#জীবনের থেকেও বেশি
#পর্বঃ১৬
#লেখাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
তাহিয়া বলে উঠলো “নাফিস খানের মেয়েকে কিডন্যাপের পর নিখোঁজ হলো তার বউ। এখন আবার নাফিস খান ও তার ছেলে নোমান খান নিখোঁজ। বিষয়টা নিয়ে তোলপাড় চলছে। পুরো মিডিয়া জুরে এটাই হেডলাইন।”
ঐশী বলল “মানে কি বলছো ওরা নিখোঁজ। মেবি ওরা পালিয়েছে।” ঐশী তামিমের দিকে তাকিয়ে বলল “আপনি কি কিছু করেছেন নাকি ওরা পালিয়েছে।”
তামিম একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে বলল “সবসময় সবকিছু জানতে নেই জান। কিছু জিনিস না জানাই ভুল।”
ঐশীর মাঝে যেন কৌতুহল বেড়ে গেল। ও একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে খাবার টেবিলের দিকে। খাওয়া বাদ দিয়ে হাত দিয়ে আঁকিবুকি করছে প্লেটে। তার যে খাওয়ার ইচ্ছা উড়ে গেছে। তার মনের মধ্যে এখন শুধু ঘুরছে তামিম কি ওদের কিছু করেছে। নাকি ওরা পালিয়ে গিয়েছে। ঐশীর ভাবনার মাঝেই ওর সামনে এক লোকমা খাবার এগিয়ে দিলো তামিম আর বলল
“খাওয়ার সময় না খেয়ে এতো ভাবনা কিসের। খেয়ে নেও বলছি।”
সবার সামনে এরকম করে খাইয়ে দেওয়ার জন্য তামিমের হাত বাড়িয়ে দেওয়াতে লজ্জা পেল ঐশী। লজ্জা নিয়ে মুখ নিচে রেখে তামিমের হাতে খেতে লাগল। সবাই মিটিমিটি হাসছে।
খাওয়ার পর্ব শেষে সবাই সবার রুমে চলে গেল ঘুমাতে। নিলয় আর তামিম ঘরে যাওয়ার আগে কি যেন ফিসফিস করলো। যা ঐশীর চোখে ঠিকিই পরলো। ওর যেন কৌতুহল আরো বেড়ে গেল। তামিমকে রুমের দিকে আসতে দেখে ঐশী তার কৌতুহল দমিয়ে রুমের দিকে দৌড় দিলো।
তামিম রুমে এসে দেখলো ঐশী বেডের উপর পা ঝুলিয়ে বসে আছে। তামিমকে আসতে দেখে ঐশী ওর দিকে তাকালো। তামিম ঐশীর কোলে মাথা রেখে মেঝেতে বসে পরলো। ঐশী বলে উঠলো “কি হয়েছে আপনার। কিছু নিয়ে কি টেনশনে আছেন?”
তামিম ফট করে মুখ তুলে বলল “জান আমার কিছু কাজ আছে। এখন একটু যেতে হবে। তুমি ঘুমিয়ে যাও জান। আমি খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবো ইনশাআল্লাহ।” বলেই ঐশীর কপালে গভীর চুমু একে দিলো।
ঐশীর মনটা কু ডেকে উঠলো। কেন যেন বুকটা খুব ধকধক করছে। কিছু হবে না তো।
ঐশী তামিমের দিকে তাকিয়ে বলল “না গেলে হয় না। কি এমন কাজ যে এখনই যেতে হবে। আর রাতও তো হলো অনেক।”
তামিম বলল “না জান আমার যেতেই হবে। তুমি টেনশন করো না। ঘুমিয়ে পরো তাছাড়া শরীর খারাপ করবে।”
ঐশীকে শুয়ে দিয়ে লাইট অফ করে দিয়ে চলে গেল। ঐশীর কপালে চিন্তার রেখা ফুটে উঠলো।
——————-
কালো কোর্ট কালো জিন্স আর চোখে কালো সানগ্লাস পড়ে নাফিস সাহেব আর নোমানের সামনে চেয়ারে বসে আছে একটা ছেলে।
শুকনো একটা রুটি পচা ডাল তাও আবার একবেলা এগুলো খাবার খেয়ে শরীর অনেকটা দুর্বল হয়ে আছে নাফিস সাহেব আর নোমানের। সাতদিনেই অবস্থা খারাপ আরো দিন গেলে কি হবে ভেবে ঢোক গিলল ওরা। হঠাৎ কারো উপস্থিতি পেয়ে দুইজনই ঝাপসা চোখে সামনের দিকে তাকাতেই আতকে উঠলো। ছেলেটাকে দেখে দুইজনই ভয়ে কাঁপছে। ছেলেটা যে আর কেউ না তামিম চৌধুরী।
তামিম তার হাতে থাকা বন্দুকটা ঘুরাতে ঘুরাতে বলল “জানিস তোদের কেন এতোদিন বাঁচিয়ে রেখেছি। শুধুমাত্র আমার জানের জন্য। কারণ তার একটা ভুল ধারণা ছিলো যে তোরা তার বাবা ভাই। কিন্তু যখন থেকে সে জানতে পেরেছে সেই তোরাই তার বাবাকে মেরে ফেলেছিস। তার মাকে বিভিন্ন কষ্ট দিয়েছিস। তখন থেকে তোদের উপর থেকে ওর মন উঠে যায়। প্রথমে সে তোদের খুন করতে চেয়েছিলো। কিন্তু পরে জানিস ও আমাকে না দেখিয়ে কান্না করতো। যেই মেয়ে আমাকে তার সবকিছু বলে। সে আমাকে এই কথা বলেনি যে সে তোদের এতোটাই ভালোবাসে যে তোদের শাস্তি দিতে সে পারবে না। কিন্তু তোরা তো অপরাধের লিমিট অতিক্রম করে ফেলেছিস। আমার জানটা শুধু তোদের জন্য কষ্ট পাচ্ছে। আর আমি যে আমার জানটার কষ্ট সহ্য করতে পারিনা।যাইহোক আজকে একটা খেলা খেলি চল।”
বন্দুকটা একবার নাফিস সাহেব আর একবার নোমানের দিকে তাক করে বলল “এখন আমি একজনকে মারবো।আর একজনকে ছেড়ে দিবো। তবে মজার বিষয় হচ্ছে তোরা ডিসিশন নিবি কাকে আমি আগে মারবো।” বলেই হোহো করে হাসতে লাগলো।
নাফিস সাহেব ফট করেই বলল “আমাকে ছেড়ে দেও। আমি এখন মরতে চাই না।”
নাফিস সাহেবের কথায় নোমান অবাক হয়ে ছলছল নয়নে তার বাবার দিকে তাকালো।
নিলয় বলে উঠলো “দেখ নোমান কার কথায় তুই চলতি। কার কথায় আমাদের পিছে ছুরি মেরেছিলি। আন্টিকে ওই লোকের কথায় নিয়ে গিয়েছিলি খুন করতে। ওনি কতো ভালো মানুষ ছিলো। তোকেও তো কম আদর করেননি ওনি। আর তুই। আমার আর কিছু বলার নেই।”
তামিম হাসতে হাসতে বলল “দেখ নোমান তোর স্বার্থপর বাবাকে। যে শুধু টাকা চেনে রেএ শুধু টাকা। এতো পরিমাণ তার টাকার নেশা যে তার সন্তানকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে দিতেও পিছু পা হলো না।” পরক্ষণেই হাসি থামিয়ে দাঁত কিটমাটিয়ে নাফিস সাহেবের দিকে বন্দুক তাক করে আর বলে উঠলো “এখন যাহ উপরে গিয়ে টাকা নিয়ে খেল। তোর আর জায়গা হবে এই দুনিয়ার।” বলেই গুলি ছুরে দিলো নাফিস সাহেবের দিকে। নাফিস সাহেব ছটফট করতে করতে প্রাণ হারালো সেখানে।
নোমান একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তার মৃত বাবার দিকে। তামিম এবার চেয়ার থেকে উঠে নোমানের কাছে হাটু গেড়ে বসে পরলো। নোমানকে জরিয়ে ধরে বলল “জানিস এই মানুষটাই ছোটবেলায় তোর থেকে তোর মাকে কেড়ে নিয়েছে। তোর শৈশব কেড়ে নিয়েছে। তোকে শুধু ব্যবহার করেছে। আর তুই পাগলের মতো এই লোকটা অন্ধ বিশ্বাস করে এসেছিস। জানিস তো তোকে খুব ছেড়ে দিতে ইচ্ছে করছে। খুব ইচ্ছে করছে। কিন্তু কি করবো বল তুই যে এই লোকটার সঙ্গ দিতে গিয়ে জানোয়ার হয়ে গিয়েছিস। তোকে বাঁচিয়ে রাখা মানে বিপদ বয়ে আনা। আর আমি না তোকে অনেক ভালোবাসতাম। আমি চাই না তোর দ্বারা আর কোনো খারাপ কাজ হক।” তামিমের চোখ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পরলো। নিলয়ের চোখেও পানির কোণা এসে জমাট বাধলো।
তামিম ফট করে নোমানকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাড়িয়ে পরলো। নোমান এখনো আগের মতো পাথর হয়ে বসে আছে। তামিম নিজের চোখে পানি মুছে বলল “তুই শুধু আমার আম্মু আর ঐশীর আম্মুকে নিয়ে খেলিস নি। অনেক মেয়ের জীবন নষ্ট করেছিস। তোর বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। আমি পারলাম না তোকে ছেড়ে দিতে।” বলেই গুলি করে দিলো নোমাকে।
তামিম নিলয়ের দিকে তাকিয়ে ইশারায় দুটো লাশই সরিয়ে ফেলতে বলল। তামিম গাড়িতে গিয়ে বসলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই নিলয় ও তামিমের পাশে এসে বসলো। তামিম গাড়ি চালাতে লাগলো। প্রায় আধ ঘন্টা লাগলো বাড়িতে আসতে। তামিম খেয়াল করলো নিলয় ঘুমিয়ে গিয়েছে। তামিম দেখলো নিলয়ের ফোনটা বাজতেছে। নিলয় হাতে নিয়ে দেখলো ফোনে জ্বলজ্বল করছে মায়াবতী লেখাটা।
তামিম মুচকি হাসি দিয়ে নিলয়ের ফোনটা আগের জায়গায় রেখে দিলো। তারপর আস্তে আস্তে নিলয়কে ডাক দিয়ে রুমে গিয়ে রেস্ট নিতে বলল।
তামিম রুমে গিয়ে দেখলো ঐশী বেডে শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে। তামিম মুচকি হেসে ফ্রেস হতে চলে গেল। পরনের কালো শার্ট চেন্স করে একটা সাদা টিশার্ট আর টাউজার পরে টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বেরিয়ে এলো ওয়াশরুম থেকে। বেরিয়েই কপাল কুচকে গেল তার। কারণ সে খেয়াল করলো ঐশী ওর একটা ছবি বুকে আকড়ে গুটিসুটি হয়ে ঘুমিয়ে গিয়েছে। তামিম জানে মেয়েটা টেনশন করতে করতে ঘুমিয়ে গেছে ঔষধের জন্য। তামিম একটা মুচকি হাসি দিয়ে ঐশীর পাশে শুয়ে পরলো ঐশীকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে।
ওই যে বলে না সময় আর স্রোত কারো জন্য থেমে যায় না। সময় তার নিজের মতোই বহমান। আর সুখের সময় তো মনে হয় তাড়াতাড়ি চলে যায়। দিন যাচ্ছে ঐশীর শারীরিক গঠন পরিবর্তন হচ্ছে। আর তামিম কেয়ার ও বেশি করছে ঐশীর। ডাক্তার বলেছে ঐশীর টুইন বেবি হবে। তাই অনেক সমস্যা হতে পারে। সবসময় খেয়াল রাখার কথা বলছে ডাক্তার।
আর ডাক্তারের কথা শোনার
#চলবে