জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ২৫
দুইটা দিন খুব দ্রুত কেটে গেলো, ফিরে এলাম আকাশদের বাসায়, এখানে একা কিছুই ভালো লাগে না, কোনো কাজও করতে হয় না, আকাশ অফিসে একটু সময় থাকলেও বাসায় আসে না তেমন এই বাসা থেকে দূরে দূরে থাকে আর মা কেমন যেন চুপচাপ থাকেন সবসময়, কাজের মেয়ে দুইজন একজন মহিলা আর মেয়েটা নাফিজা আর দুইটা কাজের ছেলে, ওরা সবাই যে যার মতো কাজ করে কোনো কথা নেই শুধু নাফিজাই একটু বেশি কথা বলে
সন্ধ্যায় বারান্দায় দারিয়ে আকাশের দিকে থাকিয়ে রইলাম
–ভাবি আসব (কথাটা শুনে পিছনে থাকালাম দেখি নাফিজা)
–আস
–আচ্ছা ভাবি তুমি সবসময় এতো মনমরা হয়ে থাক কেন
–এমনি আমাকে ভাবি না ডেকে আপু বলেই ডেকো
–আচ্ছা
–এই বাসায় আসার পর ছাদে যাইনি আমাকে ছাদে নিয়ে যাবে
–হ্যা চলো
নাফিজার সাথে ছাদে গেলাম বেশ বড় ছাদ, একপাশে একটা দুলনা দুজন গিয়ে বসলাম
–আচ্ছা নাফিজা এই বাড়ির মানুষ গুলো সবসময় চুপচাপ থাকে কেন
–আকাশ ভাইয়া তো এই বাসায় থাকতে চায় না খালাম্মাও চায় না শুধু আকাশ ভাইয়ার ভবিষ্যৎ এর কথা ভেবে এই বাসায় আছেন আর রাকিব যে উনি খুব খারাপ মানুষ মেয়েদের দিকে খারাপ চোখে থাকায় দেখেন না আমি আর কাজের খালা উনার সামনে যাই না, উনি রেগে গেলে জিনিসপত্র ভাঙচুর করেন উনি চুপচাপ থাকাটাই পছন্দ করেন তাই সবাই চুপচাপ থাকে
–বুঝলাম আচ্ছা তুমি তো দুই বছর ধরে এই বাসায় আছ মেঘা মেয়েটা সম্পর্কে কিছু জানো
–হ্যা জানি কিন্তু আপনি জানলেন কিভাবে
–আকাশ মা দুজনেই বলেছে
–মেঘা মেয়েটা অনেক ভাল আকাশ ভাইকে খুব ভালবাসে কিন্তু মেঘার বাবা পুলিশ, মেঘার বাবা আর রাকিব সাহেবের মধ্যে শত্রুতা আছে তাই রাকিব সাহেব উনাকে বউ করে আনেনি
–আমাকে কেন আনলো ওদের দুজনকে কতো সুন্দর মানাইত
–আপনাকে কেন আনছে জানিনা তয় আপনের আম্মা মাঝে মাঝে এই বাসায় আসে আর রাকিব সাহেবের কাছ থেকে টাকা নেয়
–টাকা নেয় (বেশ অভাক হলাম আম্মু টাকা দিয়ে কি করে আর আব্বু তো টাকা দেয়)
–হ টাকা নেয় দেখছি তাও কম টাকা না টাকার বান্ডিল নিতে দেখছি অনেক বার
–এই বিষয় আমি দেখবো তুমি আমাকে একটা সাজেশন দাও তো
–কি
–আকাশ আর মেঘার বিয়ে দিলে কেমন হয়
–কি বলেন আপনি মাথা খারাপ আপনি না উনার স্ত্রী
–হ্যা কিন্তু কাগজে কলমে শুধু আমি ওদের বিয়ে দিতে চাই ওদের সুখী দেখতে চাই
–কিন্তু আপনে কই যাবেন
–আমাকে নিয়ে চিন্তা করো না আগে বল কাজটা ঠিক হবে কিনা
–আকাশ ভাই মেঘা আপু কে অনেক ভালবাসে ওদের বিয়ে হলে দুজন সুখী হবে খালাম্মাও খুশি হবে কিন্তু মেঘা আপুর বাবা কি মেনে নিবে
–তাই তো এটা তো ভাবিনি আচ্ছা আমি মেঘা আপুর সাথে কথা বলবো
–কিন্তু আপনের কি হইব
–আমি ভালই থাকবো আমার জন্য অন্তত দুইটা মানুষ ভালবাসা হারাবে না
–হুম চল নিচে যাই সন্ধ্যা হয়ে গেছে
–হুম
রাতে খেতে বসে মামা বললেন
মামা: আকাশ নতুন বিয়ে করেছ কয়েক দিন ঘুরে আস আমি তোমাদের হানিমোনের সব ব্যবস্থা করে দিব
আকাশ: হানিমোনে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা আমার নেই
মামা: কেন
আকাশ: ভালো করেই জানো তোমাদের কথা রাখতে গিয়ে আমি তমা কে বিয়ে করেছি
মামা: কি বলতে চাইছ
