#জীবনের থেকেও বেশি
#পর্বঃ০৫
#লেখাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
ঐশী কি বলবে বুঝতে পারলো না। এইদিকে দুইজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি চলছে। তখনই নিলয়ের আগমন নিলয় বলে উঠলো
“তোরা আবার লাগছিস। তোরা যে বড় হয়েছিস সেটা ভুলে গিয়েছিস। এখনো টম এন্ড জেরির মতো ঝগড়া করছিস।”
তামিম বলল “পকপকিকে এখান থেকে নিয়ে যাহ তো।”
তাহিয়া বলল “তুই পকপকি তোর চৌদ্দগুষ্টি পকপকি।”
তামিম ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল “আমার চৌদ্দগুষ্টির মধ্যে কিন্তু তুই ও পরিস।”
তাহিয়া বলল “হ ভালো”
—————–
বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। নিলয় আর তামিম একটা কাজে বাহিরে গিয়েছে। ঐশী আর তাহিয়া সোফায় চিপস আর চকলেট নিয়ে বসে টিভি দেখছে মনোযোগ দিয়ে। টিভিতে টম এন্ড জেরি দেখছে ওরা।
রাত সাড়ে দশটা বাজে নিলয় আর তামিম বাড়ির ভিতর ঢুকতেই দেখলো চারিদিকে চিপস এন্ড চকলেটের পেকেট। আর দুইজনই মনোযোগ দিয়ে টিভি দেখছে। ওরা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে হো হো করে হেসে দিলো। তামিম আর নিলয়ের হাসার শব্দে ঐশী আর তাহিয়া টিভি থেকে চোখ সরিয়ে দুইজনই চোখ ছোট ছোট করে তাকালো। অন্যদিকে ওরা দুইজন হাসতেই আছে। বলতে গেলে হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। তাহিয়া ভ্রুযুগল কুচকে ওদের উদ্দেশ্য করে বলল
‘তোমাদের কি হয়েছে? এমন করে পাগলের মতো হাসতেছ কেন; আজব তো!”
তামিম আর নিলয় একে অপরের দিকে তাকিয়ে আবার হাসতে লাগলো। আর ঐশী মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে তার প্রিয়তমের দিকে। উজ্জ্বল শ্যামলা বর্ণের ছেলেটির মুখে চাপ দাড়ি। গালের টোল ইশ। ছেলেটা যে হাসতেও পারে সেটা তো জানাই ছিলো না ঐশীর। ছেলেটাকে গভীর অবস্থা থেকে কখনো হাসতে দেখেনি। ঐশীর ভাবনায় ছেদ ঘটলো আছিয়া খালার কন্ঠে।
আছিয়া খালা অনেক আগে থেকে রান্নার কাজ করছে এই বাড়িতে। তামিমের নিজের খালার মতোই দেখে তাকে। আপন বলতে এই মানুষটা আর নিলয় ছিলো তার পাশে। তাছাড়া যে সে তার ছোট্ট বোনটাকে নিয়ে ছন্নছাড়া হয়ে যেত। আছিয়া খালা শাড়ির আচলে হাত মুছতে মুছতে মিনমিনে গলায় ঐশীকে বলল
“ভাবি রাতে খাবার খাইবেন না।”
ঐশী ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো এগারোটা বাজতে দশমিনিট বাকি আছে। সে সবাইকে নিয়ে খাবার টেবিলে বসালো। অনেকক্ষণ ধরে তামিম খাবারের দিকে তাকিয়ে হাত গুটিয়ে বসে আছে। আর নিজেই নিজেকে গালি দিচ্ছে কেন যে রাগের জন্য জিনিস পত্র ভাঙাচোরা করতে গেলো। আর হাতটাই বা কেন কাটলো। দুপুরে বিরিয়ানি হওয়ায় চামচ দিয়ে খেয়েছে। আর ঐশীকেও খাইয়ে দিয়েছে। কিন্তু এখন কিভাবে খাবে। এই দিকে পেটে ইদুর দৌড়াছে। ধীরে ধীরে হাতটা প্লেটের দিকে নিবে তার আগেই একটা লোকমা ভাত কেউ তার মুখের সামনে ধরলো। তামিম চোখ তুলে তাকিয়ে দেখলো ঐশী। মুখে তার লাজুক হাসি ফুটে উঠেছে। তামিম ও ঠোঁট কামড়ে হেসে হা করলো। ঐশীও খাইয়ে দিতে লাগলো। তাহিয়া আর নিলয় খাচ্ছে আর মিটিমিটি হাসছে।
রাতের ঠান্ডা বাতাস গায়ে এসে লাগছে ঐশী আর তামিমের। ওরা বারান্দায় বসে আছে। ঐশী দোলনায় বসে আছে আর তামিম তার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। ঐশীর একটা হাত শক্ত করে জরিয়ে ধরে তামিম তার বুকের বাম পাশে ধরলো। চোখ বন্ধ করে তামিম বলতে লাগলো
“জানো তো ভালোবাসা কখনো কাউকে হাসায় আবার কাঁদায়ও। সত্যিই ভালোবাসা খুব অদ্ভুত। ভালোবাসার মূল একটা ভিত্তি আছে জানো সেটা কি?”
