জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ২০
যাকে ভালোবাসছি তাকে হারালাম অন্য একজনের সাথে বিয়ে হয়ে গেলো, আব্বুকে একা করে চলে যাচ্ছি নতুন ঠিকানায় কিন্তু আমার চোখে একফোঁটা পানি নেই, অল্প শোকে কাতর অধিক শোকে পাথর কথাটাই সত্যি আমি কষ্ট পেতে পেতে পাথর হয়ে গেছি তাই দুচোখে আজ পানি নেই, চোখ দুইটার ই বা দোষ কি আর কতো কাঁদবে ছোট বেলা থেকেই তো কেঁদে আসছে, আম্মুর কথা খুব মনে পরছে আম্মু থাকলে হয়তো আমার জীবটাই অন্য রকম হতো, হঠাৎ গাড়ির ঝাঁকানি তে বাস্তবে ফিরে আসলাম, একটা বিশাল বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামলো খুব জাঁকজমক ভাবে না সাজানো হলেও অনেকটাই সাজানো বাড়িটা, সব নিয়ম কানুন শেষ করে আমাকে একটা রোমে নিয়ে বসানো হলো, আমি চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে রোমটা দেখছি অনেক বড় রোম নানা ধরনের আসবাবপত্র, রোমটা অনেক সুন্দর করে সাজানো নানা ধরনের কাচা ফুল দিয়ে তার মধ্যে গোলাপ ফুল অনেক বেশি, বিছানায় গোলাপের পাপড়ি ছিটানো ওরা হয়তো জানেনা আমার গোলাপ নয় বেলি ফুল পছন্দ, হঠাৎ কারো পায়ের শব্দ শুনলাম বুঝলাম আকাশ এসেছে, আমার বুক ধুক ধুক করছে শ্রাবনের কথা কিভাবে শুরু করবো আকাশ আদৌ কি মেনে নিবে, রিয়ার কথা মনে পড়লো ও বলেছিল আকাশকে মেনে না নিলেও পায়ে ধরে যেন সালাম করি তাই খাট থেকে নেমে সালাম করতে গেলাম কিন্তু আকাশ সরে গেলো
আকাশ: সালাম করতে হবে না
আমি: কেন
–আমি আপনাকে কিছু কথা বলতে চাই কথা গুলো শুনার পর যদি ইচ্ছে হয় সালাম করতে পারেন আমি বাধা দিবো না
–কি কথা বলুন
–হুম বলবো আগে আপনি ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে আসুন বেনারসি পরে যে আপনার অসহ্য লাগছে তা বুঝা যাচ্ছে
–হুম
ফ্রেশ হয়ে শাড়ি পাল্টে একটা থ্রি-পিছ পরে নিলাম এসে দেখি আকাশও চেঞ্জ করে নিয়েছে
আকাশ: চলেন বারান্দায় গিয়ে বসি
–হুম (বুঝতেছি না কি হচ্ছে ও কি এমন বলবে বলতে তো চেয়েছিলাম আমি, আচ্ছা আগে শুনি ও কি বলে তারপর নাহয় আমার কথা গুলো বলব)
–আচ্ছা আপনার নাম কি (খুব অভাক হলাম বিয়ে করে ফেলছে অথচ নাম জানে না)
–তমা
–অনেক সুন্দর নাম, খুব অভাক হচ্ছেন তাই না বিয়ে করে ফেলেছি অথচ যাকে বিয়ে করলাম তার নাম টাই জানিনা
–হুম
–আসলে আমি এই বিয়েতে রাজি ছিলাম না মামার কথায় বিয়েটা করতে হয়েছে
–(আবারো অভাক হলাম কি অদ্ভুত বিয়ের কনে রাজি না বর রাজি না অথচ বিয়ে হয়ে গেলো)
–চুপ হয়ে আছেন যে
–এমনি আচ্ছা রাজি যেহেতু ছিলেন না বিয়েটা করলেন কেন
–ভাগ্যের চাকা ঘুরতে ঘুরতে আমাকে আজ এখানে এনে দাড় করিয়েছে
–বুঝলাম না
–আমি যখন খুব ছোট তখন আব্বু মারা গেলেন, আমাকে নিয়ে আম্মু কোথায় যাবে কিভাবে লালনপালন করবে তাই মামার কাছেই চলে আসেন, এইযে এতো বড় বাড়ি দেখছেন এতো সম্পদ সব আমার মামার কালো টাকায় গড়া, যখন থেকে বুঝতে শিখেছি এসব পাপের টাকায় গড়া তখন থেকেই এই পাপের হাতছানি থেকে অনেক দুরে ছুটে যেতে চেয়েছি কিন্তু পারিনি, পড়ালেখা শেষ না করে কিছু একটা না করে আম্মুকে নিয়ে কোথায় যাব তাই এখানেই পরে আছি আম্মুও চায় না এখানে থাকতে, পড়ালেখা মাত্র শেষ করলাম আর মামা বিয়ের জন্য জোর করতে শুরু করলেন, আমি রাজি ছিলাম না কারন আমি মেঘা কে ভালোবাসি কিন্তু মামা রাজি হলেন না আম্মু রাজি থাকলেও মামার কারনে কিছু করতে পারেননি, ছোট বেলা থেকে মামা আমাদের লালনপালন করেছেন উনার কথা তো রাখতেই হবে, জানিনা মামা কেন আপনাকে এতো পছন্দ করেছেন অনেক জোর করে বিয়েটা করিয়েছেন আর আম্মু তো আগে মেঘা কে পছন্দ করতেন কিন্তু আপনাকে দেখার পর পছন্দ হয়ে গেছে, জানিনা মেঘা কে পাবো কিনা কিন্তু আমি আপনাকে কখনো ভালোবাসতে পারবো না
–মেঘা কে আপনার মামা মেনে নেন নি কেন
–জানিনা হয়তো আপনাকে বেশি পছন্দ হয়েছে তাই
–আচ্ছা আপনার মামা বিয়ে করেননি
–করেছিলেন মামি দুই বছর পরই ডিভোর্স দিয়ে চলে গেছেন
–কেন
–মামার খারাপ কাজ গুলা মামির পছন্দ ছিল না বাসায় মেয়ে পর্যন্ত আনতেন তাই চলে গেছেন
–হুম আচ্ছা মেঘা কি জানে আপনি আজ বিয়ে করেছেন
–হুম জানে পাগলীটা কি করতেছে জানিনা হয়তো কাঁদতে কাঁদতে চোখ দুটি ফুলিয়ে ফেলছে
–খুব ভালোবাসে বুঝি আপনাকে
–হুম অনেক ভালোবাসে আমিও বাসি
–হুম
–আমি মেঘা ছাড়া অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারবো না আপনি যদি অধিকার চান পাবেন কিন্তু আমার ভালোবাসা কখনো পাবেন না এখন আপনার ইচ্ছা
–কারো মন ভেঙ্গে সুখী হবার ইচ্ছে আমার নেই তাছাড়া আমিও এই বিয়ে করতে চাইনি পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে করতে হয়েছে আপনি এসব না বললেও আমি আপনাকে বলতাম এই সংসার করা আমার পক্ষে সম্ভব না
–একটা কথা জিজ্ঞাসা করতে পারি
–হুম অবশ্যই
–আপনি কি কাউকে ভালোবাসেন
–হুম
–সে কোথায়
–হারিয়ে গেছে
–মানে
–এসব অনেক কথা অন্যদিন বলবো আপনি মেঘা কে ফোন দিয়ে বলুন কান্নাকাটি না করতে
–আমি তো ভেবেছিলাম আপনি মেনে নিবেন বা উল্টো আমার ঘাড় মটকে দিবেন হাহাহা
–আমি পেত্নী না আর ফাজলামো রেখে মেঘা কে ফোন দিন
–আচ্ছা আমরা ফ্রেন্ড হতে পারি
–হুম
–তাহলে আপনি বলা বাদ তুমি করে বলবা
–ঠিক আছে
আকাশ মেঘা কে ফোন দিয়ে কথা বলতে শুরু করলো আর আমি ভাবছি শ্রাবনের কথা
আজ শ্রাবনের সাথে বিয়েটা হলে রাতটাই অন্যরকম হতো
আকাশ: মেঘা তোমার সাথে কথা বলতে চায়
আমি: আমার সাথে কি কথা বলবে
আকাশ: আসলে ও বিশ্বাস করতে পারছে না তুমি যে সব মেনে নিয়েছ
আমি: ঠিক আছে কথা বলবো কিন্তু উনাকে কি বলে ডাকবো
আকাশ: ও তোমার বড় তাই আপু বলেই ডাকতে পার
আমি: ঠিক আছে
আমি: আসসালামু আলাইকুম আপু
মেঘা: ওয়ালাইকুম আসসালাম কেমন আছ বোন
–ভালো আপনি
–জানই তো
–প্লিজ আপু কান্নাকাটি করবেন না আমি কথা দিচ্ছি আপনাদের এক করে দিব
–কিভাবে সম্ভব
–আকাশ একটা চাকরী পেলেই আমরা ডিভোর্স করে নিব তারপর আপনাদের বিয়ে দিব
–কোনো মেয়ে কি বাসর রাতে স্বামীর প্রেমিকা কে মেনে নিয়ে তাদের বিয়ে দিবে প্রতিশ্রুতি দেয়
–জানিনা কিন্তু আমি দিলাম কারন আমি জানি ভালোবাসার মানুষ কে হারানোর যন্ত্রণা কতটুকু
–তুমি কি কাউকে ভালোবাস
–হুম
–সে কোথায়
–অন্য একদিন বলবো আপু আপনারা কথা বলুন আর হ্যা আকাশ আর আমার উপর বিশ্বাস রাখবেন প্লিজ, বিশ্বাস না থাকলে কোনো সম্পর্কই ঠিকে থাকে না
–তোমার সাথে কথা বলেই বুঝতে পেরেছি বোন তোমার উপর বিশ্বাস রাখা যায়
–থ্যাংকস আপু
চলবে?