জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ১৮

0
2390

জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ১৮

লেখিকা: সুলতানা তমা

 

–ভালোবাসার জন্য নিজেকে একটু ছোট করলে দোষ কি
–তোর যা ভালো মনে হয় কর
–কাল কলেজে আসিস
–ঠিক আছে

রিয়া আর আমি সারা কলেজে শ্রাবনকে খুঁজলাম কোথাও ফেলাম না
–তমা ও তো কলেজে আসেনি এখন কি করবি
–আমি আব্বুর কাছ থেকে দুদিনের সময় নিয়েছি ওকে খুঁজে বের করতেই হবে
–ফোনও তো বন্ধ কি করবি
–ওর বাসায় যাবো
–ঠিক আছে চল

শ্রাবণের বাসায় ও আর ওর আম্মুর সামনে বসে আছি
মা: কেন এসেছ
রিয়া: আন্টি আপনি তো জানেন ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে কিন্তু হঠাৎ করে শ্রাবন পাল্টে গেছে
মা: জানি আর এটাও জানি শ্রাবন তমা কে আর ভালোবাসে না
আমি: আমার দোষ কি মা
মা: দোষ গুন জানিনা আমার ছেলে তোমাকে আর ভালোবাসে না তাই আমি চাই না তুমি আর আমার ছেলেকে বিরক্ত কর
আমি: কি বলছেন মা এসব
মা: আশা করি বুঝতে পেরেছ
রিয়া: আন্টি তমার বাসা থেকে বিয়ের চাপ দিচ্ছে তাই আমরা এখানে এসেছি
মা: বিয়ে করে নাও এখানে কেন এসেছ
আমি: মা আমি শ্রাবনকে ভালোবাসি ওকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবো না
শ্রাবন: কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসি না আর বিয়েও করতে চাই না
রিয়া: শ্রাবন তুমি এতো পাল্টে গেলে কিভাবে তুমি তো ওকে না দেখে থাকতে পারতে না
শ্রাবন: দেখ রিয়া আমি ওকে এখন আর ভালোবাসি না তোমরা আসতে পারো
আমি: ভালোবাসাটা কি পুতুল খেলা চাইলেই ভালোবাসলা আর প্রয়োজন শেষে ছুড়ে ফেলে দিলা
রিয়া: এমনটাই যখন করার ইচ্ছে ছিল ওর জীবনে কেন আসছিলা আর কোনো মেয়ে ছিল না পৃথিবীতে
মা: অনেক বলেছ তোমরা এখন আসতে পারো আমার ছেলেকে আর বিরক্ত করো না
রিয়া: তমা চল এখান থেকে ওরা মা ছেলে দুজনই এক মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করে

চলে আসলাম ওদের বাসা থেকে রিক্সায় বসে আছি
–তমা আগেই বলেছিলাম নিজেকে ছোট করিস না এখন কাঁদছিস কেন
–ও আমার সাথে প্রতারণা করলো কেন
–ওর মতো ছেলেদের এটাই স্বভাব আঙ্কেল যাকে পছন্দ করেছেন তাকে বিয়ে করে নে
–আমি অন্য কাউকে নিয়ে ঘর বাঁধতে পারবো না
–আঙ্কেল এর জন্য হলেও তোকে বিয়েটা করতে হবে, দেখ শ্রাবন তোর সাথে প্রতারণা করেছে কার জন্য বসে থাকবি তুই
–রিয়া আমি নতুন করে কাউকে ভালোবাসতে পারবো না বিয়ে করে ছেলেটির জীবন কেন নষ্ট করবো
–আঙ্কেল তোকে অনেক ভালোবাসে উনার মনে কষ্ট দিস না ছেলেটাকে মেনে নিতে না পারিস এখন অনন্ত বিয়েটা কর পরে না হয় ছেলেটাকে বুঝিয়ে কিছু করবি
–কি করবো তখন ডিভোর্স দিয়ে চলে আসবো
–পরেরটা পরে ভাবা যাবে আপাদত বিয়েটা কর
–হুম
–নাহলে আঙ্কেল কে একবার শ্রাবণের কথা বলে দেখ
–নারে আমি জানি আব্বুকে মুখ ফুটে একবার যদি বলি শ্রাবনকে ভালোবাসি আব্বু শ্রাবনকে রাজি করাতে চাইবে, শ্রাবনদের কাছে ছোট হবে প্রয়োজনে পায়ে ধরবে তাও আমাকে সুখি দেখতে চাইবে, আজ ওরা আমাদের যেভাবে অপমান করেছে আব্বুকেও তো অপমান করবে আমি চাই না আব্বু আমার জন্য অপমানিত হোক
–তোর আব্বু যদি তোর সুখের জন্য এতো কিছু করতে পারেন তাহলে তুই কেন উনাকে ভালো রাখার জন্য ওই প্রতারক কে ভুলে আঙ্কেল এর পছন্দে বিয়ে করতে পারবি না
–বিয়েটা আমি করবো শুধু আব্বুকে ভালো রাখার জন্য কিন্তু ছেলেটা কে কখনো ভালোবাসতে পারবো না
–হুম

রাতে ছাদে বসে আছি আর দুচোখের পানি ঝরাচ্ছি আব্বু আসলেন
–তমা
–হুম আব্বু বলো
–ছেলে পক্ষ দেখতে আসতে চাইছে তুই কিছু ভাবলি
–তোমার যা ভালো মনে হয় কর
–এইতো আমার লক্ষী মা তাহলে ওদের কাল আসতে বলি
–ঠিক আছে

আজ আমাকে দেখতে আসবে আব্বু অনেক খুশি তারচেয়ে বেশি খুশি আম্মু, বুঝলাম না আম্মু এতো খুশি হলো কেন, আম্মু আসলো
–দুপুর হয়ে গেছে একটু পর ওরা চলে আসবে রেডি হয়ে নে
–হুম
–এইনে এই শাড়িটা পরিস (আম্মুর একটা শাড়ি দিয়ে বললো)
–আমি তো শাড়ি পরতে পারি না
–ঠিক আছে আমি পরিয়ে দিচ্ছি
–হুম
আম্মু শাড়ি পরিয়ে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিল

ছেলে পক্ষের সামনে বসে আছি চোখ দুটি যেন বাধ মানছে না কষ্ট করে চোখের পানি আটকিয়ে রাখছি
ছেলের মা: কেমন আছ মা
আমি: ভালো
ছেলের মা: আমি তোমার সম্পর্কে সব জানি আর কিছু জিজ্ঞাসা করতে চাই না তুমি আমার ছেলেকে দেখে বল পছন্দ হয়েছে কিনা পছন্দ হলে আমি এখনি আংটি পরিয়ে ফেলতে চাই
–(উনার কথা শুনে সামনের দিকে থাকালাম ছেলেটা বেশ সুন্দর দেখে ভালই মনে হচ্ছে এমন ভালো একটা ছেলেকে ঠকাবো ভেবে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে)
–মা আমার ভাগ্নে কে পছন্দ হয়েছে তো (কথাটা শুনে সামনে থাকালাম আরে এটা তো আম্মুর বেহায়া ফ্রেন্ড রাকিব, এই লুইচ্ছার ভাগ্নে বলছে কেন)
আব্বু: আমার পছন্দই আমার মেয়ের পছন্দ আপনাদের ছেলেকে আমার পছন্দ হয়েছে
ছেলের মা: তাহলে আমি দেরি করতে চাই না আগামী শুক্রবারেই শুভ কাজ সেরে ফেলতে চাই
আব্বু: মাত্র এক সপ্তাহের ভিতরে
রাকিব: আমার ভাগ্নে জাঁকজমক বেশি পছন্দ করে না তাই সাধারণ ভাবেই বিয়েটা হবে
আব্বু: ঠিক আছে

ছেলের মা আমার হাতে আংটি পরিয়ে চলে গেলেন

রাতে বিছানায় শুয়ে আছি আর চোখ দুটি অবাধ্যের মতো বালিশ বিজিয়ে যাচ্ছে
— মা আসবো (আব্বুর কন্ঠ শুনে তাড়াতাড়ি চোখ মুছলাম)
–আসো
–কয়েকটা দিন অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি তোর বিয়ের কেনাকাটা করতে হবে তো
–হুম
–এতো মনমরা হয়ে আছিস কেন
–কই
–ছেলের নাম কি ছেলে কি করে কিছুই তো জানতে চাইলি না
–জেনে কি হবে
–তুই কি এই বিয়েতে রাজি না
–কে বললো রাজি না
–তাহলে কিছুই জানতে চাইলি না যে
–ওহ তাই তো ছেলের নাম কি
–আকাশ, এখনো কিছু করে না পড়ালেখা শেষ করেছে মাত্র
–হুম
–এতো মনমরা হয়ে থাকিস কেনরে মা
–তোমাদের ছেড়ে চলে যাবো তো তাই খারাপ লাগছে
–সব মেয়েদেরই একদিন এভাবে মা বাবা আপনজন দের ছেড়ে যেতে হয়রে মা এটাই নিয়ম (আব্বুর চোখে পানি দেখে আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলাম না আব্বুকে জরিয়ে ধরে চিৎকার করে কেঁদে দিলাম)

আর চারদিন পর বিয়ে সত্যিই কি এইটা বিয়ে হবে নাকি একটা জীবন্ত লাশ কে লাল বেনারসি পরিয়ে সাজিয়ে অন্যের ঘরে পাঠানো হবে, আব্বু আসলেন
–মা এইনে বিয়ের কার্ড তোর বন্ধুদের দাওয়াত দিয়ে আয়, আর তো চারদিন বাসা থেকে বেরুতে পারবি না আজ দাওয়াত দিয়ে আয় যাদের দেবার
–হুম

রিয়াকে ফোন দিলাম
–হ্যালো
–আমাদের বাসায় আয়
–কেন
–আমার বিয়ের কার্ড প্রথম শ্রাবণের হাতে দিতে চাই
–হুম আসছি

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে