ডুমুরের ফুল ১৭.
হেমলতা আমতা আমতা করে বললো
– মোবাইল কবে পাবো তার কোনো ঠিক নেই। আ…. আমি এতক্ষণ অপেক্ষা কীভাবে করবো?
– তোমার এক ভুলে সারাজীবনের জন্য কথা বলা বন্ধ হবে।
– নানী কিছুই বুঝতে পারবেনা। বলবো, তুমি আমার ফ্রেন্ড।
– হেম শুনো, আমাদের কথাবার্তা কেউ শুনলে বিশ্বাস করবে আমরা ফ্রেন্ড?
জাদিদ হাসতে হাসতে বললো।
– হ্যাঁ সেটা তো ভেবে দেখিনি।
– শুনো হেম।
– হুম বলো।
– তোমার প্রতি ভালোলাগা বেড়েই যাচ্ছে। যতবারই ভাবছি ততবারই। মানে সমানুপাতিক সম্পর্ক। তোমাকে নিয়ে ভাবনাকে যদি V ধরি আর আর ভালোলাগাটাকে V… এরে এক হয়ে গেলো। ভাবনাকে T এবং ভালোলাগাকে L ধরি তাহলে,
L সমানুপাতিক T^3
বুঝতে পারতেছো? ভাবনার কিউবের সমানুপাতিক ভালোলাগা।
সমানুপাতিক আর সমান কিন্তু হেম এক না। সমানুপাতিক উঠিয়ে সমান দিতে গেলে ধ্রুবক আনতে হয়।
হেমলতা কী বলবে বুঝতে পারছেনা। এদিকে কীসের সাথে কী মিশাচ্ছে জাদিদ। এখন না থামালে জাদিদ আরো জটিল দিকে এগিয়ে যাবে। এমনিতেই ফিজিক্স তার মাথায় ঢোকে না। তারপর জাদিদ…..
এদিকে জাদিদ তার মতো ব্যাখ্যা করেই যাচ্ছে।
হেমলতা নরম স্বরে বললো
– জাদিদ।
– তুমি বুঝতে পারতেছো না?
– তুমি পাগল হয়ে গেলা নাকি?
– মনে হচ্ছে তাই হয়ে যাবো।
– বাসায় পৌঁছে প্রথমে ফ্রেশ হয়ে নিবা। তারপর পেট ভরে খেয়ে ঘুম দিবা।
– কী বলো? জিনিসপত্র না গুছিয়ে ঘুমাবো কীভাবে?
– জিনিসপত্র গুছানো যাবে আগে ঘুম।
– আমার কিছুই ভালো লাগছেনা হেম। ইচ্ছা করছে ফরিদপুরে ব্যাক করি।
– প্রথম দিকে খারাপ লাগবে। আস্তে আস্তে অভ্যাস হয়ে গেলে ফরিদপুরে আসতে ইচ্ছা করবেনা।
– ফরিদপুরে আমার আসতেই হবে। ১ দিনের জন্যও হলেও আসতে হবে।
– এখন রাখি।
– হুম। একটা কাজ করতে পারবে?
– বলো।
– মোবাইলটা আজকে রাতে তোমার কাছে রেখো।
– আচ্ছা চেষ্টা করবো। রাখি বাই।
জাদিদের ইচ্ছে করছে চুমু দিতে কিন্তু পাশের আন্টি কান পেতে বসে আছেন। এমনিতেই এতক্ষণ যা বলেছে তাতেই আন্টির চেহারা দেখার মতো। উনি কি চাচ্ছে তার মেয়ের সাথে আমার সেটিং করায় দিতে? তাহলে তো চুমু দেয়া মৌলিক অধিকার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জাদিদ মোবাইল ঠোঁটের কাছে নিয়ে জোরে শব্দ করে চুমু দিয়ে বললো
– দূরে চলে যাচ্ছি তাই বোনাস।
হেমলতার পুরো শরীর ঘিনঘিন করতে শুরু করেছে। হেমলতা রেগে বললো
– এসব না করলে কী হয়?
