইচ্ছা হয় থাকবে। তোমাদের যদি মনে হয় এখানে থাকাটা উচিৎ না তাহলে বাড়ির দরজা খোলা আছে।
মনোজ বললেন
– আপনি যদি না চান তাহলে ও আপনার বাসায় থাকবেনা।
– আমার মেয়ের মেয়ে হেমলতা। আমি না করতে পারিনা। মেয়েকে যে স্বাধীনতা দিচ্ছো তার ফলাফল খারাপ হলে তোমার দায়িত্ব হবে আমার না। আমার সিদ্ধান্ত আমি আগেই জানিয়ে দিয়েছি। সেটা মানা বা না মানার চিন্তা তোমাদের। ও আমার বাসায় থাকবে, খাবে বাট উল্টো পাল্টা কিছু করলে তখন আমার সিদ্ধান্ত মাথা পেতে নিতে হবে। এই শর্তে যদি তুমি রাজি হও তাহলে আমি তোমার নেয়া সিদ্ধান্ত মেনে নিবো। তুমি রাজি?
মনোজ কিছু না চিন্তা করে বলেই ফেললেন
– হ্যাঁ রাজি।
– তাহলে কথা এটাই রইলো।
– জি আম্মা।
জাদিদকে ফোনে না পেয়ে শাম্মী একবার ভাবলো জাদিদের বাসায় গিয়ে হাজির হলে কেমন হয়? কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ওর বাসার একজ্যাক্ট লোকেশন তার জানা নেই।
কোচিং-এ যদিও তার সাথে দেখা হবে কিন্তু এতটা সময় কথা না বলে কাটাবে কীভাবে সে? এই অল্প সময়ের মধ্যে জাদিদের প্রতি কিছুটা ডিপেন্ডেট হয়ে গেছে সে।
বাসায় তার একদমই মন বসেনা। সারাক্ষণ মা তার সাথে খ্যাটখ্যাট করতে থাকে। ছোটো ভাইটাও তাকে বোন হিসেবে পাত্তা দেয়না। আর বাবা তো বাবাই। মা উঠতে বসলে উঠবে আর বসতে বললে বসবে। আজব ব্যাপার। এই মায়ের কথায় তার দাদীকে বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে হচ্ছে।
কোচিং-এ জাদিদকে যথেষ্ট বিরক্তিকর মেজাজে মনে হলো। শাম্মী বুঝতে পারলো কিছু একটা হয়েছে বাট কী সেটা ধারণা করতে পারছেনা। প্রতিদিনই আশেপাশের ছেলেদের জাদিদ এটা সেটা দিয়ে বা ছোটো খাটো ম্যাথ সলভ করে দিয়ে হেল্প করে বাট আজকে কেউ কিছু চাইলেই বিরক্তি নিয়ে তাকাচ্ছে।
কোচিং শেষ করে জাদিদকে বেশ শক্ত করে ধরলো শাম্মী।
– কী হয়েছে কী তোমার? এমন বাজে বিহেভিয়ার কেনো আজকে তোমার?
– কিছুই হয়নি আমার।
– তোমার নাম্বার অফ কেনো?
– এমনি।
– জাদিদ ভালোভাবে উত্তর দাও। আমি তোমার সাথে মজা করতে আসিনি।
জাদিদের এমনিতেই মেজাজ খারাপ ছিলো আর শাম্মীর খবরদারিতে মেজাজ তার কন্ট্রোলের বাহিরে চলে গেলো।
দাঁত চিবিয়ে চিবিয়ে বললো
– লিসেন শাম্মী, আমার লাইফের কোনো ব্যাপারে ইন্টারফেয়ার করার রাইট তোমার নেই। আমি তোমার প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই। কথাটা মাথায় যেন থাকে।
রাগে গজগজ করে জাদিদ চলে গেলো।
শাম্মী খেয়াল করলো তাদের কোচিং-এর বেশ কয়েকজন ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।
তারা এন্টারপ্রাইজের তারা সাহেব বিজ্ঞের মতো ভাব নিয়ে বললেন
– মোবাইলটার জানে তো কিছু রাখো নাই। প্রেমিকার উপর রাগ করে আছাড় মারিছো?
