জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ১৪
–এতো বেলা হয়েছে ডাকোনি কেন
–আমার বউটা এতো আরামে ঘুমাচ্ছিল আমি কি করে ঘুমটা ভাঙ্গাই
–তুমি কখন উঠেছ
–৭টার দিকে এতো সময় তোমার ঘুমন্ত মায়াবী মুখটা দেখছিলাম
–ফাজিল একটা
একটু পর মা আর রিয়া আসলো, শ্রাবনকে রিলিজ করে দেয়া হলো, হাসপাতালের সব জামেলা শেষ করে মা আর শ্রাবনকে বাসায় পাঠিয়ে দিলাম রিয়া আর আমি রিয়াদের বাসায় গেলাম, কলিংবেল চাপতেই আন্টি এসে দরজা খুলে দিলেন
–আসসালামু আলাইকুম আন্টি
–ওয়ালাইকুম আসলাম কেমন আছ মা
–ভালো আন্টি আপনি ভালো আছেন
–ভালো তুমি তো আমাদের বাসায় এখন আর আসই না
–আজ তো আসলাম
–আমি অনেক খুশি হয়েছি মা অনেক দিন থাকবা কিন্তু
–ঠিক আছে
রিয়ার রোমে ঢুকতেই আব্বু ফোন দিলেন
–আব্বু কেমন আছ
–ভালো তুই কেমন আছিস
–ভালো
–ওখানে কেমন লাগছে
–ভালই
–ঠিক আছে সাবধানে থাকিস কাজের চাপ বেশি ফোন বেশি দিতে পারবো না
–আচ্ছা আমার জন্য চিন্তা করো না তোমার নিজের খেয়াল রেখো
–আচ্ছা রাখি মা
–আচ্ছা
দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ কেটে গেলো, আমার পা ভালো হয়ে গেছে, শ্রাবণের হাতও অনেকটা ভালো হয়ে গেছে, রিয়াদের বাসায় ভালোই সময় কাটছে, রিয়ার সাথে আড্ডা আন্টির ভালোবাসা শ্রাবণের সাথে ফোনে কথা বলা সব মিলিয়ে অনেক ভালো আছি, দুপুরে রিয়া আর আমি ছাদে বসে আছি আমার ফোন বেজে উঠলো, আম্মু আমাকে কেন ফোন দিল রিসিভ করলাম
–হ্যালো
–আপু আমি তুলি
–তুলি কেমন আছিস
–ভালো না
–কেন কি হয়েছে
–তুমি নেই বাসায় একা একা ভালো লাগে না
–কেম আম্মু তো বাসায় আছে
–আপু আম্মু এই এক সপ্তাহ আমাকে স্কুলে নিয়ে যায়নি বলে আমি বড় হয়েছি একাই যেতে পারবো
–আম্মু সারা দিন বাসায় কি করে
–প্রতিদিন স্কুল থেকে এসে দেখি আম্মুর কিছু ছেলে ফ্রেন্ড আর দুইটা মেয়ে ফ্রেন্ড নিয়ে বাসায় আড্ডা দিচ্ছে, যানো আপু আম্মুর একটা ছেলে ফ্রেন্ড অনেক খারাপ আমার দিকে কেমন খারাপ দৃষ্টিতে যেন থাকায়
–আমি বাসায় থাকতে তো আম্মু ফ্রেন্ডদের তেমন বাসায় আনে না
–এখন বাসা ফাকা আব্বুও আসে না তাই আনে
–ঠিক আছে আমি বিকেলে বাসায় আসছি তুই আম্মুকে আমার আসার কথা বলিস না
–আচ্ছা
বিকেলে রিয়াদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় গেলাম, অনেক সময় ধরে কলিংবেল বাজিয়ে যাচ্ছি কেউ দরজা খুলছে না রাগ উঠলো তাই দরজা ধাক্কাতে শুরু করলাম একজন মহিলা দরজা খুলে দিলো, দেখেই বুঝা যাচ্ছে আম্মুর বেহায়া কোনো ফ্রেন্ড যা সাজ সজ্জা
–কাকে চাই
–আপনি কে
–এই মেয়ে সাহস তো কম না এখানে এসে জিজ্ঞাসা করছ আমি কে
–আপনারও তো সাহস কম না আমার বাসায় এসে আমাকেই জিজ্ঞাসা করছেন কাকে চাই
–তোমার বাসা মানে
–আমি এই বাসার বড় মেয়ে দরজা থেকে সরেন
–মহিলা সরে গেলেন ভিতরে ঢুকে যা দেখলাম আমার চোখ কপালে উঠে গেলো, সবাই মিলে ড্রয়িংরুম কে নোংরা ক্লাব বানিয়ে ফেলছে কেউ ড্রিংক্স করছে কেউ সিগারেট খাচ্ছে আর আমার শ্রদ্ধেয় আম্মুজান সবার জন্য নাস্তা বানাচ্ছেন, একজনের নজর আমার দিকে পড়লো
–এই মেয়ে তুমি কে (এই কথা শুনে সবাই আমার দিকে থাকালো)
–তার আগে বলুন আপনাদের এই বাসায় ঢুকার অনুমতি দিয়েছে কে
–তোমাকে কে ঢুকার অনুমতি দিয়েছে
–আমার বাসায় আমাকে ঢুকতে কারো অনুমতি নিতে হবে নাকি (একজন আরেকজনের মুখের দিকে থাকাচ্ছে) ড্রয়িংরুমে চেঁচামেচি শুনে আম্মু রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসলো
–তমা তুই (আমাকে দেখে যে ভয় পেয়েছে মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে)
–কেন আমাকে আশা করনি ডিস্টার্ব করলাম তোমাদের
–না মানে
–আম্মু শুনো আমার ভালো রুপ সবসময় দেখো বলে ভেবো না তুমি এসব নোংরা কাজ করলেও আমি শান্তই থাকবো
–তমা ওরা আমার ফ্রেন্ড নোংরা কাজ বলছিস কেন
–কেমন ফ্রেন্ড তাতো বুঝতেই পারছি ভুলে যেয়ো না তোমার ঘরে দুইটা মেয়ে আছে, আর কোনো দিন যদি এসব নোংরা মানুষ এই বাসায় দেখি তাদের আমি জুতাপিটা করবো আর সাথে তোমার ব্যবস্থাও করবো, ভুলে যেয়ো না একদিন আমার জন্য এই বাসায় বউ হয়ে আসছিলা যদি এসব নোংরা কাজে আর থাকো তাহলে আমিই তোমাকে এই বাসা থেকে বের করবো, ভালো হয়ে যাও
–হুম (আমার কথা গুলো শুনে সবাই ভয় পেয়েছে কিন্তু একটা লোক আমার দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে থাকিয়ে আছে আর কিছু না বলে রোমে চলে আসলাম)
ফ্রেশ হয়ে তুলির রোমে গেলাম ও রোমে নেই খুঁজতে খুঁজতে ছাদে গেলাম, তুলি ছাদের ফুল গাছ গুলায় পানি দিচ্ছে
–তুলি
–আপু তুমি কখন আসছ
–একটু আগে
–ড্রয়িংরুমের অবস্থা দেখেছ
–হুম চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে
–হলেই ভালো
–নিচে চল সন্ধ্যা হয়ে গেছে
–হুম চলো
রোম থেকে আর বের হলাম না আম্মুর উপর থেকে রাগ এখনো কমেনি দেখলেই ঝগড়া করবো, রাতে বারান্দায় দারিয়ে আছি শ্রাবন ফোন দিলো
–হ্যালো
–বাসায় তো আসছ এখন দেখা করবা তো এতোদিন তো রিয়াদের বাসা থেকে বেরই হও নি
–হুম কালকে দেখা করবো
–না আজকেই
–আজকে কিভাবে সম্ভব রাত হয়ে গেছে তো
–ঠিক ১১টায় তোমাদের ছাদে এসো
–মানে
–মানে জানতে হবে না আমি অপেক্ষা করবো এসো বলেই ফোনটা কেটে দিল এই পাগলটা কে নিয়ে যে কি করি
১১টার দিকে আম্মু তুলি ঘুমিয়ে পড়লো আমি আস্তে আস্তে ছাদে গেলাম ভয় করছে ও না আসলে ভূতে আজ আমাকে নির্ঘাত মেরে ফেলবে, না পাগলটা এসেছে ফুল গাছের কাছে বসে আছে
–বেলি ফুল বুঝি তোমার পছন্দের ফুল
–হুম আমি যে আসছি বুঝলা কিভাবে আমি তো কথা বলিনি
–তুমি আমার আশে পাশে থাকলেই আমি অনুভব করতে পারি বলেই কয়েকটা বেলি ফুল আমার উপরে ছিটিয়ে দিল
–এই তুমি আমার গাছের ফুল ছিঁড়লে কেন
–এমনি
–আর কখনো ছিঁড়বা না ফুল ছিড়া আমি পছন্দ করি না
–ওকে বাবা আমি আর কোনোদিন ফুল ছিঁড়বো না
বলেই আমার ফিছনে এসে দাঁড়ালো
–পিছনে দাঁড়িয়েছ কেন
–তোমার চুলের ঘ্রাণ নিব তাই
–মানে
–(আর কিছু না বলেই আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো আমার খোলা চুলে মুখ গুজে দিল)
দুজনেই চুপ হয়ে আছি ও চুলের ঘ্রাণ নিচ্ছে আর আমি ভাবছি এই অল্প দিনেই ওকে এতো ভালোবেসে ফেলছি যদি আলাদা হয়ে যেতে হয় থাকবো কিভাবে ওকে ছাড়া, এক মুহূর্তের জন্য ওকে ভুলতে পারি না ওকে ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারি না কি করে পারবো ওকে ছাড়া থাকতে
–শ্রাবন এখন যদি আমার বাসা থেকে বিয়ের কথা বলে
–এখন বললে আমার কিছুই করার থাকবে না
–কেন
চলবে?