জীবন পেন্ডুলাম পর্ব-১৫+১৬

0
10

#জীবন_পেন্ডুলাম
#পর্ব_১৫
#তাজরীন_ফাতিহা

রায়হান রুদকে উঠিয়ে জামা পাল্টে গোসল করালো। রুদের ক্ষতস্থানে স্যাভলন লাগিয়ে দিলো। রুদকে গোসল করিয়ে রাহমিদকে গোসল করানোর জন্য প্রথমে রাহমিদের গায়ে সরিষার তেল মাখাতে লাগলো। জয়নব বেগম বলেছিলেন সরিষার তেল মাখিয়ে গোসল করালে নাকি বাচ্চাদের ঠাণ্ডা কম লাগে। রায়হানও এখন চেষ্টা করে যেইসব জিনিসে রাহমিদের ঠাণ্ডা লাগে ঐসব এড়িয়ে চলতে। আজকে রায়হানের মনটা বিষণ্ন। বাসায় এসেই রুদের ঘটনা শুনে মন মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে। রায়হান তেল মাখাচ্ছে আর রাহমিদ দুষ্টুমি করছে। হাত পা নাড়িয়ে নাড়িয়ে ভাইকে জ্বালাচ্ছে। একটু পর পর হাত তালি দিয়ে ফিচ ফিচ করে হেসে দিচ্ছে। রায়হান ভাইয়ের কাণ্ডে মুচকি হেঁসে বললো,

“কি হয়েছে আপনার কলিজা? এতো খুশি কেন? আপির আজকে মন খারাপ। বেশি হাইসেন না নাহলে মার খেতে পারেন। আপনি বিপদসংকুল পর্যায়ে আছেন। বুঝলেন?”

রায়হান রাহমিদের লেংটু শরীরে নাক চেপে আদর করে বললো। রাহমিদ খিলখিল করে হেসে উঠলো। রায়হানও কিছুটা হাসলো। মনটা ভার এখনো। তেল মাখা শেষ করে রুদের দিকে তাকালো। বাচ্চাটার চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে। বিছানায় গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে। রায়হান রাহমিদকে কোলে নিয়ে রুদকে আদর করে টয়লেটে গেলো। রাহমিদকে গোসল করানোর জন্য একটা প্লাস্টিকের বোল কিনে এনেছে গত পরশু। সেটায় পানি ভরে রাহমিদকে নামিয়ে দিলো। রাহমিদ পানিতে বসে খিলখিল করে হেসে দিলো। পানির ভিতরে দাপাদাপি করতে লাগলো। ওর লাফালাফিতে পানি ছিটে রায়হানের গা ভিজিয়ে দিলো। রায়হান রাহমিদকে ডলে ডলে গোসল করাতে লাগলো। রাহমিদ বিষয়টা পছন্দ করছে না। রায়হান যখন ওর মুখ ডলতে লাগলো বাচ্চাটা কেঁদে উঠে ভাইকে খামচি দিয়ে চামড়া উঠিয়ে ফেললো। রায়হান ব্যাথাতুর শব্দ করে রাহমিদকে ধমকে উঠলো,

“একদম আছাড় দিয়ে নাড়িভুড়ি বের করে ফেলবো। সব সময় ইতরামি তাই না। প্রত্যেকদিন গোসল করাতে আসলে তামাশা শুরু করে দেয়। তোর খামচি খাওয়ার জন্য আমাকে টাকা দিস নাকি? মেরে ফেলবো একদম।”

ভাইয়ের ধমকে চিৎকার করে কান্না জুড়ে দিলো। রায়হান ওর কান্না অবস্থায় ডলে ডলে গোসল করাতে লাগলো। রাহমিদ না থেমে কেঁদেই যাচ্ছে। গোসল করিয়ে বের হতেই একজন অপরিচিত নারীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো। রায়হান সঙ্গে সঙ্গে চোখ নামিয়ে ফেললো। তাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় নারীকণ্ঠ বলে উঠলো,

“তুমিই তাহলে রায়হান। আমি তোমার জয়নব আন্টির মেয়ে আয়েশা। বাবু কাঁদছে কেন?”

“এমনিতেই।” রায়হানের ছোট উত্তর।

“ওকে একটু কোলে নিতে পারি?”

আয়েশার আবদার মাখা গলা। বিয়ের পাঁচ বছরেও সন্তান না হওয়া এক নারীর বেদনা মিশ্রিত কণ্ঠ। রায়হান চেয়েও বলতে পারছে না রাহমিদ কারো কোলে যায়না। নারীটি ভীষণ মমতা নিয়ে বলেছে যে। রায়হান ভাইকে তার কোলে দিলো। রাহমিদ চিৎকার আরও বাড়িয়ে দিলো। আয়েশা বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে চেপে চেপে আদর করলো। নানা আদুরে কথা বলতে লাগলো। রাহমিদ প্রথমে কাঁদলেও এখন চুপটি করে আয়েশার ঘাড়ে মাথা দিয়ে আছে মুখে আঙ্গুল ভরে। রায়হান অবাক হলো ভীষণ। রাহমিদ সচরাচর অপরিচিত কারো কোলে যায়না। গেলেই কান্না শুরু করে। আজকে তো পুরোই উল্টো ঘটনা ঘটলো। যেমন ভাবে নারীটির কোলে লেপ্টে রয়েছে দেখে মনে হচ্ছে মা আর ছেলে। রায়হানের বুক ভার হলো। মাও তো এভাবে রাহমিদকে আদর করতো। রাহমিদ কি মা মনে করছে নারীটিকে? আর ভাবতে পারলো না। চোখ দুটো ভিজে গেছে। দ্রুত নিজেকে সংযত করলো। আয়েশা বললো,

“ওকে আমি খাইয়ে দেই? তুমি এই ফাঁকে খেয়ে ফেলো।”

“ও খাবে না। ওকে অনেক জোর করে খাওয়াতে হয়। আমাকে দিন।”

“না না আমি পারবো। দেখছো না কিভাবে কোলে পড়ে আছে। ওর নাম কি?”

“রাহমিদ জাইফ।”

“মাশা আল্লাহ ভীষণ সুন্দর নাম। ওকে পরে দিয়ে আসবো তোমার কাছে। এখন আমার কাছে থাক কিছুক্ষণ। তোমার খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি।”

এই বলে আয়েশা রাহমিদকে নিয়ে চলে গেলো। রায়হান মন খারাপ করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলো। ভাইকে নিয়ে যাওয়ায় বুক পুড়ছে। তার উপর একটু আগে বকা দিয়েছে। বাচ্চাটা ভীষণ অভিমান করেছে বোধহয়। থাক যেখানে থাকলে ওর ভালো লাগবে সেখানেই থাকুক। রায়হান মন খারাপ করে ঘরে চলে গেলো।
____
—-

“এইডা কেডা?” সেলিনা পারভীন গম্ভীর মেজাজে বললেন।

“আম্মা বলছিলাম না নতুন এক ভাড়াটিয়া আসছে আমাদের বাসায় তাদের বাবু।”

আয়েশা নরম সুরে বললো। এমনিতেই শাশুড়ি অনেক বদমেজাজি। আয়েশার সাথে খিটখিট করতে থাকে সারাদিন। এখন বাবার বাড়ি এসেও যদি খিটখিট করে তখন মা, বাবা কষ্ট পাবে। শাশুড়ি এমনিতেই তার বাবার বাড়ি আসতে চান না। ছেলেকেও আসতে দেন না। এবার যেহেতু নিজ থেকেই এসেছেন সেহেতু ওনাকে রাগিয়ে দেয়ার ইচ্ছা নেই। রাহমিদকে কোলে নিয়ে এসব ভাবছে সে। রাহমিদ চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চারপাশ দেখছে। তোয়ালে দিয়ে মোড়ানো সে। তোয়ালে সরালেই লেংটু সে। সেলিনা পারভীন নাক উঁচিয়ে বললেন,

“তোমার এহন বাইচ্ছা লওয়ার শখ হইছে ক্যা? কার না কার বাচ্চা তারে লইয়া আইছো কেন? নিজে তো একটা বাচ্চা দিতে পারলা না। অহন মাইনষের বাইচ্চা লইয়া ফাল পারতাছো।”

আয়েশা মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। তার কোলে রাহমিদ নড়াচড়া করছে আর চিৎকার করছে। নিজে নিজেই কি যেন বলছে বাচ্চাটা। জয়নব বেগম খাবার নিয়ে ঘরে আসলেন। মাকে দেখে আয়েশা স্বাভাবিক মুখ করতে চেষ্টা করলো। সেলিনা পারভীনও হাসিহাসি মুখ করলো। জয়নব বেগম খাবার গুলো নামিয়ে বিছানায় পাটির উপর রাখলেন। রাহমিদকে মেয়ের কোলে দেখে বললেন,

“ওমা, বাইচ্চা ডা তোর কোলে! ওয় তো সবার কোলে যায়না। খালি কান্দে। পুরাই ভাইয়ের ন্যাওটা বাচ্চা ডা।”

রাহমিদকে আদর করে দিয়ে বললো। সেলিনা পারভীন জহুরী চোখে সব কিছু পর্যবেক্ষণ করলেন। বলে উঠলেন,

“এগোই কি আপনেরা পালতাছেন বেয়াই?”

জয়নব বেগম থতমত খেয়ে গেলেন। সেলিনা পারভীন যে সুবিধার না তা তিনি জানেন। তাই কৌশলে বললেন,

“আসলে পালতাছি না। ওগো ভাই ই কাম করে। আমগো কাছ থেইকা কিচ্ছু নেয়না। পোলাডা অনেক ভালা। আপনে খাইয়া লন তাড়াতাড়ি।”

সেলিনা পারভীন বুঝলেন কথা লুকাচ্ছেন জয়নব বেগম। তিনি কোনো কথা না বলে রাহমিদের দিকে তাকালেন। ওনার রাগে শরীর জ্বলছে। তার ছেলেকে কিচ্ছু দেয়ার বেলায় নেই অথচ কোথাকার কোন এতিম অনাথ নাকি অনায়াসে বসে বসে খাবে। তিনি মুখে হাসি ফুটিয়ে আয়েশাকে বললেন,

“ল্যাদা ডারে দাও। একটু কোলে লই?”

আয়েশা দ্বিরুক্তি না করে সেলিনা পারভীনের কোলে রাহমিদকে দিলো। রাহমিদ এতক্ষণ হাত পা নাড়িয়ে নাড়িয়ে চারপাশ দেখছিল আর নিজ মনে নানা অস্পষ্ট কথা বলছিলো। এটায় বিঘ্ন ঘটায় বিরক্ত হলো বেশ। পরে যখন দেখলো এক জাদরেল টাইপ মহিলার কোলে তাকে দেয়া হয়েছে তখন কানে তালা লাগানোর জোগাড় করলো। সেলিনা পারভীন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন। ভেবেছিলেন পিচ্চিকে একটা শায়েস্তা করবেন কিন্তু এখন তো ভাঙা ক্যাসেট চালু করে দিয়েছে এই বিচ্ছু। সেলিনা পারভীন ওকে নাড়তে লাগলেন। রাহমিদ খামচি দিয়ে ওনাকে ক্ষতবিক্ষত করে ফেললো। সেলিনা পারভীন রাগে গজগজ করতে লাগলেন। রাহমিদকে ঝাড়া দিয়ে আয়েশাকে দিতে দিতে বললো,

“মা গো মা। বিচ্ছু একটা। আমার শরীর খামচাইয়া ছিইলা ফালাইছে। এরে পালে কেমনে? উফফ মাগো হাতটা জ্বলতাছে।”

আয়েশা রাহমিদকে কোলে নিয়ে কান্না থামাতে লাগলো। কিন্তু রাহমিদ কান্না থামানোর পাবলিক না। সে চিৎকার করে হাত পা নাড়িয়ে গলা ফাটিয়ে কাদঁছে। জয়নব বেগম বললেন,

“ওরে ওর ভাইয়ের কাছে দিয়া আয় কান্না থাইমা যাইবো। ওরে ওর ভাই ছাড়া কেউ থামাইতে পারতো না। দৌঁড় লাগা নইলে তোরে এক্কেরে ছিলাই ফেলবো। আমি বেইয়াইনের লাইগা মলম লইয়া আহি। যা তাত্তারী।”

মায়ের কথা শুনে আয়েশা দ্রুত রাহমিদকে নিয়ে রায়হানদের ঘরের সামনে গেলো। রায়হান ভাইয়ের কান্নার শব্দে রুদকে খাওয়াতে গিয়েও খাওয়াতে পারলো না। আবার কি হলো। পড়ে টোরে গেলো নাকি। আয়েশা দ্রুত ঘরে ঢুকে ওকে রায়হানের কোলে দিলো। দিয়ে বললো,

“ভাই না বলে চলে আসাতে দুঃখিত। ওর কান্নাটা থামাও। আমার খারাপ লাগছে তোমার কাছ থেকে ভালোভাবে নিলাম আর এখন কান্না করিয়ে দিয়ে গেলাম। তুমি রাগ করো না প্লিজ। আসি ভাই।”

আয়েশা যাওয়ার আগে রুদকে আদর করে গেলো। রায়হান ভাইয়ের কান্না থামাতে লাগলো। ভাত মাখা হাতে ওকে দুলিয়ে দুলিয়ে নানা কথা বলতে লাগলো। রাহমিদ মুহূর্তের মধ্যে শান্ত হয়ে গেলো। ভাইয়ের সাথে যে রাগ করেছিল সেটা ভুলে গেছে সে। ভাই ধমক দিয়েছিল সেটাও ভুলে গিয়ে ভাইয়ের কোলে ফোপাতে লাগলো। রায়হান ওকে আদর করে বললো,

“আজকে আমার কলিজা গুলো সারাদিন কেঁদেছে। কে কাঁদায় আমার ভাই বোনকে খালি। সবাইকে মেরে দিবো ভাইয়ু। ঠিক আছে টোটন সোনা।”

ভাইয়ের আদুরে কথা শুনে রাহমিদ ভাইয়ের ঘাড়ে আঙুল ভরে চুক চুক শব্দ করতে লাগলো। রায়হান বুঝলো ওর খুদা পেয়েছে। রায়হান ভাত মাখা হাতে ওকে নিয়ে উঠলো। তারপর হাত ধুয়ে ডানো দুধ পানিতে মিশিয়ে ফিটারে ভরে ভাইয়ের মুখে দিলো। রাহমিদ এখন ভাতও খেতে পারে। অল্প অল্প করে মুখের সামনে দিলে খায়। তবে এখন ভাত খাবে না। কান্না করলে দুধ খাওয়ালে কান্না থামায়। ভাবে বোধহয় মা দুধ দিলো কিনা। দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে রাহমিদকে ফিটার দিয়ে রুদকে ছোট ছোট লোকমা তুলে ভাত খাইয়ে দিতে লাগলো। রাহমিদ চুক চুক শব্দে ফিটার খেয়ে ভাইয়ের কোলে ঘুমিয়ে পড়লো।
____

আজকে রায়হানের রেজাল্ট দিবে। ফজরের নামাজ পড়ে কিছুক্ষণ নফল নামাজও পড়লো। একটা ভালো পাবলিক ভার্সিটিতে যেন চান্স হয়ে যায়। সকাল থেকে কিছু খেতেও পারছে না। রাহমিদ, রুদকে খাইয়ে দিয়েছে সে। রায়হান উত্তেজনায় ছটফট করছে। ভাইবোনের জামাকাপড় ধুয়ে রশিতে শুকাতে দিলো। ঘরে এসে বসতেই আফজাল হোসেন রুমে ঢুকলেন। ওই অসময়ে আফজাল হোসেনকে দেখে রায়হান অবাক হয়েছে। উনি তো এই সময় হোটেলে থাকেন তাহলে আজ এই সময়। কোনো সমস্যা হয়নি তো আবার। আফজাল হোসেন বললেন,

“রেজাল্ট কিভাবে জানবে? চলো বাজারে যাই। কম্পিউটারের দোকান থেকে রেজাল্ট বার করতে পারবো। ফোনেই নাকি পারা যায় কিন্তু আমাদের তো কারো স্মার্ট ফোন নেই। চল তাড়াতাড়ি।”

রায়হান রেডি হয়ে রাহমিদ ও রুদকে নিয়ে বের হলো। রুদকে আজ জয়নব বেগমের কাছে রাখলো না কারণ ওনাদের আত্মীয় এখনো যায়নি। পরশুর মতো একা রেখে গেলে যদি আবারও কেউ তার বোনকে মারে। কালকে শুক্রবার ছিল দেখে পড়াতে যায়নি কিন্তু আজকে একটু পর পড়াতে যেতে হবে কি করা যায় ভাবছে সে। বোনটা তার খুব শান্ত। তার ভাইবোনকে অপরিচিত কেউ মারবে সে সেটা সহ্য করতে পারবে না। তাই ওকে নিয়েই বের হলো। রেজাল্ট শুনে বোনকে নিয়েই প্রাইভেট পড়ানো যায় কিনা দেখতে হবে। এমনিতেই রাহমিদকেই অভিবাবকরা টলারেট করে না রুদকে করবে কিনা একটা প্রশ্ন থেকেই যায়। চিন্তায় চিন্তায় অস্থির হয়ে যাচ্ছে সে। এসব ভাবতে ভাবতেই দোকানের সামনে রিক্সা থামলো। আফজাল হোসেন ভাড়া দিলো। দোকানে ঢুকে রোল, রেজিস্ট্রেশন সব দিলো। দোকানদার কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বললো। অনেক্ষণ পর রেজাল্ট পাওয়া গেলো। রেজাল্ট দেখে রায়হানের হাত পা সব কাঁপতে লাগলো। রায়হানের কোলে রাহমিদ। ভাইকে এভাবে কাঁপতে দেখে ভাইয়ের সারা মুখে হাত বুলিয়ে থাবা দিতে লাগলো। আফজাল হোসেন রায়হানকে কাঁপতে দেখে বললেন,

“কি হয়েছে? ভালো রেজাল্ট আসেনি। থাক চিন্তা করো না। পরবর্তীতে ভালো করবে। পরেরবার আবার চেষ্টা করো। এভাবে কাপছো কেন? কাঁপাকাঁপি থামাও।”

রায়হান রাহমিদকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে উঠলো। রুদ ভাইকে কাঁদতে দেখে ভাইয়ের পা জড়িয়ে ধরলো। আফজাল হোসেন ও পিঠে হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিতে লাগলেন। ছেলেটার জন্য খারাপ লাগছে। রায়হান অনেক কষ্টে বললো,

“আংকেল চান্স হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। গুচ্ছতে ১১২০ নাম্বার পজিশন পেয়েছি।”

কথাটা বলে আবারও কান্না করে দিলো সে।আফজাল হোসেন অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন। ওনার মনে হলো বুক থেকে একটা ভারী পাথর নেমে গেলো। আফজাল হোসেন খুশি হয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো। বলে উঠলো,

“আরে বোকা ছেলে কাদঁছো কেন? আল্লাহ্ তোমার সহায় ছিলেন। এতো ভালো রেজাল্ট করেও কাদঁছো। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করো।”

রায়হান মনে মনে অসংখ্যবার আলহামদুলিল্লাহ পড়ে ফেলেছে। মুখেও আবার বললো,

“আলহামদুলিল্লাহ।”

“চলো মিষ্টি কিনবো। এত দারুণ খবরে কেউ কাঁদে নাকি বোকা ছেলে। শুধু কাদলেই হবে। চলো মিষ্টি কিনি। তোমার আন্টি অপেক্ষা করছে।”

রুদ ভাইয়ের পা জড়িয়ে আছে। বাচ্চাটা ভাইকে কান্না করতে দেখে ভীষণ ভয় পেয়েছে। রায়হান রুদকে একটু উপরে তুলে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে কপালে চুমু খেলো। রুদ আর রাহমিদকে জড়িয়ে ধরে আবারও ফুঁপিয়ে উঠলো সে। আফজাল হোসেন নিজেও ইমোশনাল হয়ে পড়েছেন। নিজের চোখটা আলগোছে মুছে ফেললেন তিনি। তারপর হেসে উঠে ভাইবোনের আদুরে মুহূর্ত দেখতে লাগলেন। দোকানদারও এতক্ষণ রায়হানের খুশির মুহূর্ত দেখছিলেন। উনিও ইমোশনাল হয়ে পড়েছেন।

চলবে…

#জীবন_পেন্ডুলাম
#পর্ব_১৬
#তাজরীন_ফাতিহা

“একি, তুমি দেখি গুষ্ঠি সুদ্ধ হাজির হয়েছো?”

সিফাতের আম্মু চিৎকার করে বলে উঠলেন। রায়হান যে দুইজনকে পড়ায় তার মধ্যে উনি সিফাতের অভিভাবক। প্রচুর কড়া সিফাতের আম্মু। রায়হান পড়াতে গেলে চোখে চোখে রাখে পড়ানোয় কোনো ফাঁকি দিচ্ছে কিনা। রাহমিদ যখন হাত, পা নাড়িয়ে নাড়িয়ে নানা রকম শব্দ করে উনি প্রচণ্ড বিরক্ত হন। রায়হান বুঝতে পেরে রাহমিদের মুখ চেপে ধরে রাখে। বাচ্চারা কি আর এতো কিছু বোঝে। মুখ ধরে রাখলে রাহমিদ আরও চেঁচিয়ে উঠে। হাত, পা জোরে জোরে নাড়ায়। মাথা দোলায়। এসব দেখে একদিন তিনি বলেছেন,

“বাচ্চা নিয়া পড়ানো যায়। তুমি তো বাচ্চার দিকেই নজর দিয়ে রাখো। সিফাতকে কি পড়াও আর। মাসে মাসে তো ঠিকই টাকা নিবে কিন্তু পড়ানোর বেলায় ঠনঠনা ঠন।”

কথাটায় রায়হান এত দুঃখ পেয়েছিল। মনে হচ্ছিলো তার শরীরের মধ্যে কে যেন আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। তারপর থেকে রায়হান রাহমিদকে প্যাসিফায়ার বা চুষনি পড়িয়ে রাখে। যাতে কোনোভাবেই চিল্লাতে বা কথা বলতে না পারে। প্যাসিফায়ারের দাম নিয়েছিল একশো টাকা। এই বয়সের বাচ্চাদের কথা বলানোর জন্য সবাই কত আয়োজন করে আর রায়হান কথা বন্ধের জন্য টাকা দিয়ে প্যাসিফায়ার কিনে কথা বন্ধ করে। সবই ভাগ্য। আজকে মনটা একটু ভালো রেজাল্টের খবর শুনে। আফজাল হোসেন আজকে পড়াতে নিষেধ করছিলেন কিন্তু রায়হান শোনে নি। গ্যাপ দিলে গার্ডিয়ানরা বিরক্ত হন। এমনিতেই বাচ্চা নিয়ে পড়ানোতে তাদের বড্ড অনিহা। তার উপর গ্যাপ দিলে ওকে টিউশনিতেই আর রাখবে না। তাছাড়া তার আনন্দের মুহূর্তে তাদের কি আসে যায়? রুদকে বাড়িতে একা রেখে আসতে ভরসা পাচ্ছিলো না দেখে তার সাথে নিয়ে এসেছে। আফজাল হোসেন অবশ্য রুদকে নিয়ে যেতে চেয়েছে, রায়হান রাজি হয়নি। সিফাতদের বাসার দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে রায়হান। কোলে বেবি ক্যারিয়ারে রাহমিদ পা দোলাচ্ছে। রুদ ভাইয়ের আঙ্গুল ধরে ভীতু নজরে মহিলাটির দিকে তাকিয়ে আছে। রায়হান ভয় পাচ্ছে সিফাতের আম্মু মুখের উপর দরজা না বন্ধ করে দেয়। সিফাতের আম্মু গজগজ করতে করতে বললেন,

“কি হলো চুপ করে আছো কেন? বোবা হয়ে গেলে নাকি। তুমি কি বিয়ে খেতে গুষ্ঠি সুদ্ধ হাজির হয়েছো। তুমি আসলেই পড়াতে আসো নাকি তামাশা করতে কোনটা?

“আসলে আন্টি বাসায় কেউ নেই তো। ছোট মানুষ একা কিভাবে থাকবে তাই সাথে করে এনেছি। ও কোনো ডিস্টার্ব করবে না। একেবারে শান্ত বাচ্চা।”

“শোনো তোমার এইসব ইমোশনাল কথা অন্য কাউকে শুনাবে। তোমার ভাইকে অ্যালাউ করেছি দেখে ভেবে বসো না যাকে তাকে অ্যালাউ করবো। এভাবে আদৌ পড়াশোনা হয়? রুস্তমের কারণে এখনো তোমাকে অ্যালাউ করছি নাহলে তোমাকে কবে টিউশনি ছাড়া করতাম। যত্তসব!”

“আন্টি চিন্তা করবেন না। ইংশা আল্লাহ্ আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। সিফাতের পড়ানোয় আমার ভাইবোন কোনো ডিস্টার্ব করবে না। এটা আমার ওয়াদা।”

সিফাতের আম্মু একটু নমনীয় হলেন। তারপর মুখ বেজার করে বাসায় ঢোকার অনুমতি দিলেন। রায়হান মাথা নিচু করে ঘরে ঢুকলো। সিফাতের আম্মুর একেকটা কথা তার বুকে তীরের মতো বিদ্ধ হয়েছে। অথচ একটা কথার জবাবও রায়হান দিতে পারেনি। মুখ বুঝে সহ্য করেছে কারণ ঐযে জবাব দেয়া মানা নইলে তো টিউশনি থাকবে না। টিউশনি না থাকলে টাকা থাকবে না। টাকা না থাকলে সে দুনিয়ায় টিকতে পারবে না। বুক চিড়ে লম্বা দীর্ঘনিশ্বাস বের হলো। এটা কষ্টের, হতাশার নাকি কথা চেপে রাখার তা জানা নেই।
_______

রায়হান সিফাতকে পড়া বুঝিয়ে দিচ্ছে। রাহমিদ আর রুদকে অন্য রুমে রাখতে বলেছেন সিফাতের আম্মু। তাই রায়হান অন্য রুমে রেখে এসেছে ওদের। সিফাতের আম্মু আছে সেখানে। বাচ্চা দেখেবেন তিনি। রাহমিদ বিছানায় বসে বোনের সাথে খেলছে। সামনে একটা বাচ্চাদের বই রাখা। রাহমিদ বইটা বোনের সাথে উবু হয়ে বসে দেখছে আর একটু পর পর বইয়ের উপর থাবা বসাচ্ছে। চিৎকার করছে। নানা রকম কথা বলছে। রুদ বইটা সরিয়ে রাখছে রাহমিদ যদি বই ছিঁড়ে ফেলে ওই রাগী আন্টি অনেক বকবে। রায়হান তাকে শান্ত বাচ্চার মতো ভাইকে দেখে রাখতে বলেছে। সে ভাইকে চোখে চোখে রাখছে। রাহমিদ বই সরানোতে বেজার হলো। বোনের কোলে শুয়ে গড়াগড়ি করতে লাগলো। রুদ বইটা আবারও রাখলো সামনে। রাহমিদ বিজ্ঞ ব্যক্তির মতো আবারও বই দেখতে লাগলো। অনেকক্ষণ পর বিকট আওয়াজে সিফাতের আম্মু চিৎকার দিয়ে উঠলো। রায়হান হকচকিয়ে গেলো। কি হলো? ওরা কিছু করেছে কি? দৌঁড় লাগিয়ে ওই রুমে গেলো। গিয়ে দেখলো রাহমিদ আর রুদ ফ্লোরে বসা। রাহমিদ, রুদ দুইজনই ভীতু নয়নে সিফাতের আম্মুর দিকে তাকিয়ে আছে। রাহমিদ এতক্ষণ পর ভাইকে দেখে চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠলো। রায়হান দ্রুত ওকে তুললো। হাতে ভেজা অনুভূত হওয়ায় হাত দিয়ে দেখলো রাহমিদ হিসু করে দিয়েছে। সিফাতের আম্মু রায়হানকে দেখে খিটখিটে মেজাজে বললো,

