ঝুমুর পর্ব-০৩ এবং শেষ পর্ব

0
3558

ঝুমুর
শেখ নুরইসলাম
পর্ব নং:- ০৩/ শেষ

মায়ের কথায় কেমন যেন আমার একটু সন্দেহ বৃদ্ধি পেল। তাই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে মায়ের সাথে নিরিবিলি কথা বলতে হবে। হয়তো কিছু জানলে ও জানতে পারে। তা না হলে রশিদ চাচাকে আগে খবর না দিয়ে মা পুলিশকে কেন ফোন করতে বলল।

সত্যি করে বলোতো মা, তুমি কিছু কি জানো?
– দেখ তুই কিন্তু আমারে একটু সন্দেহ বেশি করতেছিস। তোর কথার অনুমানে আমি বুঝতেছি।
– সত্যিটা আমারে বলো কেউকে বলবো না। আমি যতটুকু জানি ততটুকুই বলেছি এত সময় ধরে। বাকিটা তুমি না বললে কিভাবে কি হবে। কে বা কারা এই হত্যার সাথে জড়িত এবার তো সব ঘোলা হয়ে গেছে তুমি সেভ থাকবে। তুমি আমাকে জানিয়ে দেও, আমি পুলিশদের ম্যানেজ করে নিবো।
– আমার ভয় করতেছে।
– কাহিনী তো জমে গেছে, সকলের নজর এখন এখন আমার কথার প্রতি। তুমি এই ঘটনার সাথে সেদিন যাকে যাকে দেখেছ একান্ত আমাকে নামটা বলো।
– দেখিস যেন আবার আমাকে সাক্ষী হিসেবে কোর্টে যেন যাওয়া না লাগে।
– কাহিনি যেভাবে জমিয়েছি তাতে কী মনে করো তুমি? দেখো না কি করি। তুমি তো তাদের নিজ চোখে দেখেছ, তাদের দেখলে চিনতে পারো, তাহলে আর ভয় কিসে। অপরাধী বাহিরে ঘুরে বেড়াবে আর নিরপরাধ মানুষ জেলের ভেতরে থাকবে। দেখো মা তোমার কথার উপরে এখন অনেকটা নির্ভর করতেছে।
– পুলিশ তো আজ না হলে কাল এসব তথ্য বের করে ফেলবে। আমার ভয় করতেছে তবু ও একান্ত তোকে বলব। আর কেউ যেন না জানে।
– আচ্ছা ঠিক আছে।
( আসলে আপনাদের কাছে শুরুতে যে ঘটনাটা বলেছি ওটা ছিলো একটা আমার আর মায়ের সাজানো অভিনয়। কারন মা জানে কে বা কারা মেয়েটাকে মেরেছে, এখনো পর্যন্ত তাদের নাম আমাকে বলি নেই তবে। মা আমাকে না জানিয়ে তখন পুলিশ কিংবা এলাকাবাসীকে জানাতে পারতো। কিন্তু সেটা ভয়ে করে নি, যদি কেউ কোনো আমাদের ক্ষতি করে। মায়ের এসব চুপ থাকাটা আমার কাছে এখনো পর্যন্ত মনে হচ্ছে হয়তো কোনো ক্ষমতাসীন ব্যক্তি এর সাথে যুক্ত আছে। মা যেদিন এঘটনা দেখেছিলো সেদিন রাতেই আমাকে বলেছিলো। তারপর জার্মানিতে বসেই একটা নাটক লিখে ফেলি। সুচনাটা কিছুটা থ্রিলার কেন্দ্রীয় হবে। হয়েছে ও ঠিক তাই। কিন্তু শেষ কিভাবে করব ভাবতে পারতেছি না। শুভ হবে কি না সেটি মায়ের পরবর্তী কথায় জানা যাবে। )
– আসলে সেদিন সন্ধ্যায় আমি বাজার থেকে বাড়িতে আসতেছিলাম, এমন সময় রবিদের বাগান থেকে ফিস ফিস আওয়াজ পাচ্ছিলাম লোকের। এই বাগানে এমন সময় নেশাখোরেরা ছাড়া আর কেউ প্রবেশ করে না। তবে মাটি খোড়ার শব্দ পাচ্ছিলাম।
এজন্য কি যেন মনে করে এক পা দু পা করে বাগানের দিকে এগিয়ে ঝোপের আড়াল থেকে ভেতরে চোখ দিতেই দেখি চেয়ারম্যান এর ছেলে তমাল ও রাজ্জাকের ছেলে সবুজ। আর কিছুদুরে ছোট একটা মেয়েকে শোয়ানো দরখলাম। ওরা দুজন মাটি খুড়তেছে, চোখে মুখে আতঙ্কের একটা ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে। তাই কিছু ক্ষণ ওখানে দাড়িয়ে দেখতেছি কি করে, মুখ দিয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছি না যদি আমার উপর তাদের হাতে থাকা কোদাল দিয়ে আঘাত করে। এর পর যখন গর্তের ভেতর মেয়েটাকে টেনে এনে ফেলতেছে তখন দেখতে পেলাম ঝুমুর এর মুখ। সেখান থেকে তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসি, ভয়ে কেউকে কিছু বলিনি।
– তুমি নিশ্চিত যে এদুজনই ছিলো?
– আমার দেখায় ভুল না হলে এদুজনই।
– আচ্ছা।