– আমার কষ্ট হয়।
জাদিদ হাসতে হাসতে বললো
– আচ্ছা রাখি।
ফোন কেটে দিয়ে মোবাইল পকেটে রেখে দিলো। আড়চোখে আন্টিকে একবার দেখে নিলো জাদিদ।
মহিলার চেহারা ভাবলেশহীন। হয়তোবা অতিরিক্ত শক খেয়েছে।
নাদিয়া ভাতের লোকমা মুখে পুড়ে দিয়ে বললেন
– হেমলতাকে বিয়ে দিয়ে দেন, খালাম্মা। আপনার টেনশন কমবে।
মিসেস জয়নাব অবাক হয়ে বললেন
– ও এখনো ছোটো আর আমি চাই ওর পড়াশোনা শেষ হোক।
– আজকালকার যে অবস্থা। ক্লাস সিক্স সেভেনের মেয়েরাও প্রেম করে।
– হেমলতা অমন না। আর এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে ওকে দিবোনা।
– ভালোর জন্য বললাম। এখন আপনার ইচ্ছা।
মিসেস জয়নাব আর কথা বাড়ালেন না।
মিম্মা ফেসবুকে গ্রুপ চ্যাটিং – এ জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। গ্রুপ চ্যাটিং এ টপার স্টুডেন্ট এড আছে। আর এরা এখানে কতোটা মজা করে কথা বলে, এড নাহলে জানা যায়না।
ম্যাসেজ পড়তে পড়তে একটা ম্যাসেজে চোখ আটকে গেলো। আটকানোর কারণ জাদিদ শব্দটা। জয়ী লিখেছে
– জাদিদ কইরে, তোরা কেউ জানিস?
জুবায়ের রিপ্লাই দিলো
– জাদিদ ঢাকার পথে।
– গ্রুপে একটু আড্ডা দিলেও তো পারে।
– দেখা গেলো বাসেও পড়াশোনা করছে। হাসির ইমো।
জয়ী আর জুবায়েরের মধ্যে এখন কথা হচ্ছে। মিম্মা ওদের মধ্যে একটা ম্যাসেজ দিল
– কে কে ঢাকায় কোচিং করতে যাবি?
অনেকেই রিপ্লাই দিলো। কিন্তু যুথির কোনো খোঁজ নেই। অনলাইনে আছে, ম্যাসেজ ও সিন করেছে কিন্তু রিপ্লাই নাই।
অবশ্য মেধাবীদের একটু মুড থাকবেই। তাহলে জাদিদের নেই কেনো? জাদিদ তো ওদের চেয়েও বেশি মেধাবী।
জাদিদের মতো ছেলে কীভাবে হেমলতাকে পছন্দ করলো? হেমলতা ভালো মেয়ে কিন্তু ওর টাইপের না। জাদিদ কি ওর সাথে মজা করছে?
