ডুমুরের ফুল ১৬.
“কোন মেয়েকেই পুরোপুরি চেনা সম্ভব না। সেই চেষ্টাও করা উচিত না। একমাত্র রবীন্দ্রনাথই মেয়েদের পুরোপুরি চিনতেন। তাও দেশী মেয়ে না। বিদেশী মেয়ে।”
~হুমায়ূন আহমেদ।
জাদিদ হাসি চেপে রেখে ভাবলো স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ চিনেছিলেন তাও বিদেশী মেয়ে। তার পক্ষে রবীন্দ্রনাথ হওয়া সম্ভব না হলেও হেমলতাকে চিনতে পারবেনা।কারণ হেমলতা তো দেশী মেয়ে। সত্যি হেমলতাকে পুরোপুরিভাবে এখনো চিনতে পারেনি সে।
আর চেনার সুযোগটাও তেমন হয়নি। মেলামেশা করতে গিয়েই তো ভালো লেগে গেলো। বেশিদিন ভালো লাগাটাকে পুষে রাখতে পারলোনা। সে তো দূরে চলে যাচ্ছে এই সুযোগে অন্য কেউ যদি হেমলতাকে নিয়ে যায়?
ভাবতেই কেমন লাগছে জাদিদের। আর সত্যিই যদি এমন হয়ে যেতো তাহলে….
বলে দিয়েই ভালো হয়েছে।
যতটুকু চিনি তাতে যথেষ্ট।সময় যত বাড়বে, সম্পর্ক যত গভীর হবে একে অপরকে তখন ভালোভাবে চিনে ফেলবো।
এমনকি ও হাসি মুখে কথা বললেও বুঝতে পারবো মেকি নাকি সত্যি!
জাদিদের পাশের সিটে একজন মধ্য বয়সের মহিলা বসেছেন। মহিলার জাদিদের বয়সী মেয়ে আছে। সেই মেয়ে নাকি ভিকারুননিসায় পড়ে। অনেক মেধাবী নাকি তার মেয়ে। জাদিদ কথা গুলো জানতে পেরেছে কারণ মহিলাই সেধে এসে তাকে এসব বলেছে। জাদিদের কেনো যেন এসব গল্প শুনতে ভালো লাগেনা। হেমলতাকে নিয়ে ভাবতে তার বেশ ভালো লাগে। এতো ভালোলাগা কাজ করছে কেনো? প্রশ্নের উত্তর হেমলতা ছাড়া কেউই পারবেনা। কিন্তু পাশের মহিলা বেশ বিরক্তিকর।
– বাবা তোমার নামটা কী?
জাদিদের চিন্তায় ছেদ পড়লো। বিরক্তি লুকিয়ে রেখে হাসি মুখে বললো
– জাদিদ।
মহিলা চওড়া হাসি দিয়ে বললেন
– আমার মেয়ের নাম জোয়া।
জাদিদ মনে মনে ভাবছে, তো?
– ওহ।
– তুমি ঢাকায় ঘুরতে যাচ্ছো?
– নাহ।
– তাহলে কী করতে যাচ্ছো বাবা?
– আমি ইউনিভার্সিটি কোচিং করতে যাচ্ছি।
– কোন কোচিং সেন্টার বাবা?
– ইউসিসি
– কোন শাখায় ভর্তি হয়েছো?
– মৌচাক শাখায়।
– তুমি কোন কলেজে পড়েছো? ইয়াছিন?
– নাহ আন্টি, রাজেন্দ্র কলেজে।
– বেশ ভালো কলেজ। তো বাবা ভালোভাবে পড়াশোনা করবা যেন রাজেন্দ্রতে ফেরত না যেতে হয়।
লাস্টের কথাটা জাদিদের ইগোতে লাগলো। রাজেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় না ঠিক আছে বাট কলেজ হিসেবে ভালো। কথা না বাড়িয়ে হুম বলে মোবাইলে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
বাবার কী অবস্থা একটু জানা দরকার কিন্তু এই মহিলার সামনে বাবার সাথে কথা বলা ঠিক হবেনা। উনি আমার ব্যাপারে একটু বেশিই উৎসুক। দেখা গেলো সে ফ্যামিলি ব্যাপারেও নাক গলাতে চাইলেন। তার বাবাকে জোর করে বিয়ে দিতে চাচ্ছে। আর এই কারণে বাবা বাসা থেকে পালাইছে। বিষয়টা তার কাছে যতোটা নরমাল অন্য কারো কাছে অস্বাভাবিক লাগবে। আবার তার মায়ের খোঁজ নিতে চাইলে তো আরেক বিপদ!
হেমলতাকে ম্যাসেজ দেয়ার জন্য টাইপ করলো – তোমাকে আমার এতো ভালো লাগে কেনো? বলতে পারবা?
সেন্ড করার সময় মনে হলো, মোবাইল তো হেমলতার বাবার কাছে। আর একটু হলেই তো বিপদ ঘটিয়ে ফেলতো।
জাদিদ মোবাইল পকেটে রেখে সিটের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বুজে রইলো। পাশের মহিলা মোবাইলে কার সাথে যেন গল্প জুড়ে দিয়েছেন। হয়তোবা এইজন্যই সে একাকী একটু সময় পেয়েছে।
হেমলতাকে হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে। মোবাইল এখনো হেমলতার বাবার কাছে। মোবাইল কীভাবে নেয়া যায় মনে মনে ভাবছে হেমলতা। এদিকে তার নানী কিছুটা সুস্থ হয়েছেন। হেমলতার জন্য নিজ হাতে ফ্যানা ভাত আর কলা ভর্তা করেছেন। পেঁপে ভর্তা করতে চেয়েছিলেন কিন্তু পেঁপে পেঁকে গেছে। পাঁকা পেঁপে দিয়ে আর যাইহোক ভর্তা করা যায়না।
খাবার হাতে নিয়ে হেলমতার কাছে এসে বসলেন। হেমলতা খাবার দেখেই বললো
– আমার কি পেট খারাপ নাকি?
নাদিয়া রাগীস্বরে বললেন
– যা বলবে তাই করবে। তোমার চিন্তায় খালাম্মার প্রেশার বেড়ে গেছে।
হেমলতা খাবারের প্লেট নিয়ে অনিচ্ছাসত্ত্বেও খেতে শুরু করলো। নাদিয়াকে তার একদমই ভালো লাগেনা। সবসময় তাকে কড়া কথা শোনায়। ইনি নাকি তার আম্মুর বন্ধবী? কীভাবে সম্ভব?
মিসেস জয়নাব নাদিয়াকে বললেন
– খেয়ে নিবি চল। আজকে আমি অনেকদিন পর রান্না করেছি।
হেমলতা গম্ভীর স্বরে বললো
– আন্টিরও কি পেট খারাপ নাকি?
মিসেস জয়নাব হেমলতার দিকে কঠোর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন
– সবার সাথে ফাজলামি করতে নেই, হেম।
– আচ্ছা।
মিসেস জয়নাব ও নাদিয়া ডাইনিং রুমে চলে গেলেন।
ইশ মোবাইলটা এখন কাছে থাকলে কতো না ভালো হতো। জাদিদ কী করছে কে জানে। ফোন বা ম্যাসেজ করছিনা বলে কি ও রাগ হচ্ছে? সকালে দেখা করার কথা বলেছিলো ঘুমের ঘোরে কী না কী বলেছে জাদিদকে সে।
ঢাকায় পৌঁছে গেছে কিনা নাকি এখনো বাসে? উফ কেমন যেন অস্থির লাগছে জাদিদের জন্য।
একা একা কী করছে? খেয়েছে কিনা?
জাদিদের মোবাইল নাম্বারটাও ওর মুখস্থ নেই। মিম্মার কাছে মোবাইল নাম্বার আছে। কিন্তু ওর কাছে চাইতে কেমন সংকোচ হচ্ছে। যদিও এখন ও সব জানে।
খাওয়া শেষ করে এঁটো প্লেট নিয়ে রান্নাঘরে রেখে নানীর রুমে ঢুকেই মোবাইল খুঁজতে শুরু করলো। ড্রেসিং টেবিলের উপর মোবাইল রাখা। নানীর মোবাইলে মিম্মার নাম্বার সেভ করা আছে। নানী তার স্কুলের বুয়ার নাম্বারও সেভ করে রেখেছিলেন।
মিম্মাকে ফোন দিলো।
– আসসালামু আলাইকুম নানী।
– আরে আমি হেমলতা।
– তাই বলে সালামের উত্তর দিবি না?
– হ্যাঁ দিবো। অলাইকুম আসসালাম।
– তো আপনি কেনো ফোন করেছেন?
– জাদিদের নাম্বারটা দেতো। আমার মোবাইল আব্বুর কাছে।
-ইশ!
– দে না।
– আমি তো আর তার নাম্বার মুখস্থ করে রাখিনি। আমি ম্যাসেজ করে পাঠাচ্ছি।
– আচ্ছা।
কিছুক্ষণ পর ম্যাসেজ করে মোবাইল নাম্বার পাঠালো মিম্মা।
হেমলতা ফোন দিলো। কয়েকবার রিং বাজার পরে জাদিদ ফোন রিসিভ করলো।
আননাউন নাম্বার দেখে প্রথমে রিসিভ করতে চায়নি। পরে বারবার রিং বাজাতে রিসিভ করলো। হয়তোবা বাবার মোবাইলে চার্জ নাই তাই অন্য নাম্বার দিয়ে ফোন করেছে।
– হ্যালো।
হেমলতার মনে হলো অনেক দিন পর জাদিদের কণ্ঠ সে শুনছে। কিন্তু সকালেই বেশকিছু সময় কথা হয়েছে।
এদিকে জাদিদ বারবার হ্যালো হ্যালো বলেই যাচ্ছে। হেমলতা চোখ বুজে বললো
– হেমলতা বলছি।
– ওহ। এটা কি তোমার নতুন নাম্বার?
– নাহ, নানীর।
– বলো কী? তোমার মোবাইলের কী হয়েছে? সবাই সব জেনে গেছে? এইজন্য মোবাইল নিয়ে নিছে?
– পাগলের মতো কীসব বলছো? মোবাইল আব্বুর কাছে।
– নাহ আমি ভাবলাম তুমি যে পরিমাণ বোকা তাতে ধরা খাওয়া খুব ইজি।
– ধরা খেলে যোগাযোগ অফ হয়ে যাবে।
– যোগাযোগ অফ হলে কীভাবে হবে? আমি একদিনও কথা না বলে থাকতে পারবোনা হেম। এমনিতেই কবে তোমাকে দেখবো তার নাই ঠিক। তার উপর যদি কথা না হয়। তাহলে আমি কীভাবে কী করবো?
– আরে আমি ধরা খাচ্ছিনা।
– সাবধানে থাকবা। আর মোবাইল নাম্বার মুখস্থ করো এখনি। আর আমার নাম্বার ডিলিট করো প্লিজ।
– আচ্ছা করছি। তুমি কি পৌঁছে গেছো?
– না। ফেরিতে কেবল বাসায় যেতে সময় লাগবে।
– পৌঁছে গেলে ম্যাসেজ দিও।
– মোবাইল তোমার কাছে থাকবে?
– না।
– আমি তাহলে ম্যাসেজ, ফোন কিছুই করতে পারবোনা। তোমার সময় হলে তুমি করবা। অতিরিক্ত আবেগে পড়ে আমি তোমাকে হারাতে চাইনা। বুঝতে পারছো কী বলেছি???
চলবে….!
© Maria Kabir
” লেখিকা মারিয়া কবির এর সকল লেখা দ্রুত পেতে অবশ্যই এ্যাড হোন তার ফেসবুক পেইজ ‘Maria Kabir – মারিয়া কবির'(এখানে পেইজ লিংক) এর সাথে।
২০২০ বই মেলায় প্রকাশ পেতে যাচ্ছে মারিয়া কবির এর প্রথম উপন্যাস ‘যেখানে সীমান্ত তোমার আমার’।
মারিয়া কবির এর নতুন সব গল্প উপন্যাস পেতে আমাদের।সাথেই থাকুন।
ধন্যবাদ।
https://www.facebook.com/Maria-Kabir-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%BE-%E0%A6%95%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B0-109272590471736/