আকাশ: আমি মেঘা কে ভালোবাসি ওকে ছাড়া অন্য কাউকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করা আমার পক্ষে সম্ভব না
মামা: তুমি ভালো করেই জানো মেঘার বাবা আমার শত্রু
আকাশ: হ্যা শত্রু তো হবেই উনি যে তোমার কালো ব্যবসায় বাধা দেন
আমি: মামা আপনারা থামুন আমরা হানিমোনে যাবো আপনি ব্যবস্থা করুন
আকাশ: তমা তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি
আমি: না আমার মাথা ঠিকি আছে তুমি চুপ থাক
মামা: কোথায় যেতে চাও বলো আমি সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি
আমি: কক্সবাজার যাবো তবে আমাদের সাথে নাফিজা যাবে
মা: নাফিজা কেন যাবে
আমি: আমি তো নিজের জিনিস গুছিয়ে রাখতে পারিনা শাড়িও পরতে পারি না ও থাকলে আমার সুবিধা হবে, দুইটা রোম বোকিং করুন নাফিজা অন্য রোমে থাকবে (মিথ্যে বললাম আমাদের তো দুইটা রোম লাগবে নাফিজা কে না নিলে দুইটা রোম নেওয়া যাবে না)
মামা: ঠিক আছে
রোমে আসতেই আকাশ আমার উপর রেগে গেলো
আকাশ: এই মেয়ে তুমি চাও কি হানিমোনে যেতে চাচ্ছ কেন
–মেঘা আপু তোমার উপর রেগে আছে এটাই সুযোগ উনার রাগ ভাঙ্গানোর আর সব প্ল্যান করতে হলে অন্য কোথাও যাওয়াটা প্রয়োজন
–তুমি কি বলতে চাচ্ছ মেঘাও কক্সবাজার যাবে
–হ্যা
–ও রাজি হলে তো হানিমোনে যাচ্ছি শুনলে তো ও উল্টো রেগে যাবে
–আগে বলেই দেখুন
–হুম কিন্তু নাফিজা কেন যাবে
–ওকে না নিলে দুই রোম নিতে পারবো না মামা সন্দেহ করবে
–কিন্তু নাফিজা যদি আমাদের প্ল্যানের কথা জেনে যায়
–ও সব জানে
–মানে
–নাফিজাও চায় তোমার আর মেঘা আপুর বিয়েটা হউক
–হুম
সকালে মামা জানিয়ে দিলেন আগামীকাল সকাল ১০টায় আমরা যাবো, রাতে ব্যাগ গুছিয়ে রাখলাম মেঘা আপুও যাবে, আব্বুকে আর রিয়া কে ফোন করে জানিয়ে দিলাম আমি কক্সবাজার যাচ্ছি
সকালে নাস্তা করে রেডি হয়ে মায়ের আর মামার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নাফিজা আকাশ আমি বের হলাম, ট্রেনে যাবো মেঘা আপু রেলস্টেশনেই থাকবে
স্টেশনে গিয়ে মেঘা আপুকে ফেলাম চারজন ট্রেনে উঠলাম, আমি আর নাফিজা পাশাপাশি বসলাম আর আকাশ মেঘা আপুকে নিয়ে আমাদের সামনের সিটে বসলো, ট্রেন চলছে ট্রেনের গতিতে আমি জানালা দিয়ে বাইরে থাকিয়ে আছি
বিকেলের দিকে হোটেলে পৌঁছালাম, দুইটা রোম বোকিং করা হয়েছে নাফিজা আর মেঘা আপু এক রোমে গেলো আমি আর আকাশ এক রোমে গেলাম
–তুমি তো এই রোমেই আসলে তো ওদের কেন এনেছ আর দুইটা রোম কেন
–রাতে আমরা এক রোমে থাকলে মেঘা আপু রাগ করবে
–হুম
ফ্রেশ হয়ে চারজন গিয়ে খাবার খেলাম তারপর ঘুরতে বের হলাম, নাফিজা কে সাথে নিয়ে বালুচরে হাটছি আকাশ আর মেঘা অন্যদিকে হাটছে
রাতে খাবার খেয়ে সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছি তখন মেঘা আপুকে জিজ্ঞেস করলাম
–আপু আকাশ তো এখন বিবাহিত আপনার আব্বু বিয়েটা মেনে নিবে তো শুনেছি মামা আর আপনার আব্বুর মধ্যে শত্রুতা আছে
–আব্বু পুলিশ আর উনি অপরাধী তাই শত্রুতা শুধু উনাদের কাজে আর আব্বু সবসময় আমাকে সুখী দেখতে চান আব্বুর সাথে আমার এই বিষয়ে কথা হয়েছে আব্বু বলেছেন তুমি যদি খুশি হয়ে আকাশ কে আমাকে দিয়ে দাও তাহলে আব্বু রাজি আর তুমি কষ্ট নিয়ে দিলে আব্বু রাজি না সাথে আমিও না
চলবে?