কিছুক্ষণ রুমে বসে একা একা চিন্তাভাবনা করে এই কেসের যে অফিসার তার ফোন নম্বর নিয়ে এসেছিলাম তাই তাকে ফোন করলাম। ওপাশ থেকে ফোনটা রিসিভ হলো।
– আসসালামু আলাইকুম, আমি সিয়াম বলতেছি। ওই ঝুমুর নামের মেয়েটার কেসের সেই ব্যক্তি।
– ও আচ্ছা, তো বলুন কি খবর খবর?
– ঝুমুরের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কি কিছু জানতে পেরেছেন?
– ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসতে ১ দিন সময় লাগবে।
– আপনাদের ওখান থেকে আসার পর আবার আমার সাথে একই ঘটনা ঘটেছে। হয়তো এই কেসের নতুন মোড় ঘুরতে পারে।
– কি ঘটনা?
– বুঝতেছিনা! আমার সাথে কেন?
– বলেন কি ঘটনা শুনি?
– আসলে দুপুরে যখন ঘুমিয়েছি তখন স্বপ্নে দেখলাম সুমি এসে আামাকে ধন্যবাদ দিতেছে।
– আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার সাথে কিভাবে কি হলো।
– সে কিছু বলে না।
– আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, কে কে করেছে তুমি জানো৷?
– তখন সে আবারো চুপ।
তখন আমি তাকে বললাম, তুমি না বললে আমার সাথে দেখা দিতেছ কেন? আমার পরিবারকে সকলে সন্দেহ করতেছে। বলতেছে হয়তো আমার পরিবারের কেউ না জড়িত আছে। না হলে এইভাবে এতদিন পর ওই বাগানে খোঁজ পাই কিভাবে আমি। সকলে বলতেছে হয়তো আমি বিদেশ থেকে এসে পরিবারের লোকদেরকে বাঁচানোর জন্য এসব নাটক করতেছি।
তখন সে শুধু দুইটা নাম বলল আর চোখের সামনে থেকে স্বপ্নে ভ্যানিস হয়ে গেল। সেই থেকে ঘুম ভেঙে গেছে আর মাথার ভেতর শুধু নামদুটো ঘুরতেছে। তবে এটা যে সত্যি তাই কিন্তু আমি বলতে পারি না।
– আচ্ছা বলেন তো।
– আমার কথা কিন্তু কেউকে বলবেন না, আর এটা দেখেছি স্বপ্নে ঝুমুর এসে বলেছে। কতটুকু সত্যতা আপনারা যাচাই করবেন।
– ঠিক আছে, নামটা বলে।
– চেয়ারম্যান ও রাজ্জাক এই দুটো নাম বলে চলে গেল। আমার ঘুম ভেঙে গেছে তখন।
– আচ্ছা, আপনার কথাটা আমরা আমলে নিয়ে কাজে নেমে পড়তেছি।
– ধন্যবাদ আপনাকে, তবে যেন এই বিষয়ে আমার নাম সামনে না আসে। বোঝেন তো কোনো প্রকার শত্রুতার সাথে জড়াতে চাই না।
– এক ভয় পেলে চলবে।
– ভয় না পেয়ে কি উপায় আছে, যাক এসব কথা। তবে এসবের একটু মুল্যায়ন করে কাজ করবেন।
যাক ডোজটা দিয়ে দিলাম, বাকিটা পুলিশ বের করে নিবে।

দুইদিন পর জানতে পারি ঝুমুরে মৃত্যু হয়েছে নরপশুদের পশুর মতো নির্যাতনে ও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে। পুলিশ সবুজ ও তমালকে ধরেছে আজ দুপুরে। জিজ্ঞাসা বাদের জন্য নিয়েছিলো। তারা সত্যতা স্বীকার ও করেছে, কিভাবে মেরেছে তার ও বর্নণা দিয়েছে। কাদেরের পরিবার এ দোষ থেকে মুক্তি পেয়েছে।

আজ আমাদের মানসিকতা কোথায় গিয়ে পৌছেছে ভাবা যায়। এতটুকু একটা শিশু মেয়ে ও এই নরপশুদের থেকে রেহাই পাচ্ছে না। কোথায় গিয়ে পৌছেছে আমাদের মূল্যবোধ। আমাদের এসবের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে। শিশু বয়স থেকে সন্তানদের সামাজিক মুল্যবোধ সম্পর্কে ধারনা দিতে। সন্তাদের কে প্রথমে মানুষের মতো মানুষ করতে শিখতে হবে পরে ডাক্তার, ইন্জিনিয়ার ইত্যাদি ইত্যাদি।

________________সমাপ্ত___________

ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে