#জীবনের থেকেও বেশি
#পর্বঃ১৭
#লেখাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
ঐশী এখন খুব বিরক্ত তামিমের কাজে। ঐশী বেডে বসে মুখ কুচকে ফল খাচ্ছে। এগুলো খেতে একদম বিরক্ত লাগছে। কিন্তু তার মহারাজ তো এতো সহজে ছেড়ে দিবে না। তামিম অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে। ঐশী কোনোমতে ফলগুলো খেয়ে নিলো। কিন্তু দুধ খাবে না সে। সে তো আগে থেকেই দুধ পছন্দ করে না। আর এখন তো তার পছন্দের জিনিসই খেতে মন চায় না। ঐশী কপাল কুচকে দুধের গ্লাসের দিকে তাকিয়ে আছে। আর নাক সিটকাতে থাকে। তামিম আয়নাতে চোখ রেখে ঐশীর দিকে তাকিয়ে বলল
“মুখভঙ্গি এরকম করে লাভ নাই। ওটা তো তোমাকে খেতেই হবে জান।” তামিম এবার ঐশীর পাশে বসে দুধের গ্লাসটা ঐশীর মুখে সামনে নিতেই ঐশী চোখ মুখ কুচকে ফেলল।
তামিম জোর করে ঐশীকে খাওয়াতে নিলেও ও গলগল করে বমি করে দিলো তামিমের গায়ে। এটা নতুন কিছু না ঐশী এই কাজটা প্রতিদিনই করে। তামিম ঐশীকে ফ্রেস করিয়ে নিজেও ফ্রেস হয়ে নিলো। ঐশী বাঁচাদের মতো তামিমের গলা ধরে বলল
“আমাকে একটু ঘুরতে নিয়ে যাবেন। অনেকদিন কোথাও যাইনি। বেশিক্ষণ না অল্পসময়ের মধ্যেই চলে আসবো প্রমিস।”
তামিম চোখ ছোট ছোট করে ঐশীর দিকে তাকিয়ে কিছুটা ভেবে বলল “ঠিক বিকেলে রেডি থেকো পাশের পার্কে ঘুরতে যাবো।”
ঐশী খুশি হয়ে তামিমের গালে টুক করে কিস দিয়ে দিলো।
বিকেলে ঐশী একটা নীল শাড়ি পড়ে রেডি হয়ে নিলো। চোখে গাড় করে কাজল দিলো। হাতে একগুচ্ছ কাচের চুড়ি। ঠোঁট হালকা গোপালি লিপস্টিক দিলো। তার চুলগুলো ছেড়ে দিলো। তামিম অপেক্ষা করছে বাড়ির বাহিরে। গাড়িতে হেলান দিয়ে। তামিমের পরনে নীল পাঞ্জাবি আর ব্লক জিন্স। ঐশী তামিমের সামনে গিয়ে দাড়ালো। তামিম ঐশীকে এই রকম অবস্থায় দেখে হার্টবিট মিস করলো। একদৃষ্টিতে ঐশীর দিকে তাকিয়ে থেকে গাড়ি থেকে টুকটুকে একটা লালগোলাপ বের করে ঐশীর কানে গুজে দিলো।
ঐশী আর তামিম বসে আছে পার্কে। তামিম ঐশীকে বলল “বাদাম খাবে জান”
ঐশী হ্যাঁবোধক মাথা নাড়ালো। তামিম চলে গেল বাদাম আনতে। ঐশী বসে পা নাড়াতে লাগলো। হঠাৎ একটা গম্ভীর কন্ঠে পাশ ঘুরে তাকালো ঐশী। সে দেখলো ফারাবি দাড়িয়ে আছে উস্কোখুস্কো হয়ে। ঐশী ফারাবিকে দেখে অবাক হয়ে গেল। কারণ ফারাবি অনেক ফিটফাট একটা ছেলে। ঐশী অবাক হয়ে বলল
“একি স্যার আপনি। আপনি এই অবস্থা কেন?”
ফারাবি কষ্টমাখা একটা হাসি দিয়ে বলল “ভালোবাসা না পেলে তো এমনি হবে। আর আমাকে গোছানোর মানুষ যে আমার হবে না।”
ঐশী বুঝতে পারলো। ঐশী একটা মুচকি হেসে বলল “যখন আপনি কাউকে ভালোবাসার পর তাকে পাবেন না। তখন আপনাকে যে ভালোবাসে তাকে আপন করে নিন।”
ফারাবি প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে ঐশীর দিকে তাকিয়ে বলল “মানে”
ঐশী বলল “আমার ফ্রেন্ড সুপ্তি আপনাকে অনেক ভালোবাসে।”
ওদের কথার মাঝে তামিম চলে এলো চোখ ছোট ছোট করে ফারাবির দিকে তাকিয়ে ঐশীকে উদ্দেশ্য করে বলল “কে উনি তুমি কি ওনাকে চেনো!”
