#জীবনের থেকেও বেশি
#পর্বঃ০৬
#লেখাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
ঐশী চোখ বন্ধ করে সোফায় গা টা এলিয়ে দিলো। শরীরটা দুর্বল লাগছে তার। হয় তো সারাদিন কিছু না খাওয়ায় এমনটা হয়েছে। তাহিয়া অনেক চেষ্টা করলো ঐশীকে কিছু খাওয়ানোর। কিন্তু পারেনি ঐশীর জেদের সাথে।
গম্ভীর কন্ঠে চোখ খুলে ফেললো ঐশী। সামনে দাড়িয়ে আছে তামিম। পরনের শার্টটা ঘামে ভিজে গিয়েছে তার। মুখে তার মলিন হাসি। ঐশী একপলক তাকিয়ে আবার চোখ বুজলো। তামিমের মুখটা আরো মলিন হয়ে গেলো। ঐশী হুট করে সোফা থেকে উঠে হনহন করে চলে গেল রুমে।
ঐশীর এমন কাজে তামিম প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাহিয়ার দিকে তাকাতেই তাহিয়া বলল
“ভাবি অভিমান করেছে তোর উপর। তুই কিরে একটা কল ও দিসনি। আর কলও ধরিস নি। মেয়েটা সারাদিন না খেয়ে বসে আছে তোর জন্য।”
তামিম কপালে হাত দিয়ে বলল “ওহ সিট বলেই সেও দৌড়ে রুমে চলে গেল। রুমের এপাশে ওপাশে তাকিয়ে ঐশীকে খুঁজে পেল না সে। বারান্দায় ঐশীর শাড়ির আচল দেখতে পেয়ে। তামিম ঐশীর কাছে গেলে। ঐশীকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো তামিম। ঐশী নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। তামিম ঐশীকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে কান ধরে বলল
“সরি জান তোমাকে কল দিতে পারিনি। আসলে আজ অফিসে নাফিস সাহেব মানে তোমার বাবা এসেছিলো।”
ঐশী হালকা ভয়ে ভয়ে বলল “কি বলল”
তামিম মলিন হেসে বলল “আমাকে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে গিয়েছেন। তোমাকে ছেড়ে দিতে বলেছে।”
ঐশী তামিমকে জরিয়ে ধরে বলল “আমি আপনাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না। প্লীজ আমাকে ছেড়ে যাবেন না।”
তামিম বলল “ধুর পাগলী ওনি যা বলার বলছেন। এখন চলো খেয়ে নিবে। আর অফিসেও জরুরি কিছু কাজ ছিলো।”
ঐশী বাচ্চাদের মতো করে বলল “আপনি জানেন আমি সারাদিন কতো টেনশনে ছিলাম।”
তামিম ঐশীর চুল কানের পিছে গুজে দিতে দিতে বলল “মিস করছিলে আমায় জান”
ঐশী ঠোঁট উল্টিয়ে বলল “হুম অনেক অনেক”
তামিম ঐশীর কোমর আকড়ে ধরে বলল “পাগলী আমার চলো খেয়ে নিবে এখন।”
ঐশী বলে উঠলো “আগে আপনি প্রমিস করেন যতো গুরুত্বপূর্ণ কাজই হক না কেন একটা ফোন বা মেসেজ করবেন আমাকে।”
তামিম ঐশীর কপালে আলতো একটা চুমু খেয়ে বলল “আচ্ছা জান এবার তো চলো। আমার খুব ক্ষুধা পেয়েছে।”
তাহিয়া ঘুমিয়ে পড়েছে। ঐশী আর তামিম ও খেয়ে নিয়েছে। নিলয় অফিসের কাজে চট্টগ্রামে গিয়েছে। তামিমের যাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু ঐশীকে ছেড়ে সে আর যায় নি। তামিম বাসা থেকে নিলয়কে সবকিছু বুঝিয়ে দিচ্ছে।
সবকিছু বোঝানো শেষে তামিম বারান্দায় থেকে চলে এলো। ঐশী আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল আছড়াচ্ছে। তামিম একটা ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তামিম নেশাভরা দৃষ্টিতে ঐশীর দিকে তাকিয়ে ঐশীর দিকে এগোতে লাগলো। হুট করে পিছন থেকে জরিয়ে তামিম। ঐশী কেঁপে উঠে তামিমের ছোয়ায়। তামিম ওর মুখ ডুবিয়ে দেয় ঐশীর চুলের মাঝে। তামিম ঝট করে কোলে তুলে নিলো। ঐশী তামিমের গলা জরিয়ে ধরলো। তামিম ঐশীকে আলতো করে বেডে শুয়ে দিলো। ঐশী আবেশে চোখ বুজে রয়েছে। তামিম একটা গভীর ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলো ঐশীর কপালে। আজকে দুইজনের পবিত্র ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে। দুইজন ভালোবাসার মানুষ মিশে যাবে একে অন্যের মাঝে।
—————-
সকালের মিষ্টি রোদে ঘুম ভেঙে গেল ঐশীর। ঐশী নিজেকে আবিষ্কার করল তামিমের উন্মুক্ত বুকে। রাতের কথা মনে পরতেই একটা লজ্জামাখা হাসি ফুটে উঠলো তার মুখে। তামিমের ঘুমন্ত চেহারায় অনেক কিউট লাগছে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে কপাল জুড়ে। ঐশী তামিমের ঠোঁটে তার আঙ্গুল দিয়ে ছুয়ে দিচ্ছে।
হুট করে একটা শক্ত হাত ঐশীর হাত চেপে ধরলো। ঐশী তামিমের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলো তামিম চোখ খুলে আছে। ঐশী অবাক কন্ঠে বলল
“আপনি জেগে আছেন!’
তামিম বলল “কেউ যদি খাইয়া ফালামু লুক দিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তাহলে কি ঘুমানো যায় জান।”
তামিমের কথায় লজ্জা পেয়ে ঐশী তার মুখ গুজলো তামিমের বুকে।
তামিম বলল “ইশ জান তুমি লজ্জা পেলে একদম টমেটোর মতো লাগে। মনে হয় টপ করে খেয়ে ফেলি।”
ঐশী মনে মনে বলতে লাগলো লোকটার কি কোনো লজ্জাশরম নেই। মুখে যা আসছে তাই বলছে। লোকটা মনে হয় লজ্জা দিয়েই আমাকে মেরে ফেলবে।
তামিম ঐশীকে তার মুখোমুখি করে বলল “জান একটা কিস দেবে।”
ঐশী চোখ বড় বড় করে বলল “কিহ এখন”
তামিম বলল “হুম জান এখন কিস করো তো তাড়াতাড়ি।”
ঐশী বলল “না আমি পরবো না ছাড়ুন তো আমাকে আমি উঠব।”
তামিম আরো শক্ত করে ঐশীকে জরিয়ে ধরে বলল “না জান কিস না দেওয়া পযর্ন্ত আমি তোমাকে ছাড়ছি না।”
ঐশী নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। তামিম টুক করে দুইজনের ঠোঁট মিলিত করে দিলো। ঐশীর চোখ বড় বড় হয়ে গেল। তামিম ঐশীর ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে ঐশীর রিএকশন দেখে হো হো করে হেসে দিলো। ঐশী তামিমের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে উঠে পরলো। ঝোকের চোটে তো উঠে পরলো কিন্তু এখন কি করবে ও। কারণ ওর শরীরে শুধু একটা শার্ট। ও তাড়াতাড়ি করে বেডে এসে পাতলা কম্বলটা জরিয়ে নিলো। ঐশীর এমন কাজে তামিম আরো জোড়ে জোড়ে হাসতে লাগলো। তামিমের হাসি দেখে রাগান্বিত দৃষ্টিতে ঐশী তামিমের দিকে তাকালো। রাগের কারণে ঐশীর নাকের আগা লালা হয়ে গিয়েছে। তামিম ওর নাকের আগায় একটা লাভ বাইট বসিয়ে দিলো। ঐশী রাগে কিল ঘুসি দিতে লাগলো তামিমকে। তামিম শক্ত করে জরিয়ে ধরলো ঐশীকে। ঐশীও শান্ত হয়ে গেল।
তামিম ঠোঁটে একটা প্রাপ্তির হাসি হেসে বলল “ভালোবাসি প্রিয়সী অনেক বেশি ভালোবাসি।”
ঐশী তামিমকে জরিয়ে ধরে বলল “একটা কথা বলি।”
তামিম বলল “ধুরু পাগলি এখানে পারমিশন নিতে হবে কেন যখন যা মনে আসে বলে দিবে ভাবতে হবে না।”
ঐশী তামিমের বুকে আঁকিবুকি করতে করতে বলল “আমি আমার স্বপ্নগুলো পূরণ করতে চাই। আমার অনেক দিনের ইচ্ছে ছিলো আমি নিজের একটা নাম করবো। সাবলম্বি হবো। আমার এসএসসি ও এইসএসসি রেজাল্ট ভালো আছে। আর ভালো একটা ভার্সিটিতেও চান্স পেয়েছিলাম।”
তামিম বলল “আচ্ছা তোমার আব্বু তোমার স্টাডি অফ কেন করলেন?”
ঐশী ফুস করে একটা শ্বাস ফেলে বলল “আমাকে আর আপনাকে যখন ভাইয়া একসঙ্গে দেখে এক বছর সাত মাস আগে প্রথম দিন। ওইদিন ভাইয়া আপনাকে দেখেনি। জাস্ট দেখেছিলো আমি একটা ছেলের হাত ধরে রাস্তা পার হচ্ছিলাম। পরে বাসায় অনেক ঝামেলা হয়। আমাকে বাসা থেকে বের হতেই মানা করে দেয়। কিন্তু আম্মুকে অনেক বুঝিয়ে বের হতাম শুধু আপনার সঙ্গে দেখা করতে। আমি আমার পড়াশোনা শেষ করতে চাই।”
তামিম বলল “আচ্ছা জান তুমি যা চাইবে তাই হবে কিন্তু আমার একটা কথা রাখতে হবে তোমার।”
ঐশী তামিমের দিকে তাকিয়ে বলল “কি কথা”
(চলবে)