#জীবন_পেন্ডুলাম
#পর্ব_৩৮
তাজরীন ফাতিহা
শীতের আমেজ চারপাশে বিরাজ করছে। আকাশে হালকা রোদ উঁকি মারছে। মেঘের কারণে সূর্য ছেয়ে আছে। মেঘ আর রোদের দারুন লুকোচুরি খেলা চলছে। রায়হান জ্যাকেট গায়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। মনটা তার বিষন্নতায় ঘেরা। আজকে তিনদিন হলো ইফরার কোনো খোঁজ নেই। বিষন্ন মনে রায়হান আকাশের দিকে তাকিয়ে রবের উদ্দেশ্যে নানা কথা বলে চলছে। প্রতিদিন যেই কথাটা রবকে উদ্দেশ্য করে সবচেয়ে বেশি বলে তা হলো,
“আল্লাহ আমাকে স্বস্তি দাও।”
এর মধ্যেই বাসার দরজা কে যেন পিটিয়ে উঠলো। রায়হানের ধ্যান ভঙ্গ হলো যেন। মন খারাপি নিয়েই দরজা খোলার উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করলো। রাহমিদ এর মধ্যেই দরজা খুলে দিয়েছে।
এই তিনদিন বাড়ির সবচেয়ে আশ্চর্যকর বিষয় ছিল সবাই চিন্তিত থাকলেও রাহমিদ ছিল রিল্যাক্স। খেয়েছে, ঘুমিয়েছে, স্কুলে গিয়েছে আবার খেলাধুলাও করেছে। রুদ প্রায়ই সন্দেহের নজরে তার দিকে তাকিয়েছে। বোনকে তাকাতে দেখলেই খানিক দুঃখী দুঃখী ভাব আনার চেষ্টা করেছে। ইফরার দাদি তো বলেই বসেছেন,
“এই ছোট্টডার মইধ্যে চরম ঘাপলা আছে। ওয় আমার সোনার নাতিনডারে আবার ভাগাইয়া দেয় নাই তো? ওর নজরও কেমন যেন। ছোডো হইলে কি হইবো? নজর তেমন সুবিধার লাগে না। কেমন নষ্ট নষ্ট।”
রাহমিদ তো এই কথা শুনে রেগে বোম হয়ে গিয়েছিল। তৎক্ষণাৎ বলে উঠেছিল,
“আমার নজর নষ্ট মানে? আমি আপনার কোথায় নজর দিয়েছি যে এরকম কথা বললেন। হ্যাঁ, আপনার সোনার নাতিনকে আমিই ভাগিয়েছি। বেশ করেছি। আরও ভাগাবো। আসার পর থেকে খালি খুঁচিয়েই যাচ্ছে। যেন আমি তার কোন বাড়া ভাতে ছাই দিয়েছি। হুহ!”
রাহমিদের কথা শুনে দাদি থতমত খেয়ে গিয়েছিল। দাদি নষ্ট নজর বলতে খারাপ কিছু মিন করেননি। ইফরা চলে যাওয়ায় রাহমিদকে রিল্যাক্স হয়ে ঘুরতে ফিরতে দেখে বলেছেন ওকে রাগাতে। এই বিচ্ছুর সাথে তার ঝগড়া করতে ভালোই লাগে। একটু বিনোদন পাওয়া যায়। তাই বাচ্চাটাকে খোঁচায় সে। এতে ইফরার কথা সাময়িক ভুলতে পারে।
______
রায়হান ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো রাহমিদের ফিসফিস কণ্ঠে। দরজা খুলে মাথা হালকা বের করে কার সাথে যেন নিচু কণ্ঠে কথা বলছে। রায়হান এগিয়ে গিয়ে রাহমিদকে সরিয়ে দেখলো বোরকা পরিহিত তিনজন দাঁড়িয়ে আছে। রায়হান ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। রাহমিদ কাঁচুমাচু করছে। রায়হান স্বাভাবিক হয়ে জানতে চাইলো,
“কাকে চাচ্ছেন?”
বোরকা পরিহিত একজন বলে উঠলেন,
“আপনার বউকে দিতে আসলাম।”
রায়হান চমকে উঠলো যেন। বিদ্যুত খেলে গেলো যেন তার পুরো শরীরে। কথাটার মানে বুঝে উঠতে সময় লাগলো তার। তাই আবারও জিজ্ঞেস করলো,
“কি বললেন?”
বোরকা পরিহিত নারীটি আবারও বলে উঠলেন,
“কিছু বলছি না। দেখে নিন।”
বলেই পিছন থেকে বোরকা পরিহিত একজনকে টেনে রায়হানের দিকে ঠেলে দিলো। রায়হান এখনো বুঝে উঠতে পারছে না কিছু। রাহমিদ পরিবেশ স্বাভাবিক করতে বলে উঠলো,
“আরে ভাইয়ু ওনাদের বসতে দাও। ভাবির আত্মীয় হবেন মনে হয়।”
ভাবি কথাটা রায়হানের কানে ঝিঁঝিঁ করে বাজছে। রাহমিদ ভাইকে ধাক্কা দিলো। ছোট ভাইয়ের ধাক্কায় রায়হান ভাবনা থেকে বেরিয়ে ওনাদের ভিতরে বসতে বললো। তিনজনই ভিতরে ঢুকে গেলো। কারো দিকে না তাকিয়ে রায়হান নিজের রুমে চলে গেলো। রাহমিদ ভাইকে চলে যেতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। ইফরাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
“এতোদিন কোথায় ছিলে ভাবি? ভাইয়ু ভীষণ রেগে আছে তোমার উপর।”
ইফরা নড়েচড়ে উঠলো। ঢোক গিলে বলে উঠলো,
“বেশি রেগে আছে নাকি?”
“ভীষণ ভীষণ রেগে আছে। ভাইয়ু এই কয়দিন তোমার বিরহে কাতর হয়ে গিয়েছে। আমাদের সাথেও আগের মতো কথা বলেনি। যদি কোনভাবে জানে আমি আছি তোমার চলে যাওয়ার পিছনে আমাকে সুদ্ধ বাসা থেকে বের করে দিবে। এখন বিরাট ভয়ে আছি।”
কথাটি শেষ হতেই কেউ তার কান টেনে ধরলো। বলে উঠলো,
“আমি বুঝছিলাম এইডা বহুত সেয়ানা। মাগো কিছু কইলেই ছ্যাত কইরা উঠতো। তোর চোরা নজর দেইখাই আন্দাজ করছিলাম কিছুতো একটা গড়বড় করছস। মাগো মা পিচ্চির বুদ্ধি কত?”
কথাগুলো বলেই দাদি হাঁপিয়ে উঠলেন। রাহমিদ কান ছাড়াতে ছাড়াতে বললো,
“শুধু আমার দোষ ধরছেন কেন? আপনার নাতিন আমার মতো পিচ্চির কথা শুনেছে কেন? আমাকে হেনস্থা করতে সারাক্ষণ খালি ওত পেতে থাকেন নাকি?”
দাদির হাত থেকে ছাড়া পেয়েই রাহমিদ ভোঁ দৌড় দিয়ে অন্যপাশে চলে গেলো। রুদ এতক্ষণ বাথরুমে ছিল। বাথরুম থেকে বেরিয়ে সবার এমন চিৎকার চেঁচামেচি দেখে বুঝে উঠতে পারলো না কিছুই। ইফরা এতক্ষণে নিকাব উঠানোর স্কোপ পেলো। নিকাব উঠিয়ে খাটের পাশে রাখলো। এখন তারা সবাই রাহমিদ, রুদের রুমে অবস্থান করছে। দাদি ছিল রায়হানের রুমে নামাজে। সেখান থেকেই আওয়াজ পেয়ে নামাজ শেষ করে দ্রুত উঠে এসেছে।
যেহেতু রুম মাত্র দুইটা তাই ইফরার মা, বাবা যেদিন এসেছিলেন সেদিনই চলে গিয়েছেন। দাদি ইচ্ছে করেই থেকে গিয়েছেন। তার কথা হলো, নাতনিকে না পাওয়া পর্যন্ত সে এক পাও নড়বে না।
রুদ ভাবিকে দেখে দৌঁড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো। ইফরাও রুদকে জড়িয়ে ধরলো। দাদি এটা দেখে বলে উঠলেন,
“আমি যে সামনা খাড়াই আছি তুই তো আমারে পাত্তাই দেস না। ও দেবর, ননদ পাইয়া এই বুড়িরে ভুইলা গেছস?”
ইফরা উঠে এসে বললো,
“তোমারে ভুলতে পারি? তুমি ছাড়া আমার আছে কেডা বুড়ি?”
“হইছে হইছে আর ঢং করোন লাগতো না। বোরকা, হিজাব খুল।”
“রুমে গিয়ে খুলবো। দাদি এরা আমার বান্ধবী ফিহা আর ফিহার খালা। ফিহার বাসায় এই তিনদিন ছিলাম।”
এতক্ষণ যে রুমে তারা ছাড়াও আরও দুইজন আছে তা ভুলেই গিয়েছিল সবাই। দাদি দুজনের হাত ধরে বললো,
“তোমগো অনেক অনেক শুকরিয়া। আমার অবুঝ নাতিনডারে ফিরাইয়া দেওনের লাইগ্যা।”
ফিহা হাসিমুখে বললো,
“আরে না দাদি। আমরা কিছুই করিনি। সবই উপরে যে বসে আছেন তার ইশারা। আমরা তো স্রেফ উছিলা মাত্র। আপনার নাতিনকে আপনাদের হেফাজতে রেখে গেলাম। দেখে রাখবেন। আমরা এখন উঠবো।”
ইফরা বললো,
“এখনই উঠবি কেন? কিছু মুখে দিয়ে যা।”
ফিহা দাঁড়িয়ে বললো,
“নারে সময় হবে না। অন্য একদিন আসবো। এখন আসি।”
“এরকম খালি মুখে যাবি? আমার খারাপ লাগছে।”
ইফরার দাদিও বলে উঠলেন,
“কিছু খেয়ে যাও।”
ফিহা বললো,
“না দাদি। সময় নেই। আসি। আল্লাহ হাফেজ।”
অনেক জোরাজোরি করেও ফিহাকে রাখা গেলো না। সবাইকে সালাম দিয়ে বেরিয়ে গেলো তারা। দাদি এবার ইফরার দিকে ফিরে বললো,
“নাত জামাইয়ের সাথে কথা কইছস?”
ইফরা কাঁচুমাচু করতে লাগলো। দাদি দেখেই বুঝে গেলেন। ইফরাকে ঠেলে বললেন,
“যা নাত জামাইয়ের কাছে যা। বেচারা তিনদিন বহুত কষ্ট পাইছে। বউয়ের কষ্টে সব বেডারাই এমন কষ্ট পায়।”
“একটু পরে যাবো দাদি।”
“একটু পরে না। এহনই যাবি। যাহ।”
দাদি ইফরাকে ঠেলে রায়হানের রুমে পাঠিয়ে দিলো। এরপর রাহমিদের দিকে চাইলো। রাহমিদ দেখে বললো,
“আমার কোনো দোষ নাই এখন। যদি কিছু বলছেন তাহলে কিন্তু আপনাকে আর পান এনে খাওয়াবো না।”
দাদি রাহমিদকে কিছু বলতেই নিচ্ছিলেন। এরমধ্যে রাহমিদের কথায় টনক নড়লো মনে হয়। বললেন,
“ওরে বিচ্ছু, তুই দেহি থ্রেটও মারোস?”
রাহমিদ শার্টের কলার উঁচিয়ে একটু ভাব নিলো। দাদি রুদকে বললেন,
“এই বিচ্ছু কি আসলেই তোগো ভাই নাকি টুকাই আনছে?”
রুদ রাহমিদের কালো মুখের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেঁসে দিলো।
_______
——
অনেকক্ষণ ধরেই ইফরা তাদের রুমে দাঁড়িয়ে আছে। রায়হান বারান্দায় দাঁড়ানো। সে কিছুতেই রায়হানের সামনে দাঁড়ানোর সাহস পাচ্ছে না। হঠাৎ করে রায়হানকে ভয় ভয় লাগতে শুরু করেছে। অনেকক্ষণ পর সামান্য কেশে উঠলো সে। রায়হান তারপরও আসলো না। এবার আগের থেকে জোরে কাশি দিলো ইফরা। রায়হান বারান্দা থেকে রুমে আসলো। এসেই কোনোদিকে না তাকিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।
ইফরা কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। তার উপর কি খুব বেশিই রেগে আছে? ইফরা আস্তে আস্তে রায়হানের পায়ের কাছে বসলো। রায়হান উল্টো দিকে ঘুরে শুয়ে আছে। ইফরা চট করে রায়হানের পা ধরলো। রায়হান হুড়মুড় করে উঠে বসলো। ইফরা তাও পা ছাড়লো না। মুখ নিচু করে পা আঁকড়ে ধরেই থাকলো। রায়হান ঝট করে বলে উঠলো,
“আশ্চর্য পা ধরেছেন কেন? পা ছাড়ুন।”
রায়হান ইফরার থেকে তার পা ছাড়িয়ে আনলো। বললো,
“এখানে এসেছেন কেন? আমি তো খারাপ। এই খারাপ মানুষটার সাথে থাকতে সমস্যা হবে না? নাকি দুঃখ পেতে এসেছেন?”
ইফরা একটা চমকপ্রদ কাজ করে ফেললো। লজ্জার মাথা খেয়ে সোজা রায়হানকে জড়িয়ে ধরলো। মুখে তার কোনো কথা নেই। রায়হান এতোটাই চমকালো যে কথা বলতেই ভুলে গেলো। যে ইফরা একদিন বলেছিল তার অনুমতি ছাড়া স্পর্শ না করতে সেই ইফরাই কিনা তাকে জড়িয়ে ধরেছে? ব্যাপারটা হজম হচ্ছে না তার। ইফরা অনেকক্ষণ পর আস্তে করে বলে উঠলো,
“মাফ করে দিয়েন। আপনাকে না জানিয়ে চলে যাওয়ায় অন্যায় করেছি। ক্ষমা চাচ্ছি।”
রায়হানের মন গললো যেন। সেও ইফরাকে বুকে টেনে বললো,
“দোষটা তো আপনার না। দোষী হলাম আমি। আপনাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি নিজের অজান্তেই। এই অধমকে কি ক্ষমা করা যায়?”
ইফরা রায়হানের বুকে মিশে গিয়ে বললো,
“যায়। ক্ষমা না করলে শয়তান খুশি হবে। আমি কিছুতেই শয়তানকে খুশি হতে দেবো না। আমাদের মধ্যে এখন থেকে আর কোনো দুরত্ব থাকবে না। স্বামী, স্ত্রীর মাঝে যত দুরত্ব বাড়বে শয়তান তত তাদের ছাড়াছাড়ি করাতে পারবে। আমি আপনার মতো মহৎ মানুষকে কিছুতেই হারাতে চাইনা।”
ইফরা রায়হানকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে বললো। রায়হান বুঝে উঠতে পারছে না যে ইফরা সবকিছুতে শয়তানকে কেন টানছে? যাইহোক ইফরা আর তার মাঝে দুরত্ব মিটে গেলে তো ভালোই। আলহামদুলিল্লাহ। রায়হান ইফরার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলতে লাগলো,
“আপনি আমার তাহাজ্জুদের সঙ্গী হবেন? হবেন আমার ইহকাল পরকালের সুখ দুঃখের সাথী? হবেন কি আমার চক্ষুশীতলকারিণী?”
ইফরা চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বললো,
“হবো। সাথে রুদ, রাহমিদের যোগ্য ভাবিও হবো। আপনি কিন্তু আমাকে কখনো ছেড়ে যাবেন না। আমি বাদে অন্য নারীর দিকে ভুলেও তাকাবেন না। আপনি আমার মানে একান্তই আমার। আমার একান্ত বলার ছোটবেলা থেকে কেউ ছিল না। আপনি কি আমার একান্ত বলা মানুষটা হবেন?”
রায়হানকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে ফোঁপাতে লাগলো ইফরা। রায়হান ইফরার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বললো,
“হবো। আমি রায়হান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আমার বউয়ের নামে নিজেকে লিখে দিলাম। যাতে বিচারের দিনে আমার বউ আমার চরিত্রের উত্তম সার্টিফিকেট দিতে পারে। এবার ঠিক আছে?”
ইফরা কান্নার মাঝেই মুচকি হেঁসে বললো,
“হান্ড্রেড পার্সেন্ট।”
চলবে…..
#জীবন_পেন্ডুলাম
#পর্ব_৩৯
তাজরীন ফাতিহা
চারদিক সুস্বাদু খাবারের ঘ্রাণে মৌ মৌ করছে। ইফরা রান্নাঘরে পোলাও, রোস্ট, গরুর গোশত কষা, ফিরনী রান্না করছে। তার সাথে হেলপিং হ্যান্ড হিসেবে আছে রায়হান, রাহমিদ আর রুদ। রাহমিদ পাতিলে করে পানি এনে দিচ্ছে। বেচারা বয়সে ছোট হওয়ায় পানি আনতে হিমশিম খাচ্ছে। রুদ থালাবাসন এগিয়ে দিচ্ছে, ধুয়ে দিচ্ছে, কোনো কিছু লাগলে এগিয়ে দিচ্ছে। রায়হান রোস্ট আর গরুর গোশত রান্না করেছে। ইফরা শুধু পোলাও আর ফিরনী রাঁধবে।
রায়হানরা নতুন ফ্ল্যাটে উঠেছে গত মাসে। আগের বাসাটা তাদের থাকার জন্য যথেষ্ট ছোট ছিল। মেহমান আসলে তাদেরকে থাকতে দেয়া যেতো না। এছাড়াও রাহমিদ বড় হচ্ছে। দেবর ভাবির মধ্যে যেন দুরত্ব থাকে সেজন্য রায়হান বাসাটা চেঞ্জ করেছে। এখন চার রুমের একটা বাসা নিয়েছে।
রায়হানের জন্য আরেকটি সুখবর ছিল দুইমাস আগে একটা সরকারি কলেজে লেকচারার হিসেবে জয়েন করেছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কলেজ আর কোচিংয়ে বিকেল থেকে রাত আটটা পর্যন্ত পড়িয়ে তবেই বেচারা বাসায় ঢুকতে পারে। এই দুই জায়গা থেকে মোটামুটি একটা ভালো অ্যামাউন্ট পায় রায়হান। আলহামদুলিল্লাহ ভালোই দিনকাল চলছে তার। এখন আর অভাব, অনটন তাকে ছুঁতে পারেনা। একটু ভালোমন্দ খাওয়ার জন্য রায়হান ও তার ভাইবোনের আহাজারি, লুকায়িত কান্না এখন সবকিছু ধোঁয়াশা।
আজকে ইফরার খালামণি তাদের বাসায় আসবে। এই খালা রায়হানের সাথে তার বিয়ের ব্যাপারে সবচেয়ে উৎসাহী ছিল। রায়হানের মতো এরকম ছেলে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার এরকম নানা কথা বলে ইফরাকে রাজি করিয়েছিল সে। উনি মাদ্রাসার একজন শিক্ষিকা। কথাবার্তায় ভীষণ স্মার্ট তিনি। বয়স হলেও কথাবার্তা এখনো বাচ্চাদের মতো।
ইফরা গতকাল রায়হানকে বলেছে যেহেতু খালামণি আসছে সেহেতু কয়েকজন এতিমদের দাওয়াত দিয়েন। রায়হান মাথা নেড়ে সায় জানিয়েছে। তারা প্রত্যেক মাসের শেষেই এরকম গরীব, এতিম, অনাথদের ডেকে এনে ভালোমন্দ খাওয়ানোর চেষ্টা করে। এতিমদের প্রতি সদয় হলে আল্লাহ তায়ালা ভীষণ খুশি হন। আল্লাহ যেহেতু তৌফিক দিয়েছেন তাই সাধ্য মতো তাদের জন্য করার চেষ্টা করে। এতে হাতে টান পড়লেও রায়হান কখনো তাদেরকে খাওয়ানোতে পিছপা হয়না।
রাহমিদ, রুদ প্লেট বের করে ধুয়ে সাজাতে গেছে। এখন রান্নাঘরে শুধু রায়হান আর ইফরা। রায়হানের অবশ্য রান্না শেষ। শুধু ইফরার রান্না বাকি। ইফরা পাতিলে ঘি দিয়ে পিঁয়াজ কুচি, এলাচ, তেজপাতা, লবঙ্গ, কিছুক্ষণ ভেজে পোলাওয়ের চাল দিয়ে কিছুক্ষণ চালটাকে ভেজে আদা বাটা আর রসুন বাটা দিয়ে আবার কিছক্ষণ ভাজলো। এরপর পানি আর লবণ দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রেখে দিলো। ইফরা হাত ধোয়ার জন্য ঘুরে দাঁড়াতেই দেখতে পেলো রায়হান মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে আছে। ইফরা হাত ধুতে ধুতে জিজ্ঞেস করলো,
“জাইম সাহেবের মুখ কালো কেন?”
“এই অবস্থায় তোমাকে রাঁধতে নিষেধ করেছিলাম। রাতে মাথা ব্যথা হলে আবার বইলো?”
ইফরা কাপড়ে হাত মুছতে মুছতে জবাব দিলো,
“ওমা ব্যথা হলে বলবো না। আপনার ব্যথা হলে আপনি বলেন না বুঝি?”
রায়হান তেড়ে এসে ইফরাকে ধরতে চাইলে ইফরা মুচকি হেঁসে অন্যপাশে সরে গেলো। রায়হান ভ্রু কুঁচকে বললো,
“আমার কথা আমাকেই ফিরিয়ে দিচ্ছো? পাজি মেয়েলোক।”
রায়হানের বলার ভঙ্গিমা দেখে ইফরার হেঁসে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা। ইফরা এখন আর গম্ভীর হয়ে থাকে না। রাগও কমে এসেছে। তবে রগচটে ভাবটা এখনো আছে। ইফরা বললো,
“আপনি গোসল করে রেডি হয়ে নিন, যান।”
“না তোমার রান্না শেষ হলে যাবো।”
ইফরা পোলাও নাড়া দিতে দিতে বললো,
“আমার রান্না শেষ হলে তো আমিই গোসলে ঢুকবো। তখন কি সিরিয়াল ধরবো নাকি?”
“সিরিয়াল ধরবো কেন? একসাথে গোসল করবো। স্বামী, স্ত্রী একসাথে গোসল করা সুন্নত।”
ইফরা খুন্তি উঠিয়ে বললো,
“যাবেন নাকি বারি খাবেন?”