“তোমার ভাইকে কি আমার চাদর নষ্ট করার জন্য আনছো? আমার চাদর যে নোংরা করলো ধুবে কে? গত পরশু নতুন চাদর বিছালাম আর আজকেই নষ্ট করে ফেলছে চাদর টা। কত দামী আর সাধের চাদর জানো? এই পিচ্চিরে খাটে বসানোই ভুল হয়েছে। ওদের নিচে বসাতাম বেশি আদর করতে গিয়ে আমার চাদরটা নষ্ট হলো। উফফ অসহ্য।”

একেকটা কথা যেন বুলেটের থেকেও জোরে গায়ে এসে বিঁধলো। এর থেকেও দামী চাদরে ঘুমানোর অভ্যাস ছিল তাদের। রাহমিদ কখনো নোংরা করলে মা নিজ হাতে ধুয়ে দিতো নাহয় কাজের আন্টিদের দিয়ে ধোঁয়াতো। ওসব এখন অতীত। ওগুলো ভাবাও পাপ। রায়হান রাহমিদকে নিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বাচ্চাটা চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে কাদঁছে। রায়হান থামাচ্ছে না। রুদ ফ্লোর থেকে উঠে এসে ভাইয়ের পা জড়িয়ে ধরলো। ও ভীষণ ভয় পেয়েছে। কিভাবে রাহমিদকে আর তাকে নিচে নামালো। হাতে ব্যথা পেয়েছে সে। রাহমিদও প্রচণ্ড ব্যথা পেয়েছে। সিফাতের আম্মু আবার বললেন,

“উফ! এই তোমার ভাইয়ের কান্না থামাও তো। অসহ্য লাগছে। মাথাটা ধরে গেছে পুরো। একে তো চাদর নষ্ট করেছে এখন আবার ভ্যা ভ্যা করছে। ওদের নিয়ে কালকে থেকে আর পড়াতে আসবে না নইলে তোমাকে টিউশনিতে রাখতে পারবো না। বুঝেছো?”

“এভাবে বলবেন না আন্টি। ওদের আমি ছাড়া কেউ নেই। এরকম ভুল আর করবে না কখনো। কোনোদিন তো করেনি আজকে ভুলে হয়ে গেছে। পরেরবার আমি খেয়াল রাখবো যাতে এরকম না হয়। মন থেকে ক্ষমা চাচ্ছি আপনাদের চাদর নষ্ট করার জন্য। আমি চাদরটা ধুয়ে দিবো। বাথরুমটা দেখিয়ে দিলে ভালো হতো।”

সিফাতের আম্মু একটু গললেন বোধহয়। একটু বেশিই করে ফেলেছেন। বাচ্চা মানুষ এসব তো স্বাভাবিক ব্যাপার। তাও তার রাগ উঠে গেছে চাদর নষ্ট করায়। যেহেতু চাদর ধুয়ে দিতে চাচ্ছে দিক। কথা না বাড়িয়ে সিফাতকে পড়ানো শেষ করে চাদর ধুতে বললেন। রায়হান রাহমিদের ভেজা প্যান্ট পাল্টে দিলো। ওকে বেবি ক্যারিয়ারে ঝুলিয়ে নিলো। রুদকে পাশে বসিয়ে সিফাতকে পড়ানো শেষ করলো। তারপর রাহমিদকে রেখে চাদর ধুতে গেলো। এতো ভারী চাদর। ধুতে হিমশিম খাচ্ছে রায়হান। শরীর যেন চলছে না তার। তাও অনেক কষ্টে ধুয়ে দিলো। ধুয়ে রাহমিদ, রুদকে নিয়ে বাসা থেকে বের হলো। রায়হানের এক হাতে রাহমিদের ভেজা প্যান্ট আর কোলে বেবি ক্যারিয়ারে রাহমিদ ঝুলছে। ফোঁপাচ্ছে বাচ্চাটা। এখনো কান্না থামেনি। চিৎকার করাটা থেমেছে। আরেক হাত রুদ ধরে আছে। তিন ভাই বোন হাঁটতে লাগলো বাসার উদ্দেশ্যে। আজকে আরেকটা টিউশনি নেই। লাবিবরা ঘুরতে গেছে। ফিরবে পরশু। ভালোই হয়েছে। প্রেশার একটু কমেছে। হাঁটতে হাঁটতে রুদ বললো,

“ভাইয়ু, বাবুন ব্যথা পেয়েছে। আন্টি অনেক জোরে ধাক্কা দি বাবুনকে ফ্লোলে ফিলেছে।”

রায়হান শুধু শুনে গেলো। কি বলবে সে? একজন ব্যর্থ ভাইয়ের আর কি বলার আছে? আজকে খুশির খবর শুধু ভার্সিটিতে চান্স পাওয়াটাই। বাকি সব তো দুঃখের কাব্যগাঁথা। ওসব মনে করতে নেই রায়হানের মতো ছেলেদের নাহলে দুঃখ বাড়ে। চুপচাপ হাঁটতে লাগলো। বিকেলের এই সময়টা দারুন এক বাতাস প্রবাহিত হয়। সেই বাতাসের শীতল পরশে রায়হানের দুঃখ গুলোর বিলুপ্তি ঘটুক।
_____
—–

“বেয়াই, পোলাডার ব্যবসা খারাপ যাইতাছে কয়দিন ধইরা। আপনে কিছু ব্যবস্থা করে দিতে পারেন তো নাকি। মাইয়া বিয়া দিছেন হুদাহুদা। কিছু তো দিলেন না পোলাডারে। অহন এই সময়েও যদি কিছু না দেন তাইলে কেমনে হইবো।”

সেলিনা পারভীন মুখে এক খিলি পান ভরে আয়েশ করে বলতে লাগলো। আফজাল হোসেন চুপচাপ শুনছেন। মেয়ের বিয়েতে কিছু দেননি কথাটা একেবারে ভুল। নিজের সাধ্যের মধ্যে একটা খাট আর ফ্রীজ দিয়েছিলেন তিনি। তাও কিছুটা ধারদেনা করা লেগেছে। ওই টাকা পরিশোধ করতে অনেকদিন লেগেছে তার। এছাড়াও প্রতি বছরে দুই ঈদে মেয়ের শশুরবাড়ির জন্য সওদা পাতি পাঠাতে হয়। মেয়ের বাবা হয়েছেন এসব তো মিটাতে হবেই। তার স্বল্প আয়ে এতো কিছু করা সম্ভব না। মাঝেমধ্যে না দিতে পারলে এই নিয়ে সেলিনা পারভীনের কথার শেষ নেই। পোলাডারে কিছু দেন নাই? পোলাডা কিছু চায়ও নি। এতো ভালা পোলা কই পাইবেন। এতো ছাড় কিন্তু ভালা না বেয়াই। মাইয়া বাড়িতেই তো পাঠাইতাছেন। কিছু দিলে খাইবো পিনবো তো আপনের মাইয়াই। আমরা তো দুই দিনের মেহমান। এরকম হাবিজাবি আরও কথা বলেন ফোন দিয়ে। আজকেও কানের কাছে এসব বলে চলছেন। বাসায় তাড়াতাড়ি আসাও বিপদ যেন। উনি তো সচরাচর এই বাসায় আসে না। আসলেও এতদিন কখনোই থাকে না। সকালে আসলে বিকেলে চলে যান। ওনার রুচিতে নাকি কুলোয় না এই বাসা। তাহলে এবার এতদিন থাকার কারণ কি? রুচিতে কি এবার বেশি কুলাচ্ছে নাকি? কি উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছে কে জানে? আফজাল হোসেন শুধু বললেন,

“হাতে তো এখন তেমন টাকা পয়সা নেই। টাকা পয়সা হলে পাঠিয়ে দিবো। এখন কিছুটা টানাপোড়নে চলতে হচ্ছে। দেখি কি ব্যবস্থা করা যায়।”

সেলিনা পারভীন আফজাল হোসেনের কথা শুনে মনে মনে ফুঁসতে লাগলেন। হাতে টাকা নেই অথচ দিব্যি তিনটা অনাথ ঠিকই পালতে পারে। ঢং। এবার টাকা না নিয়ে যাবেন না তিনি। মুখে মেকি হাসি ফুটিয়ে বললেন,

“টেকা না থাকলে মিষ্টি কেমনে কিনলেন আবার হুনছি তিনডা এতিমরে নাকি পালেন। ঐসময় বুঝি টেকা লাগে না?”

আফজাল হোসেন বিস্মিত হলেন। উনি রায়হানদের পালেন মানে? ছেলেটা নিজে টিউশনি করে খরচ চালায়। উনি কখন রায়হানদের পেলেছেন? হ্যাঁ রায়হানদের যথেষ্ট সাহায্য করেছেন তিনি। তাই বলে তো ওদের খরচ আর তিনি বহন করেননি। রায়হান কাজ করে পরিশ্রম করে নিজেদের খরচ নিজেরাই চালায়। তাছাড়া তিনটা বাচ্চা পালা তো মুখের কথা না। উনি এসব কথা কিভাবে জেনেছেন। আফজাল হোসেন নরম গলায় বলেলন,

“ওদেরকে আমি মোটেও পালছি না বেয়াইন। এসব আজগুবি কথা কোথা থেকে শুনেছেন? রায়হান নিজে ইনকাম করে, কাজ করে খায় আমি তাকে একটু সাহায্য করেছি এই যা। এর বেশি কিছু করার সাধ্য আমার নেই। আপনি যে ডিমান্ড করছেন অতো দেয়ার ক্ষমতা আমার নেই। একটা বলে দিলেই তো হবে না বেয়াইন।”

সেলিনা পারভীন ভিতরে ক্রোধে ফেঁটে পড়লেন। ক্রোধের বশে বলে বসলেন,

“আপনেরা যদি নাই পালেন তাইলে ওগো এইহানে রাখছেন কেন? ওরা অন্য কোথাও থাহে না কেন? নিজেই কামাই করলে অবশ্যই অন্য জায়গায় থাকতো। আপনে আমারে ভক্কর চক্কর বুঝাইলেই আমি মাইনা লমু। আমার পোলারে কিছু দেয়ার বেলায় আপনের যত তামাশা কিন্তু তলে তলে তিনডা অনাথরে ঠিকই পালতে পারেন। আবার পরীক্ষায় পাশ করছে দেইখা মিষ্টিও কিন্নাও আনতে পারেন অথচ আমরা কিছু চাইলেই শুরু হইয়া যায় আপনের হাতে টেকা নাই। আপনেরা চলতে পারেন না। আর কত মিত্তা কতা কইবেন? জালিয়াতি আর কতকাল করবেন কন?”

ওযু করে আফজাল হোসেনের ঘরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কথাগুলো শুনে রায়হান পাথরের মতো জমে গেলো। তাদের জন্য আফজাল হোসেনকে কথা শুনতে হচ্ছে। বিষয়টা তাকে খুবই ব্যথিত করলো। আজকে সারা দিন দুঃখ পেতে পেতেই কাটলো। আল্লাহ্ আনন্দ দিয়েছে দুঃখ না পেলে চলে। বাসায় ফিরেই ওযু করতে চলে এসেছে সে। আসরের ওয়াক্ত চলে যাচ্ছে দেখে তাড়াহুড়া করে ওযু করে বের হয়ে কথাগুলো শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলো রায়হান। আর দাঁড়িয়ে না থেকে নামাজে দাঁড়িয়ে গেলো সে। মোনাজাতে কাঁদলো কিছুক্ষণ। সারাদিন পেটে কোনো দানাপানি পড়েনি তার। ভাইবোনদের সকালে একটু খাইয়েছিল তারপর থেকে ওরাও না খাওয়া। ওদের খাওয়াতে হবে। ডানো দুধ গুলিয়ে ফিডারে ভরে রাহমিদকে দিলো। রাহমিদ কান্না থামিয়ে ফিডার ধরে চুক চুক শব্দে দ্রুত দুধ খেতে লাগলো। আহারে কত খিদা লেগেছিল বাচ্চাটার! রায়হান ভাত আর আলু সেদ্ধ বসালো তাড়াতাড়ি। বোনটা খিদার জ্বালায় কাতরাচ্ছে।

চলবে….

#জীবন_পেন্ডুলাম
#বোনাস_পার্ট
#তাজরীন_ফাতিহা

ভাত রান্না করতে গেলে রায়হান সবসময় ভাত বেশি হওয়ায় নাহলে চাল চাল থাকতেই উঠিয়ে ফেলে। এখন পর্যন্ত সে সঠিকভাবে ভাত রান্না করতে পারেনি। একটা না একটা ভুল থাকবেই। আজকে ভাত বেশি নরম করে ফেলেছে। নরম ভাত রাহমিদকে খাওয়ানো গেলেও সে আর রুদ খেতে পারেনা। রুদকে চটকিয়ে খাইয়ে দেয়া যাবে কিন্তু রায়হান খেতে পারেনা একেবারেই। খেতে তো হবেই কিছু করার নেই। তাড়াতাড়ি কাজ করতে গিয়ে হাত পুড়িয়ে ফেললো। গরম গরম আলু চটকাতে গিয়ে পোড়া হাতে জ্বলুনি অনুভব করলো। দ্রুত হাত পানিতে ভেজালো। উফফ কি অসহ্য যন্ত্রণা! ছেলে মানুষ হয়ে এই কাজগুলো করতে তার অনেক কসরত করতে হয়। ঠিকভাবে রাঁধতে পারেনা সে। তবে আস্তে আস্তে শিখছে। ভবিষ্যতে আরও পাকাপোক্ত হবে। মানুষ অভ্যাসের দাস। অভ্যাসবসত কাজ করতে করতে একদিন অভিজ্ঞ হয়ে যাবে। যেই কাজে যত বেশি অভিজ্ঞ হবে সেই কাজ পরবর্তীতে সব চেয়ে ভালো পারবে। ভাত, আলু ভর্তা নিয়ে ঘরে আসলো। রুদ খিদে পেটেই ঘুমিয়ে গেছে। রাহমিদও বোনের পাশে হাত পা ছড়িয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে ঘুমাচ্ছে। দুটো মায়া মায়া চেহারার আদুরে বাচ্চা ঘুমিয়ে আছে। ফুটন্ত পুষ্পের মতো ভাইবোন গুলো এখন নেতিয়ে পড়েছে। যেন দুটো নেতানো পুষ্প কড়ি। তাদের তিন ভাইবোনের পরিচয় এখন অনাথ। সবাই এখন তাদের অনাথ, এতিম বলে সম্বোধন করে। আহা কি নিদারুণ নিয়তি!
___

রায়হান রুদকে উঠিয়ে মুখ ধুইয়ে আনলো। বাচ্চাটা ঘুম থেকে উঠতে চাচ্ছিলো না। রায়হান এক প্রকার জোর করেই উঠিয়েছে। খিদে পেটে অনেক্ষণ ছিল। বেশিক্ষণ থাকলে গ্যাস্ট্রিক দেখা দিবে। পরে অসুস্থ হয়ে গেলে ডাক্তার দেখাবে কিভাবে? হাতে টাকা একেবারেই নেই। মাস শেষ হতে বাকি আরও কয়েকদিন। এখন প্রায় মাগরিবের ওয়াক্ত। আযান দিয়ে দিবে এখনই। রায়হান রুদকে খাইয়ে দিচ্ছে। বাচ্চাটা ঘুম ঘুম চোখে খাচ্ছে। বেশি খেতে পারলো না। রায়হান মুখ ধুইয়ে দিলো। বোনের প্লেটেই খেতে বসে গেলো সে। এর মধ্যেই রাহমিদ উঠে গেছে। চিৎকার দিয়ে কাদঁছে। ঘুম ভাঙলে সাধারণত বাচ্চারা যেভাবে কাঁদে। রায়হান ভাত মাখা হাতে ওকে কোলে নিলো। প্যান্ট ভিজা। ওটা পাল্টিয়ে দিলো। ওকে কোলে নিয়ে চেপে চেপে আদর করলো। রাহমিদ আঙ্গুল ভরে চুষছে। রায়হান বুঝলো বাচ্চাটার খিদে পেয়েছে। ওকে কোলে বসিয়ে সাদা ভাত চটকিয়ে অল্প মুখে দিলো। রাহমিদ ভাইয়ের কোলে বসে ভাত মুখে নিলো। একটু একটু চিবুচ্ছে সে। তারপর মুখ থেকে বের করে ফেলে দিয়ে কেঁদে উঠলো।রায়হান বুঝলো খাবারটা পছন্দ হচ্ছে না রাহমিদের। উঠে ডানো দুধ নিয়ে এসে একটা বাটিতে ভাতের সাথে দুধের গুড়া নরম করে মাখালো। মাখিয়ে মুখের সামনে ধরলো আর আদুরে স্বরে বললো,

“কলিজা এটা খান। খাবার নষ্ট করবেন না। আল্লাহ্ গুনাহ দিবে। হা করুন দেখি কলিজা।”

রাহমিদ ভাইয়ের কথায় হা করলো। এখন খেতে লাগলো মজা করে। পা দুলিয়ে দুলিয়ে দুধ ভাত খাচ্ছে। রায়হান ওর গাল টিপে আদর করলো। খাওয়ানো শেষ করে নিজে দ্রুত খেয়ে নামাজ পড়লো। আফজাল হোসেন বা জয়নব বেগম এর মধ্যে একবারও আসেননি। রায়হান ওনাদের আশাও করেনি। তাদের জন্য তাকে কত কথা শুনতে হলো। নিজের মেয়ের আবার শাশুড়ি। চাইলেও কিছু বলতে পারবেন না। রায়হান দীর্ঘক্ষণ কিছু ভাবলো। টাকা হাতে আসলেই ভাবনাটা বাস্তবায়ন করতে হবে।
_____
—-

কেটে গেছে বেশ কিছুদিন। ঐদিনের পরের দিন সেলিনা পারভীন সব কিছু গুছিয়ে চলে গিয়েছেন। আয়েশাকে রেখে গিয়েছেন বাপের বাড়ি। তার এক কথা, হয় তার ছেলেকে কিছু দিতে হবে নাহলে রায়হানদের এখানে রাখা যাবে না। এতিম, অনাথ রাস্তার মানুষদের জন্য করতে পারবে অথচ তার ছেলের বেলায় যত দোনামনা। তিনি কিছুতেই তা মেনে নিবেন না। সব ভন্ডামি বের করে ছাড়বেন। চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে সারা বাড়ি এক করে ফেলেছিলেন এসব কথা বলে। সব ভাড়াটিয়া চেয়ে চেয়ে দেখছিল। আফজাল হোসেন মাথা হেট করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তার জীবনে সে এতো অপমানিত হয়নি তাও আবার ভাড়াটিয়াদের সামনে। ভাড়াটিয়ারা কানাকানি করছিল। এরা নাকি মালিকের আত্মীয় লাগে তাহলে এসবের মানে কি? এতদিন ধরে তাদেরকে মিথ্যা বলে এসেছেন আফজাল হোসেনের মতো মানুষ। ময়নার মা তো বলেই বসেছেন, “ওই পোলায় আবার আমাগো জ্ঞান দেয়। নিজেই অনাথ আবার ভাব দেহাইতো যেন কোন দেশের রাজপুত্তুর সে।” ওনার সাথে অনেকেই তাল দিয়েছে তখন। রায়হান এক কোণে ভাইবোনদের নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। কথা গুলো তীরের মতো বিঁধছিলো। চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া আর কি করার ছিল তার। ঐদিনই বাসা থেকে চলে যেতো যদি হাতে টাকা থাকতো। কিন্তু টাকা ছিল না দেখে চলে যেতে পারেনি। তাদের জন্য আফজাল হোসেনের মেয়ে শশুরবাড়ি যেতে পারছে না কথাটা ভেবেই এতদিন রায়হান অস্থির হয়ে যাচ্ছিলো। আফজাল হোসেন আর জয়নব বেগম সেদিনের পর থেকে রায়হানদের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছেন। নিজের মেয়ের থেকে নিশ্চয়ই পরের ছেলে মেয়ে আপন নয়। রায়হান বুঝেছিল এরকম কিছুই হবে। তাই রায়হান ওনাদের কোনো দোষ দেননা। ঠিকই তো দুনিয়ায় অনাথের আবার কিসের কষ্ট, কিসের থাকা খাওয়া। ওরা পৃথিবীতে আসেই তো যুদ্ধ করার জন্য। এখন সব কিছু কেমন গা সয়া হয়ে গেছে। ভাড়াটিয়ারাও কেমন যেন দুচোখে দেখে। আগে মালিকের আত্মীয় বলে তোষামোদ করে চলতো এখন দেখলেই কেমন বিরক্ত হয়। রায়হান দেখেও না দেখার ভান করে থাকে।

এসব ভেবেই সব কিছু গুছিয়ে নিচ্ছে। একটা কম ভাড়ার মধ্যে বাসা দেখেছে। ভাইবোনকে নিয়ে উঠবে। কারো আর দুচোখের বিষ হতে হবে না। ভার্সিটিতে ভর্তির সময়ও হয়ে এসেছে। বাসা পাল্টানোতে অনেক খরচ হয়ে যাবে। টিউশনি আরেকটা জোগাড় হয়েছে। আল্লাহর রহমতে সব যেন ভালোই ভালোই হয়ে যায়। রুদকে একটা স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিতে হবে। তাহলে বাসায় আর রুদকে একা রেখে যাওয়ার ভয় থাকবে না। রাহমিদ, রুদের জামা আলনা থেকে নামিয়ে ব্যাগে ভরলো। এখনই সব গোজগাজ করে রাখছে। কালকে সকালেই আল্লাহর নাম নিয়ে বেরিয়ে পড়বে। রুদ, রাহমিদের খেলনা, জুতা, দুধের কৌটা, প্লাস্টিকের বোল, প্লেট, বাটি গুছিয়ে নিলো একটা ব্যাগে। বেশি কিছু নেই। ব্যাস সব কিছু গোছানো শেষ। অপেক্ষা কালকের সকালের।
_____
—-

” আসসালামু আলাইকুম আংকেল। কেমন আছেন? এই মাসের ভাড়াটা।”

রায়হান হাসিমুখে আফজাল হোসেনের দিকে টাকা বাড়িয়ে বললো। ফজর পড়ে আফজাল হোসেন কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করছিলেন। তন্মধ্যে রায়হানের কণ্ঠ শুনে অবাক হয়েছেন। সেদিনের পর থেকে ছেলেটার সাথে তেমন একটা কথা বলেননি। মেয়েকে নিয়ে চিন্তায় আছেন। ভাড়াটিয়াদের সামনে অপমানিত হওয়ার পর উনি ঘর থেকে বেশি একটা বেড়োতেন না। জয়নব বেগমও প্রতিদিন কাঁদেন মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য। জামাইটা নিতে আসলো না এটা ভেবেই তিনি শঙ্কিত ছিলেন। কতবার মেয়ের শশুরবাড়িতে কল দিয়েছেন। শরমের মাথা খেয়ে বুঝাতে চেয়েছেন কিন্তু সেলিনা পারভীন মানতে নারাজ। এক কথা হয় টাকা দিতে হবে নাহয় রায়হানদের পালা যাবে না। আফজাল হোসেন তাকে কিছুতেই বোঝাতে পারেননি রায়হানদের সে পালছে না। এসব ভেবেই তার প্রেশার বেড়ে গেছে গত কয়েকদিন। আজকে রায়হানকে টাকা হাতে দেখে ছেলেটার মুখের দিকে দৃষ্টিপাত করলেন। আহারে কতটা শুকিয়ে গেছে। চেহারা গাম্ভীর্যপূর্ণ রুক্ষ রোদে পোড়া। মুখে মলিন হাসি। কি ছিল কি হয়েছে ভেবেই তার খারাপ লাগছে। রায়হান আফজাল হোসেনকে নিজের দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবারও ডেকে উঠলো। আফজাল হোসেনের ধ্যান ভাঙলো। বলেলন,

“কিসের টাকা?”

“এ মাসের ভাড়ার। একটু পরে চলে যাবো তো তাই আপনার আর আন্টির সাথে দেখা করতে আসলাম।”

রায়হান ম্লান হেঁসে বললো। আফজাল হোসেন কথাটা বুঝতে পারেননি। তাই জিজ্ঞাসা করলেন,

“কোথায় যাবে?”

“একটা বাসা দেখেছি আংকেল। ওখানেই উঠবো আজ। আপনাদের অনেক কষ্ট দিয়েছি ক্ষমা করবেন। নিজের অজান্তেই আমাদের দ্বারা কষ্ট পেয়ে থাকলে মাফ করে দিবেন আংকেল। আন্টিকে একটু ডাকুন।”

আফজাল হোসেন হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন। রায়হানরা চলে যাবে। তারা জানেনও না। জয়নব বেগম রান্না ঘরের দিকে যাওয়ার জন্য বের হয়েছিলেন। পথিমধ্যে রায়হান আর আফজাল হোসেনকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়লেন। রায়হান এগিয়ে গিয়ে তাকে সালাম দিলো। কুশলাদি জিজ্ঞাসা করলো। জয়নব বেগম দায়সারা ভাবে উত্তর দিলো। ফের জিজ্ঞাসা করলো না রায়হান কেমন আছে। রায়হান আর না ঘেঁটে বললো,

“আন্টি এতদিন আপনাদের কষ্ট দেয়ার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আমরা আজকে চলে যাচ্ছি। আয়েশা আপুকে শশুরবাড়ি পাঠিয়ে দিয়েন। আশা করি আর কোনো সমস্যা হবে না।”

জয়নব বেগম ভীষণ অবাক হয়ে তাকালেন। রায়হান কোথায় চলে যাওয়ার কথা বললো? জিজ্ঞাসা করলেন,

“কই যাইবা?”

“নতুন বাসায় আন্টি। দোয়া করবেন। আপনাদেরকে কষ্ট দেয়ার কারণে বদদোয়া করবেন না প্লিজ। আপনাদের জন্য সব সময় মন থেকে দোয়া থাকবে। আপনারা না থাকলে আমাদের আজকে রাস্তায় থাকতে হতো। আল্লাহ্ আপনাদের উত্তম প্রতিদান দিক। আপনাদের পেরেশানি দূর করে দিক। আসি আল্লাহ্ হাফেজ।”

কথাটা বলেই রায়হান প্রস্থান করলো। ঘরে গিয়ে ব্যাগপত্র নিয়ে বের হলো। কোলে বেবি ক্যারিয়ারে রাহমিদ ঝুলছে। একটা রিক্সা ডেকে মাল পত্র উঠালো। রুদকে নিয়ে আফজাল হোসেনদের কাছে গেলো। তারপর রুদকে বিদায় নিতে বললো। রুদ বিদায় নিলো। বললো,

“আসি আন্টি, আসি আনকেল। আল্লাহ্ হাফিজ।”

আফজাল হোসেন, জয়নব বেগম রুদ আর রাহমিদকে আদর করে দিলেন। তাদের চোখে পানি। বাচ্চাগুলো চলে যাচ্ছে দেখে এত কষ্ট হচ্ছে। এরকম না হলেও পারতো। নিয়তি তাদের কোথায় দাড় করিয়েছে। রায়হান বিদায় নিয়ে রুদকে নিয়ে রিক্সায় উঠে পড়লো। গন্তব্য এখন নতুন জীবনের, নতুন পথের। রায়হানরা চলে যেতেই জয়নব বেগম হাউমাউ করে কেঁদে দিলেন। বাচ্চাগুলোর সাথে যে তাদের কত ইমোশন জড়িয়ে আছে। দীর্ঘ পাঁচ মাস একসাথে ছিল। লাস্ট কয়েকটা দিন ঠিক করে কথাও বলেননি তারা। ওরা যে এভাবে চলে যাবে বুঝতে পারেননি। এসব ভেবে আফজাল হোসেনকে জড়িয়ে কেঁদে যাচ্ছেন জয়নব বেগম। আফজাল হোসেনেরও বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে। স্ত্রীকে কি বলে সান্ত্বনা দিবেন বুঝতে পারলেন না।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে