জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ১৭

0
2292

জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ১৭

লেখিকা: সুলতানা তমা

 

–এই কাজ না করে আমাকে বলতি কি হয়েছে
–(বুঝতেছি না আমি কেন বিষ খাবো আমি তো দুই লুকমা ভাত খেয়েই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম তাহলে কি আম্মু ভাতে…..
না না কিসব ভাবছি আম্মু আমাকে মারতে চাইবে কেন)
–কিরে চুপ হয়ে আছিস কেন বল কোন কষ্টে এই জঘন্য কাজ করেছিস
–(আব্বুকে কি বলবো দুই লুকমা ভাত খেয়েই অজ্ঞান হয়ে গেছিলাম, বললে তো আব্বু আম্মুকে সন্দেহ করবে সংসারে অশান্তি শুরু হবে এমনকি আব্বু আম্মুকে পুলিশেও দিতে পারেন, নাহ না বলাটাই ভালো আমি সংসারে অশান্তি চাই না, আম্মুর দিকে চেয়ে দেখি ভয়ে চুপসে গেছে)
–কিছু বলবি নাকি এভাবে চুপ হয়ে থাকবি
–বাদ দাও না আব্বু আমার এখানে ভালো লাগছে না ডক্টর কে জিজ্ঞেস করে আসো কবে আমাকে রিলিজ করে দিবে
–ঠিক আছে
আব্বু আম্মু আর রাকিব বেহায়াটা ডক্টর এর কাছে গেলো, রিয়া আমার পাশে এসে বসলো
–তুই এই কাজ করবি আমি ভাবতেও পারিনি
—————–
–এখন চুপ হয়ে আছিস কেন আমি বুঝলাম না তোর মতো বুদ্ধিমতী মেয়ে একটা ছেলের জন্য সুইসাইড করতে চাইছিল তাও যে ছেলে তোর সাথে প্রতারণা করেছে
–রিয়া আমি বিষ খাইনি
–ফান করছিস বিষ না খেলে হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছিস কেন ডক্টর তোর পেট থেকে বিষ বের না করে কি পানি বের করছে
–বিশ্বাস কর আমি বিষ খাইনি আম্মু আমাকে ভাত খেতে দিয়ে ফোনে কথা বলতে গেয়েছিল আমি দুই লুকমা ভাত খেতেই পেটে জ্বালা শুরু হয় মাথা ঘুরে তারপর আর কিছু মনে নেই
–তাহলে কি তোর আম্মু…..
–হতে পারে
–কিন্তু উনি তোকে মারতে চাইবে কেন
–জানিনা এতে উনার কোন স্বার্থ আছে
–আচ্ছা উনি যদি তোকে মারতেই চাইবেন তাহলে তুই অজ্ঞান হবার সাথে সাথেই আমাকে ফোন দিলেন কেন যে তুই বিষ খেয়েছিস তারপর তোকে এখানে এনেছে তোর আব্বুকে ফোন করে কান্নাকাটি করে বলেছে আসতে, তোকে যদি মারতেই চাইবে হাসপাতালে আনলো কেন তুই মারা যাবার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করল না কেন
–জানিনা, সত্যিটা কি তাতো একদিন বেরিয়ে আসবেই, অন্ধকার দিয়ে সত্যি কে কখনো লোকানো যায় না দিনের আলোতে সত্যি একদিন বেরিয়ে আসবেই সে দিনের অপেক্ষায় থাকবো আমি
–তোর আব্বুকে এই কথা বললি না কেন
–আমি সংসারে অশান্তি চাই না তুলিকে মা হারা করতে চাই না, প্লিজ এই সত্যিটা কাউকে বলবি না
–ঠিক আছে (রিয়ার ফোন বেজে উঠলো)
–শ্রাবন ফোন দিয়েছে
–লাউড দিয়ে কথা বল
–হুম (ফোন রিসিভ করলো)

রিয়া: হ্যালো
শ্রাবন: তমার জ্ঞান ফিরেছে
রিয়া: তুমি জানলে কিভাবে
শ্রাবন: জেনেছি কোন এক ভাবে
রিয়া: এর ফিছনে তোমার কোনো হাত নেই তো
শ্রাবন: রিয়া আমি ওকে ভালোবাসি আর যাই করি ওকে মেরে ফেলবো না পরিস্থিতির কারণে হয়তো ওর থেকে দুরে চলে যেতে হবে কিন্তু ও বেঁচে আছে এই পৃথিবীতে এইটা ভেবেই আমি ভালো থাকবো
রিয়া: তোমার কথার কিছুই বুঝতেছি না
শ্রাবন: একদিন ঠিকি বুঝতে পারবা ওকে দেখে রেখো আর ওকে বইলো আমাকে খুঁজার চেষ্টা যেন না করে বলেই ফোন কেটে দিলো

রিয়া: তমা ওর কথার অর্থ কিছু বুঝলি
আমি: ও বলেছে পরিস্থিতির কারণে দুরে যেতে হবে তাহলে কি ওর কোনো পারিবারিক সমস্যা
— ওর আম্মু তো তোকে পছন্দ করে পারিবারিক সমস্যা হবে কেন
–জানিনা কিন্তু একটা রহস্য তো আছেই
–হুম

আব্বু আম্মুরা চলে আসলো
আব্বু: আগামীকাল সকালে রিলিজ করে দিবে
আমি: আচ্ছা
আম্মু: কেন এমন পাগলামি করতে গেলি মা (আমার গালে হাত দিয়ে)
–(মৃদু হাসলাম শুধু, উনি মারতে চেয়ে এখন আবার ভালোবাসা দেখাচ্ছে)
রাকিব: এমন পাগলামো করতে নেই মা আর কখনো এমন কাজ করো না
আমি: হুম

সকালে আমাকে রিলিজ করে দেয়া হলো বাসায় চলে আসলাম, আব্বু চলে গেলেন, দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ কেটে গেলো, আম্মু আমার খুব যত্ন নিচ্ছেন আর উনার বেহায়া রাকিব ফ্রেন্ড প্রতিদিন বাসায় আসে এখন আর সুযোগ ফেলেই আমার দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে থাকায়, শ্রাবন একদিন ও ফোন করে জানতে চায়নি কেমন আছি আমি, আচ্ছা ও কি আদৌ আমাকে ভালোবাসত নাকি সব অভিনয় ছিলো, যদি অভিনয় করার ইচ্ছেই থাকতো ওর তাহলে আমিই কেন পৃথিবীতে কি আর কোনো মেয়ে ছিল না, ছোট বেলা থেকে কষ্টই শুধু ফেলাম আর শ্রাবন এসে সেই কষ্ট দ্বিগুণ করে দিয়ে চলে গেলো, ঝড়ের গতিতে আসলো আমার জীবনের কষ্ট গুলা দ্বিগুণ করে দিয়ে চলে গেলো কি প্রয়োজন ছিল এমন করার কি লাভ হয়েছে ওর, বসে বসে আনমনে হয়ে এসব ভাবছি আর দুচোখ দিয়ে বন্যা বয়ে যাচ্ছে হঠাৎ আব্বু আসলেন
–আম্মু আসবো
–আসো অনুমতি লাগে নাকি (তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছলাম)
–কি করছিস
–কিছু না বাসায় কখন আসছ ফোন করে বলনি যে
–এমনি বলিনি একটু আগেই আসলাম
–হুম
–হঠাৎ এতো চুপচাপ হয়ে গেলি কেন মা কি হয়েছে তোর বলবি আমাকে
–কই কিছু না তো
–তোকে একটা কথা বলতে চাই যদি অনুমতি দিস
–অনুমতি চাইছো কেন বল কি বলবা
–আমি বোকা নারে মা অনেক কিছুই বুঝি দেখ আমি বাসায় থাকি না কাজের জন্য অন্য জায়গায় থাকতে হয় তুই বাসায় একা থাকিস কতটুক অত্যাচার সহ্য করতে হয় আমি হয়তো জানিনা কিন্তু কিছুটা হলেও বুঝতে পারি, আমি এই অত্যাচারের মধ্যে তোকে রেখে ভালো থাকতে পারছি না তাই আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি
–কি সিদ্ধান্ত আব্বু
–তোর বিয়ের কথা ভাবছি
–বিয়ে
–হ্যা মা অনেক ভালো একটা সমন্ব এসেছে ওরা তোকে বিয়ের পরেও পড়ালেখা করাবে
–(এখন কি করবো আব্বুকে কি শ্রাবণের কথা বলবো)
–কিরে কি ভাবছিস দেখ আমি তোকে জোর করছি না তুই রাজি না থাকলে আমি ওদের না করে দিব
–আব্বু আমাকে দুইটা দিন সময় দাও ভেবে বলছি
–ঠিক আছে তুই এই বিয়েটা করলে আমি অনেক খুশি হব
–হুম
আব্বু চলে গেলেন কি করবো এখন আমি, শ্রাবনকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবো কিভাবে আমার সব স্বপ্ন তো ওকে ঘিরে, নতুন করে অন্য কাউকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা আমার পক্ষে সম্ভব না দেখতে চাইও না আমি, রিয়াকে বলে দেখি কি বলে ফোন দিলাম ওকে
–হ্যালো
–রিয়া আব্বু বিয়ের কথা বলেছে
–বিয়ে করে নে
–কি বলছিস আমি ওকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবো না
–দেখ ও তোর সাথে প্রতারণা করেছে ওকে ভুলে যা
–সম্ভব না
–তাহলে কি করবি এখন
–কাল শ্রাবণের সাথে দেখা করে ওকে বুঝাবো
–ওকে এখন বুঝানো মানে তোর ভালোবাসাকে ওর কাছে ছোট করা কেন নিজেকে ছোট করতে চাইছিস
–ভালোবাসার জন্য নিজেকে একটু ছোট করলে দোষ কি

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে