জীবনের_ডায়েরি
পার্ট:২
দেখতে দেখতে আমার পরিক্ষা চলে আসলো, আজ প্রথম পরিক্ষা আম্মুর কথা খুব বেশি মনে পড়ছে আজ, আব্বু আমাকে একটা কলম গিফট করেছেন খুব সুন্দর কলমটা, আব্বু আজ আমাকে স্কুলে নিয়ে গেলেন, পরিক্ষা অনেক ভালো হয়েছে তাই অনেক খুশি লাগছে
রাতে পড়তেছি তুলি এসে ডাক দিলো খাওয়ার জন্য, গিয়ে দেখি আব্বু বসে আছেন আমার জন্য, খাওয়ার ফাকে আব্বু জিজ্ঞেস করলেন—
আব্বু: কিরে মা পরিক্ষা কেমন হলো
আমি: অনেক ভালো আব্বু
আব্বু: শুনো তমার আম্মু তমার যতো দিন পরিক্ষা থাকবে ততো দিন ওকে কেউ কোনো কিছুর জন্য ডিস্টার্ব করবা না (আব্বু হয়তো আম্মুর অত্যাচার গুলো বুঝতে পারছেন)
আম্মু: এতো বলে দিতে হবে না
আব্বু: বলার প্রয়োজন পড়েছে বলেই তো বললাম মনে রেখো সব কিছুর আগে আমার মেয়ে দুইটা
আম্মু: হুম
বিছানায় শুয়ে ভাবছি আব্বু আমাকে কতো ভালোবাসে আজ যদি আম্মু বেচে থাকতো আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ হতাম, এখনো আমি সুখী এমন আব্বু কয়জনের আছে
দেখতে দেখতে পরিক্ষা শেষ হয়ে গেলো, রাতে শুয়ে আছি আর আম্মুর কথা ভাবতেছি তুলি এসে খাওয়ার জন্য ডাকলো, খাওয়ার ফাকে আব্বু বললেন—-
আব্বু: এখান থেকে আমাকে ট্রান্সফার করা হয়েছে (কথাটা শুনে বুকটা ধুক করে উঠলো আব্বু চলে গেলে আমি থাকবো কিভাবে)
আম্মু: আমাদের কে সাথে নিয়ে যাবা নাকি
আব্বু: যেখানে ট্রান্সফার করা হয়েছে জায়গাটা তেমন ভালো না তাছাড়া তমা আর তুলির পড়ালেখার ক্ষতি হবে তাই তোমাদের নিবো না, তোমরা এখানেই থাকো আমি প্রতি সপ্তাহে দু দিনের জন্য আসবো
আম্মু: ঠিক আছে তুমি চিন্তা করো না আমরা থাকতে পারবো
আব্বু: তমা কিছু বলছিস না যে তোর কোনো সমস্যা হবে না তো
আমি: না আব্বু তুমি চিন্তা করো না আমরা থাকতে পারবো আমার কোনো সমস্যা হবে না আম্মু আছেন তো
আব্বু: কোনো সমস্যা হলে আমাকে সাথে সাথে ফোন করে জানাবি
আমি:আচ্ছা (মুখে তো বললাম আচ্ছা কিন্তু ভিতর ফেটে তো কান্না আসছে আম্মু নাই এখন আব্বুও কাছে না থাকলে থাকব কি ভাবে)
বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছি আব্বু অফিসে থাকলে আম্মু কতো অত্যাচার করে আর এখন তো আমার স্কুল নেই রেজাল্ট দিতে অনেক দেরি আব্বু না থাকলে আম্মু সারা দিন অত্যাচার করবে পারবো তো এতো অত্যাচার সহ্য করতে, আব্বুকে তো কিছু জানানো যাবে না বাসায় জামেলা হবে আমি চাই না আমার জন্য আব্বু আম্মুর মধ্যে ঝগড়া হউক
আব্বু কাল চলে যাবেন খুব কষ্ট হচ্ছে ঘুম আসছে না তাই আম্মুর ছবিটা ড্রয়ার থেকে বের করলাম, যখন খুব বেশি মনে পড়ে আম্মুর কথা তখন ছবিটা দেখি, আম্মুর ছবিটা বুকে জরিয়া ধরে অনেক কাঁদলাম কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ছি বুঝতেই পারিনি
সকালে আব্বুর ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো
— মা ভিতরে আসি
–আস আমার কাছে অনুমতি লাগে বুঝি
–না তারপরও, কিরে তোর চোখ ফোলা কেন
–বেশি ঘুমিয়েছি তো তাই
–মিথ্যে বলে কি লাভ মা, আমি বুঝিরে মা সব কি করবো বল তোর কথা ভেবেই তো বিয়েটা করতে হলো কিন্তু তোকে মা দিতে পারলাম না
–কে বললো দিতে পারনি আম্মু আব্বু বোন সবই তো আছে আর কি চাই
–তোর আম্মু তো আর আগের মতো নেই
–চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে
–হুম তাই যেন হয়, ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে আয় একটু পর চলে যাবো
–তুমি যাও আসছি
ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে গেলাম কিন্তু গলা দিয়ে কিছুই নামলো না মাথায় শুধু একটাই ভাবনা আব্বুকে ছাড়া থাকবো কিভাবে
রোমে বসে আছি একটু পর আব্বু চলে যাবেন কিছুই ভালো লাগছে না চোখ দুইটা যেন আজ সাগর হয়ে গেছে পানি পড়া থামছেই না, এমন সময় আব্বু এসে ডাক দিলেন তাড়াতাড়ি চোখ মুছে আব্বুর কাছে গেলাম
–এই নে এখানে পাঁচ হাজার টাকা আছে তোর খরচার জন্য
–আমি এতো টাকা দিয়ে কি করবো
–রেখে দে কাজে লাগবে আর কোনো সমস্যা হলে আমাকে সাথে সাথে জানাবি
–আচ্ছা
–প্রতিদিন একবার হলেও আমাকে ফোন করবি আর ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করবি
–আচ্ছা আমার জন্য চিন্তা করো না নিজের খেয়াল রেখো
–হুম
আব্বু চলে গেলেন এক সপ্তাহ পর পর আসবেন তাও মনে হচ্ছে অনেক দূরে চলে যাচ্ছেন, জানিনা সামনের দিন গুলোতে কি অপেক্ষা করছে আমার জন্য
সারা দিন রোমে বসেই কাটিয়ে দিলাম, রাতে খাওয়ার সময় আম্মু বললেন
–তমা একটা কথা বলতে চাইছিলাম যদি তোর আব্বুকে না বলিস
–কি কথা বলো আব্বুকে বলবো না
–বাসায় আমি আছি তুই আছিস মাত্র তিন জনের রান্নাবান্না বাসায় তো তেমন কাজও নেই কাজের লোক থেকে কি হবে যে কাজ গুলা আছে আমরা দুজন মিলেই করতে পারবো
–হুম তোমার ইচ্ছা (মুখে বলছে দুজন মিলে করবো কিন্তু করতে তো হবে আমাকেই একা)
–হ্যা এই ফাকে তোরও রান্নাবান্না শিখা হয়ে যাবে
–হুম (কাজের খালা আমার দিকে চেয়ে আছেন আর আচল দিয়ে চোখ মুছছেন)
–বুয়া তুমি কাল চলে যেয়ো কোনো দরকার হলে তোমাকে ফোন করবো
–আচ্ছা
রাতে কাঁদতে কাঁদতেই ঘুমিয়ে পড়লাম, সকালে তুলির ডাকে উঠলাম ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে এসে বারান্দায় দারিয়ে আছি এই সময় কাজের খালা আসলেন,
–মা আসবো
–আস খালা অনুমতি লাগে নাকি
–তোমার মা তোমার মতই ভালো মনের মানুষ ছিল কিন্তু আল্লাহ কি থেকে কি করে ফেললেন
–খালা আজ চলে যাবা
–আমার যাওয়ার ইচ্ছে নেই মা তোমাকে সেই ছোট থেকে লালন-পালন করেছি এই অত্যাচার এর মাঝে তোমাকে একা ফেলে কই যাবো আর তুমি কি এতো কাজ করতে পারবা
–চিন্তা করো না খালা সব শিখে নিবো আস্তে আস্তে
–মা তোমার নাম্বারটা দিবা মাঝে মাঝে ফোন করবো
–হুম (নাম্বার দিলাম)
–মা কোনো সমস্যা হলেই আমাকে জানাইবা কিছু করতে না পারলেও তোমার দুঃখের সময় পাশে থাকবো
–আচ্ছা জানাবো
আজ খালা ও চলে গেলেন উনি তো সেই ছোট থেকেই আমার দেখাশুনা করেছেন আম্মু মারা যাবার পর উনার কাছেই থাকতাম আজ উনিও চলে গেলেন আমি খুব একা হয়ে গেলাম
বিকেলে ছাদে গিয়ে বসে রইলাম কিছু ভালো লাগছে না আব্বুকে ফোন দিলাম
–হ্যালো আব্বু বাসায় পৌঁছেছ
–এইতো আসলাম মাত্র তুই কি করিস
–ছাদে বসে আছি, আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নাও তারপর ফোন দিও
–আচ্ছা
ফোন রেখে বসে আছি এই সময় তুলি আসলো, তুলি এখন তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে, আর আমাকে অনেক ভালোবাসে আমিও অনেক ভালবাসি একটাই তো বোন
–আপু কি করো
–কিছুনা বসে আছি তুইও বস
–আচ্ছা আপু আম্মু আমাকে ভালোবাসে কিন্তু তোমাকে ভালোবাসে না কেন তুমিও তো আম্মুর মেয়ে—–
চলবে?