জীবনের থেকেও বেশি পর্ব-১১

0
884

#জীবনের থেকেও বেশি
#পর্বঃ১১
#লেখাঃশুভ্রতা_শুভ্রা

হঠাৎ দরজার ওপাশ থেকে নাফিস সাহেবের গলা শুনে ভয়ে আতকে উঠলো ঐশী। ওনি ডাকছে ঐশীকে ডাকছে। ঐশী ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো প্রায় ভোর হয়ে গিয়েছে। ঐশী তামিমের দিকে তাকিয়ে দেখলো ছেলেটা ঘুমিয়ে গিয়েছে। ঐশী কি করবে বুঝতে পারছে না। ওইদিকে নাফিস সাহেবের ডাকার বেগ বেড়েই যাচ্ছে।

ঐশী ঘরটা একদম অন্ধকার করে দিলো। ভয়ে ভয়ে দরজার কাছে গিয়ে কাঁপাকাঁপা হাতে দরজা খুলে দিলো। নাফিস সাহেব রাগী দৃষ্টিতে ঐশীর দিকে তাকিয়ে কটমট করে বলল

“কি করছিলে এতক্ষণ দরজা খুলতে এতো দেড়ি হলো কেন!”

ঐশী ভয়ে ভয়ে বলল “না মানে আব্বু আসলে ঘুমিয়ে ছিলাম তো। টের পাই যে তুমি আসেছ।”

নাফিস সাহেব ঘরের দিকে উঁকি দিতে লাগল। ঘরটা অন্ধকারে ঘুটঘুট করছে। তা দেখে ওনি বললেন “ঘরের একি অবস্থা করে রেখেছ ঘরের কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।”

ঐশী বলল “আমার জীবনটাই তো অন্ধকার হয়ে গিয়েছে।”

নাফিস সাহেব এক পলক সন্দেহভাজন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চলে গেলেন। ঐশী একটা সস্থির নিশ্বাস ফেলল। হঠাৎ ঘাড়ে কারো ঠোঁটের স্পর্শ পেতেই কেঁপে উঠলো সে। ঐশী বলল

“একি আপনি ঘুম থেকে উঠলেন কখন। আব্বু তো উঠে গিয়েছে। এখন কি হবে।”

তামিম দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে বলল “জান তুমি কি সুন্দর দুঃখী দুঃখী ভাব নিয়ে বললে যে তোমার জীবনটাই অন্ধকার হয়ে গিয়েছে। মনে হচ্ছিলো সত্যি সত্যিই আমি মরে গিয়েছি।” ঐশী দৌড়ে এসে তামিমের ঠোঁট আকড়ে ধরলো। তামিম অবাক হয়ে গেল। ঐশী কিস করার বদলে কামুড় দিছে। তামিমের ব‍্যথা লাগছে তবুও সে কিছু বলছে না। হঠাৎ তার গালে কিছু উষ্ণ ছোঁয়া পেল। তামিম বুঝতে পারলো ঐশী কান্না করছে। তামিম ভাবতে লাগলো ঐশী তো ওরে কামুড় দিছে। ওর তো কান্না করার কথা কিন্তু ঐশী কান্না করছে। আজিব তো!

ঐশী তামিমকে ছেড়ে দিয়ে ওর কলার ধরে বলতে লাগল “ওই তুই মরা মরা করিস কেন। তোকে ছাড়া থাকতে হবে এই কথা আমি ভাবতেই পারিনা। আর তুই শুধু মরার কথা বলিস। আর কখনো যদি তোর মুখে মরার কথা শুনি তাহলে কিন্তু..!”

তামিম ঐশীর কোমর পেচিয়ে ধরে বলল “আচ্ছা জান আমি আর বলবো না। আমি বুঝতে পারিনি আমি এটা বলায় তুমি রেগে যাবে। সরি জান আমি আর কখনো এই কথা বলবো না।” বলেই একটা চুমু দিলো ঐশীর কপালে।

ঐশী বলল “এখন ছাড়ুন আমাকে। আজান দিয়েছে নামাজটা পড়ে ফেলি। আপনিও আসুন। আমি আগে ওযু করে আসি তারপর আপনি।”

তামিম ঐশীকে ছেড়ে দিলো। ঠোঁট উল্টিয়ে তামিম বেডে গিয়ে বসলো। ঐশী মুচকি হাসি দিয়ে ওয়াশরুমে গেল ওযু করতে।

ঐশী আর তামিম নামাজ পরে নিলো। তামিম বালিশে হেলান দিয়ে বসে ঐশীকে দেখতে লাগলো। ঐশী এবার বলল

“সকালে তো আব্বু আসবে তখন কি হবে।”

তামিম মুচকি হেসে বলল “তখন আমি চলে যাব। এখনই বের হতে হবে আমাকে।”

ঐশী মন খারাপ করে বলল “আমি আপনার সঙ্গে যেতে চাই। আমি আপনাকে না দেখে থাকতে পারবো না।”

তামিম বলল “না না জান এমন কাজ ভুলেও করো না। এখন উল্টাপাল্টা কিছু করতে গেলে তোমার বাবা আমাদের দুইজনকেই মেরে ফেলবে। শুধু আমাদের না তাহিয়া আর নিলয় ও অনিরাপদ। ওদের ও বাঁচাতে হবে। এখনও আমার কিছু কাজ আছে।”

ঐশী জরিয়ে ধরলো তামিমকে। তামিম ওর মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলো।

এমন করেই চলতে লাগলো দিনগুলো। তামিম গভীর রাতে আসে আর ভোরের আলো ফোটার আগেই চলে যায়। তামিমের অফিসের সমস্যার প্রধান কারণ হচ্ছে নাফিস সাহেব আর নোমান। ওই দিন অফিসে গুন্ডা পাঠিয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছিলো নাফিস সাহেব। এমনকি একটা মেয়েকে টাকা দিয়ে ভুল বুঝাই ঐশীকে। সব কথাই ঐশী জানে।

দীর্ঘ সাত দিন যাবত এই রকম করে আসা যাওয়া করছে তামিম। কিন্তু আজ না আসতে দেখে ঐশী চিন্তায় পরে গেলো। ও কি কোনো বিপদে পরলো। ভাবতেই বুকটা কেঁপে উঠলো তার। ঘুমহীন রাত কাটলো ঐশীর। সারাটা দিনও চিন্তায় কেটেছে ঐশীর। তামিমের ফোনে অনেক বার কল করেছে ঐশী। কিন্তু সে কল ধরেনি। ভালো লাগছে না ঐশীর। অপেক্ষায় রয়েছে ঐশী তামিমের একটু খবর পাওয়ার জন‍্য।

দুইদিন পার হয়ে গিয়েছে তামিমের কোনো খবর নেই। ঐশী চিন্তায় চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছে। তিনদিন হবে আজ গভীর রাতে বারান্দার দরজা খুলে অপেক্ষায় বসে আছে ঐশী। এক দৃষ্টিতে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে সে। হঠাৎ নিলয়কে মই বেয়ে উপরে উঠতে দেখে অবাক হয়ে বলল

“একি ভাইয়া আপনি ওনি কোথায় ওনার কোনো বিপদ হয়নি তো। কি হয়েছে ভাইয়া।”

নিলয় ঐশীকে শান্ত করে বলল “তোমাকে আমার সঙ্গে এই বাসা থেকে পালাতে হবে।”

ঐশী বলল “কিন্তু কেন ভাইয়া কি হয়েছে”

নিলয় বলল “না তেমন কিছু না এখন চলো তো আমার সঙ্গে। আর কথা বারিও না।”

ঐশী আর কথা বাড়ালো না নিলয় সঙ্গে বারান্দা বেয়ে নিচে নেমে এলো।

নিচে আফসানা বেগম চিন্তিত মুখে দাড়িয়ে আছে। ওনি ওদের নিরাপদভাবে বাহিরে বের করে দিলেন। শেষে ওনি ঐশীকে বললেন

“ঐশী মা তামিমকে কোনো কষ্ট দিস না। ছেলেটা ছোট থেকে অনেক কষ্ট সহ‍্য করেছে। আর ছেলেটা তোকে অনেক ভালোবাসে। নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসে সে। কখনো অবিশ্বাস করিস না ওকে। জেনে রাখিস ও যাই করুক তার পিছনে যেকোনো কারণ অবশ্যই থাকবে। আর ভালো থাকিস।” বলেই একটা চুমু এঁকে দিয়েছিলেন ঐশীর কপালে।

নিলয় ঐশীকে নিয়ে বেরিয়ে দৌড়াতে লাগলো। হঠাৎ নিলয় থমকে দাড়িয়ে গেল। ঐশী হাটুতে হাত দিয়ে হাপাতে হাপাতে বলল

“কি হলো ভাইয়া এমন করে দাড়িয়ে গেলেন কেন?”

নিলয় কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল “নোমান তুই!”

নিলয়ের মুখে নোমানের নাম শুনে ঐশী আতকে উঠে সামনে তাকিয়ে নোমান আর অনেকগুলো মানুষ দেখে ভয় পেয়ে গেল। নিলয়ের শার্ট আকড়ে ধরে ওর পিছনে দাড়িয়ে রইলো ঐশী।

নোমান চেঁচিয়ে বলে উঠলো “ঐশী চলে আয় আমার কাছে। ভালোয় ভালোয় বলছি চলে আয় এইদিকে।”

ঐশী নিলয়ের আরো পিছনে লুকালো।

নোমান বন্দুক তাক করলো নিলয়ের দিকে তার বলল “তুই যদি এখন না আসিস তাহলে এই ছেলেটাকে মেরে ফেলব।”

নিলয় ঐশীকে উদ্দেশ্য করে বলল “ঐশী তুমি মেইন রোডের দিকে চলে যাও। ওখানে তাহিয়া আর তামিম গাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে আছে। তামিমের শরীরের অবস্থাটা তেমন ভালো না তাই আমি এসেছিলাম তোমাকে আনতে। যাও প্লীজ তাড়াতাড়ি। আমাকে নিয়ে চিন্তা কর না।”

ঐশী বলল “না ভাইয়া তোমাকে এইরকম অবস্থায় রেখে আমি কিছুতেই যেতে পারবো না।”

নিলয় বলল “যাও বলছি তামিম তোমার অপেক্ষায় আছে।”

ঐশী বলল……

(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে