জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ১৯
রিয়া আর আমি বিয়ের কার্ড নিয়ে শ্রাবনদের বাসায় গেলাম কিন্তু দরজায় তালা দেয়া
–তমা দরজায় তালা দেয়া তো
–কোথাও গেছে হয়তো
–শ্রাবনকে ফোন দিয়ে দেখ
–হুম (ফোন দিলাম কিন্তু বন্ধ)
–বন্ধ রে
–চল পাশের বাসার কাউকে জিজ্ঞাসা করি
–হুম
পাশের বাসার এক আন্টিকে জিজ্ঞাসা করলাম
–আন্টি শ্রাবনরা কোথায়
–ওরা তো এখান থেকে চলে গেছে
–মানে
–ছেলেটা কে নিয়েই ভাবি বেঁচে আছেন উনারা খুব ভালো মানুষ ছেলেটাও অনেক ভালো কিন্তু দুদিন আগে ছেলেটা কে কারা যেন অনেক মেরেছে, ছেলেকে হারানোর ভয়ে উনি ছেলেকে নিয়ে এখান থেকে একেবারে চলে গেছেন
–কোথায় গেছেন আপনি জানেন
–না মা এসব কিছু বলে নি
–ঠিক আছে আন্টি আসি
রিয়া: বুঝলাম না ওকে কে মারবে
আমি: আমিও বুঝতে পারছি না
–বিয়ে তো ঠিক হয়েই গেছে আর খুঁজে কি করবি
–হুম
–ভুলে যা বিয়েটা করে নে
–চাইলেই কি ভুলা যায়
–হয়তো ভুলা যায় না কিন্তু যাকে ভালোবাসিস সেই তো প্রতারণা করেছে তাকে মনে রেখে কি লাভ
–হুম জানিস আকাশ ছেলেটা কে দেখতে অনেক ভালো মনে হয় এমন একটা ছেলেকে ঠকাবো ভেবে নিজেকে খুব বেশি অপরাধী মনে হচ্ছে
–তোর কি দোষ তুই তো পরিস্থিতির স্বীকার
–আকাশ কে একবার বললে হতো না
–বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে আর বলে কি হবে
–হুম
–যা হবার হয়েছে বিয়েটা করে নে
–হুম
রাতে বিছানায় শুয়ে আছি, কাল আমার বিয়ে বাড়িতে অনেক মেহমান সবাই আনন্দ করছে আর আমার বুক ফেটে কান্না আসছে, আমি তো অন্য কারো জন্য বউ সাজতে চাইনি সব স্বপ্ন ওকে ঘিরেই দেখেছিলাম কেন সব উলট-পালট হয়ে গেলো
রিয়া: তমা
আমি: হুম
–আর কত কান্না করবি
–আমার জীবনে কান্নাটাই একমাত্র সঙ্গী রে
–কাঁদলে কি শ্রাবন ফিরে আসবে
–জানিনা
–কান্না থামা প্লিজ তোর কথায় তো গায়ে হলুদ ও করা হয়নি মেহেদী তো পরবি
–যার জন্য দুহাত ভরে মেহেদী পরার স্বপ্ন দেখেছিলাম সেই তো নেই মেহেদী পরে কি হবে
–বিয়ের সময় মেহেদী পরতে হয়
–জীবন্ত লাশের আবার বিয়ে
–চুপ করে বস তো আমি মেহেদী পরিয়ে দিচ্ছি
–ওকে
–একদম কান্নাকাটি করবি না
–আচ্ছা রিয়া আমি আকাশ কে সব কিছু বলার পর যদি ও মেনে না নেয় যদি রেগে গিয়ে আব্বুকে বলে দেয়
–তুই তো বলেছিস আকাশ কে দেখে ভালো ছেলে মনে হয় আশা করি ও মেনে নিবে
–মেনে না নিলে
–উফফফফ এতো নেগেটিভ চিন্তা করছিস কেন সব ঠিক হয়ে যাবে চিন্তা করিস না
–হুম
আজ আমার বিয়ে আমার কান্নাও পাচ্ছে আবার হাসিও পাচ্ছে হিহিহি, বিয়েটা শ্রাবনের সাথে হচ্ছে না তাই কান্না পাচ্ছে আর আমি তো এখন জীবন্ত লাশ আমাকে সাদা কাপর পরিয়ে কবরে না রেখে এসে লাল বেনারসি পরিয়ে বউ সাজানো হচ্ছে অন্যের ঘরে পাঠানোর জন্য কি অদ্ভুত নিয়ম
লাল বেনারসি পরে বউ সেজে বসে আছি পিচ্ছিরা চেঁচামেচি শুরু করেছে বর এসেছে বর এসেছে
রিয়া: তমা তোর হাব্বিটা অনেক সুন্দর
আমি: তোর পছন্দ হয়েছে নে আমার শাড়িটা পরে বউ সেজে বসে থাক বিয়েটা তুই করে নে
–রেগে যাচ্ছিস কেন
–আমার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে আর তুই আসছিস বর সুন্দর বলতে
–কান্না করে আর কি লাভ হবে শ্রাবন তো আর ফিরে আসবে না
–হুম
আম্মু আসলেন উনাকে সবচেয়ে বেশি খুশি মনে হচ্ছে, শুনেছি ছেলে পক্ষ অনেক বড়লোক, মা বাবা তো সব মেয়েকেই বড়লোক ছেলের কাছে বিয়ে দিতে চায় যেন সুখি হয় সে হিসেবে তো আমি সুখি হবো তাহলে আম্মু এতো খুশি কেন আম্মু তো আমার সুখ চায় না উল্টো আমাকে মেরে ফেলতে চায়
আম্মু: তমা তুই এই বিয়েতে রাজি হয়েছিস আমি অনেক খুশি হয়েছি
আমি: এতে তোমার লাভ কি
–আমার লাভ কি মানে
–যে খুশি হয়েছ বুঝা তো যাচ্ছে এতে তোমার কোনো লাভ আছে
–তোকে আমি মেয়ের মতো দেখি এতো বড় জায়গায় বিয়ে হচ্ছে খুশি হবো না (মেয়ে যে ভাবো তাতো বুঝাই যায়)
–আচ্ছা আম্মু বিয়ের প্রস্তাবটা এনেছে কে
–আমার ফ্রেন্ড রাকিব, আকাশ তো ওর ভাগ্নে
–ওহ তাই তুমি এতো খুশি
–কেন তুই খুশি না
–হুম অনেক খুশি
–একটু পর কাজি আসবে বস আমি আসছি
–হুম
কাজি, আব্বু, আম্মু, রিয়া সহ অনেক মানুষ আমার সামনে বসা সবার একটাই কথা কবুল বল কিন্তু আমার গলা দিয়ে তো কবুল শব্দটা আসছে না, কবুল শব্দটা তো আমি শ্রাবনের জন্য বলতে চেয়েছিলাম আকাশের জন্য বলবো কিভাবে
কাজি: কবুল বলো মা
আব্বু: মা কবুল বল
আম্মু: চুপ হয়ে থাকিস না কবুল বল
রিয়া: তমা প্লিজ তাড়াতাড়ি কবুল বল
সবার একটাই কথা কবুল বল কবুল বল কবুল বল কিন্তু আমার ভিতর থেকে তো এই শব্দটা আসছে না আমি বলতেই চাচ্ছি না, কেন বলবো আমি তো শ্রাবনকে ভালোবাসি, হায়রে জীবনের স্রুত কাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলাম আর কার সাথে বিয়ে হচ্ছে, আমাদের জীবনটা খুব অদ্ভুত
তিন শব্দের “কবুল কবুল কবুল” আর তিন শব্দের “আমি তোমাকে ভালোবাসি” অথচ কতো পার্থক্য যাকে বলি “আমি তোমাকে ভালোবাসি” তাকে আমরা চাইলেও নিয়তি আমাদের “কবুল” বলতে দেয় না আর যাকে “কবুল” বলি তাকে শত চেষ্টা করেও “আমি তোমাকে ভালোবাসি” বলতে পারি না, বলতে পারবো কিভাবে মন তো একটাই একবার যাকে দেয়া হয় তার কাছ থেকে কি ফেরত এনে নতুন করে অন্য কাউকে দেয়া যায়, জীবনের স্রুত যে কোন দিকে বয়ে যায় আমরা কেউ বলতে পারি না তাইতো স্রুতের দ্বারায় হঠাৎ কেউ জীবনে আসে আবার সেই স্রুতের দ্বারায়ই সে হারিয়ে যায়, খুব কম মানুষই ভালোবাসার মানুষ কে জীবন সঙ্গী হিসেবে পায় তারা খুব ভাগ্যবান/ভাগ্যবতী হয় তাইতো ভালোবাসার মানুষ কে চির আপন করে পায়, ভালোবাসার মানুষটা কে জীবন সঙ্গী হিসেবে পাওয়া সবার কপালে জোটে না
আব্বু: কিরে মা এতক্ষণ ধরে কি ভাবছিস কবুল বল (আব্বুর কথায় ভাবনা জগত থেকে বাস্তবে আসলাম)
–হুম (কবুল বললাম কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো আমার চোখ থেকে একফোঁটা পানিও ঝরেনি)
বিদায়ের সময় হলো কিন্তু আমার চোখে পানি নেই ছোট বেলা থেকে দেখে আসছি বিদায়ের সময় মেয়েরা অনেক কাঁদে কিন্তু আমার দুচোখে একফোঁটা পানিও নেই, গাড়িতে উঠে বসলাম গাড়ির জানালা দিয়ে আব্বুর দিকে থাকিয়ে আছি উনার দুচোখ বেয়ে পানি ঝরছে পাশে তুলি আর রিয়া দারিয়ে কাঁদতেছে আর আম্মুর মুখে খুশির ঝিলিক, গাড়ি চলছে তার নিজ গন্তব্যে আর আমি দুচোখ বন্ধ করে ভাবছি শ্রাবন কেন আমার সাথে প্রতারণা করেছে কিন্তু ভেবে কিছুই পাচ্ছি না আর হয়তো পাবোও না……
চলবে?