ডুমুরের ফুল ১৫.
– যদি ও আসবেনা তাহলে আমাকে কেনো বললো
অপেক্ষা করতে?
জাদিদের প্রশ্নে মিম্মা ঠিক কি উত্তর দিবে বুঝতে পারছে না। হেম আর জাদিদের মধ্যে কী চলছে সেটাই তো মিম্মা ভালোভাবে জানেনা। পরীক্ষার মধ্যে হেমলতার সাথে তেমন কোনো কথা হয়নি। মিম্মা কোনো উত্তর দিচ্ছে না বলে জাদিদ চাপাস্বরে বললো
– তোমার বন্ধবী চায় কী বলোতো? সকালে ফোন দিলাম। বললাম, আমি চলে যাচ্ছি। একটু দেখা করবে?
ও রাজি হলো। সময় বললাম কিন্তু ১ ঘণ্টা হয়ে গেছে হেমলতার খোঁজ নাই। বলো এভাবে আমাকে অপেক্ষায় রাখার কোনো মানে হয়?
– আসলে আমার সাথে ওর আর কোনো কথা হয়নি। আমি ওকে ফোন দিয়ে দেখি কী বলে। তারপর জানাচ্ছি।
– ওকে বলবা, জাদিদ চলে গেছে। আর দেখা করার প্রয়োজন নেই।
জাদিদ ফোন কেটে দিলো। এখনো ১ ঘণ্টা সময় আছে।
দুপুরের খাবার টা এখনি খেয়ে নিলে ভালো হয়। ফেরির মধ্যে খাওয়া দাওয়া করতে জাদিদের বিরক্ত লাগে।
মিম্মা হেমলতার ফোনে ৩ বার ফোন দিয়েও পেলো না। বাধ্য হয়ে মনোজ সাহেবকে ফোন দিলেন। প্রথম বারেই রিসিভ হলো। মিম্মা সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করে জিজ্ঞেস করলো
– হেমলতা তো ফোন রিসিভ করছেনা। ও কি এখন সুস্থ?
মনোজ সাহেব বললেন
– রাতে নাকি ঘুমাতে পারেনি। ভোরের দিকে ঘুমিয়েছে। আমি একটু আগেই ওকে দেখে এসেছি। বেহুশ হয়ে ঘুমাচ্ছে। ওর ফোন আমার কাছে, সাইলেন্ট করা তাই আমিও রিসিভ করতে পারছিনা।
– তাহলে আমি হসপিটালে গিয়ে ওকে একটু দেখে আসি।
– আচ্ছা যাও। তবে ঘুম যদি না ভাঙে তাহলে ঘুম ভাঙানোর চেষ্টা করো না।
– ঠিকাছে।
জাদিদকে ফোন দিয়ে মিম্মা ঠিক কীভাবে শুরু করবে বুঝতে পারছেনা।
জাদিদ বললো
– কিছু বলবা?
– হেমলতার মোবাইল ওর বাবার কাছে। রাতে না ঘুমাতে পারেনি, ভোরের দিকে ঘুমিয়েছে।
– তাহলে আমার সাথে কে কথা বললো? হেমলতারই ভয়েস।
মিম্মা হেসে বললো
– ও ঘুমের মধ্যে তোমার সাথে কথা বলেছে। আর কিছুই ওর মনে নেই। ঘুম থেকে ওঠার পরে কথা বলার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে দেখবা কিছুই মনে করতে পারছেনা?
জাদিদ অবাক হয়ে বললো
– তাইনা? আমি আরো কী না কী ভেবে রাগ জমাচ্ছি। তবে একটু দেখা করতে পারলে শান্তি পেতাম।
মিম্মা ঠিক করলো প্রশ্নটা করার এখনই উপযুক্ত সময়। কী বলবে গুছিয়ে নিয়ে বললো
– জাদিদ তোমার আর হেমলতার মাঝে কিছু একটা চলছে নাকি?
– কেনো?
– ফ্রেন্ডশিপে না এরকম কিছু হয়না। একটু দেখা করতে পারলে শান্তি পেতাম এই টাইপ কথা….. বুঝতেই পারছো কী বুঝাচ্ছি।
– উমম আসলে গতকাল মানে আমি আর হেমলতা একটা কমিটমেন্টে এসেছি। আমার হেমকে প্রচণ্ড ভালোলাগে। ওরও নাকি আমাকে ভালোলাগে। তাই বুঝতেই পারছো মিম্মা…..
– হেমলতাকে তোমার ভালোলাগে? অবিশ্বাস্য ব্যাপার তো! সত্যি নাকি ওর সাথে মজা করতেছো?
