জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ২৬
–আপু আমি কষ্ট নিয়ে দিচ্ছি না জানেন তো আমি শ্রাবনকে ভালবাসি এই বিয়ে সংসার আমার পক্ষে সম্ভব না তাই আমি চাচ্ছি আপনারা সুখী হন অন্তত আমার মতো তো আপনাদের ভালোবাসা হারাতে হবে না
–আব্বু তো রাজি আশা করি আকাশের মা তেমন রাগ করবেন না কিন্তু তোমার পরিবার
–আব্বুকে বুঝিয়ে ফেলবো সমস্যা নেই
–হুম
–এখন তো সব ঠিক শুধু আকাশের চাকরি আর ছয়মাস এর অপেক্ষা
–হ্যা
কক্সবাজারে পাঁচদিন কেটে গেলো, সকালে নাফিজা আর আমি সাগর পাড়ে দারিয়ে আছি আর সমদ্রের ঢেউ দেখছি
নাফিজা: সেদিন তুমি বলছিলা কাকে যেন ভালবাস
–হুম নাম শ্রাবণ
–সে কোথায়
–জানিনা
–কি হয়েছিল
–হঠাৎ করে চেঞ্জ হয়ে গেল বললো আমাকে নাকি আর ভালবাসে না তারপর ফোন অফ আর কোনো যোগাযোগ হয়নি
–হঠাৎ চেঞ্জ হবার মধ্যে তো কোনো রহস্য আছেই
–হয়তো
–খুব ভালবাস তাই না
–হুম
চোখ দুইটা ঝাপসা হয়ে আসলো, হঠাৎ একটু দূরে চোখ পরতেই চমকে উঠলাম শ্রাবন এখানে আর কিছু না ভেবেই দিলাম দৌড়, আমার দৌড় দেখে নাফিজাও আমার পিছনে দৌড়ে আসলো, সে জায়গায় গিয়ে দেখি কেউ নেই আমি তো স্পষ্ট শ্রাবনকে দেখলাম হঠাৎ উদাও হয়ে গেলো কিভাবে
নাফিজা: কি হলো আপু এভাবে দৌড়ে এখানে আসছ কেন
–এখানে শ্রাবনকে দেখেছি
–কি
–হ্যা আমি স্পষ্ট ওকে দেখেছি কিন্তু এখন কোথায় গেলো
–একটু সময়ে তো আর উদাও হয়ে যাবে না আসলে তুমি ভুল দেখেছ
–না আমি ভুল দেখিনি সত্যি ওকে দেখেছি
–উনার কথা বলতে গিয়ে তোমার চোখে পানি চলে এসেছিল তো তাই ঝাপসা চোখে ভুল দেখেছ
–সত্যি আমি ওকে দেখেছি বিশ্বাস করো
হঠাৎ আমার মাথা প্রচন্ড ব্যাথা করতে শুরু করলো আমি বালুর উপরেই বসে পরলাম তারপর আর কিছু মনে নেই
জ্ঞান ফিরতেই দেখি আমি হোটেল রোমে আকাশ মেঘা নাফিজা সবাই আমার পাশে বসা
আকাশ: হঠাৎ কি হয়েছে তোমার
আমি: আমি এখানে আসলাম কিভাবে
নাফিজা: তুমি অজ্ঞান হয়ে যাবার পর আমি তোমার ফোন থেকে আকাশ ভাইকে ফোন দেই উনি গিয়ে নিয়ে আসেন
মেঘা: কি হয়েছিল হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়লা কেন
আমি: ওখানে আমি শ্রাবনকে দেখেছি আমি দৌড়ে যেতেই ও চলে গেছে
নাফিজা: ওখানে কেউ ছিল না তুমি ভুল দেখেছ
আকাশ: হ্যা ভুল দেখেছ
মেঘা: শ্রাবনকে অনেক ভালোবাস তো তাই ওর কথা ভাবতে ভাবতে অন্য কাউকে দেখে শ্রাবন ভেবে নিয়েছ
আমি: তোমরা বিশ্বাস করছ না কেন আমি ওকেই দেখেছি ওকে চিনতে আমার ভুল হতেই পারে না
আকাশ: ঠিক আছে তুমি শ্রাবনকেই দেখেছ বিকেলে আমরা ওকে সাগর পাড়ে খুঁজতে যাবো এখন একটু ঘুমাও
আমি: হুম
ঘুম থেকে উঠে দেখি বিকেল হয়ে গেছে নাফিজা আর মেঘা আমার পাশে বসা
আমি: আপু আপনারা এখনো এখানে বসে আছেন কেন
মেঘা: তুমি যদি আবার জ্ঞান হারাও এই ভয়ে আর আমাকে আপনি করে বল কেন তুমি তো আমার ছোট বোন এখন থেকে তুমি করে বলবা
–ঠিক আছে, আকাশ কোথায়
–খাবার আনতে গেছে
–শ্রাবনকে খুঁজতে যাবা না
–হুম খেয়েই যাবো
খেয়ে সবাই সাগর পাড়ে আসলাম, আমার দুচোখ শুধু শ্রাবনকে খুঁজছে কিন্তু কোথাও পাচ্ছি না, প্রায় সন্ধ্যা হয়ে আসলো কিন্তু ওকে খুঁজে পেলাম না, ওকে ফিরে পাবার আশা ছেড়ে দিলাম চোখ দুইটা যেন বাধ মানছে না চিৎকার করে কাঁদতে মন চাচ্ছে, এখানে আর এক মুহূর্তও থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে না দম বন্ধ হয়ে আসছে
আমি: আকাশ আমি এখানে থাকবো না বাসায় যাবো আব্বুর কাছে
আকাশ: ঠিক আছে আগামীকাল সকালেই আমরা চলে যাবো, গিয়ে তোমাকে তোমাদের বাসায় দিয়ে আসবো
–হুম
সকালে নাস্তা করেই বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম, বিকেলে বাসায় পৌঁছালাম, মায়ের সাথে দেখা করে রোমে এসে ফ্রেশ হয়েই শুয়ে পরলাম
রাতে ঘুম ভাঙ্গলো, আব্বুকে ফোন দিলাম
–হ্যালো আব্বু
–কিরে কেমন আছিস
–ভালো তুমি
–ভালো কক্সবাজার গিয়ে তো আমাকে ভুলেই গেলি
–বাসায় চলে এসেছি
–কখন আসলি
–বিকেলে, আব্বু তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে বাসায় আসবা
–তুই কি বাসায় আসবি
–হ্যা মা কে বলে দেখি কি বলেন
–ঠিক আছে তুই যেদিন আসবি সেদিন আমিও আসবো
–আচ্ছা
রাতে খাবার টেবিলে বসে মা কে বললাম
–মা আমি কিছু দিনের জন্য বাসায় যেতে চাই
–ঠিক আছে কিন্তু দুইটা দিন পরে যাও নাফিজার মা অসুস্থ খবর এসেছে আমি আগামীকাল নাফিজা কে সাথে নিয়ে ওদের গ্রামে যাবো আমি আসলে পর যেও
–ঠিক আছে
সকালে মা নাফিজা কে নিয়ে ওদের গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন, আকাশ আর মামা অফিসে চলে গেলো, আমি রোমে এসে শুয়ে পড়লাম শরীর একদম ভালো লাগছে না, শ্রাবনের কথা মাথা থেকে সরছেই না, শুয়ে শুয়ে ভাবছি কক্সবাজারে কি আমি সত্যি ভুল দেখেছি কিন্তু শ্রাবনকে চিনতে তো আমার ভুল হবার কথা নয়, হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো আকাশ ফোন দিয়েছে রিসিভ করলাম
–হ্যালো
–তমা আমি বাসায় একটা ইম্পরট্যান্ট ফাইল আর কিছু কাগজ ফেলে এসেছি, কোথায় রেখেছি সঠিক মনে নেই, আমি যে যে জায়গা বলবো তুমি খুঁজে বের করে রাখো আমি নিতে আসছি
–ঠিক আছে বল
–প্রথমে আলমারি খুঁজো
–ঠিক আছে
নেই তো আলমারি তে
–আমার টেবিলের ড্রয়ারে দেখ তো
–আচ্ছা
পিছন ফিরতেই দেখি মামা দরজায় দাঁড়ানো, খুব অভাক হলাম উনি তো অফিসে গিয়েছিলেন বাসায় আসলেন কেন আর কখনোই বা আসলেন
–মামা আপনি
–হ্যা
–কখন এসেছেন আর কোনো প্রয়োজন নাকি
–হ্যা প্রয়োজন-ই তো অনেক বড় একটা প্রয়োজন বলেই হাসতে শুরু করলেন
–(কেমন যেন লোভাতুর দৃষ্টিতে আমার দিকে থাকিয়ে আছেন খুব ভয় পেয়ে গেলাম, আকাশ উপাশ থেকে ফোনে হ্যালো হ্যালো করেই যাচ্ছে)
–কি হল ভয় পাচ্ছ কেন
–না মানে আপনি এই সময় বাসায় (আকাশ উপাশ থেকে বার বার জিজ্ঞেস করতেছে, তমা কার সাথে কথা বলতেছ..?)
–এতো কাঠকড় পুড়িয়ে তোমাকে এই বাড়ির বউ করে আনলাম কি এমনিতেই
–মানে
–তোমাকে আমি টাকা দিয়ে কিনে এনেছি শুধু মাত্র ভোগ করার জন্য চেঁচামেচি না করে আমার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাও নাহলে আমি জোর করবো বলেই আমার কাছে এগিয়ে আসলেন
–(আমি ভয় পেয়ে জোরে আকাশ বলে চিৎকার দিলাম)
–তোমার আকাশ অফিসে ডেকে লাভ নেই বাসা একদম খালি এমন সুযোগ আর আসবে না বলেই আমাকে জাপটে ধরতে আসলেন
আমি ফোনটা উনার মাথায় ছুড়ে দিয়ে দৌড়ে রোম থেকে বেরিয়ে গেলাম, নিচে যেতেই দেখি আকাশ, দৌড়ে গিয়ে ওর পিছনে লোকালাম, রাকিব নিচে নেমে আকাশ কে দেখেই থেমে গেলো…..
চলবে?