জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ১১
এখান থেকে শ্রাবনদের কথা শুনা যাচ্ছে
শ্রাবন: রিয়া ও কাঁদতেছে ওকে ভিতরে নিয়ে আস
রিয়া: ওর আম্মুর কথা মনে পড়ছে কাঁদতে দাও হালকা হবে
শ্রাবণ: হুম
শ্রাবণের আম্মু আসলেন দেখেও ভিতরে গেলাম না ভালো লাগছে না এখন আম্মু পাশে থাকলে জরিয়ে ধরে অনেক কাঁদতাম আমার তো আম্মুই নেই, খুব কান্না পাচ্ছে ইচ্ছে হচ্ছে চিৎকার করে কাদি
আন্টি: কিরে বউমা কোথায়
শ্রাবণ: বারান্দায় দারিয়ে কাঁদতেছে
আন্টি: কাঁদতেছে কেন
শ্রাবণ: ওর আম্মুর কথা মনে পড়েছে
আন্টি আমার কাছে আসলেন আমার দুগালে হাত দিয়ে বললেন
–কিরে মা আমাকে এখনো মা হিসেবে মেনে নিতে পারিসনি
–মেনে নিবো না কেন
–তাহলে কাঁদছিস কেন আমি কি তোর মা না, আমার তো মেয়ে নেই তুই আমার মেয়ে, আমার ঘরে যখন বউ হয়ে যাবি তোকে বাড়ির বউ না মেয়ে করে রাখবো
–(উনাকে জরিয়ে ধরে চিৎকার করে কেঁদে দিলাম আমি তো জানিই না মায়ের ভালোবাসা কেমন ছোট বেলায় নতুন আম্মুর ভালোবাসা একটু পেয়েছিলাম তাও আস্তে আস্তে হারিয়ে ফেলেছি)
–কিরে এভাবে কেঁদেই যাবি আমার ছেলেটা যে কাঁদতেছে দেখেছিস
আন্টির কথা শুনে রোমের ভিতরে থাকালাম রিয়া শ্রাবন দুজনেই কাঁদতেছে, ভিতরে গেলাম
–কাঁদতেছ কেন
–তুমি কাঁদো কেন আমি তোমার চোখের পানি সহ্য করতে পারি না
–ঠিক আছে কাঁদবো না কান্না থামাও
–হুম
–রিয়া তুইও কাদতেছিস পিচ্ছি হয়ে গেছিস
–ভালো করেই জানিস তোর কষ্ট সহ্য হয় না আমার
–হুম (নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে এতো গুলা কাছের মানুষ পেয়ে)
আন্টি: ৪টা বেজে গেছে তোদের কি খাওয়া লাগবে না
শ্রাবন: তুমিই তো দেরি করে আসছ
আন্টি: রাতে তো এখানে থাকতে হবে তাই বাসার কাজ শেষ করে রান্না করে আসতে দেরি হয়ে গেছে, খাবার এনেছি তোরা তিনজন খেয়ে নে
আমি: আন্টি আমি এখন খাবো না ভালো লাগছে না বাসায় গিয়ে গোসল করবো
আন্টি: আমাকে আবার আন্টি ডাকলে রাগ করবো এখন থেকে মা ডাকবি, আর চুপচাপ খেয়ে নে
আমি: ঠিক আছে (এখনি মা ডাকতে হবে কেমন যেন লাগে বিয়ের আগেই শাশুড়ি)
শ্রাবন: তমা তুমি আমাকে খাইয়ে দাও (রাগি চোখে থাকালাম কেমন বোকা মায়ের সামনে খাইয়ে দিতে বলে)
শ্রাবন:আম্মু দেখছ তোমার বউমা আমার দিকে রাগি চোখে থাকায় (মায়ের দিকে থাকিয়ে দেখি উনি হাসতেছেন সাথে রিয়া ফাজিটাও, এই মা ছেলে একরকমই)
মা: আমি বাইরে যাচ্ছি তোরা খেয়ে নে
আমি: বাইরে যেতে হবে কেন আমাদের সাথে খাবেন না
মা: আমি বাসা থেকে খেয়ে এসেছি আর তুই তো লজ্জা পাচ্ছিস আমি বরং বাইরেই যাই
মা বাইরে চলে গেলেন রিয়া এখনো হাসতেছে
–এভাবে হাসছিস কেন লাত্তি খাইতে মন চাইতেছে বুঝি
–আমাকেও কি বাইরে যেতে হবে (আবার হাসতেছে)
–রিয়া হাসি থামা
–ঠিক আছে তাড়াতাড়ি খেয়ে নে বাসায় যেতে হবে তোর আম্মু আজ না জানি কি কান্ড করে
–হুম
ওকে খাইয়ে দিয়ে ওষুধ খাওয়ালাম আমিও খেলাম
–এখন যাই সকালে আসবো
–(চুপ হয়ে আছে)
–মন খারাপ করে রাখছ কেন
–কই, সকালে তাড়াতাড়ি এসো
–ঠিক আছে হাত বেশি নাড়াচাড়া করো না
–হুম
আন্টিকে বলে রিয়া আর আমি বেরিয়ে আসলাম মেয়েটার কেবিনের কাছে গেলাম, মেয়েটির মা আসলেন
