জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ৫
–এখন তো আমার কথা চেঁচামেচি মনে হবেই একদিন বুঝবা
–আচ্ছা
আব্বু আর কথা বাড়ালেন না সবাই একসাথে খেয়ে নিলাম, রোমে বসে আছি আব্বু আসলেন, মা চল ছাদে যাই অনেক দিন ধরে বাপ বেটি মন খুলে কথা বলি না
ছাদে বসে আছি আব্বু আর আমি, যখন আব্বু কাছে থাকেন সব কষ্ট ভুলে যাই
–আজ তোর মা বেচে থাকলে অনেক খুশি হতো
–হুম
–আজকের খুশির দিনে আমার কাছে কিছু চাইবি না
–তুমি পাশে আছ এটাই তো অনেক আর কি চাই
–তোর পাশে সবসময় থাকবো বল কি চাস
–একটা প্রশ্ন করতে চাই যদি অনুমতি দেও
–অনুমতি চাওয়ার কি আছে
–না আসলে যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই প্রশ্নটা মনের মধ্যে বাসা বেধেছে কিন্তু কিসের যেন ভয় হয় তোমাকে প্রশ্নটা করার
–আমার কাছে আবার ভয় কিসের বলে ফেল
–আচ্ছা আব্বু আমার নানু বাড়ির কি কেউ বেচে নেই ওদের কাউকে কখনো দেখছি বলে মনে হয় না
–তোর নানু নেই নানা আছেন আর তোর দুই মামা আর তাদের পরিবার আছে
–তাহলে কখনো আমার খোঁজ নেয়নি কেন ওরা
–তোর মা আর আমি একি কলেজে পড়তাম সেখান থেকেই আমাদের পরিচয়, তোর মায়ের পরিবার গ্রামে থাকতো এখন কোথায় আছে জানিনা, তোর মা আর তোর দুই মামা ছিল, একমাত্র মেয়ে তো তাই তোর নানা আমাদের সম্পর্ক মেনে নেয়নি আমার পরিবারও মেনে নেয়নি তাই আমরা পালিয়ে বিয়ে করি, যখন তোর জন্ম হলো আমার পরিবার আমাদের মেনে নিল আমরা ভেবেছিলাম তোর নানা আমাদের মেনে নিবেন তাই তোকে কোলে নিয়ে সেখানে যাই কিন্তু গিয়ে শুনি তোর মায়ের শুকে তোর নানু মারা গেছেন তাই আমাদের আর কেউ মেনে নেয়নি তোর মামারা বলে দেয় আমাকে চোখের সামনে ফেলে মেরে ফেলবে, তোর মা আমাকে হারানোর ভয়ে সেই শহর ছেড়ে এখানে চলে আসে তারপর তোর দাদা-দাদি ও মারা গেলেন আমরা একা হয়ে গেলাম, তোর চার বছর হতেই তোর মা আমাদের একা করে দিয়ে চলে গেলো (আব্বুর দুচোখ বেয়ে পানি ঝরছে সাথে আমারও)
–আমরা একা কে বললো আব্বু বাবা মেয়ে তো আছি একজন আর একজনের পাশে
–হুম তোকে একটা জিনিস দিতে চাই নিবি তো
–কি
–তোর নামে ব্যাংক একাউন্টে ১০লক্ষ টাকা আছে কোনো সময় প্রয়োজন হলে তুলে নিস
–এতো টাকা দিয়ে আমি কি করবো
–আমি না থাকলে যদি তোর প্রয়োজন হয়
–হুম
–ভর্তির কথা কি ভাবলি
–পাশের কলেজেই ভর্তি হবো যেতে সুবিধা হবে
–ওকে
–আচ্ছা আব্বু আমি কি অনেক বড় হয়ে গেছি
–কে বললো
–আম্মু সেদিন বললো বড় হয়ে গেছি বিয়ে দিয়ে দিবে
–বিয়ে তো একদিন করতেই হবে তোর আম্মুর কথা কানে নিস না আমি তোকে পড়াবো
–হুম
দুদিন পর আব্বু চলে গেলেন আর আমার উপর অত্যাচার আবার শুরু হয়ে গেলো
দেখতে দেখতে ভর্তির সময় চলে আসলো রিয়া আর আমি আমাদের পাশের কলেজে ভর্তি হলাম, বাসা থেকে কলেজে যেতে রিক্সায় ১০মিনিট লাগে,
আজ প্রথম ক্লাস তাই একটু তাড়াতাড়ি কলেজে গেলাম, কলেজের গেটে গিয়েই কার সাথে যেন ধাক্কা খেলাম তাল সামলাতে না পেরে দেয়ালে পরে গেলাম উফফফ মাথাটা মনে হয় ফেটেই গেছে, রিয়া তাড়াতাড়ি মাথায় চেপে ধরলো সত্যি ফেটে রক্ত বের হচ্ছে সামনে থাকিয়ে দেখি একটা ছেলে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে আমার দিকে থাকিয়ে আছে তারমানে এই ছেলের সাথে ধাক্কা খেয়ে মাথাটা ফেটে গেছে, রিয়া গিয়ে ছেলেটার সাথে ঝগড়া লেগে গেছে
–ওই দেখে চলতে পারেন না চোখ কই থাকে
–আসলে আমি দেখিনি আর উনিও তো দেখেননি
–নিজের দোষ এখন ওর ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছেন
–আমার একার দোষ নাকি উনিও তো দেখেননি
–হইছে চুপ করেন আপনার জন্য ওর কতোখানি রক্ত ঝরলো
–আচ্ছা ঝগড়া পরে করি আগে উনাকে পাশের ফার্মেসিতে নিয়ে যাই
–হুম চলেন
রিয়া আর ছেলেটা পাশের ফার্মেসিতে নিয়ে গেলো কপালে
ব্যান্ডেজ করে দিলো আর কয়েকটা ওষুধ দিয়ে দিলো, আবার কলেজে আসলাম মাঠের এক কোনে গিয়ে বসলাম, তখন ছেলেটা আসলো
–সরি সত্যি আমি দেখিনি আমার জন্য আপনার এতো রক্ত ঝরলো
–আপনার তো একার দোষ না আমারও দোষ আছে আমিও তো না দেখাতেই ধাক্কা লাগলো
–তাও আমার সাথে ধাক্কা লেগেই তো আপনার রক্ত ঝরলো আই রিয়েলি সরি
–ইটস ওকে ওষুধ খেলেই ঠিক হয়ে যাবে
–আমরা কি বন্ধু হতে পারি আমার নাম শ্রাবণ
–আমার নাম তমা আর ও আমার বান্ধবী রিয়া
আর ক্লাস করা হলো না বাসায় চলে আসলাম আম্মু তো মাথায় ব্যান্ডেজ দেখে রেগে আগুন, আমি নাকি কোন আকাম করে মাথা ফাটাইছি আর ব্যান্ডেজ করে উনার টাকা নষ্ট করছি হায়রে মা, উনার কথায় কান না দিয়ে রোমে এসে শুয়ে পড়লাম মাথা যন্ত্রণা করছে ভালো লাগছে না কিছু, কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম বুঝতেই পারিনি একেবারে সন্ধ্যায় ঘুম ভাঙ্গলো উঠে গিয়ে রান্না করলাম, রান্না শেষে কপি নিয়ে রোমে আসলাম অনেক দিন হলো ফেবু তে যাই না তাই ফোনটা হাতে নিয়ে আইডি টা লগইন করলাম রিয়ার সাথে অনেক সময় চ্যাট করলাম, রোম থেকে বেরিয়ে দেখি আম্মু খেয়ে নিছে তাই খেয়ে নিলাম রোমে এসে ওষুধ খেয়ে শুয়ে পড়লাম
সকালে উঠে নাস্তা বানালাম, আম্মু নাস্তা করে তুলিকে নিয়ে স্কুলে চলে গেলো, মাথাটা যন্ত্রণা করছে কলেজে যেতে ভালো লাগছে না তাই ছাদে গিয়ে বসে রইলাম, রিয়া ফোন দিলো
–কিরে কলেজে আসবি না
–না ভালো লাগছে না
–মাথা ব্যাথা করে নাকি
–একটু একটু করতেছে চিন্তা করিস না কমে যাবে
–শ্রাবণ আমাকে পাগল বানিয়ে দিতেছে তুই কখন কলেজে আসবি জানার জন্য
–বল যাবো না
–ওকে রাখি
–হুম
পরের দিন কলেজে গেলাম, ক্লাসে ঢুকতেই শ্রাবণ এসে হাজির
–কাল কলেজে আসেননি কেন
–এমনি
–আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম মাথায় আবার কিছু হলো কি না ভেবে
–না তেমন কিছু না এমনি আসিনি
–আচ্ছা আমরা তো ফ্রেন্ড তুমি করে তো বলতে পারি
–হুম
–একটা কথা বলি যদি রাগ না করো
–হুম বলো
–তোমার নাম্বারটা দেয়া যাবে
–কেন
–না মানে তুমি কলেজে না আসলে ফোন দিয়ে জানতে পারবো কেন আসনি আসলে আমার জন্যই তো তোমার মাথা ফেটে গেছে তাই যতো দিন না মাথার কাটা কমেছে নিজেকে অপরাধী মনে হবে, তুমি না চাইলে মাথার কাটা কমে গেলে পর আর ফোন দিবো না
–ওকে নাও (নাম্বার দিলাম)
বাসায় এসে গোসল করে ছাদে গেলাম, ফুল গাছ গুলায় অনেক দিন ধরে পানি দেওয়া হয় না তাই পানি দিতে শুরু করলাম, অনেক গুলো বেলি ফুল আর কয়েকটা সাদা গোলাপের গাছ এই দুইটা ফুল আমার পছন্দের
চলবে?