জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ৭
সকালে নাস্তা বানিয়ে তুলির কাছে গেলাম গিয়ে দেখি তুলি স্কুল ড্রেস পড়ছে আর আম্মু কার সাথে যেন হেসে হেসে কথা বলছে ইদানীং আম্মু অনেক সময় ফোনে কথা বলে আব্বু তো কাজের চাপে তেমন ফোন দিতে পারেন না তাহলে কার সাথে এতো কথা বলে আম্মু, যার যা খুশি করুক আমি নাস্তা করে কলেজে চলে আসলাম, ক্লাস শুরু হয়ে গেছে রিয়া আর আমি পাশাপাশি বসে ক্লাস করছি, রিয়া বললো
–শ্রাবণ তোর দিকে থাকিয়ে আছে
–তো কি করব
–আমার মনে হয় ছেলেটা তোকে সত্যি ভালোবাসে
–তোকে কি ও ওকালতি করতে বলছে
–রেগে যাচ্ছিস কেন
–তো কি করবো আমার সম্পর্কে তুই ওকে বললি কেন
–তোকে অনেক ভালোবাসি তাই
–মানে
–তোর এসব কষ্ট আমার সহ্য হয় না তাই শ্রাবণ কে সব বলেছি ওর ভালোবাসায় যদি একটু সুখি হছ আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হবো
–(চুপ হয়ে আছি ওর কথা শুনে এই রিয়াটাই আমাকে বুঝে অনেক ভালোবাসে)
ক্লাস শেষ করে রিয়া আর আমি মাঠে গিয়ে বসলাম শ্রাবণ আসলো
শ্রাবণ: তমা কেমন আছ
আমি: ভালো
শ্রাবণ: আমাকে কি এখন বিরক্ত লাগে তোমার
আমি: না
শ্রাবণ:একটা বার ভেবে দেখো না প্লিজ আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না (ওর দুচোখ দিয়ে পানি ঝরতেছে)
রিয়া: শ্রাবণ একটা প্রশ্ন করি
শ্রাবণ: হুম
রিয়া: তমার সম্পর্কে তো সবই জানো কোনো ঝড় আসলে ওর পাশে থাকবা তো
শ্রাবণ: ওকে একটা বার রাজি হতে বল দেখো ওকে অনেক ভালোবাসব কখনো কষ্ট দিব না সবসময় ওর পাশে থাকবো
আমি: তুমি আমাকে ভালোবাস মানছি কিন্তু আমার পক্ষে সম্ভব না প্লিজ আমাকে ভুলে যাও
শ্রাবণ: তমা আমার কথা একবারও ভাববা না আমি যে কষ্ট পাচ্ছি (আবারো কাঁদতেছে)
আর ওখানে বসলাম না রিয়া কে নিয়ে চলে আসলাম রিক্সায় বসে আছি রিয়া বললো
–ছেলেটা তোকে সত্যি ভালবাসে
–বুঝলি কি ভাবে
–ছেলেরা খুব বেশি কষ্ট না পেলে কাঁদে না ওদের চোখের জল কখনো মিথ্যে হয় না
–কিন্তু আমার পক্ষে সম্ভব না
–কেন তোর আব্বু তো মেনে নিবেন
–আম্মু কেমন জানিস তো বাসায় জামেলা শুরু হবে আমি চাই না আমার জন্য আব্বু কষ্ট পান তাছাড়া আম্মু কখন জানি বিয়ে দিয়ে দিতে চায় তখন শ্রাবণ কে কি বলবো
–এসব পরে ভাবা যাবে আগে ছেলেটার কথা ভাব আমার মনে হয় তোর ওর প্রতি দূর্বলতা আছে মন যা বলে তাই শুন
–আমার কোনো দূর্বলতা নেই
–আছে তুই বুঝতে পারছিস না আস্তে আস্তে বুঝবি তখন বুঝবি তুইও শ্রাবণ কে ভালবাসিস
–হইছে বাদ দে তোর ওকালতি
বাসায় এসে সব কাজ সেরে গোসল করলাম, সন্ধ্যায় রান্না শেষ করে কপি নিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম আম্মু আসলো অভাক হলাম কারন উনি এখন আর আমার রোমে আসেন না,
–আম্মু তুমি আমার রোমে
–কেন আসতে পারি না
–এখন তো আর আস না তাই বললাম
–হুম
–কিছু বলবা
–হুম একটু সাহায্য করবি
–কি বলো
–আমার কিছু টাকা লাগবে তোর আব্বুকে বলে এনে দিবি
–তুমি বললেই তো হয়
–আমার লাগবে বললে অনেক প্রশ্ন করবে তোর লাগবে বলে এনে আমাকে দিবি
–কত টাকা
–২ লক্ষ
–এতো টাকা দিয়ে তুমি কি করবা তাও আব্বুকে না জানিয়ে
–প্রয়োজন আছে প্লিজ এনে দে আমি আর তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করবো না
–আম্মু তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে এতো টাকা আমি আব্বুর কাছে কি করে চাইবো
–তুই চাইলে দিয়ে দিবে আমি জানি
–হ্যা দিবে তাই বলে আব্বুকে মিথ্যে বলে টাকা আনবো
–মায়ের জন্য একটু মিথ্যে বললে কিছু হবে না
–বাহ সেদিন মা ডাকতে নিষেধ করে আজ টাকার জন্য বলছ মায়ের জন্য মিথ্যে বললে কিছু হবে না
–এতো প্যাঁচাল না করে বল এনে দিবি কি না
–দেখো টাকা কম হলে এনে দিতাম এতো টাকা এনে দিতে পারবো না তাও আব্বুকে মিথ্যে বলে আমার পক্ষে সম্ভব না
–নিজের প্রয়োজন হলে ঠিকি আনতে পারতা প্রয়োজন তো আমার এখন পারবা না
–আব্বু কি তোমাকে টাকা দেন না
–হ্যা দেয় কিন্তু
–টাকা দিয়ে কি করবা এটা বলো পেয়ে যাবা
–এতো বলতে পারবো না আর আমার কথা না শুনার শাস্তি পাবি
আম্মু রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলো হায়রে মানুষ টাকা প্রয়োজন তাই এতো সুন্দর ব্যাবহার, আল্লাহ জানেন টাকা এনে না দেয়ার জন্য কি শাস্তি অপেক্ষা করছে আমার জন্য, বুঝতেছি না এতো টাকা দিয়ে আম্মু কি করবে তাও আবার আব্বুকে না জানিয়ে, এসব ভাবছি বারান্দায় বসে বসে তখন ফোন বেজে উঠলো আব্বু ফোন দিয়েছেন
–কেমন আছ আব্বু
–ভালো তুই কেমন আছিস
–ভালো
–কলেজে যাস তো ঠিক মতো
–হুম
–মন দিয়ে পড়াশোনা করিস
–আচ্ছা বাসায় কি আসবা
–দেখি সময় পেলে আসবো
–আচ্ছা রাতে খেয়ে নিও
–তুইও খেয়ে নিস রাখি
–হুম
রাতে খেয়ে শুয়ে পড়লাম, কলেজে ঠিক মতো যাই না বাসায়ও পড়ি না এখন থেকে পড়াশোনায় মন দিতে হবে, আচ্ছা আম্মু এতো টাকা দিয়ে কি করবে আব্বুকে না জানিয়ে আমি কি আব্বুকে বলবো, না থাক বললে আম্মু আব্বুর মধ্যে জামেলা হবে, এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম
সকালে উঠে আম্মুকে বাসায় ফেলাম না এতো সকালে কোথায় গেলো কে জানে, আমি আর নাস্তা বানালাম না কলেজে চলে গেলাম, ক্লাসে বসে আছি শ্রাবণ যে ভাবে থাকিয়ে আছে আজ আর ক্লাস করা হবে না কেউ এভাবে ফ্যালফ্যাল করে থাকিয়ে থাকলে ক্লাস করা যায় বুঝি
ক্লাস শেষে রিয়া আর আমি মাঠে বসে আছি শ্রাবণ আসলো
আমি: আমার দিকে এভাবে থাকিয়ে থাক কেন
শ্রাবণ: আমার ভালো লাগে তাই
আমি: আর এভাবে থাকাবা না
শ্রাবণ: আমি থাকাবই
আমি: তাহলে আমি আর কলেজে আসবো না
শ্রাবণ: এইটা কেমন শাস্তি
রিয়া: তমা তুই পাগল হয়ে গেছিস ও তোকে ভালোবাসে তাই এমন করে আর তুই বলছিস কলেজেই আসবি না
আমি: আমার কারো ভালোবাসা চাই না থাক তোরা ভালবাসা নিয়ে আমার সাথে যোগাযোগ করবি না
রাগ করে বাসায় চলে আসলাম কি করবো আমি এভাবে চলতে থাকলে শ্রাবণের পাগলামি দিন দিন বাড়বেই আমি কাউকে আমার জীবনের সাথে জরাতে চাই না, বাসায় এসে দেখি আম্মু ড্রইংরুমে বসে আছে মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে আজ আমার কপালে দুঃখ আছে,
–এই যে নবাবজাদী কলেজে তো চলে যাও বাসার কাজ করবে কে আর সকালে নাস্তা বানিয়ে রেখে গেলি না
–সকালে তুমি বাসায় ছিলে না তাই নাস্তা বানাই নি আর বাসার কাজের জন্য পড়াশোনা বাদ দিয়ে দিতে হবে নাকি
–মুখে মুখে কথা তো ভালই বলতে পারো ইদানীং
–আম্মু তুমি কিন্তু বেশি করছ আমি আব্বুকে বলে দিব
–বল আমার কি ডিভোর্স দিয়ে চলে যাবো
–পাগল হয়ে গেছ নাকি সামান্য কথা থেকে ডিভোর্স এর কথা বলতেছ
চলবে?