–তোমাদের খুঁজেছি পাইনি কোন কেবিনে ছিলে
–পাশেই তো আর সময় পাইনি তাই আসতে পারিনি
–একটা মেয়ে বেবি হইছে আমার মেয়েটার এখনো জ্ঞান ফেরেনি
–চিন্তা করবেন না আল্লাহ কে ডাকুন
–বেবিটা দেখে যাইবা না মা
–হুম চলুন (বেবি টা দেখতে খুব সুন্দর হয়েছে কেমন ড্যাবড্যাব করে থাকিয়ে আছে আমার দিকে হিহিহি, বেবি তো দেখলাম কি দেই এখন এই সোনামণিটা কে গলার চেইনের দিকে নজর পড়লো খুলে বেবির গলায় পড়িয়ে দিলাম)
–আরে মা চেইন দিচ্ছ কেন
–এমন ফুটফুটে বেবি কি এমনি দেখা যায় আর আমি আমার বোনজি কে দিয়েছি আপনার কি
–(উনি হেসে দিলেন)
–আমাদের এখন যেতে হবে সকালে এসে দেখে যাবো আবার
–ঠিক আছে মা তোমাদের উপকারের কথা কখনো ভুলবো না
–উনি তো আমাদের বড় বোনের মতই আমাদের বোন হলেও তো রক্ত দিতাম, আসি দেরি হয়ে যাচ্ছে
–ঠিক আছে
হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে রিক্সায় উঠলাম রিয়া আর আমার বাসা পাশাপাশি তাই একসাথেই যাওয়া যায়
–তমা দেখেছিস শ্রাবন তোকে কতটুকু ভালোবাসে আর ওর মা তো তোকে মেয়ে বানিয়ে ফেলছে এখনি বউমা ডাকে
–হুম কিন্তু আমি কি ওদের এতো ভালোবাসার মর্যাদা দিতে পারবো
–কেন পারবি না
–আম্মু যদি মেনে না নেয় জামেলা করে
–সেটা পরে দেখা যাবে
–হুম
বাসায় আসলাম কলিংবেল চাপতেই আম্মু দরজা খুলে দিলো, আজ আমার কপালে দুঃখ আছে উনার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে
আম্মু: আমি তো ভেবে ছিলাম রাতের আধারে কোনো ছেলের সাথে পালিয়ে গেছিস আমারও আপদ বিদায় হইছে কিন্তু ফিরে আসলি কেন
–আম্মু কি বলছ এসব
–কেন ভুল বললাম নাকি
–ছি আম্মু নিজেরে মেয়েকে এসব বলতে তোমার লজ্জা করে না
–কে আমার মেয়ে তুই আমার মেয়ে না তুই তো একটা অলক্ষি ছোট বেলায় নিজের মাকে খেয়েছিস আর এখন আমার সংসার খাচ্ছিস
–প্লিজ চুপ করো আমি তোমার সংসার খাবো কেন
–তুই এই সংসারের আপদ তুই না থাকলে আমার সংসার অনেক সুন্দর হতো, তোর পিছনে কামুকাই টাকা নষ্ট করতেছে তোর আব্বু
–আমি আব্বুর প্রথম মেয়ে ভুলে যেও না
–হুহ আসছে প্রথম মেয়ে তোকে যেদিন এই ঘর থেকে বের করতে পারবো সেদিন আমি শান্তি হবো
আর কিছু বললাম না কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছি রোমে চলে আসলাম, আম্মুর কথা গুলো কানে বাজতেছে আমি নাকি ছোট বেলায় আম্মুকে খেয়েছি আচ্ছা আম্মু তো এক্সিডেন্ট এ মারা গেছেন এতে আমার কি দোষ, আমি নাকি এই সংসারের আপদ এসব শুনার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো, বিছানায় শুয়ে কাদতেছি শ্রাবন ফোন দিলো
–হ্যালো
–বাসায় পৌঁছেছ
–হ্যা
–তোমার কন্ঠ এমন শুনাচ্ছে কেন তুমি কাদতেছ
–কই না তো
–হুম যাও গোসল করে এসো
–ঠিক আছে রাখি
গোসল করে আসতেই আম্মু আসলো
–রান্না করবে কে
–হুম যাচ্ছি
–কখন রাত ১২টায়
–মাত্র তো ৬টা বাজে
–কয়টা বাজে তোকে দেখতে হবে না রান্না করতে বলছি রান্না কর গিয়ে
–হুম (রান্না করতে চলে গেলাম)
রান্না প্রায় শেষ আম্মু আসলো
–তাড়াতাড়ি এক মগ কপি বানিয়ে দে তো
–দিচ্ছি
কপি বানাচ্ছি আব্বু ফোন দিলেন
–হ্যালো আব্বু
–কিরে বাসায় এসেছিস
–হ্যা অনেক আগেই
–খেয়েছিস কিছু
–হুম
–ঠিক আছে রাখি আমি একটু ব্যাস্ত পরে ফোন করবো
–আচ্ছা
চলবে?