ঐশী বলল “ওনি আমার ভার্সিটির স্যার।”
তামিম ও মুচকি হাসি দিয়ে হাত মিলালো তার সঙ্গে। ফারাবিও সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে টুকটাক কথা বলে চলে গেল। তামিমের কাধে মাথা রেখে বসলো ঐশী। তামিম এবার ঐশীকে বলল
“ছেলেটা তোমাকে সত্যি ভালোবেসেছে।”
ঐশী বলল “আপনি কিভাবে বুঝলেন।”
তামিম মুচকি হাসলো। ঐশীর ও কেন যেন কথা বাড়াতে মন চাইলো না তাই সেও আর কিছু বলল না।
—————–
কেটে গেল আরও কিছু মাস। ঐশীর এখন নয়মাস চলছে। তামিম এখন আর অফিস যায় না। ঐশীর পাশে বসে থেকেই ল্যাপটপে কাজ করে। ঐশী এখন আগের থেকে অনেক গুলুগালু হয়ে গিয়েছে। ঐশী তামিমের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরলো।
তামিম মুচকি হেসে ল্যাপটপটা বন্ধ করে বেড সাইট টেবিলে রেখে ঐশী মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। ঐশী চোখ বন্ধ করে রেখেছে। ঐশী চোখ বন্ধ রেখেই তামিমের হাত ধরে টেনে ওর বুকে জরিয়ে ধরে বলল
“আচ্ছা যদি এমন হয় আমি আর অপারেশনের পর আপনার কাছে ফিরে না আসি তাহলে..!”
তামিম ফট করে ঐশীর থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে হনহন করে রুম থেকে চলে গেল।
ঐশীর চোখ পানিতে ভরে গেল। সে জানে তামিম তার চোখের পানি লুকাতে পাশের রুমে চলে গিয়েছে। এই নিয়ে অনেকবার ঐশী এই কথাটা তুলেছে। কিন্তু সব বারেই তামিম তার থেকে সরে গেছে। কিছুক্ষণ পর আবার ফিরে আসতো সে। তবে তার চোখ মুখ লাল হয়ে যেত। দেখেই বোঝা যেত যে তামিম কান্না করছে।
আজ অনেকক্ষণ হয়ে গেল তবে তামিম ফিরছে না দেখে ঐশী চিন্তায় পরে গেল। ঐশী খুব কষ্টে বেড থেকে নামলো। এখন নড়াচড়া করতে খুব সমস্যা হয় তার। দুপা এগোতে নিবে তার আগেই ঐশী পরে গেল। ঐশী পেটে হাত দিয়ে আতকে একটা চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেল।
ঐশীর চিৎকার শুনে তামিম পাশের রুমের বারান্দা থেকে দৌড়ে এলো। আফসানা বেগম আর ঐশীও নিচ থেকে দোতালায় উঠে এলো। তামিম দৌড়ে ঐশীর মাথাটা ওর কোলে তুলে নিয়ে অস্থির হয়ে বলতে লাগলো
“ওই জান কি হয়েছে তোমার। চোখ খুলো জান। আমি কিন্তু এখন রেগে যাচ্ছি। চোখ খুলো প্লীজ।” বলেই কান্না করে দিলো তামিম। ঐশীর মাথা তামিম তার বুকে চেপে ধরে কান্না করতে লাগল।
তাহিয়া দৌড়ে ভাইয়ের পাশে এসে বসে তড়িঘড়ি কন্ঠে বলল “ভাইয়া এখন কান্না করার সময় না। ভাবিকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।”
মেয়ের এমন অবস্থা দেখে আফসানা বেগম যেন পাথর হয়ে গিয়েছে।
তামিম ফট করে ঐশীকে কোলে নিয়ে দৌড়ে গাড়ির কাছে নিয়ে এলো। তাহিয়ার কাছে ঐশীকে রেখে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে পরলো। আফসানা বেগম ও ঐশীর পাশে বসে পরলো। তামিম দ্রুত গাড়ি চালিয়ে হাসপাতালে চলে আসলো। তামিম ঐশীকে আবার কোলে তুলে নিয়ে হাসপাতলের ভিতরে গিয়ে চিৎকার করে ডাক্তার ডাক্তার বলে ডাকতে এলো।
তামিমের মুখে প্রিয় মানুষটাকে হারিয়ে ফেলার ভয় ফুটে উঠেছে। সে যে এই মেয়েটাকে ছাড়া বাঁচবে না। তামিমের নিশ্বাস যেন আটকে আসছে। ঐশীকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
তামিম নিজেই বিড়বিড় করতে লাগলো “আমার জন্যই এমন হলো। আমি সত্যিই খারাপ। আমার জন্যই আমার জান কষ্ট পাচ্ছে এখন।” তামিমকে এখন বদ্ধ পাগলের মতো লাগছে। তাহিয়া নিলয়কে ফোন দিয়ে সব জানিয়ে দিয়েছে। নিলয়ও অফিসের সব কাজ ছেড়ে ছুটে এলো হাসপাতালে। তামিমকে দেখে সে তামিমের ঘাড়ে হাত দিতেই তামিম ওকে জরিয়ে ধরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করতে লাগলো।
তামিমের এমন অবস্থা দেখে নিলয় যেন হতভম্ব হয়ে গিয়েছে। তামিমকে কখন এতোটা ভেঙে পরতে দেখেনি নিলয়। তামিম যেন ছোট বাচ্চা হয়ে গিয়েছে। নিলয় ওকে আগলে রাখলো। তামিমের আম্মু মারা যাওয়ার পর ওই তো আগলে রেখেছে ছেলেটাকে। তামিমের কোনো নড়াচড়া না দেখে নিলয় খেয়াল করলো তামিম জ্ঞান হারিয়েছে।
কিছুক্ষণ পর তামিম চোখ খুলতেই নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করলো। হাতে তার সেলাইন দেওয়া। ঐশীর কথা মনে আসতেই সে ঝট করে উঠে পরলো। নার্স এসে তামিমকে থামাতে চেষ্টা করলো। কিন্তু পারলো না সে। তামিম টান দিয়ে সেলাইন খুলে ফেললো। খানিকটা রক্তও বেরিয়েছে তার। সে দৌড়ে ঐশীর কেবিনের সামনে এলো।
#চলবে