জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ২৮
সকালে রিয়ার ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো
–কিরে তুই এতো সকালে
–সকাল না ১০টা বাজে
–আব্বু আমাকে ডাকেননি তো
–উনি ড্রয়িংরুমে বসা তোর মন খারাপ ঘুমাচ্ছিস তাই নাকি ডাকেননি
–ওহ
–ফ্রেশ হয়ে ছাদে আয় কথা আছে
–তুই যা আসছি
ফ্রেশ হয়ে দুই মগ কপি বানিয়ে ছাদে গেলাম, রিয়া দুলনায় বসে আছে
–কপি নে
–হুম বস
–কি কথা বল
–আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে
–ভালো তো বিয়ে করে নে
–কিন্তু
–কিন্তু আবার কি তোর তো কোনো পিছুটান নেই আমার মতো তো প্রেমের ফাদে পা দিসনি
–তা ঠিক কিন্তু ছেলে দুইমাস পর আমাকে নিয়ে বাহিরে চলে যাবো
–তো কি হয়েছে
–কি হয়েছে মানে তোর বিয়ে হয়েছে মাত্র এক মাস হলো দুমাস পর যদি আমি বাহিরে চলে যাই তুই তো একা হয়ে যাবি, তোর ডিভোর্স এর আর পাঁচ মাস বাকি আছে এই অবস্থায় তোকে একা রেখে আমার পক্ষে যাওয়া সম্ভব না
–আমার জন্য বিয়ে ভেঙ্গে দিবি নাকি
–প্রয়োজন হলে তাই করবো
–পাগলামি করিস না তোর আম্মু আব্বু কষ্ট পাবেন আমি সব সামলিয়ে নিব তুই টেনশন করিস না
–তুই তো একটু তেই কেঁদে অস্থির হয়ে যাস সব সামলাবি কিভাবে
–আমি তো আর আকশের জন্য কাঁদবো না কাদি তো শ্রাবনের জন্য, ডিভোর্স হলেই ওদের বিয়ে দিয়ে সবাইকে বুঝিয়ে মাফ চেয়ে নিব
–হুম
–বিয়ে কবে
–আর নয়দিন আছে
–ছেলের নাম কি
–পিয়াস
–তোর বিয়েতে অনেক মজা করবো
–আমি করি তোর টেনশন আর তুই আছিস মজা করা নিয়ে
–একমাত্র তুই আর আব্বুই আমার আপন বাকি সবাই শুধু আমাকে নিয়ে খেলা করে
–সব ঠিক হয়ে যাবে, আচ্ছা বিয়েতে আকাশ আসবে তো
–বলে দেখবো
–হুম
নয়টা দিন খুব তাড়াতাড়ি চলে গেলো, আজ রিয়ার বিয়ে, আব্বু আম্মু তুলি আকাশ আমি সবাই বিয়েতে এসেছি
বিয়ে ভালো ভাবেই হলো, রিয়াকে গাড়িতে তুলে দিয়ে আমরাও বাসায় চলে আসলাম, আকাশও এসেছে বাসায়, রাতে বারান্দায় দাড়িয়ে আছি আকাশ আসলো
–তমা একটা কথা
–বলো
–আম্মু জিজ্ঞেস করছিল বাসায় কবে যাইবা
–আমি ওই বাসায় যাবো না
–আম্মু এসব জানলে খুব কষ্ট পাবেন তাছাড়া তোমার আব্বুকে কি বলবা
–জানিনা
–তুমি বাসায় চলো কথা দিচ্ছি তোমাকে বাসায় একা রেখে কোথাও যাবো না
–হুম
পরদিন সকালে আকাশদের বাসায় চলে আসলাম, ইচ্ছে না থাকলেও আসতে হলো কারন আমি যে মেয়ে আমার তো বিয়ে হয়ে গেছে আমাকে যে এখানে আসতেই হবে
দেখতে দেখতে দুইমাস কেটে গেলো, রাকিব আর কোনো জামেলা করেনি অবশ্য সুযোগ পায়নি কারন আকাশ আমাকে বাসায় একা রেখে কোথাও যায়নি
আজ রিয়া লন্ডন চলে যাবে, আকাশ আর আমি ওদের সাথে এয়ারপোর্ট গেলাম, পাগলীটা যাবার সময় আমাকে জরিয়ে ধরে খুব কেঁদেছে আমি অনেক কষ্টে চোখের পানি আটকে রেখেছি আমার চোখে পানি দেখলে যে ও যাবে না, পিয়াস খুব ভালো ছেলে রিয়াকে বুঝিয়ে নিয়ে গেলো
রাতে অনেক কাঁদলাম রিয়ার জন্য, ওর সামনে কাঁদতে পারিনি তাই এখন কেঁদে হালকা হলাম, আমি একদিক দিয়ে খুব ভাগ্যবতী আব্বুর মতো একজন আদর্শবান বাবা পেয়েছি আর রিয়ার মতো একটা বান্ধবী পেয়েছি যে শুধু বান্ধবী না আপন বোনের মতো
সকালে ঘুম থেকে উঠতেই আব্বু ফোন করে একটা গুড নিউজ দিলেন, আব্বুর অফিসে আকাশের চাকরি হয়ে গেছে, আকাশকে বলতেই ও আনন্দে কেঁদে দিয়েছে আনন্দটা শুধু চাকরি পাবার নয় সাথে মেঘা কে পাবারও
বিকেলে বারান্দায় দাড়িয়ে আছি আকাশ আসলো
–তমা একটা আবদার রাখবা
–কি বলো
–চাকরির খবরটা এখনো মেঘা কে দেইনি আমি চাচ্ছি দেখা করে ওকে সারপ্রাইজ দিব
–তো দেখা করো
–তোমার জন্যই তো সব সম্ভব হলো তুমি চলো সাথে মেঘা অনেক খুশি হবে
–ঠিক আছে যাবো
সন্ধ্যার পর একটা রেস্টুরেন্টে আসলাম, আকাশ আর আমি বসে আছি মেঘা এখনো আসেনি, একটু পর মেঘা আসলো
মেঘা: কি ব্যাপার এখানে ডাকলা
আকাশ: সারপ্রাইজ আছে
মেঘা: কি
আকাশ: আগে বস বলছি
মেঘা: হুম বলো
আকাশ: আমার চাকরি হয়ে গেছে
মেঘা: সত্যি
(মেয়েটার দিকে থাকালাম মনে হচ্ছে কোনো রাজ্য জয় করেছে এতো খুশি হয়েছে, অবশ্য ভালোবাসার মানুষকে আপন করে পাওয়া টা রাজ্য জয় করাটা কেও হার মানায়, ভালবাসার মানুষকে খুব কম মানুষই পায়, যারা খুব বেশি ভাগ্যবান/ভাগ্যবতী তারাই শুধু ভালোবাসার মানুষ কে চিরআপন করে পায়, মেয়েটার চোখ থেকে পানি ঝরছে এই পানি কোনো কষ্টের না এই পানি সুখের ভালোবাসার মানুষকে আপন করে পাওয়ার, একদিকে নিশ্চিত হলাম যে ওরা দুজন দুজনকে অনেক বেশি ভালোবাসে ওদের মিলিয়ে দিলে আমার কোনো ভুল হবে না)
আকাশ: মেঘা তুমি খুশি হয়েছ
মেঘা: ভালবাসার মানুষকে আপন করে পাবো এর চেয়ে বড় খুশি আর আছে নাকি
আকাশ: সবকিছু সম্ভব হয়েছে এই তমার জন্য
মেঘা: আজ থেকে তুমি আমার ছোট বোন তোমার কাছে সারা জীবন ঋনি থাকবো বলেই আমাকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে থাকলো
আমি: ছোট বোনের কাছে বড় বোন কখনো ঋনি থাকে না কান্না থামাও কথা আছে
মেঘা: হুম বলো
আমি: আর তো প্রায় আড়াই মাস আছে ডিভোর্স এর, এর ভিতরে আকাশকে একটা বাসা নিতে হবে আমি চাই না আপু ওই নোংরা জায়গায় বউ হয়ে যাক
আকাশ: সমস্যা নেই আমার কিছু জমানো টাকা আছে আর এখন তো চাকরিও করবো
আমি: হুম
রেস্টুরেন্ট থেকে বাসায় ফিরতে প্রায় নয়টা বেজে গেলো, ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পরলাম
সকালে আব্বু ফোন করে জানালেন আকাশকে আজ বিকেলেই আব্বুর কাছে যেতে হবে, আগামীকাল থেকে অফিসে জয়েন করতে হবে, আপাদত ওখানেই থাকতে হবে দুই থেকে তিন মাস পর ট্রান্সফার হয়ে অন্য জায়গায় যেতে পারবে
বিকেলে আকাশ চলে গেলো, বাসায় মা আছেন কাজের লোক আছে তাও খুব ভয় হচ্ছে রাকিব আবার না কোনো কিছু করে বসে
একটা সপ্তাহ ভালই কাটলো, বিকেলে ছাদে বসে আছি হঠাৎ রাকিব আসলো
–আপনি
–হ্যা ভয় পাচ্ছ কেন
–এখানে কেন এসেছেন
–যে কারনে তোমাকে এই বাড়ির বউ করে এনেছি সেই কাজটা এখন করবো
–মানে
ঠিক তখন নাফিজা এসে ডাক দিলো নিচে যেতে, ওর সাথেই চলে গেলাম, নাফিজা আসাতে বাঁচলাম কিন্তু রাকিব তো আমার পিছু ছাড়ছে না এভাবে কতো দিন বাঁচবো
রাতে বিছানায় শুয়ে আছি তখন আবার রাকিব আসলো
–আপনি আবার এসেছেন
–হ্যা বার বার আসবো
–বেরিয়ে যান নাহলে আমি মা কে ডাকবো
–উনি ঘুমাচ্ছেন তাই তো এই সুযোগে আসছি (বলেই আমার কাছে আসতে শুরু করলো)
চলবে?