জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ১০
–তোমার ভিতরে যে কয়টা ফাজিল বাস করে আল্লাহ জানেন, চুপ করে খাও আর একটা কথাও বলবানা
–হুম
ওকে খাইয়ে দিয়ে ওষুধ খাওয়ালাম
–এখন একটু ঘুমাও
–না
–কেন
–তোমাকে দেখব
–এখনি ঘুমাও নাহলে আমি বাসায় চলে যাবো
–ঠিক আছে ঘুমাচ্ছি ঘুম থেকে উঠে যেন তোমাকে দেখি
–ঠিক আছে
পাগলটা ঘুমিয়ে পড়েছে আমি কেবিন থেকে বেরিয়ে হাসপাতাল ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম, হাসপাতাল আমার ভালো লাগে না তাও সময় কাটানোর জন্য ঘুরে ঘুরে দেখছি, কেউ কাঁদতেছে কেউ হাসতেছে কেউ যন্ত্রণায় চটপট করতেছে এটাই হাসপাতাল, আমি কারো কান্না সহ্য করতে পারি না তাই হাসপাতাল ভালো লাগে না, হঠাৎ চোখ পড়লো একটা কেবিনে কয়েকজন মানুষ কাদতেছে আর বেডে শুয়া একটি মেয়ে সবার দিকে চেয়ে মৃদু হাসতেছে, হাসিটা যে জোর করে ঠোটের কোনে ফুটিয়েছে তা বুঝাই যাচ্ছে, মেয়েটির কি হয়েছে জানতে ইচ্ছে হলো তাই সেই কেবিনে গেলাম, গিয়ে দেখলাম মেয়েটি প্রেগন্যান্ট সম্ভবত ডেলিভারির জন্য হাসপাতালে আনা হয়েছে, একজন মহিলাকে জিজ্ঞেস করলাম
–আন্টি উনার কি হয়েছে
–ডেলিভারির জন্য রক্ত প্রয়োজন, রক্ত না পেলে হয় বাচ্চাটি মারা যাবে নাহয় আমার মেয়েটি (বুঝলাম উনি মেয়েটির মা)
–উনি হাসতেছেন কেন
–ডক্টর বলেছে ১ঘন্টার ভিতরে রক্ত জোগাড় না করতে পারলে যে কোনো একজন কে বাঁচাতে পারবে, আমার মেয়েটি ডক্টর কে বলেছে বাচ্চাটা বাঁচাতে, ও হাসতেছে ওর বাচ্চাটা পৃথিবীর আলো দেখবে এই খুশিতে আর আমি কাদতেছি আমার একমাত্র মেয়েটি পৃথিবী থেকে বিদায় নিবে এই কষ্টে
–(হায়রে মা জাতী নিজে মারা যাবে তাও কষ্ট নেই মনে বাচ্চাটি পৃথিবীতে আসবে এই খুশিতে মৃত্যুর মুখে থেকেও হাসতেছে)
আন্টি রক্ত কি জোগাড় হয়নি
–চার ব্যাগ রক্ত প্রয়োজন দুই ব্যাগ জোগাড় হইছে আর দুই ব্যাগ পাওয়া যাচ্ছে না
–আচ্ছা উনার রক্তের গ্রুপ কি
— O-
–আমার রক্তের গ্রুপও তো O-
আন্টি কাঁদবেন না আমি আপনার মেয়েকে রক্ত দিব
–সত্যি দিবা মা
–হ্যা
আমার একটু রক্তের জন্য যদি একজন মানুষ বেচে যায় রক্ত দিতে দোষ কি, মেয়েটি বেচে গেলে তো বাচ্চাটি আর আমার মতো মা হারা হবে না, আন্টিকে নিয়ে ডক্টর এর কাছে গেলাম
–ডক্টর আমি উনার মেয়েকে রক্ত দিব আমার রক্তের গ্রুপ O-
–কিন্তু উনার তো আরও দুই ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন
–সমস্যা নেই আমিই দুই ব্যাগ দিব
–পাগল হয়েছেন আপনার শরীরের যা অবস্থা দুই ব্যাগ রক্ত দিলে আপনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন
–অসুস্থ হবো মারা তো যাব না বাচ্চাটি তো মা হারা হবে না
–দেখুন আমরা একজন রোগী কে বাঁচাতে গিয়ে আর একজন কে বিপদে ফেলতে পারবো না, আপনার শরীর থেকে আমরা এক ব্যাগ রক্ত নিতে পারবো
–প্লিজ ডক্টর বুঝার চেষ্টা করুন
–সরি আমাদের কিছু করার নেই
ডক্টর কে কোনো ভাবেই বুঝাতে পারলাম না এখন কি করবো আমার মতো বাচ্চাটি মা হারা হউক আমি চাই না, মেয়েটির মা আবার কান্না শুরু করেছেন কি করবো বুঝতে পারছি না একটা চেয়ারে গিয়ে বসলাম, আমারও এখন কান্না পাচ্ছে একি রক্তের গ্রুপ হয়েও আমি মেয়েটিকে বাঁচাতে পারবো না, হঠাৎ মনে পড়লো রিয়া একদিন বলেছিলো আমাদের দুজনের রক্তের গ্রুপ এক তাড়াতাড়ি ওকে ফোন দিলাম