ঐশী আগ্রহের সঙ্গে জিঙ্গাসা করলো “কি”
তামিম চোখ বন্ধ করেই মুচকি হেসে বলল ” ‘বিশ্বাস’ যখন কেউ কাউকে ভালোবাসে তখন তাকে ছাড়া পৃথিবীর সবকিছু অসহ্য লাগে। উল্টাপাল্টা লাগে তাকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মানুষ লাগে। মনে হয় তার থেকে সুন্দর হয় তো এই পৃথিবীতে একটা মানুষও হয় না। ভালোবাসার মানুষের প্রতি একটা মায়া কাজ করে। যেই মায়া ত্যাগ করা অনেক কঠিন।”
তামিম কথা বলতে বলতে খেয়াল করলো ঐশীর কোনো সাড়াশব্দ নেই। তামিম এবার চোখ খুলে উপরের দিকে তাকিয়ে দেখলো মেয়েটা ঘুমিয়ে পরেছে। তামিম একটা মুচকি হাসি দিলো।
তামিম ঐশীকে কোলে নিয়ে রুমে চলে গেলো। ঐশীকে আলতো করে একটা ভালোবাসার পরশ দিয়ে ওকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরলো। মুখে তার প্রাপ্তির হাসি। হয় তো ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে পাওয়ার আনন্দ এটা।
সকালের কুয়াশা মাখা রোদে বাগানে থাকা বেঞ্চে বসে আছে ঐশী আর তামিম। গরম ঠান্ডার মাঝামাঝি সময় চলছে এখন। সকালে একটু ঠান্ডাই অনুভূত হয়। একটা চাদরে মুড়ে বসে আছে দুইজন। হাতে গরম চায়ের মগ। তামিমের কথামতো একটা মগেই দুইজন চা খাচ্ছে। চা খাওয়া শেষে তামিম মগটা পাশের টেবিলে রেখে ঐশীকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো।
ঐশী তামিমের থেকে নিজেকে ছাড়ানো চেষ্টা করতে করতে বলল “ছাড়ুন কেউ চলে আসবে।”
তামিম তার ঠান্ডা হাত ঐশীর জামার ভেতর দিয়ে উন্মুক্ত কোমর আকড়ে ধরলো। ঐশী কেঁপে উঠলো। তামিম নিজের মুখ ঐশীর কানের কাছে নিয়ে গিয়ে নেশাভরা কন্ঠে বলল
“কেউ আসবেনা জান। আর আসলেই বা কি হবে তুমি তো আমার বিয়ে করা বউ তাই না।”
ঐশী চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। গা কাঁপছে তার। ঠোঁট দুটো কেঁপে চলছে অনবরত। তামিম আর কিছু না ভেবে ঐশীর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। ঠোঁট ছেড়ে গলায় নেমে এসেছে তামিম। ছোট ছোট ভালোবাসার পরশ দিচ্ছে সে। ঐশী তামিমের পিঠের অংশে থাকা টিশার্টটি আকড়ে ধরলো। তামিমের ফোনটা বেজে ওঠায় তামিম বিরক্তিকর ভাব নিয়ে ঐশীকে ছেড়ে দিয়ে ফোনটা নিয়ে একটু দুরে সরে গেল।
—————
ঐশী বসে বিরক্তিকর সময় পার করছে। সকালে পেরিয়ে বিকেল হয়ে গিয়েছে। সেই যে সকালে তামিম বের হয়েছে। আর কোনো খবর নেই তার। অনেকবার কল করেছে তামিমকে। কিন্তু কল ধরেনি তামিম। ভালো লাগছে না তার। তাহিয়াকে জোর করে দুপুরের খাবার খাইয়ে দিয়েছে। ঐশী এখনো খায় নি। তামিমের সঙ্গে খাবে বলে বসে আছে সে। শরীর টা কেমন যেন লাগছে। সে আর কিছু না ভেবে বেডে শুয়ে পরলো।
শরীরটা কিছু দুর্বল থাকায় ঘুমিয়ে গেলো সে। তাহিয়া এসে দেখে গেছে ঐশীকে। কিন্তু ঐশী ঘুমিয়ে আছে দেখে আর ডাক দেয়নি।
ঐশীর ঘুম ভাঙলো সন্ধ্যা সাতটায়। ঐশী ঘুম থেকে উঠে দেখলো তামিম এখনো বাসায় আসেনি। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো একটা মেসেজ ও দেয়নি তামিম। এক পাহাড় সমান অভিমান জমে গেলো তামিমের উপর। ঐশীর চোখ টলমল করছে। তাহিয়ার সঙ্গে টুকিটাকি কথা বলছে ঐশী। কিন্তু মনটা তো পরে আছে তামিমের কাছে। ঐশী একবার ঘড়ির দিকে আরেকবার দরজার দিকে তাকাচ্ছে। তাহিয়া বিষয়টা খেয়াল করে বলল
“টেনশন করো না ভাবি ভাইয়া হয় তো কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ পরে গেছে। তুমি কিছু একটা খেয়ে নেও। সারাদিন তো কিছু খাও নি। এমন করলে তো শরীর খারাপ হয়ে যাবে তোমার। আর ভাইয়া শুনলে রেগে যাবে খুব। আর তুমি তো জানো ভাইয়ার রাগ কিরকম ভয়ংকর।”
(চলবে)