জাদিদ হ্যাঁ না কিছুই বললোনা।
তারা সাহেব একা একাই কথা বলতে লাগলেন।
– মাইয়া মানুষের উপরে রাগ করা বোকামি। হেরা হইলো নির্বোধ আর ঘাড়ত্যাড়া জাত। এগো লগে নরম হয়ে কথা কইতে হয়। নরম হয়ে এদেরকে দিয়ে মানুষও খুন করা যায়। বুঝেছো?
– মোবাইল ঠিক করতে ঠিক কতো সময় লাগবে?
– এর তো জানে কিছু রাখো নাই। ১ সপ্তাহ তো লাগবেই।
– তাহলে ঠিক করার কোনো দরকার নেই। আমি নতুন একটা কিনে নিবো।
নতুন মোবাইল চার্জে দিয়ে গোসল করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলো জাদিদ। গোসল সেড়ে এসে মোবাইল চেক করে দেখলো আননাউন নাম্বার থেকে ছয় বার ফোন এসেছে।
চশমাটা চোখে নিয়ে আননাউন নাম্বারে ফোন দিলো। খুব জরুরি বিধায় এতোবার ফোন দিয়েছে কেউ। ওপাশে ফোন রিসিভ হলো। কণ্ঠস্বর বেশ নিচু করে হ্যালো বললো।
হেমলতার কণ্ঠ বুঝতে পেরে জাদিদের অভিমান চাপলো।
– এতোদিনে মনে পড়লো?
– আমার মোবাইলটা নষ্ট হয়ে গেছিলো।
– সেটা না হয় বুঝলাম কিন্তু তোমার নানীর নাম্বার দিয়ে তো…
– আমি অনেক চেষ্টা করেছি পারিনি।
– এটা কার নাম্বার?
– বাবা আজকে নতুন মোবাইল কিনে দিছে।
– তোমার নানী কোনো অবজেকশন রাখেনি?
– বাসায় বেশ ঝামেলা হয়েছে মোবাইল আর এডমিশন কোচিং নিয়ে।
– তোমার নানী অনেক ব্যাকডেটেড মাইন্ডের।
– এডমিশন কোচিং এ বাবা জোর করে ভর্তি করায় দিছে।
– এটুকু যেহেতু পেরেছো সেহেতু ঢাকায় এসে করার কথা বলতা।
– আমি জানতামও না। বাবা হুট করে নিয়ে গেলেন।
– ওহ আচ্ছা।
– তোমার কণ্ঠ এমন রুক্ষ লাগছে ক্যান?
– এতোদিন পর ফোন দিলে কি মিষ্টিতে চুবিয়ে কথা বলবো?
– না তা না মানে কেমন মেজাজ খারাপ মনে হচ্ছে তোমার।
– আমার খোঁজ নেয়ার প্রয়োজন বা সময় আছে নাকি তোমার? তোমার তো আমার প্রতি কিছুই নাই। কী মনে করে আমার সাথে রিলেশনে আসছো আমি জানিনা।
– এভাবে কেনো বলছো জাদিদ?
– তাহলে কীভাবে বলবো?
– কী হয়েছে ভালোভাবে বললেই হয়।
– ভালোভাবে বলার মতো কোনো পপরিস্থিতি তুমি রাখোনি। তুমি খুব ভালোভাবেই জানো আমার মা বাবা থাকতেও নেই। আমার জীবনে একজন মানুষের অনেক অভাব। জানো না?
– হ্যাঁ জানি।
– তাহলে এতোদিন আমার সাথে যোগাযোগ না করে থাকলা কীভাবে? গার্লফ্রেন্ড হিসেবে না খবর নিলা এজ আ ফ্রেন্ড হিসেবে তো নিতে তো পারতা। পারতে না হেম? উত্তর আছে তোমার কাছে?
চলবে……
” লেখিকা মারিয়া কবির এর সকল লেখা দ্রুত পেতে অবশ্যই এ্যাড হোন তার ফেসবুক পেইজ ‘Maria Kabir -মারিয়া কবির’(এখানে পেইজ লিংক) এর সাথে।
২০২০ বই মেলায় প্রকাশ পেতে যাচ্ছে মারিয়া কবির এর প্রথম উপন্যাস ‘যেখানে সীমান্ত তোমার আমার’।
মারিয়া কবির এর নতুন সব গল্প উপন্যাস পেতে আমাদের।সাথেই থাকুন।
ধন্যবাদ।
~ Maria Kabir