জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ২২
–তার নাম কি
–শ্রাবন
–তোমরা বিয়ে করনি কেন
–একার ইচ্ছেতে তো আর বিয়ে করা যায় না
–বুঝলাম না
–সে হঠাৎ চেঞ্জ হয়ে গেলো জানিনা কেন
–বুঝাও নি তাকে
–হুম অনেক বুঝিয়েছি লাভ হয়নি
–কি বলেছিল
–আমাকে নাকি আর ভালবাসে না ওকে যেন বিরক্ত না করি
–হঠাৎ এমন চেঞ্জ হয়ে গেলো কেন
–জানিনা ওর বাসায় গিয়েছিলাম রিয়া আর আমি অনেক বুঝিয়েছি ওর আম্মুও বলে দিয়েছেন ওকে যেন আর বিরক্ত না করি
–রিয়া কে
–আমার একমাত্র বান্ধবী তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিব
–ঠিক আছে, আচ্ছা শ্রাবন কি বিয়ের কথা শুনেনি
–বিয়ের কার্ড নিয়ে বাসায় গিয়েছিলাম দরজায় তালা ঝুলানো ওরা নাকি এখান থেকে চলে গেছে
–এখন কি কোনো যোগাযোগ নেই
–নাহ ফোন অফ হয়তো সিম চেঞ্জ করে নিছে
–হুম
ফোনের কথা বলতেই মনে পড়লো আমার ফোন তো বাসায় আব্বুকেও ফোন দেওয়া হয়নি তাই আকাশকে বললাম
–তোমার ফোনটা দাও তো বাসায় ফোন দিব আমার ফোন তো বাসায়
–ওহ বলতে ভুলে গেছি তোমার আব্বু ফোন দিয়েছিলেন
–কখন
–সকালে রাগ করে যখন বাইরে গিয়েছিলাম
–আর এখন বলছ
–সরি মনে ছিল না এই নাও ফোন কথা বল
–হুম
ফোন নিয়ে আব্বুকে ফোন দিলাম
–আব্বু
–কেমন আছিস মা
–ভালো তুমি কেমন আছ
–ভালো তোর ফোন বন্ধ কেন
–আমার ফোন তো বাসায় রইছে
–না তো তুলি তোর ব্যাগে ফোন দিয়ে দিছে
–ওহ দেখিনি
–তোর কন্ঠ এমন শুনাচ্ছে কেন সত্যিই তুই ভালো আছিস তো
–হ্যা ভালো আছি তুমি টেনশন করো না
–ঠিক আছে
–আব্বু বাসায় যাবো কবে
–নিয়ম অনুযায়ী পরশু দিন
–আচ্ছা এখন রাখি
–ঠিক আছে
ফোন রেখে আকাশের দিকে থাকালাম কেমন যেন মনমরা হয়ে বসে আছে
–কি হয়েছে
–কিছু না তো
–তোমার মেঘার খবর কি
–তোমার সাথে দেখা করতে চায়
–ওকে আর চাকরীর খবর কি
–খুঁজছি এখনো
–হুম
–তো কবে দেখা করবা মেঘার সাথে
–যেদিন নিয়ে যাও
–ঠিক আছে আগামীকাল যাই
–মা কে কি বলবা
–বাইরে ঘুরতে যাচ্ছি
–ওকে
রোমে গিয়ে ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করলাম চার্জ নেই তাই অফ হয়ে আছে, চার্জার এনে ফোনটা চার্জে দিলাম
রাতে খাবার টেবিলে আকাশ মা কে বললো আমাকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে যেতে চায় মা খুশি হয়ে অনুমতি দিলেন
খেয়ে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম আজ আমি সোফায় আর আকাশ খাটে
সকালে রিয়ার ফোনে ঘুম ভাঙ্গলো, রিসিভ করলাম
–কিরে এতো সকালে
–ম্যাডাম ৮টা বাজে আর আমাকে তো ভুলেই গেছেন
–ভুলব কেন ফোন যে দিয়ে দিছিলি আমাকে বলছিলি
–বলছিলাম তুই তো পাথরের মূর্তি হয়ে গিয়েছিলি তাই শুনিস নি
–হুম
–তোর খবর কি সব ঠিক আছে তো
–আগামীকাল তো বাসায় যাবো তখন সব বলবো
–ঠিক আছে এখন ফ্রেশ হয়ে নে রাখি
–হুম
ফ্রেশ হয়ে নিছে গেলাম সব কেমন যেন নীরব, একটা কাজের মেয়েকে ডাক দিলাম
–সবাই কোথায় বাসা এতো নীরব কেন
–এই বাসা তো সবসময় নীরব থাকে বলেই হাসতে শুরু করলো
–মানে
–দুই বছর ধরে এই বাসায় কাজ করছি একদিনও এই বাসায় কাউকে আনন্দ করতে দেখিনি সবাই সবসময় চুপচাপ থাকে
–ওহ এখন সবাই কোথায়
–আকাশ ভাইয়া আর খচ্চরটা অফিসে গেছে আর খালাম্মা পাশের বাসায় গেছে
–খচ্চর আবার কে
–ওই যে এই বাড়ির মালিক রাকিব সাহেব
–উনাকে গালি দিচ্ছ কেন
–দিব না উনি তো একটা খারাপ মানুষ
–আচ্ছা এগুলা বাদ দাও ওরা সবাই নাস্তা করে গেছে তো
–হ্যা খালাম্মা বলছে আপনি উঠে নাস্তা করে নিতে
–ঠিক আছে
–আপনার কিছু লাগবে
–আমাকে তুমি করেই বলো আর এক মগ কপি দাও
–ঠিক আছে
–আচ্ছা বাকিরা কোথায় কাজের লোক তো মোট চারজন দেখেছি
–সবাই কাজে
–তোমরা সবাই নাস্তা করেছ তো
–হ্যা
–তোমার নাম কি
–নাফিজা
–আচ্ছা যাও
নাস্তা করে রোমে এসে ফোনটা হাতে নিলাম খুব ইচ্ছে করছে শ্রাবনের সাথে কথা বলতে কিন্তু ওর তো ফোন অফ, আচ্ছা তিন চার দিন তো ফোন দেইনি এখন দিয়ে দেখি হয়তো অন করেছে, অধীর আগ্রহ নিয়ে ওর নাম্বারটা ডায়াল করলাম, ঠিক যতটা আগ্রহ নিয়ে ফোন দিয়েছিলাম ঠিক ততটাই হতাশ হলাম ফোন অফ শুনে, হয়তো সিমটাই চেঞ্জ করে নিয়েছে, আচ্ছা আমার তো বিয়ে হয়ে গেছে এখন আর ওকে ফোন দিয়ে লাভ কি…? কেন বার বার ওকে মনে করে কাঁদছি…? কেন বার বার ওকে ফোন দিচ্ছি…? আমার এতো কষ্ট হচ্ছে কিন্তু ওর তো কোনো কষ্ট হচ্ছে না হলে তো ফোনটা অন রাখতো আমাকে একটা কল দিতো
এসব ভাবতে ভাবতে চোখ দুটি ঝাপসা হয়ে গেলো বালিশে মুখ গুঁজে অনেক কাঁদলাম, কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতেই পারিনি, হঠাৎ কারো ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো, চোখ খুলে দেখি আকাশ দারিয়ে আছে
–তুমি কখন এসেছ আর কয়টা বাজে
–১২টা বাজে আর একটু আগেই এসেছি
–মা কোথায়
–রোমেই তুমি ঘুমাচ্ছিলে তাই নাকি ডাকেনি
–ওহ
–উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নাও বাইরে যাবো
–এখন কেন বিকেলে গেলে হয়না
–দুপুরের খাবারটা বাইরে খাবো আর মেঘার সাথে
–ঠিক আছে
ইচ্ছে না থাকলেও উঠে গোসলে গেলাম আকাশ মেঘার সাথে দুপুরে খেতে চাচ্ছে এখন আমি না গেলে তো ওদের ইচ্ছেটা মাটি হয়ে যাবে, অনেক্ষন কাঁদার কারনে চোখ দুটি ফুলে গেছে খুব অসহ্য লাগছে
গোসল করে এসে ভাবতে লাগলাম কি পরবো শাড়ি নাকি থ্রি-পিছ, যদি শাড়ি পরতে হয় কি করবো আমি তো শাড়ি পড়তে পারি না
আকাশ: কি ভাবছ
–কি পরবো ভাবছি
–শাড়ি পরো নাহলে আম্মু সন্দেহ করবে
–কিন্তু আমি তো শাড়ি পরতে পারিনা
–ঠিক আছে নাফিজা কে ডেকে নাও হেল্প করবে
–হুম
নাফিজা কে ডেকে এনে বেগুনী রঙের একটা শাড়ি পড়লাম, শাড়ি পরতে আমার একদম ভালো লাগে না তাও পরতে হলো, রেডি হয়ে নিচে গিয়ে দেখি আকাশ ড্রইংরুমে বসে আমার জন্য অপেক্ষা করছে, মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরুলাম
আকাশ: রিক্সায় যাবা নাকি গাড়িতে
আমি: রিক্সায় গেলে মেঘা আপু রাগ করতে পারেন
–গাড়িতে গেলে যে আমার রাগ উঠবে
–কেন
–গাড়িটা পাপের টাকা দিয়ে কেনা তো তাই যেদিন নিজে গাড়ি কিনতে পারবো সেদিন গাড়ি চালাবো
–আজ অন্তত রাগটা কমিয়ে রাখো
–হুম চলো
আকাশ ড্রাইভ করছে আর আমি পাশে বসা
–আচ্ছা তুমি মামার উপর সবসময় এতো রেগে থাক কেন
–উনার জন্যই মেঘা কে হারিয়েছি আর উনি খারাপ লোক
–মেঘা আপু কে হারালেন কোথায় আবার তো পেয়ে যাবেন
–যদি না পাই ভয় হয়
–কিসের ভয় আমি তো নিজেই মিলিয়ে দিব
–তুমি যদি তোমার কথা না রাখো
–তার মানে আমাকে বিশ্বাস করতে পারছ না
চলবে?
(ভাবতেছি তমা কে মেরে আকাশ আর মেঘা কে মিলিয়ে দিব ভালো হবে তাই না আপুরা??)