জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ৮
–পাগল হয়ে গেছ নাকি সামান্য কথা থেকে ডিভোর্স এর কথা বলতেছ
–আমার এই সংসার আর ভালো লাগে না আমাকে এই সংসারে রাখতে হলে আমার কথা মতো চলতে হবে
–(আল্লাহ কি করবো এখন আমি এতো অত্যাচার সহ্য করবো কিভাবে, ডিভোর্স দিয়ে চলে গেলে আব্বু আবার কষ্ট পাবেন আমি চাই না আব্বু দ্বিতীয় বার স্ত্রী হারানোর কষ্ট পান)
–চুপ হয়ে আছিস কেন আমার কথা মতো চললে বল নাহলে এক সপ্তাহের ভিতরে ডিভোর্স দিয়ে চলে যাবো তুলিকেও রেখে যাবো তোর মতো তুলি মা হারা হউক এইটা নিশ্চয় চাইবি না
–হুম বলো তোমার কি কি কথা শুনতে হবে
–প্রতিদিন কলেজে যাওয়া চলবে না তোর আব্বুকে বলবি কলেজে যাস, বাসার সব কাজ করতে হবে আমি যাই করি তোর আব্বুকে বলতে পারবি না
–হুম
এই মহিলার ভিতরে কি চলতেছে আল্লাহই জানেন আমার আব্বুকে কোনো বিপদে না ফেললেই হলো, আব্বুকে ভালো রাখার জন্য আমি সব সহ্য করতে পারবো
সারাদিন বাসার কাজ করলাম আম্মুর কথা তো শুনতে হবেই আব্বুকে ভালো রাখার জন্য তুলিকে মা হারা না করার জন্য, এই মহিলা মানুষ নাকি অন্য কিছু আল্লাহ জানেন নিজের মেয়েকেও মা হারা করতে চায়
পরের দিন আর কলেজ যাওয়া হলো না সারা দিন বাসার কাজ করে কাটিয়ে দিলাম, এখন বাসার সব কাজ একাই করতে পারি, সন্ধ্যায় রিয়া ফোন দিল
–কিরে কলেজে আসলি না এখনো রেগে আছিস
–তোর উপর রাগ করে থাকতে পারি নাকি
–তাহলে কলেজে আসলি না কেন
–আম্মু বলছে প্রতিদিন কলেজে যাওয়া যাবে না
–কেন
–বাসার কাজ করবে কে
–আমি বুঝি না তুই তোর আব্বুকে সব বলিস না কেন
–আমি সংসারে কোনো অশান্তি চাই না বাদ দে
–হুম শ্রাবণের কথা কিছু ভাবলি
–না এসব সম্ভব না বাদ দে
–হুম
ফোন রেখে ভাবছি শ্রাবন কি সত্যি আমাকে ভালবাসে এই সময় আবার ফোন বেজে উঠলো শ্রাবণ ফোন দিছে
–হ্যালো
–আজকে কলেজে আসনি কেন
–আর কলেজে যাবো না
–আমি আর তোমার দিকে থাকিয়ে থাকবো না প্লিজ তুমি কলেজে আসা বন্ধ করো না
–এই কারনে না পারিবারিক সমস্যা
–হুম বুঝেছি
–এসব পাগলামো বন্ধ করো পড়াশোনায় মন দাও
–মন তো তোমাকে দিয়ে দিছি বইকে কিভাবে দিবো মন দুইটা নাকি
–ফাজলামো করতেছ কেন
–ছাদে আস
–মানে
–তোমাদের ছাদে আস আমি ছাদে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি
–এতো রাতে ছাদে যাবো পাগল হয়ে গেছ নাকি
–হ্যা তোমার জন্য পাগল হইছি ছাদে আসবা তোমাকে দেখেই চলে যাবো আর না আসলে সারা রাত ছাদেই থাকবো বাই
ফোন কেটে দিল আল্লাহ কোনো পাগলের পাল্লায় পরলাম, এতো রাতে ছাদে যাওয়া কি ঠিক হবে আম্মু যদি বুঝে যায় কি করবো ভাবতেছি তখন ফোনে মেসেজ আসলো শ্রাবন মেসেজ করেছে
“ছাদে আসবা না হলে সারা রাত এখানেই বসে থাকবো”
বাধ্য হয়ে ছাদে গেলাম ও আমাকে দেখেই কান্না শুরু করে দিছে বুঝলাম না কান্না করার কি আছে
–এই কাঁদছ কেন
–কলেজে যাওনি কেন
–তাই বলে কাঁদতে হবে
–তুমি তো আমাকে ভালোবাস না তুমি বুঝবা না তোমাকে না দেখলে কতটুকু কষ্ট হয়
–এসব তোমার পাগলামি আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে
–পাগলামি না সত্যি তোমাকে ভালবাসি
–হইছে এখন যাও আম্মু বুঝতে পারলে সমস্যা হবে
