জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ৩০/অন্তিম পর্ব
রাস্তায় হাটছি কোথায় যাবো জানিনা, সন্ধ্যা হয়ে গেছে অনেক আগেই এই ব্যাস্ত নগরী অন্ধকার হতে শুরু করেছে হঠাৎ চোখ পরলো রাস্তার অপর পাশে একটা ৩-৪ বছরের বাচ্চা একা দারিয়ে কাঁদতেছে, এগিয়ে গিয়ে বাচ্চাটি কে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করলাম কোনো কথা না বলে শুধু কাঁদছে
–বাচ্চাটি এতিমখানা থেকে চলে এসেছে (কথাটা শুনে ফিছনে থাকালাম একজন বৃদ্ধ লোক দাড়িয়ে আছেন)
–আপনি
–আমি পাশের এতিমখানার ম্যানেজার এই বাচ্চাটি এতিমখানা থেকে হারিয়ে গেছিল সকালে সারাদিন খুঁজে এখানে পেলাম
–ওহ
–আপনি কোথায় যাবেন
–জানিনা
–মানে
–বাসা থেকে চলে এসেছি কোথায় যাবো জানিনা
–আপনি চাইলে আপাদত আমাদের এতিমখানায় যেতে পারেন ওখানে আপনার বয়সী আরো দুইটা মেয়ে আছে ওরা বাচ্চাদের দেখাশুনা করে
–(কি করবো ভেবে পাচ্ছি না যাবো নাকি যাবো না, রাতের বেলা রাস্তায় থাকার চেয়ে এতিমখানায় থাকা অনেক ভালো)
–কি ভাবছেন
–যাবো চলেন
–হুম চলেন
–আমি আপনার মেয়ের বয়সী আমাকে তুমি করেই বলবেন চাইলে তুই করেও বলতে পারেন
–আমার নাম রহিম সবাই রহিম চাচা বলেই ডাকে তুমিও আজ থেকে এই নামেই ডেকো
–ঠিক আছে
তারপর চলে এলাম এতিমখানায় রিয়া আর আকাশ কে ফোনে সব জানালাম, আর আব্বু কে ফোন করে জানালাম টেনশন না করতে আমি ভালই আছি
সেই থেকে হয়ে গেলাম এই এতিমখানার একজন, এখন আমিও বাচ্চাদের দেখাশুনা করি আর এতিমখানায় থাকি, একটা সপ্তাহ ভালই কাটলো আব্বু রাগ করলেও আমি ভালো আছি শুনে আর ফিরে যাবার কথা বললেন না, হয়তো আব্বুও বুঝেছেন ওই বাসায় থাকার চেয়ে এখানে থাকা অনেক ভালো
এতিমখানার বাচ্চাদের কিছু ড্রেস কিনার জন্য রহিম চাচার সাথে মার্কেটে আসলাম হঠাৎ একটা ছিন্তাইকারী এসে হাত থেকে ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে দৌড় দিলো, ব্যাগে কিছু টাকা আর ফোনটা ছিল, কি করবো ফোন নাহয় কিনলাম কিন্তু সিমের কাগজপত্র তো আব্বুর নামে আব্বুকে ছাড়া সিম তুলবো কিভাবে, নতুন সিম কিনলে সবার নাম্বার পাবো কোথায়
এসব চিন্তা করতে করতে এতিমখানায় ফিরে আসলাম, রহিম চাচার ফোন থেকে আব্বুকে ফোন দিলাম কিন্তু বন্ধ, এখন কি করবো আবার বাসায় যাবো গেলেও তো আগামীকাল যেতে হবে এখান থেকে বাসা অনেক দূর ফিরতে অনেক রাত হয়ে যাবে, সব ভেবে ঠিক করলাম সকালে বাসায় যাবো
সকালে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম, রিয়াটা হয়তো ফোন অফ পেয়ে অনেক টেনশন করছে, বাসার সামনে যেতেই থমকে দাঁড়ালাম বাসায় তালা ঝুলানো, তাহলে কি আব্বুরা অন্য কোথাও চলে গেছে নাকি কোথাও বেড়াতে গেছে কিন্তু বেড়াতে কোথায় যাবে
একরাশ চিন্তা নিয়ে এতিমখানায় ফিরে আসলাম, আকাশের নাম্বারটাও নেই যে ওকে জিজ্ঞেস করবো আব্বু অফিসে কিনা আকাশের নতুন বাসাও চিনি না
এভাবে কেটে গেলো পাঁচটা দিন প্রতিদিন বাসায় গিয়েছি কিন্তু তালা ঝুলানো পেয়েছি
আজ আবার যাচ্ছি বাসায়, মনে হাজার প্রশ্ন আজ কি আব্বুকে পাবো…? আব্বুরা কোথায় যেতে পারেন…? নাকি আব্বুর কোনো বিপদ হলো…? আব্বুকে কি হারিয়ে ফেলেছি আমি…?
এসব চিন্তা করতে করতে বাসার সামনে আসলাম, না আজ তালা ঝুলানো নেই অনেক খুশি মনে কলিংবেল বাজালাম কিন্তু দরজা খুললেন একজন মহিলা
–কে মা তুমি
–আপনি এই বাসায়
–এইটা আমাদেরই বাসা
–এই বাসায় তো…
–ওহ তুমি এই বাসার মালিকের কথা বলতে চাইছ
–হ্যা আগে তো উনারা থাকতেন
–হ্যা পাঁচদিন হলো বাসাটা আমরা কিনে নিয়েছি
–কিনে নিয়েছেন মানে তাহলে উনারা কোথায়
–তাতো জানিনা মা কিন্তু তুমি কে
মহিলার আর কোনো প্রশ্নের উত্তর দিলাম না দিব কিভাবে আমার মুখ দিয়ে যে কোনো কথাই বের হচ্ছে না, আমি তো আব্বুকে হারিয়ে ফেলছি কোথায় খুঁজবো এখন
এতিমখানায় ফিরে এসে আম্মুর ছবিটা বুকে জরিয়ে অনেক কাঁদলাম, আম্মু তো সেই ছোট বেলায় আমাকে একা করে দিয়ে চলে গেছেন এখন আব্বুকেও হারিয়ে ফেলেছি আমি বাঁচবো কি নিয়ে এখন….?
এভাবেই কেটে গেলো দুইটা বছর, এই দুইটা বছর আমি আব্বুকে পাগলের মতো রাস্তায় রাস্তায় খুঁজেছি সেই বাসায় অনেক বার গিয়েছি কিন্তু আব্বুকে ফিরে পাইনি, আকাশ রিয়া ওদের ও খুঁজে পাইনি,
সেই থেকে এতিমখানায় বাচ্চাদের দেখাশুনা করতে শুরু করি, আমার পড়ালেখা আবার শুরু করি, এতিমখানার পাশেই একটা ছোট বাসা ভাড়া নিয়েছি ওখানেই একা একা থাকি আর দুইটা টিউশনি করি এতেই আমার জীবন চলে যাচ্ছে, থেমে নেই আমার জীবন থেমে নেই আমার আপন দুইটা মানুষ আব্বু আর রিয়াকে খুঁজা, সুযোগ পেলেই ছুটে যাই সেই বাসায় রাস্তায় রাস্তায় পাগলের মতো খুঁজি আমার আব্বু আর রিয়া কে
জানিনা কখনো ওদের ফিরে পাবো কিনা আবার দেখা হবে কিনা আমার সেই চিরচেনা মানুষ গুলোর সাথে আর কখনো পাবো কিনা সুখের ছোঁয়া……
–মা সেই সকাল থেকে এখানে বসে কি করছ (কথাটা শুনে বাস্তবে ফিরে আসলাম, ডায়েরিটা বন্ধ করে ফিছনে থাকালাম রহিম চাচা এসেছেন)
–চাচা কয়টা বাজে
–দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে মা
–এতো সময় ধরে এখানে বসে আছি আমাকে ডাকোনি কেন
–কয়েকবার এসেছি ডাকার জন্য এসে দেখি তুমি খুব মনোযোগ দিয়ে ডায়েরি তে কি যেন লিখছ তাই আর ডাকিনি
–ওহ
–তোমার সাথে দেখা করার জন্য দুজন লোক এসেছেন
–আমার সাথে দেখা করার জন্য (খুব অভাক হলাম কারন আমার তো আপন বলতে কেউ নেই আমি তো এখন খুব একা, কে আসবে দেখা করতে)
–হ্যা মা উনারা এসেছেন প্রায় দুঘণ্টা হলো
–এতক্ষণ ডাকোনি কেন
–ওনারা নিষেধ করেছিলেন
–নিষেধ করেছিল, ঠিক আছে চলো
ডায়েরিটা ব্যাগে রেখে চাচার সাথে হাটতে শুরু করলাম ভেবে পাচ্ছি না কে এসেছে, হঠাৎ চেয়ে দেখি একটা অন্ধকার রোমে এসে পড়েছি, চাচা কে বললাম এই রোম এতো অন্ধকার কেন…? সাথে সাথে আলো জ্বলে উঠলো, আমি ভূত দেখার মতো চমকে গেছি সামনের দুইটা মানুষের দিকে থাকিয়ে আছি চোখ থেকে পানি ঝরছে হ্যা সামনে দাঁড়ানো দুইটা মানুষ আমার আপন মানুষ আকাশ আর মেঘা আপু, ওদের যখন পেয়েছি আব্বুকেও পাবো
মেঘা আপু আর আকাশ একসাথে বলে উঠলো “HAPPY BIRTHDAY” আবারো চমকে উঠলাম কারন আজ আমার বার্থডে অথচ আমিই জানিনা জানবো কিভাবে যে মানুষটা তিন দিন আগে উইশ করতো সেই মানুষটাই তো জীবনে নেই জানিনা কোথায় আছে আমাকে মনে রেখেছে নাকি ভুলে গেছে
মেঘা আপু: এই পাগলী কাঁদছ কেন (এসে আমাকে জরিয়ে ধরলো)
আমি: তোমাদের এতোদিন পর দেখেছি তো তাই
আকাশ: তোমাকে কতো খুঁজেছি পাইনি, এই এতিমখানার নাম ঠিকানা কিছুই জানতাম না অনেক গুলো এতিমখানা খুঁজতে খুঁজতে শেষ পর্যন্ত এখানে এসে পেলাম
আমি: ভাগ্য আমার সাথে খুব সুন্দর খেলা করতেছে তো তাই খুঁজে পাওনি
মেঘা আপু: কি হয়েছিল তোমার আর হঠাৎ করে ফোন অফ করে ফেলেছ কেন
আমি: যেদিন থেকে ফোন অফ পেয়েছ সেদিন আমার ফোন ছিন্তাই হয় সেই থেকে তোমাদের সবাইকে আমি হারিয়ে ফেলেছি অনেক খুঁজেছি কাউকে পাইনি
আকাশ: কেন তোমার আব্বুর সাথে কথা হয় না
আমি: না তো আমি আরো ভাবলাম তুমি আব্বুর খুজ দিতে পারবা
আকাশ: তোমার সাথে ডিভোর্স হবার পর উনি আর অফিসে যাননি খুঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি উনি নাকি চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন
আমি: চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন বাসা বিক্রি করে দিয়েছেন তাহলে এখন কোথায় আছেন
আকাশ: প্লিজ মন খারাপ করো না একদিন সবাইকে খুঁজে পাইবা
আমি: হুম
সত্যিই কি আব্বুকে খুঁজে পাবো রিয়া কে খুঁজে পাবো…?
রিয়া তো বাহিরে চলে গেছিল দেশে কি আসছে…?
শ্রাবন কে কি ফিরে পাবো পেলেই বা লাভ কি ও তো আর আমাকে ভালোবাসে না তাছাড়া আমি এখন বিবাহিতা ডিভোর্সি মেয়ে ও কি আমাকে আবার মেনে নিবে….?
পাবো কি কখনো সুখের ছোঁয়া…?
পারবো কি সবাই কে নিয়ে আমার এলোমেলো জীবনটা গুছাতে…?
জানিনা তাদের ফিরে পাবো কিনা, আর কখনো দেখা হবে কিনা, খুঁজে যাবো তাদের সবসময় অপেক্ষা করে যাবো অনন্তকাল……
সমাপ্ত?
(গল্পটি কাল্পনিক ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন?
“জীবনের ডায়েরি ২” লিখবো খুব শীঘ্রই?
ধৈর্য নিয়ে গল্পটি পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ, “জীবনের ডায়েরি ২” পড়ার জন্য সাথেই থাকুন?)
Comment: there is no turning and twistful moment in the story so please make some interesting part in season