মিম্মার কেনো যেন মনে হচ্ছে কিছু একটা ঝামেলা তো আছেই।
জাদিদ বাসায় পৌঁছালো সন্ধ্যায়। বাসায় যাওয়ার আগে রাতের খাবার আর ৫ লিটারের পানির বোতল, কোক, বিস্কুট কিনে নিলো। হেমলতার আদেশ পালনের জন্য প্রথমে গোসল করে নিলো। গোসল ছাড়া কোনোভাবেই ফ্রেশ হওয়া সম্ভব না।
গোসল সেরে পুরো ফ্ল্যাটটা ভালোভাবে দেখে নিলো জাদিদ। একটা মাস্টার বেডরুম, একটা নরমাল বেডরুম , একটা ছোট্ট ডাইনিং বা ড্রয়িং রুম যেকোনো একটা বললেই হয়। কারণ একটাই রুম আছে লম্বাটে টাইপের। ছোট রান্নাঘর আর মিনি বারান্দা। অর্থাৎ নতুন বিবাহিত দের জন্য পারফেক্ট ফ্ল্যাট বলা চলে।
জাদিদের বাবা প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র দিয়ে সাজিয়ে রেখেছেন ফ্ল্যাট। জাদিদের মনে হলো, তার বাবা ইচ্ছাকৃতভাবে এটা করেছেন। যেন ফ্ল্যাট সাজাতে ছেলেকে সময় ব্যয় না করতে হয়।
খাটের ওপর চাদর বিছানো দেখেই বোঝা যাচ্ছে, বিকালের দিকেই বিছানো হয়েছে। সবকিছুতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো হয়েছে।
তবে জাদিদের জন্য ভালোই হয়েছে। তার একা থাকতে ভালোলাগে। ম্যাসে থাকলে একসাথে অনেক জন। নিজস্বতাই থাকতোনা। জুবায়ের, রিফাত, হোসেন আর কামরুল মিলে ছোটো বাসা ভাড়া নিয়েছে। ওরা অবশ্য জাদিদকেও বলেছিলো ওদের সাথে থাকতে কিন্তু জাদিদের কোনো ইন্টারেস্ট নাই দেখে। ওরা আর কিছুই বলেনি।
ভুনা খিচুড়ি আর ডিম ভাজা – আহ্! খাবার দেখে জাদিদের মনে পড়লো তার প্রচুর খিদে পেয়েছে।
এতোটা খিদে যে কীভাবে খেলো নিজেই বুঝতে পারলোনা।
খাওয়া শেষ করে হেমলতার আদেশ অনুযায়ী বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো। ঘুম না আসলেও তাকে ঘুমাতে হবে। হেমলতার আদেশ বলে কথা।
হেমলতার সাথে কথা বললে ঘুমটা তাড়াতাড়ি আসতো কিন্তু তার মোবাইল আংকেলের কাছে।
দাদীর কথা মনে পড়লো জাদিদের। বৃদ্ধা রুক্ষ মেজাজের হলেও মাঝেমধ্যে ভালো ব্যবহার করতেন। যদিও নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য। কিন্তু দাদী তো।
এখন তো বিস্বাদ খাবার খেতে খেতে জিহবার স্বাদ কোরক বাদ করে ফেলতে হবে।
ভাবতে ভাবতেই জাদিদ গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো।
হেমলতা তোতলাতে তোতলাতে নানীকে বললো
– তোমার মোবাইল টা আমার কাছে আজকে থাকুক৷
মিসেস জয়নাব পান মুখে দিয়ে বললো
– আচ্ছা রাখিস। তোর শরীর কেমন?
– এখন ভালো। তুমি চিন্তা কম কম করবা। – একটা কথা বলি। তুই নাদিয়ার সামনে খুব একটা যাবিনা।
– কেনো?
– ও ঘটক হতে চাচ্ছে।
– উনি ঘটক হলে আমার কী?
– আরে গাধী তোকে বিয়ে দেয়ার কথা বলেছে আমার কাছে।
– এতো তাড়াতাড়ি?
– আমি না করেছি। কিন্তু নাদিয়া বললো আজকালকার মেয়েরা নাকি অল্পবয়স থেকে প্রেম করে। আমি বলে দিলাম, আমার হেমলতা অমন না।
হেমলতা অবাক হয়ে নানীর দিকে তাকিয়ে রইলো। কী বলবে সে ভাবতেই পারছেনা!
চলবে……!
© Maria Kabir
” লেখিকা মারিয়া কবির এর সকল লেখা দ্রুত পেতে অবশ্যই এ্যাড হোন তার ফেসবুক পেইজ ‘Maria Kabir – মারিয়া কবির’(এখানে পেইজ লিংক) এর সাথে।
২০২০ বই মেলায় প্রকাশ পেতে যাচ্ছে মারিয়া কবির এর প্রথম উপন্যাস ‘যেখানে সীমান্ত তোমার আমার’।
মারিয়া কবির এর নতুন সব গল্প উপন্যাস পেতে আমাদের।সাথেই থাকুন ধন্যবাদ।