–তোমার মনে কি আমার জন্য একটু ভালোবাসাও নেই
–না নেই
–ঠিক আছে কি করে ভালোবাসা জন্মাতে হয় আমি জানি
–কি করবা তুমি
–সুইসাইড
–(ঠাস করে একটা তাপ্পর দিলাম)
–মারলা কেন
–তো কি করবো পাগলের মতো কি বলতেছ এসব জীবন এতই সস্তা একটা মেয়ের ভালোবাসা না পেলে সুইসাইড করতে হবে
–তো কি করবো অনেক চেষ্টা করেছি তোমাকে ভুলে থাকার এক মুহূর্তের জন্য ভুলতে পারিনি
–প্লিজ বুঝার চেষ্টা করো
–কিচ্ছু বুঝতে চাই না এক সপ্তাহ সময় দিয়ে গেলাম এর মধ্যে তোমার মতামত জানাইবা
ও চলে গেলো কি করবো আমি যদি সত্যি খারাপ কিছু করে বসে ওর আম্মুকে কি বলবো, ওর আব্বু নেই ওকে নিয়েই ওর মা বেচে আছেন ওর কিছু হলে আমি দায়ী হবো, ভালো লাগছে না কিছু আমার জীবনটা এমন কেন, রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে গেলাম
এক সপ্তাহ থেকে দুদিন চলে গেলো শ্রাবণ আর ফোন করল না পাগলটা কি সত্যি খারাপ কিছু করবে নাকি আল্লাহ জানেন, আব্বু ফোন দিলেন
–হ্যালো আব্বু
–আম্মু বাসায় আসতেছি কিছু লাগবে
–চকলেট নিয়ে এসো আর কখন আসবা
–রাত ৯টার দিকে
–আচ্ছা সাবধানে এসো
–আচ্ছা রাখি
ফোন রেখে ভাবছি মাত্র সন্ধ্যা হইছে ৯টা বাজতে অনেক দেরি আমি তো এখন অনেক ভালো রান্না করতে পারি আজ আব্বুর প্রিয় খাবার রান্না করবো, ভুনা খিচুরি আর ইলিশ ভাজা আব্বুর প্রিয় খাবার শুধু আব্বুর না আমারও, যেই ভাবা সেই কাজ রান্না করতে শুরু করে দিলাম, আম্মু আসলো
–কি ব্যাপার আজ এসব রান্না করছিস কেন
–আব্বু আসবে তাই
–আমাকে তো বলেনি
–আমি কি জানি
–তুই যে রান্না করতেছিস তোর আব্বুকে কি বলবি আবার ঘরে অশান্তি শুরু করে দিবি
–কিছু হবে না চিন্তা করো না তোমার কথা কিছুই বলবো না
–বললে তো কি হবে বুঝিস ই
–হুম
রান্না শেষ করে ফ্রেশ হয়ে আসলাম ৯টার দিকে আব্বু আসলেন
আব্বু: আমার আম্মুরা কই (তুলি দৌড়ে গিয়ে আব্বুকে জরিয়ে ধরলো)
আমি: আব্বু তোমাকে আজ অনেক খুশি খুশি লাগছে কারন কি
আব্বু: চার দিন তোদের কাছে থাকবো তাই, অনেক খিদে লেগেছে চল খাবো
আমি: হুম চলো
আম্মুর অবস্থা দেখে আমার খুব হাসি পাচ্ছে আব্বু বাসায় আসলে সব কাজ আম্মুকেই করতে হয় এখনো মুখ গোমরা করে খাবার বারতেছেন
আব্বু: আজ খাবারের গন্ধ অন্য রকম লাগতেছে
তুলি: আব্বু আজ আপু তোমার প্রিয় ভুনা খিচুরি আর ইলিশ ভাজা রান্না করেছে
আব্বু: কিরে রান্না শিখলি কিভাবে (আম্মু আমার দিকে রাগি চোখে থাকিয়ে আছে)
আমি: আব্বু এখন রান্না শিখতে বেশি সময় লাগে নাকি ইউটিউব আছে না
আব্বু: হুম বুঝেছি
খেয়ে রোমে আসলাম একটু পর আব্বু আসলেন
–চল ছাদে যাই
–তুমি যাও আমি কপি নিয়ে আসি
–ওকে
দুই মগ কপি বানিয়ে আর কিছু চকলেট নিয়ে ছাদে গেলাম
–এখন আর আগের মতো চকলেট নিয়ে পাগলামি করিস না
–হয়তো বড় হয়ে গেছি
–হুম বড় হয়েছিস বলেই তো বাবাকে মিথ্যে বলিস
–মিথ্যে কখন বললাম
–আমি এতো বোকা না রে মা কোনটা ইউটিউব দেখে প্রথম রান্না আর কোনটা পাকা রাঁধুনির হাতের রান্না সেটা আমি বুঝি
–বাদ দাও তো আব্বু মেয়েদের তো সব শিখে রাখতে হয়
–হুম, কাজের বুয়ার টাকা বেচে যাবে
–কলেজে যাওয়ার জন্য আম্মুর কাছে টাকা চাইতে ভালো লাগে না
চলবে?