ডুমুরের ফুল ২২.

0
1918

ডুমুরের ফুল ২২.

পাক্কা এক ঘণ্টা হাঁটার পরে জাদিদের পানির পিপাসা লাগলো। দোকান থেকে হাফ লিটারের মাম পানি কিনে নিলো। হাঁটতে হাঁটতে পানির বোতল খালি করে বোতল পাশের ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেললো জাদিদ। কোনো কিছুতেই তার আজকে মন বসছেনা। ওরিয়েন্টেশন ক্লাস শুরু হবে সকাল ১০ টায়। যদিও বাংলাদেশে কোনো কিছুই এক্সাক্ট টাইমে হয়না। তাই দশটার একটু পরে গেলেও তেমন সমস্যা হবার না। জাদিদ নিজেকে আশ্বস্ত করলো। সামনের রাস্তার ফুটপাতে ছোট্ট খুপরির মতো দোকানে চা খাচ্ছে ক’জন লোক। তাদের চায়ে চুমুক দেয়া দেখে জাদিদের চা খাওয়ার ইচ্ছা জাগলো।
প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে ৫ টাকার কয়েন ছাড়া আর কোনো নোট বা কয়েনের উপস্থিতি টের পেলো না।
এক কাপ চায়ের দাম কতো হতে পারে?
দোকানীর কাছে এগিয়ে গিয়ে জাদিদ জিজ্ঞেস করলো
– আংকেল এক কাপ চায়ের দাম কতো?
দুই চামচ চিনি চায়ে দিয়ে শরীফ বিজ্ঞের মতো জিজ্ঞেস করলেন
– কোন চা খাইবেন? র চা নাকি দুধ চা?
নিশ্চয়ই র চায়ের দাম কম হবে দুধ চায়ের তুলনায়।
– র চা।
– পাঁচ ট্যাহা।
জাদিদ বেশ চওড়া হাসি দিয়ে বললো
– একটা র চা দেন।
চায়ে বেশ তৃপ্তির সহিত চুমুক দিয়ে পকেট থেকে পাঁচ টাকার কয়েন বের করলো।
চা শেষ করে দোকানীকে চায়ের বিল দিয়ে বাসার দিকে পা বাড়ালো।
অনেক সময় পার হয়ে গেছে এখনো হেমলতার সাথে কথা হয়নি। মোবাইল ফোনটাও টেবিলের উপর রেখে এসেছে। ফোন দিতে দিতে পাগল হয়ে যাচ্ছে নাকি কে জানে!

হেমলতার জাদিদকে ফোন দিতে ইচ্ছে করছে কিন্তু মোবাইল নানীর কাছে। বারবার মোবাইল চাইতে গেলে যদি সন্দেহ করে বসে?
ঘড়িতে তাকিয়ে সময় দেখে নিলো হেমলতা। জাদিদের সকাল ১০ টায় কোচিং এ ওরিয়েন্টেশন ক্লাস। এখনো ঘুমাচ্ছে নাকি? নাকি নাস্তা করেছে?
ছেলেটা একা একা একটা ফ্ল্যাটে থাকছে। খারাপ কিছু যদি হয়ে যায়?
ছেলেদের হোস্টেলে বা মেসে থাকলেই তো পার‍তো। বিপদে কেউ না কেউ এগিয়ে আসতে পার‍তো।
ধোয়া ওঠা গরম চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে সেদিকে হেমলতার খেয়াল নেই।
ঠান্ডা চায়ে চুমুক দিয়ে হেমলতার মুখ কুঁচকে গেলো।
এই চা ঠান্ডা করতে গেলেও বিপদ। যদি নানী দেখেন যে চা ঠান্ডা হয়ে গেছে আর সে গরম করতে এসেছে তাহলে প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে সে হুট করে সত্যিটা বলে দিবে। আর তখন…..
হেমলতা এক চুমুকে ঠান্ডা চা শেষ করে কিছুক্ষণ দম নিলো।
নিজেকে রুমে আটকে রাখতে না পেরে নানীর রুমে গেলো। নানী আরামে ঘুমুচ্ছেন। বালিশের পাশে রাখা মোবাইলটা হাতে নিয়ে নিজের রুমে চলে এলো।
লাইলী বানু রান্নাঘর থেকে বের হওয়ার সময় দেখলেন, হেমলতা তার নানীর মোবাইল নিয়ে চোরের মতো চলে যাচ্ছে।
ব্যাপারটা তার ভালো ঠেকছে না। মেয়েটা এমন ভয়ে ভয়ে থাকছে কেনো?
উঠতি বয়সের মেয়েরা নতুন নতুন প্রেমে পড়লে এমন করে।
হেমলতার নানীকে বিষয়টা জানাতে হবে।
জাদিদ বাসায় এসে প্রায় দৌঁড়ে মোবাইলে কাছে গেলো। মোবাইলের নোটিফিকেশন চেক করে দেখলো হেমলতা ফোন দিয়েছে কিনা। না, হেমলতা কোনো ফোন দেয়নি। মন খারাপ করে ফ্রিজে রাখা খাবার বের করলো জাদিদ।
খাবার গরম করে খেতে বসবে তখন হেমলতার ফোন এলো।
খাবার চিবানো বন্ধ করেই জাদিদ বললো
– এতো দেরিতে কেনো ফোন দিলে?
– মোবাইল নানীর কাছে ছিলো।
– আংকেল মোবাইল দিয়ে যায়নি?
– না।
– তাহলে আমরা কীভাবে কথা বলবো? এভাবে লুকোচুরি করে কতক্ষণ?
– নানী সকালে আমাকে জেড়া করেছেন।
– কেনো?
– মোবাইলের ব্যালেন্স কম দেখে।
– তাহলে এখন থেকে তুমি আমাকে একটা মিসড কল দিবা। তারপর আমি নাহয় ব্যাক করবো।
– আচ্ছা।
– শুনো আমি একটা মোবাইল কিনে পাঠিয়ে দেই?
– না না পাগল নাকি। আমি নানীকে কী বলবো যদি জিজ্ঞেস করে – মোবাইল কে দিয়েছে?
– বলবা তোমার জমানো টাকা দিয়ে।
– আমার জমানো এতো টাকা নেই যে মোবাইল কিনবো।
– তাহলে আমি তোমাকে দেখবো কী করে?
– তোমার মোবাইলে আমার ছবি নেই?
– আছে বাট সেগুলো পুরাতন আর আমি ভিডিও চ্যাটের কথা বলছি।
– যতদিন বাবা না দিয়ে যায় ততদিন এভাবেই কাটাতে হবে।
– আমি হায়েস্ট দুইদিন দেখবো তারপর মোবাইল কিনে কুরিয়ার করে পাঠিয়ে দিবো।
– খবরদার এই কাজ করবা না।
– তুমি মোবাইলের ব্যবস্থা না করলে আমাকেই করতে হবে।
– জাদিদ ত্যাড়ামি করবা না।
– ত্যাড়ামির কিছুই এখনো দেখোনি।
– উঁহু।
– শুনো, এখন রাখি কেমন?
– ওকে, তোমার ক্লাস আছে তো আবার। লেট হয়ে যাচ্ছেনা?
– না।
– মেয়েদের পাশে বসবেনা, মনে থাকে যেনো?
– মেয়েদের পাশে বসলেও বা কী?
– না তো নাই।
– কারণটা তো বলতে হবে।
– কোনো কারণ নেই।
– ঠিকাছে মানলাম। এখন রাখি, বাই।
জাদিদ এঁটো প্লেট বেসিনে রেখে দ্রুত রেডি হয়ে নিলো। ঘড়ির কাটা ১০ টা ছুই ছুই করছে। যদিও তার এখান থেকে কোচিং সেন্টার খুব একটা দূরে না। তারপরও প্রথম দিন লেটে গেলে অভ্যাস হয়ে যাবে লেটে যাওয়ার।
মনোজ সাহেব বেশ চিন্তিত। হেমলতার মোবাইল তার ছোটো মেয়েটা বাথরুমের বালতিতে রাখা পানিতে চুবিয়েছে।
মোবাইলটা সার্ভিসিং করানোর জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন কিন্তু মোবাইলের হায়াত নাকি শেষ হয়ে গেছে।
এখন মেয়েকে সে কী উত্তর দিবে?

( আজকের পর্বটা ছোটো করে দেয়ার জন্য দুঃখিত। আগামীতে বড় করে পোস্ট করবো।)

চলবে……

©Maria Kabir

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে