জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ৩ 

0
3018

জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ৩

লেখিকা: সুলতানা তমা

 

–আচ্ছা আপু আম্মু আমাকে ভালোবাসে কিন্তু তোমাকে ভালোবাসে না কেন তুমিও তো আম্মুর মেয়ে
–কে বলছে ভালোবাসে না আম্মু তো আমাকে অনেক ভালোবাসে
–তাহলে মাঝে মাঝে মাইর দেয় কেনো
–এসব তুমি বুঝবা না বড় হলে বুঝবা
–হুম
–চল রোমে যাই সন্ধ্যা হয়ে গেছে
–চলো

নিচে যেতেই আম্মু রাগি চোখে থাকালো
–রান্না করবে কে
–আম্মু আমি তো রান্না পারি না
–শিখে নাও বড় হইছ এখন আর কতো বসিয়ে খাওয়াবো বিয়ে দিতে হবে তো

কিছু না বলে রান্নাঘরে চলে আসলাম কিছুই তো পারিনা কি রান্না করবো হঠাৎ মনে হলো খালাকে ফোন দিয়ে শিখে নেই, খালাকে ফোন দিতেই রিসিব করলো
–হ্যালো খালা
–হ্যা মা কেমন আছ
–ভালো তুমি
–ভালো
–খালা রান্না কিভাবে করে শিখিয়ে দিবা
–তুমি রান্না করবা কি ভাবে হাত পুরে ফেলবা তো
–পারবো তুমি শিখিয়ে দাও
–আচ্ছা

খালার কাছ থেকে ভাত রান্না ডিম ভাজি আর কিছু তরকারী রান্না শিখে রান্না করতে শুরু করলাম, রান্না করছি আর ভাবছি আম্মুর কথা গুলা সত্যিই কি আমি বড় হয়ে গেছি এখনি বিয়ের কথা বললো যে, এসব ভাবতে ভাবতে ভাতের মার ফেলতে গিয়ে হাতে পেলে দিলাম চিৎকার শুনে আম্মু আসলো এসেই বকা শুরু করলো, পুরা কপাল আমার হাত পুরে ফেলছি কই একটু ওষুধ লাগিয়ে দিবে উল্টা বকতেছে, আর সহ্য হলো না রোমে এসে বসে আছি কি দিতে হয় জানিনা তাই আবার খালাকে ফোন দিলাম
–খালা হাত পুরে ফেলছি
–জানি তো এমন কিছুই হবে
–খুব জ্বালা করছে কি দিব বলে দাও
–আমি যে রোমে থাকতাম সেখানে গিয়ে দেখো টেবিলের ড্রয়ারে মলম আছে এনে লাগয়ে দাও বার বার দিও আর ওষুধ আনিয়ে খেয়ো সেরে যাবে
–আচ্ছা রাখি

মলম হাতে লাগিয়ে বসে বসে কাঁদতেছি আজ যদি আম্মু বেচে থাকতো আমাকে এতো কষ্ট করতে হতো না আব্বুও দূরে চলে গেলেন আমার জীবনে কি শুধুই কষ্ট, কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়লাম সকালে অনেক দেরিতে ঘুম ভাঙ্গলো, আম্মু খাওয়ার জন্য ডাকল না একবার এসে দেখলো না হাতের কি অবস্থা, নিচে গিয়ে দেখি আম্মু তুলিকে নিয়ে স্কুলে চলে গেছে কিছুই রান্না করেনি এদিকে খিদায় আমার পেটে ছু ছু করছে এখন পুরা হাত নিয়ে রান্না করবো কিভাবে তাই পাশের দোকান থেকে কিছু খাবার কিনে এনে খেয়ে নিলাম

হাতটা খুব জ্বালা করছে মলম লাগিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে ছাদে গেলাম এই সময় আব্বু ফোন দিলেন
–আমার আম্মুটা কেমন আছে
–অনেক ভালো তুমি কেমন আছো
–ভালো নাস্তা করেছিস
–হুম তুমি
–করেছি তোর আম্মু কোথায়
–তুলিকে নিয়ে স্কুলে গেছেন
–বাসায় একা কি করছিস
–ছাদে বসে আছি
–আগামীকাল বাসায় আসবো
–সত্যি
–হ্যা কিছু লাগবে তোর
–না কিছু লাগবে না
–আচ্ছা রাখি এখন
–আচ্ছা

খুব ভালো লাগছে আব্বু আসবেন হঠাৎ হাতের কথা মনে হলো আব্বু দেখলে কি বলবো মিথ্যে বলেও তো লাভ হবে না

দুপুরে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লাম একেবারে রাতে উঠলাম তুলির কাছে গেলাম ও পড়ছে আর আম্মু রান্না করছে, হাতের জ্বালা কমেনি তাই আম্মুকে ওষুধের কথা বললাম আম্মু বললো এইটুকু পুরাতে ওষুধ লাগবে না আর কিছু বলিনি রোমে চলে আসলাম, ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি রিয়ার অনেক গুলা ফোন, রিয়া আমার বান্ধবী সব কষ্ট ওকেই বলি রিয়াকে ফোন দিলাম
–রিয়া কেমন আছিস
–ভালো তোর কোনো খবর নাই যে ফেবু তে ও আসিস না
–এমনিরে ভালো লাগে না কিছু
–কাল দেখা করতে পারবি
–না তুই আমাদের বাসায় আসিস
–আচ্ছা রাখি তাহলে

ফোন রেখে বসে আছি তুলি আসলো
–আপু তুমি দুপুরে খাইছিলা
–না তুই আর আম্মু কখন আসছিলি বাসায়
–৪টার দিকে আম্মু আমাকে নিয়ে আম্মুর এক বন্ধুর বাসায় গিয়েছিল, চলো খাবো
–হুম চল

ভাত সামনে নিয়ে বসে আছি খাব কি করে ডান হাত তো পুরা আম্মুর দিকে বার বার থাকালাম আম্মু একবারও বললো না খাইয়ে দিবে তাই নিজেই চামচ দিয়ে কষ্ট করে অল্প খেয়ে রোমে চলে আসলাম, আম্মুর কথা খুব মনে পড়ছে আজ আম্মু বেচে থাকলে আমার এতো কষ্ট করে চামচ দিয়ে খেতে হতো না, আম্মুর ছবিটা বুকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়লাম ইদানীং কান্না আমার সঙ্গী হয়ে গেছে

সকালে উঠে খুব ভালো লাগলো কারন আজ আব্বু আসবেন, সারাটা দিন ভালই কাটলো বিকেলে রিয়া আসলো অনেক গল্প করলাম সব কষ্ট গুলো বললাম এই রিয়াটাই শুধু আমার কষ্ট গুলো বুঝে

সন্ধ্যায় আব্বু আসলেন আমার জন্য অনেক চকলেট আনলেন ইদানীং চকলেট খাওয়াটা প্রায় ভুলেই গেছি অথচ একসময় আমি চকলেট পাগলী ছিলাম, আব্বু আমার রোমে আসলেন তাড়াতাড়ি হাতটা ওড়না দিয়ে ঢাকলাম
–কিরে মা এতো শুকিয়ে গেছিস কেন
–কই
–আমি তো দেখতেছি
–বাদ দাও তো কয়দিন থাকবা বলো
–দুদিন আছি, খেতে আয় খুব খিদে লাগছে
–আচ্ছা চলো

খেতে বসে আব্বু জিজ্ঞেস করলেন বুয়া কোথায় আম্মু বললেন ছুটিতে গেছে
–কিরে মা খাচ্ছিস না কেন
–হুম খাবো তো (হাত বের করলেই তো আব্বু দেখে ফেলবে কি করে খাই) আব্বু আজ খাইয়ে দাও না
–পাগলী মেয়ে এখনো পিচ্ছিই রয়ে গেলি
–আব্বু সত্যি আমি পিচ্ছি রয়ে গেছি নাকি বড় হয়ে গেছি
–মা বাবার কাছে সন্তান সবসময় ছোটই থাকে
–হুম (এই আম্মু তো আমার আপন আম্মু না তাই হয়তো আমাকে বড় বলে)

আব্বু খাইয়ে দিলেন হাতটা আর বের করতে হলো না, রোমে গিয়ে বসে আছি আব্বু এসে বললেন চল ছাদে যাই, বাপ মেয়ে ছাদে গেলাম, ছাদে বসে আছি এই সময় আব্বু বললেন
–তোর হাতে কি
–কই কি
–বাবার চোখে ফাকি দিতে চাস
–(চুপ হয়ে রইলাম কি বলবো)
–কিভাবে পুরলি
–কপি বানাতে গিয়ে
–সত্যি তো
–জানিনা (আব্বুকে মিথ্যে বলতে পারলাম না)
–হুম জানিস তোর আম্মুকে ভালোবেসে বিয়ে করছিলাম
–আগে তো কখনো বলোনি
–এমনি বলিনি খুব ভালোবাসতাম তোর মাকে এখনো বাসি, বিয়ের আগেই তোর নামটা দুজন মিলে ঠিক করে রাখছিলাম, এতো সুখের সংসারটা এলোমেলো হয়ে গেলো
–সব ঠিক হয়ে যাবে বাবা চিন্তা করো না
–রোমে গিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা কর আমি আসছি
–কই যাবা
–আসছি রোমে যা

১০মিনিট পর ওষুধ নিয়ে আসলেন নিজেই খাইয়ে দিলেন, ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম

কিভাবে যেন দুইটা দিন কেটে গেলো আজ আব্বু চলে গেলেন, হাতটা একটু কমছে, আম্মু এসে বললেন
–এবার শান্তি তো
–মানে
–এখন কিছুই বুঝো না ভাজা মাছটা যেন উল্টে খেতে জানে না
–কি করছি বলবা তো
–হাত পুরছে এটা তোর আব্বুকে না বললে হতো না
–আমি বলিনি আব্বু কিভাবে যেন দেখে ফেলছেন

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে