#জীবনের থেকেও বেশি
#পর্বঃ১৮(শেষ পর্ব)
#লেখাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
তামিম অস্থির কন্ঠে নিলয়কে বলে উঠলো “আমার জান কোথায় কোথায় ও?”
নিলয় তামিমকে শান্ত করাতে করাতে বলল “ঐশীর অপারেশন চলছে”
নিলয়ের কথার মাঝেই ডাক্তার বেরিয়ে এলো। তামিম দৌড়ে ডাক্তারে কাছে গিয়ে বলল
“ডাক্তার আমার জান কেমন আছে! কি অবস্থা ওর?”
ডাক্তার বললেন “ব্লাড লাগবে কিন্তু ব্লাড না হলে রোগী মা..!”
তামিম চিৎকার দিয়ে বলল “না এটা কখনো হতে পারেনা। আমি দিব ব্লাড।”
ডাক্তার বললেন “কিন্তু আপনার শরীর তো দুর্বল। এখন ব্লাড দিলে আপনার সমস্যা হতে পারে।”
তামিম বলল “হক আমি যদি মরেও যাই আফসোস নেই। কিন্তু আমার জানকে বাঁচান ডাক্তার।”
ডাক্তার বাধ্য হয়ে তামিমের থেকেই রক্ত নিলো। একমাস আগেই তামিম একবার ব্লাড দিয়েছে। ব্লাড দিয়ে তামিমের মাথাটা ঝিম ধরে আছে। তবুও সে বসে আছে অপারেশন থিয়েটারের সামনে। কিন্তু বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারলো। আবার জ্ঞান হারালো সে।
———————-
কেটে গেল একটা বছর। ঐশী যমজ ছেলে মেয়ে হয়েছে। মেয়ের নাম রেখেছে ইশিতা আর ছেলের নাম তাফসির। আজ তাহিয়ার গায়ে হলুদ। ঐশী একটা কাঁচা হলুদ রঙের শাড়ি পরে সোফায় বসে আছে মুখ গোমড়া করে। কারণ সে তামিমকে বেলি ফুলের মালা আনতে বলেছিলো অনেকক্ষণ আগে। কিন্তু তার কোনো খোঁজ নেই। ঐশী ঠোঁট উল্টিয়ে রেখেছে। ঐশীর এমন অবস্থা দেখে তামিম ফিক করে হেসে দিলো। ঐশীকে আয়নার সামনে দাড় করিয়ে ওর খোপায় বেলি ফুলের মালা পরিয়ে দিলো। ঐশী গাল ফুলিয়ে ঠোঁট উল্টিয়ে বলল
“এতো দেরি হলো কেন আপনার। আমি কতক্ষণ ধরে আপনার জন্য অপেক্ষা করছি জানেন।”
তামিম ঐশীর খোপায় ফুল পরিয়ে দিয়ে ঐশীর গাল টেনে বলল “সরি জান আসলে বিয়ে বাড়ির ব্যস্ততা বুঝতেই তো পারছ।” তামিম কান ধরে বাচ্চাদের মতো করে বলল এবারের মতো মাফ করে দেও।
ঐশী তামিমের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিলো। ঐশী বলল “হয়েছে আমি ইশিতাকে রেডি করিয়ে দিচ্ছি। আপনি দেখেন তো তাফসির কোথায় গেল।”
তামিম বলল “সে আর কোথায় থাকবে হয় তো নিলয়ের কাছে আছে।”
নিলয়ের নাম শুনে ঐশীর মনটা খারাপ হয়ে গেল। ঐশী ইশিতাকে তার সেম হলুদ রঙের লেহেঙ্গা পরিয়ে দেয়। তাফসির কেউ তামিমের মতো সেম পাঞ্জাবি পরিয়ে দিয়েছে। ঐশী ইশিতাকে কোলে নিয়ে তাহিয়ার রুমে চলে গেল। ঐশী দেখলো ঐশী হলুদ শাড়ি আর কাচা ফুলের গহনা পরে বসে আছে। মেয়েটার চোখ মুখ ফুলে আছে। বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকে কান্না করছে সে। সে যে নিলয়কে অসম্ভব ভালোবাসে। যখনই মনে হচ্ছে তাকে অন্য কারো জন্য বউ সাজতে হবে ভাবতেই মনের ভিতরটা দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে। ঐশী তাহিয়ার কাছে যেতেই তাহিয়া ঐশীকে জরিয়ে ধরে হুহু করে কেঁদে উঠলো।
ঐশী তাহিয়াকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল “আল্লাহর উপর ভরসা করো তাহিয়া। এখনো অনেক সময় আছে।”
তাহিয়া বলল “ভাবি আমি যে পারছিনা। আমি নিলয়কে ছাড়া বাঁচতে পারবো না।”
ঐশী বলল “হয়েছে কান্না করো না ওনি দেখলে মন খারাপ করবে।”
তাহিয়া চোখ মুছে নিলো।
তামিম আশেপাশে নিলয়কে খুঁজে না পেয়ে একটু নিড়িবিলি জায়গায় যেতেই নিলয়কে দেখতে পায় তাফসিরকে কোলে নিয়ে। মুখটা গম্ভীর তার। মনে হচ্ছে গভীর চিন্তায় আছে। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। তামিম একটা মুচকি হাসি দিয়ে নিলয়ের কাছে গিয়ে ওর পাশে বসে বলল “কিরে কি হয়েছে এমন করে বসে আছিস কেন!”
নিলয় জোরপূর্বক একটা হাসি দিয়ে বলল “তেমন কিছু ভালো লাগছিলো না তাই এখানে বসে ছিলাম।”
তামিম নিলয়ের থেকে তাফসিরকে নিয়ে বলল “দেখ তো তাহিয়ার কি অবস্থা আর কতক্ষণ লাগবে।”
নিলয় বলল “আমি যাবো”
তামিম বলল “হুম তুই যাহ তো আমি একটু বসি।”
নিলয় কিছু না বলে হেলেদুলে তাহিয়ার রুমে আসতেই ঐশী রুম থেকে চলে গেল।তাহিয়া কান্না ভেজা চোখে নিলয়ের দিকে তাকালো। তাহিয়ার এমন দৃষ্টিতে যেন নিলয় আতকে উঠলো। তাহিয়া দৌড়ে এসে নিলয়ের পাঞ্জাবীর কলার ধরে বলল
“ওই তুই কেমন মানুষ নিজের প্রিয় মানুষকে কিভাবে অন্যজনের হাতে তুলে দিচ্ছিস। লজ্জা করে না তোর আবার বড় মুখ করে হেসে হেসে আমার সামনে এসে ঢং করছিস।” তাহিয়া হুট করে নিলয়ের ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলো। নিলয় আগের মতোই পাথর হয়ে দাড়িয়ে আছে। তাহিয়া রীতিমতো কামুড় দিচ্ছে নিলয়ের ঠোঁটে। কিন্তু নিলয়ের কোনো হেলদোল নেই। নিলয়ের ঠোঁট কেটে রক্ত বের হচ্ছে। হঠাৎ তাহিয়া খেয়াল করলো নিলয়ের চোখের কোণ বেয়ে পানি গরিয়ে পরছে।
তাহিয়া নিলয়কে ছেড়ে দিয়ে উল্টো পাশ ঘুরে চিল্লিয়ে বলে উঠলো “চলে যাও এখান থেকে। আমি আর তোমাকে দেখতে চাইনা আমার চোখের সামনে।”
নিলয় একটা কষ্টমাখা হাসি দিয়ে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে ঠোঁটের রক্ত মুছে রুম থেকে চলে গেল।
হলুদের অনুষ্ঠান শেষ কিন্তু নিলয়কে আর দেখতে পায়নি তাহিয়া। ওর চোখ শুধু খুজছে নিলয়কে। অনুষ্ঠান শেষে তাহিয়া রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিলো। দরজার সাথে পিঠ লাগিয়ে নিচে বসে পরলো ও। হাটুতে মুখ গুজে কান্না করতে লাগলো ও।
নিলয় সেই তখন থেকে ছাদে এসে দাড়িয়ে আছে আকাশের দিকে তাকিয়ে। মনটা যে তার খুব খারাপ। তার বুকে যে রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে। আচ্ছা এই রক্ত ক্ষরণ কি কখনো কমবে। নাকি আজীবন বয়ে নিতে হবে এই ক্ষত।
ঐশী ক্লান্ত শরীরে রুমে প্রবেশ করে দেখল তামিম বেডে আধশোয়া অবস্থায় শুয়ে আছে বুকে ইশিতা ঘুমিয়ে আছে। আর পাশে তাফসির ঘুমিয়ে আছে। ঐশী মুচকি হেসে ওয়াশরুমে চলে গেল ফ্রেস হতে। তামিম ইশিতাকে আলতো করে বেডে শুয়ে রেখে বারান্দায় চলে গেল। ঐশী ফ্রেস হয়ে এসে বারান্দায় চলে গেল। সে তামিমের পাশে দাড়িয়ে বলল
“আচ্ছা এই বিয়েটা দেওয়া কি ঠিক হচ্ছে!”
তামিম মুচকি হেসে বলল “অবশ্যই যাইহোক চলো এখন ঘুমাই অনেক ক্লান্ত লাগছে। আবার কাল তো অনেক কাজ।”
ঐশী আর কোনো কথা বলল না। তারও ভালো লাগছে না। ঐশীও তামিমের সঙ্গে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পরলো।
কাজী সাহেব বসে আছেন সামনেই তাহিয়া বসা। কান্নাকাটি করে চোখের কাজল লেপটে গিয়েছে। নিলয় তামিমের পাশে মন মরা হয়ে দাড়িয়ে আছে। তামিম হুট করে নিলয়কে ধরে তাহিয়ার পাশে বসিয়ে দিলো। নিলয় অবাক হয়ে বলল “আমি কেন বসবো!” তামিম মুচকি হেসে নিলয়ের পিঠে চাপর দিয়ে বলল “বউয়ের পাশে জামাই বসবে নাতো কে বসবে।”
নিলয় বলল “মানে”
তাহিয়া অবাক হয়ে হা করে তামিমের দিকে তাকালো।
তামিম বলল “তোরা কি মনে করেছিস আমি কিছু জানি না। আমি সব জানি। আর তোরা দুইজন কষ্ট পাবি আর আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখব। কাজী সাহেব বিয়ে পরান তো।”
নিলয় ছলছল নয়নে তামিমের দিকে তাকিয়ে তামিমকে জরিয়ে ধরলো। নিলয় আর তাহিয়ার বিয়ে হয়ে গেল। সবাই মিলে বসে গল্প করছে এমন সময় ঐশী ফারাবি দেখলো ওর দিকে এগিয়ে আসছে। ফারাবি এসে তামিমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মুচকি হেসে বলল “কি অবস্থা ব্রো; কেমন চলছে দিনকাল?”
তামিম মুচকি হেসে বলল “আলহামদুলিল্লাহ্ তা আপনার কি অবস্থা?”
ফারাবি বলল “আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো।” ফারাবি এবার ঐশীর দিকে তাকিয়ে বলল “তুমি ঠিক বলেছ আমরা যখন কাউকে ভালোবাসি তখন যদি তাকে না পাই। তাহলে আমাদের যে ভালোবাসে তাকে আপন করে নেওয়াই শ্রেয়। তোমার কথা অনুযায়ী আমি বিয়ে করে নিয়েছি তোমার বান্ধবীকে যেটাতে আমাকে একজন সাহায্য করেছে। সে কে জানো।”
ঐশী প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল “কে সে!”
ফারাবি মুচকি হেসে বলল “তামিম; যাইহোক ধন্যবাদ অনেক অনেক ধন্যবাদ মিস্টার এন্ড মিসেস চৌধুরী।”
ঐশী হেসে দিলো। ফারাবি চলে গেল। ঐশী তামিমের দিকে তাকিয়ে বলল “আপনি ওনাকে সাহায্য করেছেন মানে।”
তামিম বলল “তেমন কিছু না। বাদ দেও এসব।” তামিম এবার ঐশীর কোমর জরিয়ে ধরে বলল “ভালোবাসি জান অনেক বেশি ভালোবাসি নিজের জীবনের থেকেও বেশী ভালোবাসি।”
ঐশী একটা মুচকি হাসি দিলো।
#সমাপ্ত