– তোমার কি মনে হয় আমি এসব সিরিয়াস বিষয় নিয়ে ওর সাথে মজা করবো?
– তোমার সাথে তো অন্য লেভেলের বা ঠিক অন্য ধরনের মেয়েদের মানায়। দেখো কথাগুলো বলার কারণ আছে।
– কিন্তু আমার ওকে ভালোলাগে।
– যাই করো, শেষ মেষ যেন আমার সন্দেহ টা ঠিক না হয়।
– চেষ্টা করবো। আর একটা কথা হেমলতার সাথে আমার সম্পর্ক আছে এটা যেন আর কেউ না জানে।
– কেনো?
– কারণ আমার পিছনে যারা লেগে আছে তারা হিংসার বশে ওর সাথে ঝামেলা করতে পারে।
– যুথি জানলে তো হেমলতার মাথার চুল ছিঁড়ে ফেলবে।
– ভালো কথা মনে করেছো। যুথির থেকে হেমলতাকে দূরে থাকেতে বলবা। ফ্রেন্ডশিপ আছে জেনেই মেয়েটা খেপে আছে।
– যুথি তো যুথিই।
আচ্ছা রাখি। হেমলতাকে একটু দেখে আসি। তোমার বাস কটায়?
– এইতো আর ৪০ মিনিট পরেই। পারলে ফোনে একটু কথা বলায় দিও।
– আচ্ছা, রাখি।
হেমলতার ঘুম ভাঙলো মিম্মার ডাকে। মিম্মা ইচ্ছাকৃতভাবে ডেকে উঠিয়েছে। যদিও মনোজ আংকেলের কথা না রাখতে পারায় খারাপ লাগছিলো।
হেমলতা চোখ মুছতে মুছতে বললো
– কেবলমাত্র একটু ঘুমালাম আর তুই ডেকে তুললি।
– ম্যাডাম এখন ১২ টা বাজে। আর কতো ঘুমাবেন?
– রাতে ঘুম আসেনি, ভোরের দিকে ঘুমাতে গেছি।
– কেনো জাদিদের সাথে রাত ভর মিষ্টি মিষ্টি কথা হয়েছে নাকি?
হেমলতার চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেলো। মিম্মা কীভাবে জানলো? সে তো এখনো কিছুই বলেনি। আর রাতে তো কথা হয়নি।
– ওর সাথে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলতে যাবো কেনো?
– জাদিদের সাথে তোমার কী চলে আমি সব জানি।
– কীভাবে?
– জাদিদ বলেছে। তোমার সাথে নাকি ওর দেখা করার কথা ছিলো?
– না তো।
– ও সকালে তোকে ফোন দিয়েছিলো। তুই নাকি বলেছিস যাবি দেখা করতে। বেচারা অপেক্ষা করতে করতে বুড়ো হয়ে গেছে।
– কই আমাকে তো ও ফোন দেয়নি।
হেমলতা পাগলের মতো ফোন খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
মিম্মা হেসে বললো
– মোবাইল তোর বাবার কাছে।
– এখন কথা কীভাবে বলবো?
– আমারটা দিয়ে বল।
– কিন্তু আমি যে ওকে মিথ্যা আশায় রাখলাম। ও রাগ করবেনা তো আমাকে?
– রাগ করবে ক্যান? আমি ওকে বলেছি তোর ঘুমের মধ্যে কথা বলার অভ্যাস আছে।
– তারপর?
– রাগ পড়ে গেলো। আচ্ছা হেমলতা তোর কি মনে হয় ও সত্যিই তোকে ভালোবাসে বা পছন্দ করে?
– আমার তো সত্যিই মনে হলো।
– দ্যাখ ও কিন্তু নরমাল ছেলে না। ওর লাইফ স্টাইল কিন্তু তোর সাথে যায়না। অনেক মেধাবী ছেলে আর দেখতেও অসম্ভব সুন্দর। ওর ক্যারিয়ার অনেক ভালো হবে। ওর লাইফে যুথির মতো মেয়ে এখনই আছে। সামনে আরো হাই সোসাইটির মেয়ে আসবে। ও যে তোকে ছেড়ে দিবেনা এর কোনো গ্যারান্টি নাই। ওকে আমি বা তুই কেউই ভালোভাবে চিনি না। ও কিন্তু ইন্ট্রোভার্ট টাইপের ছেলে।
ওর বাবার অনেক সম্পত্তি আছে। এ কথা গুলো তোর কাছে তিক্ত লাগতে পারে কিন্তু এটা ভেবে দেখা উচিৎ তোর। এখনো তোদের মাঝে তেমন গভীর কোনো সম্পর্ক তৈরি হয়নি। এখন আলাদা হয়ে গেলে খুব একটা কষ্ট পাবিনা কিন্তু যদি আরো পরে খারাপ কিছু হয় তাহলে কিন্তু তুই একেবারেই শেষ হয়ে যাবি। আমি তোর বেস্ট ফ্রেন্ড, তোর খারাপ হোক আমি চাইনা।
– ও ঢাকা যাওয়ার পরে আমি ওকে জিজ্ঞেস করবো। এখন একটু কথা বলি?
হেমলতার চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। খুব ফর্শা মানুষ গুলো যখন কান্না, রাগ বা কষ্ট গুলো চেপে রাখার চেষ্টা করে তখন তাদের চোখ মুখ মনে হয় লাল হয়ে যায়! মিম্মা জাদিদের নাম্বারে ফোন দিয়ে হেমলতার হাতে দিয়ে বললো
– কথা বল।
ফোনের ওপাশ থেকে জাদিদের কণ্ঠ ভেসে আসলো
– হ্যালো
হেমলতা কাশি দিয়ে গলা ঠিক করে বললো
– আমি ঘুমিয়ে ছিলাম মানে…..
– আমি বুঝতে পেরেছি।
– স্যরি।
– হেম, স্যরি বলার কিছুই হয়নি। আমার বোঝা উচিৎ ছিলো তুমি অসুস্থ। এখন ঠিক আছো?
– হ্যাঁ। তোমার বাস কটায়?
– এইতো ১৫ মিনিট পরেই।
– দুপুরে কিছু খেয়েছো নাকি না খেয়েই যাচ্ছো?
– হ্যাঁ, খেয়েছি। ওখানে গিয়ে কখন খাবো তার কোনো ঠিক নেই।
– ম্যাসে উঠবা নাকি আলাদা বাসায়?
– আলাদা বাসায়।
– রান্না বা অন্যকাজের জন্য কোনো লোক রাখবা না?
– হ্যাঁ তাছাড়া তো আমার থাকা অসম্ভব। পড়বো নাকি রান্নাবান্না করবো?
– তাও কথা। আর হাবিজাবি কম খাবা।
– তারপর….
– নিজের যত্ন করবা। পড়তে পড়তে পাগল হয়ে যেয়ো না।
– আমি তো তোমার শাসনে পাগল হয়ে যাবো।
– কীসব বলো!
– ঠিকই বলছি। আচ্ছা রাখি হেম, আমার প্রায় সময় হয়ে এসেছে যাওয়ার।
– bye
– love you
কথাটা বলে জাদিদ মোবাইলে একটা চুমু দিয়ে বললো
– সামনে থাকলে চুমুটা তোমার…..
– ছিঃ
জাদিদ হাসতে হাসতে বললো
– আচ্ছা রাখি।
মিম্মা হাসি চেপে রেখে বললো
– প্রেম কী জিনিস এখন বুঝবা! ছিঃ ছিঃ করে লাভ নেই।
জাদিদ বাসের ভিতরে নিজের সিট খুঁজে নিয়ে বসে পড়লো। আর মাত্র ৫ মিনিট বাকি। তারপর জীবনের অনেক বড় একটা যুদ্ধে নামতে হবে তাকে। বাবার দেয়া কথাটা যে তাকে রাখতে হবে! হেমলতার আদেশ গুলো মানতে হবে। মা…. সেতো কোনো কথাই বলেনি। ফোন দিয়েছিলো জাদিদ কিন্তু রিসিভ করেনি। হয়তোবা ব্যস্ত। সেও তো মানুষ…. তাকেও তো বাঁচতে হবে।
জাদিদের হঠাৎ মনে হলো, মাকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ চোখ বুজে থাকতে পারলে বুকের ভেতরে সাহসটা ফুলে ফেঁপে উঠতো।
চলবে……!
© Maria Kabir
” লেখিকা মারিয়া কবির এর সকল লেখা দ্রুত পেতে অবশ্যই এ্যাড হোন তার ফেসবুক পেইজ ‘Maria Kabir – মারিয়া কবির’(এখানে পেইজ লিংক) এর সাথে।
২০২০ বই মেলায় প্রকাশ পেতে যাচ্ছে মারিয়া কবির এর প্রথম উপন্যাস ‘যেখানে সীমান্ত তোমার আমার’।
মারিয়া কবির এর নতুন সব গল্প উপন্যাস পেতে আমাদের।সাথেই থাকুন ধন্যবাদ।