“যাচ্ছি তো। ওটা দেখানোর মানে কি? কিছু হলেই রাগ দেখায় খালি। আমি ভয় পাই নাকি?”
“তাই, ভয় পান না?”
রায়হান থতমত খেয়ে গেলো। আমতা আমতা করে বললো,
“মোটেও না। স্ত্রীর কাছে ভয় পাওয়ার কি আছে? ভয় পায় তো কাপুরুষরা, আমি তো বীরপুরুষ।”
রায়হান গেঞ্জির কলার ধরে একটু ভাব নিয়ে বলতে চাইলো। যেইনা চুলে হাত দিয়ে আরেকটু স্টাইল নিতে যাবে অমনি ইফরা বলে উঠলো,
“তা কিছু সুন্নতের নাম বলুন? আপনার তো সুন্নত সম্পর্কে অনেক ধারণা।”
ইফরা পোলাও নামিয়ে ফিরনী নাড়তে নাড়তে কথাটি বলে উঠলো। রায়হান মুখ কাচুমাচু করে বললো,
“বলতেই হবে।”
“ইয়েস।”
“আচ্ছা বলছি। খাবার আগে বিসমিল্লাহ বলা সুন্নত, বসে পানি পান করা সুন্নত, পানির পাত্রে নিশ্বাস না ফেলা সুন্নত, মেসওয়াক করা সুন্নত, চেনা অচেনা সবাইকে সালাম দেয়া সুন্নত, শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য সবাইকে ভালোবাসা সুন্নত, স্বামী স্ত্রী এক পাত্রে পানি পান করা সুন্নত, চার বিয়ে করা সুন্নত।”
শেষ কথাটা রায়হান ইচ্ছে করেই বলেছে ইফরার রিয়েকশন দেখতে। ইফরা খুন্তি নাড়ানো থামিয়ে চোখমুখ শক্ত করে রায়হানের দিকে তাকালো। রায়হান তা দেখে বললো,
“আরে রাগ করছো কেন?”
“হাজার হাজার সুন্নত থাকতে আপনার চার বিয়ের সুন্নত টানতে হবে কেন? কত সুন্নতের গাফিলতি করেন তার বেলায় কিছু না। যেই চার বিয়ের কথা ওঠে অমনি চোখমুখ চিকচিক করে, জিব্বা লকলক করে তাই না?”
ইফরা ভীষণ রাগী কণ্ঠে বললো। রায়হান পড়েছে মহা ফ্যাসাদে। রায়হান বললো,
“আমি কি বলেছি আমি চার বিয়ে করবো। হুদাই রাগারাগি করছো কেন?”
“আমি মনে হয় বুঝি না আপনার মনে কি চলে তাই না? মুখে বলেন না, আর মনে মনে ঠিকই কল্পনা করেন চার বিয়ের। নাহলে চার বিয়ের হাদীস উঠাতেন এতো হাদীস থাকতে।”
রায়হান কপাল চাপড়ে বললো,
“মহা মুসিবত তো। কিছুই বলা যাবে না দেখছি। কিছু হলেই বোম ফাটে মনে হয়।”
ইফরা চুলোর আঁচ কমিয়ে রায়হানের সামনে দাঁড়ালো। চোখ রাঙিয়ে বললো,
“বোম ফাটে মানে? আপনাকে কথা বলতে নিষেধ করেছি? উল্টো পাল্টা কথা বলে আমাকে রাগিয়ে দেন কেন?”
“উল্টো পাল্টা কি বললাম আবার? থাক রাগ করো না। আমি বরং গোসলে যাই।”
রায়হান বুঝেছে বেশিক্ষণ থাকলে তার কপালে দুঃখ আছে। তাই আগেভাগেই কেটে পড়তে চাইছে। ইফরা ভ্রু কুঁচকে বললো,
“কেন আমার সাথে গোসল করবেন না?”
“না। আমার দেরি হবে তাহলে। যোহরের আযান দিচ্ছে। আমি যাচ্ছি।”
কথাটি বলেই রায়হান একরকম দৌঁড়ে পালালো। বেশিক্ষণ থাকলে তার সাথে যেকোনো কিছু হয়ে যেতে পারতো। জীবন বাঁচানো ফরজ।
______
রুদ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছছে । মাত্রই গোসল করে বের হলো সে। এরমধ্যেই রাহমিদ বাথরুম থেকে চিল্লিয়ে ডেকে উঠলো,
“আপুনি.. ই… ই।”
“কি হয়েছে? চেঁচাচ্ছো কেন?”
“আরে গামছা দিয়ে যাও।”
“চড়িয়ে তোমায় লাল করে ফেলবো। বড় হচ্ছো নাকি ছোট হচ্ছো দিন দিন? এখনো তোয়ালে নিয়ে ঢুকো না কেন?”
“উফ দাও না আপুনি।”
রুদ তোয়ালে নিয়ে রাহমিদকে দিলো। রুদ ফ্যান ছেড়ে চুল শুকাতে লাগলো। রাহমিদ তোয়ালে পড়ে বের হয়েছে কাঁপতে কাঁপতে। ভালোই শীত পড়েছে ইদানীং। রুদ সোয়েটার জড়িয়ে চুল মেলে বসেছে দ্রুত চুল শুকানোর জন্য। রাহমিদ ফ্যান ছাড়া দেখেই চিল্লিয়ে উঠলো,
“মাগো, কুত্তা মরা শীতে ফ্যান ছেড়েছো কেন? ডিস্কো ড্যান্স দিতে?”
রুদ ভাইয়ের কথা শুনে চোখ রাঙালো। বললো,
“এটা কেমন ভাষা তোমার? কুত্তা মরা কি? এসব কোথা থেকে শিখেছো তুমি?”
রাহমিদ মুখ কালো করে ফেললো। বললো,
“ওই আমার বন্ধুরাই তো মাঝে মাঝে বলে।
“তোমার বন্ধুরা বলবে দেখে তুমিও বলবে? এসব ওয়ার্ড আর যেন ইউজ করতে না দেখি।”
“আচ্ছা রে বাবা। এবার ফ্যান বন্ধ করো।”
“দাড়াও চুলটা একটি শুকাতে দাও।”
“ধুরু। অন্যরুমে যে যাবো তাও পারছি না। ভাবির সামনে প্রেস্টিজ পাঞ্চার হয়ে যাবে নাহলে।”
রুদ মুখ ঘুরিয়ে হাসলো। ভাইটা তার বড় হয়ে যাচ্ছে। সেই ছোট্ট গুলুমুলু বাচ্চা থেকে এখন দশ বছরের বালক। আগের মতোই গুলুমুলু আছে। কথাগুলোও কিউট কিউট। রুদের আদরের ভাই। বড় ভাইয়ের কলিজা।
রুদ উঠে রাহমিদের জন্য জামাকাপড় নিয়ে আসলো। গেঞ্জি পড়িয়ে দিলো। রাহমিদ প্যান্ট পড়লো। টাখনুর উপরে প্যান্ট গোটালো। রুদ জ্যাকেট পড়িয়ে দিলো। মাথা ভালোভাবে মুছে তোয়ালে মেলে দিলো। বাথরুমে ঢুকে ছোট ভাইয়ের জামাকাপড় ধুয়ে বারান্দায় শুকাতে দিলো। তারপর ছোট ভাইয়ের চুল আঁচড়ে দিলো সাথে নিজেও চুল আঁচড়ালো।
খুব দ্রুতই হিজাব পড়ে পরিপাটি হয়ে গেলো রুদ। রাহমিদের গায়ে আতর মেখে দিয়ে ওকেও পরিপাটি করে দিলো। একটু পর রায়হান জায়নামাজ হাতে রাহমিদকে ডাকতে লাগলো। রাহমিদ বললো,
“আসছি ভাইয়ু। আপুনি যাই।”
রায়হান ইতোমধ্যেই রুমে ঢুকে দেখে তার ভাই রেডি। সে রুদের কাছে গিয়ে বললো,
“কলিজা আমাদের দুজনকে দোয়া পড়ে ফুঁ দিয়ে দিন।”
রুদ দোয়া পড়ে দুই ভাইকে ফুঁ দিয়ে সারা শরীর মুছে দিলো। দুই ভাই বোনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। রায়হান রাহমিদকে দাঁড়াতে বলে রান্নাঘরে ইফরার কাছে গেলো। মাথা ঝুঁকিয়ে ইফরাকে বললো,
“বিবি সাহেবা নামাজে যাচ্ছি। দোয়া পড়ে ফুঁ দিয়ে শয়তান হটিয়ে দিন তো।”
ইফরা রান্না শেষ করে সবকিছু গুছিয়ে রাখছিল। রায়হানের কথায় তার দিকে ফিরে ফুঁ দিয়ে দিলো। পাঞ্জাবির বোতাম লাগিয়ে দিয়ে চুল ঠিক করে দিলো। বললো,
“সোজা মসজিদে যাবেন। আশেপাশে তাকাবেন না। চক্ষু এদিক ওদিক করলে খবর আছে। আমার জন্য সুন্দর একজোড়া চক্ষু আর বরকত নিয়ে আসবেন। অপেক্ষায় থাকবো।”
রায়হান ইফরার কপালে, গালে চুমু দিয়ে তৎক্ষণাৎ প্রস্থান করলো। ইফরা আহাম্মক বনে গেলো। পরক্ষণেই লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে উঠলো তার।
______
—-
“জানিস ইফরা, রায়হান আর রাহমিদকে কিন্তু আমি অনেক আগে থেকেই চিনি। তোর বিয়েরও বহু আগে থেকে।”
ইফরার ব্যস্ত হাত চট করে থেমে গেলো। ইফরার খালা কিছু হয়নি এমন ভঙ্গিমায় খাচ্ছে। ইফরা বললো,
“কি বললে খালামণি?”
ইসমাত মাহমুদা মুখের খাবার টুকু গিলে বললেন,
“বললাম, রায়হানকে অনেক ছোট থাকতে আমি দেখেছি। তখন ওর ছোট ভাই আরও পিচ্চি ছিল। এমনকি ওর ছোট ভাইয়ের খামচিও আমি খেয়েছি।”
ইফরা আগ্রহ নিয়ে বললো,
“কিভাবে, কোথায় দেখা হলো?”
“তোদের বাসা থেকে যাচ্ছিলাম আরেকটি জায়গায় একটা কাজে। অতটা খেয়াল নেই কোথায় যাচ্ছিলাম ঠিক। পথিমধ্যে রায়হানকে দেখলাম ছোট ভাইকে শিখাতে শিখাতে যাচ্ছে। বাচ্চাটা লাফাতে লাফাতে ভাইয়ের হাত ধরে যাচ্ছে। হাতে ছিল জায়নামাজ। ব্যাস, আমার এতো চমৎকার লাগলো দৃশ্যটা। আমার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বাচ্চাটার ধাক্কা লাগলো। অমনি কি বললো জানিস?”
“কি বললো?”
“চোকে দেকো না? দাক্কা দিলে কেনু?”
কথাটি বলেই ইসমাত মাহমুদা হাসতে লাগলেন সাথে ইফরাও হেঁসে চলেছে। ইসমাত মাহমুদা আবারও বললেন,
“এতো মাশা আল্লাহ বাচ্চাটা। কি যে কিউট কথাবার্তা! চাচ্ছিলাম গাল টিপে দিতে। সামান্য ধাক্কা লাগায় যেভাবে রেগে গেলো অপরিচিত একজন গাল টিপে দিলে ওখানে কামড়ে টামরে একাকার করে দিতো আমাকে। কি যেন একটা বলেছিলাম অমনি হাতে খামচে দিলো! তোর জামাই তখন আমার কাছে মাফ টাফ চাইলো আরকি। জানিস অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম ওদের দিকে। আল্লাহর কাছে ছেলেটাকে তোর জন্য খুব করে চেয়েছিলাম সেদিন। আল্লাহ কবুল করেছেন। চাওয়ার মতো চাইলে আল্লাহ ফিরান না কখনোই।”
ইফরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো খালার কথা শুনে চলেছে এতক্ষণ। সে মনে মনে বহুবার আলহামদুলিল্লাহ পড়লো। ইসমাত মাহমুদা আবার বললেন,
“তুই খাবি কখন? আমি একাই তো খাচ্ছি। তুইও বসে পড়।”
“উহু আমি তোমাদের জামাইয়ের সাথে খাবো। উনি আমাদের খাইয়ে না দিলে আমাদের কারো পেটের ভাত হজম হয়না। আমি তো নিজ হাতে খেতেই ভুলে গেছি।”
ইসমাত মাহমুদার কথাটি শুনে ভীষণ ভালো লাগলো। যাক আল্লাহ মেয়েটাকে একটা সুন্দর সংসার দিয়েছেন। ছোট থেকে মেয়েটা ভীষণ একলা। এখন তার সুখের সময়। খুশি আড়াল করে মেকি রাগ দেখিয়ে বললেন,
“সেকিরে, ছেলেটাকে জ্বালিয়ে খাচ্ছিস তোরা। বেচারা তোদের জন্য দম ফালানোর সুযোগও পায়না নাকি?”
“আরে পায় পায়। খালু আর এতিম বাচ্চাগুলোকে খাওয়ানোর পরই আমি আর আমার দেবর, ননদ ধরবো তোমার বেচারাকে। আমাদের না খাইয়ে কোথায় যাবে সে।”
কথাটি বলার সময় ইফরার চোখে মুখে খুশি চিকচিক করছিল। ঠোঁটে প্রফুল্লময় হাসি। ইসমাত মাহমুদার দারুন লাগলো মুহূর্তটি।
চলবে….