–হ্যালো
–রিয়া তোর রক্তের গ্রুপ কি
–তোকে তো একদিন বলছিলাম আমাদের দুজনের রক্তের গ্রুপ এক O-
–১০মিনিট এর ভিতরে হাসপাতালে আয় একজন কে রক্ত দিতে হবে
–কাকে
–এসব পরে বলবো তুই ১০মিনিট এর ভিতরে আয় আমি শ্রাবণের কেবিনের সামনে তোর জন্য অপেক্ষা করছি
–ঠিক আছে আসছি
যাক শেষ পর্যন্ত মেয়েটিকে বাঁচাতে পারবো, তাড়াতাড়ি মেয়েটির মায়ের কাছে গেলাম
–আন্টি রক্তের ব্যবস্থা হয়েছে আর কাঁদবেন না প্লিজ
–কে দিবে
–আমার ফ্রেন্ড আর আমি ও আসছে ১০মিনিট লাগবে
–আমার মেয়েটা বাঁচবে তো (আমার হাত ধরে)
–আমরা তো রক্ত দিব এখন আল্লাহ কে ডাকুন
–আমার একমাত্র মেয়েটার কিছু হলে আমি কি নিয়ে বাঁচবো
–কিচ্ছু হবে না সব ঠিক হয়ে যাবে আন্টি আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন, একটু অপেক্ষা করুন আমি ওকে নিয়ে আসছি
–ঠিক আছে
আমি শ্রাবণের কেবিনে গেলাম ও ঘুমিয়ে আছে চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে মুখটা অনেক মায়াবী লাগছে, ওর পাশে গিয়ে বসলাম চুল গুলায় আলতো করে হাত বুলালাম
রিয়া: ওলে বাবালে এখনি এতো ভালোপাশা
আমি: কখন আসলি
–এখনি এসেই আপনার রোমান্স দেখলাম
–চুলে হাত বুলানো টাও রোমান্স
–তো কি
–পরে শিখাবো আপনাকে এখন চল আগে রক্ত দিয়ে আসি
–কাকে বলবি তো
–পরে সব বলবো আগে রক্ত দিয়ে আসি
–ওকে চল
একজন নার্স কে ডেকে বললাম শ্রাবণ কে দেখে রাখতে আর আমাকে খুঁজলে যেন বলে পাশেই আছি তাড়াতাড়ি চলে আসবো, রিয়াকে নিয়ে ডক্টরের চেম্বারে গেলাম একজন নার্স এসে আমাদের নিয়ে গেলো, জীবনের প্রথম রক্ত দিচ্ছি আল্লাহ জানেন কি হয় আমি তো সূচ বেশি ভয় পাই
ভালো ভাবেই রক্ত দিলাম হাতটা একটু ব্যাথা করছে শুধু, রিয়া আর আমি মেয়েটার কেবিনের সামনে গেলাম সবাই ব্যাস্ত এখন অপারেশন শুরু হবে, মেয়েটার মা আসলেন
আন্টি: মা এখন তো অপারেশন হবে তুমি থাকবা আমার মেয়েটা তোমাকে দেখতে চাইছে
আমি: পাশের কেবিনে আমাদের রোগী আছে আমি ওখানেই আছি পরে এসে দেখে যাবো
আন্টি: ঠিক আছে মা
রিয়া আর আমি চলে আসলাম, রিয়াকে সব বললাম, এসে দেখি শ্রাবণ রাগে বেলুনের মতো ফুলতেছে
–ঘুম থেকে কখন উঠেছ
–তোমার জানতে হবে না
–রেগে আছ কেন
–কই গেছিলা
–পাশের কেবিনে
–কেন
–একটা মেয়ে অসুস্থ রিয়া আর আমি দুজন মিলে রক্ত দিয়ে আসছি
–রক্ত দেয়ার মতো কি এই দুনিয়ায় আর কেউ ছিল না তোমাকেই দিতে হলো কেন
–আর কাউকে পাওয়া যাচ্ছিলো না তাই
–যদি তোমার কোনো ক্ষতি হয়
–রক্ত দিলে ক্ষতি হবে কেন
–তাও ভয় করে
–কিছু হবে না আর যদিও হয় একটু অসুস্থ হবো বাচ্চাটা তো আর মা হারা হবে না, মা না থাকার যন্ত্রণা আমি জানি আমি চাই না ছোট বাচ্চাটি এই যন্ত্রণা পাক
–হুম
আম্মুর কথা মনে পড়ে গেলো দুচোখ বেয়ে পানি ঝরছে কেবিন থেকে বেরিয়ে বারান্দায় গিয়ে দারালাম, আম্মু নাকি এক্সিডেন্ট এ মারা গেছেন অপারেশন এর জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন ছিল আব্বু টাকা জোগাড় করতে পারেন নি তাই আম্মু না ফেরার দেশে চলে গেছেন, সেই সময় যদি কেউ আব্বুকে একটু সাহায্য করতো তাহলে হয়তো আম্মু আজ বেচে থাকতো আমিও মা হারা হতাম নাহ……
চলবে?