#জীবনের থেকেও বেশি
#পর্বঃ০৩
#লেখাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
ঐশী কিছুটা ভয় পেয়ে পিছিয়ে যায়। তামিম বিষয়টি বুঝতে পেরে হাত দিয়ে ইশারা দিতেই পাশ থেকে সব লোক চলে যায়। তারপর দুইজন মিলে টুকিটাকি কথা বলে। এভাবেই কথা বলা শুরু হয় তাদের মধ্যে। প্রায় প্রতিদিনই তামিম দেখা করতে আসতো। যেইদিন তামিম ঐশীকে বলেছিলো যে সে তাকে ভালোবাসে। সেইদিন ঐশী কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছিলো না। ওইদিনই কোনো এক লোক ওদের দুইজনকে একসঙ্গে দেখে নোমানের কাছে গিয়ে বলে। তারপর বাসায় গিয়ে অনেক মারও খায়। প্রায় দুইদিন সে আর বাহিরে যেতে পারেনা। রাতে হঠাৎ করেই তার রুমের বারান্দায় তামিমকে দেখে অনেকটা অবাক হয়। ওইদিন তামিমের অস্থিরতা দেখে অনেক অবাক হয় ঐশী। দুইদিনেই নাজেহাল অবস্থা হয়েছিল তামিমের। এমন করেই চলছি ওদের সম্পর্ক। তামিমের বিভিন্ন কেয়ার ভালোবাসায় ঐশীও ভালোবেসে ফেলে তামিমকে।
——————
হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজে অতীত থেকে বেরিয়ে আসে ঐশী। ঘাপটি মেরে শুয়ে রইলো ঐশী। তামিম ধীরগতিতে ঐশীর দিকে এগিয়ে এলো। তামিম গুটিশুটি মেরে ঐশীর মাথার পাশে বসে পরলো। ঐশীর কপালে একটা গভীর ভালোবাসার পরশ দিয়ে ঐশীকে আলতো করে জরিয়ে ধরলো। ঐশী কিছুটা কেঁপে উঠলো। তার মুখে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো। যা অন্ধকারে তামিম বুঝতে পারলো না।
সকালের মিষ্টি রোদ এসে ঐশীর মুখে পরতেই ওর কপাল কুচকে গেলো। বিরক্তি মাখা কন্ঠে বলল
“আম্মু আরেকটু ঘুমাতে দেও প্লীজ। এখন তুমি বলবে শশুর বাড়ি গিয়ে কি করবো। আম্মু পরে কি হবে দেখা যাবে। আর আমার কিউট সুইট ঘুম আমি কখনো ছাড়তে পারবো না। আম্মু পর্দাটা টেনে দেও প্লীজ।”
ঐশীর এমন কথা শুনে তামিম হেসে দিলো। দুষ্টামি একটা হাসি দিয়ে ঐশীর কাছে এগিয়ে গেলো। ঐশীর বিয়ের শাড়ি এখনো খোলা হয় নি। ওর পেটের কাছ থেকে শাড়িটা সরে গিয়েছে। আর ওর পেটের অনেকটা অংশই দেখা যাচ্ছে। তামিম আলতো করে ওর পেটে হাত দিলো। নেশা লেগে যাচ্ছে তার। ঘুমন্ত ঐশীকে অনেক সুন্দর লাগছে। তামিম আরও একটু কাছে এসে ওর চোখে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলো।
এমনটা করায় ঐশী ধড়ফড় করে উঠে বসলো। ভেবলার মতো কতক্ষণ বসে থেকে বোঝার চেষ্টা করলো কি হচ্ছে তার সঙ্গে। রুমের চারপাশে তাকিয়ে তামিমকে খুঁজতে লাগলো। বারান্দার পর্দা উড়ছে। পর্দার ফাক থেকে তামিমকে দেখতে পেলো ঐশী।
ঐশী তামিমকে দেখে বিছানা থেকে উঠে বারান্দায় গিয়ে দেখলো তামিম সিগারেট খাচ্ছে। সিগারেটের গন্ধে বমি আসছে ওর। ঐশী এগিয়ে গিয়ে তামিমের হাত থেকে সিগারেট টা ফেলে দিতে নিলেই তামিম খপ করে ঐশীর হাত ধরে ফেলে।
ঐশী তামিমের দিকে তাকালো। তামিমের দৃষ্টি সেই আগের মতোই সামনের দিকে। ঐশী বলল
“প্লীজ এগুলো ফেলে দেন। আমি এগুলোর গন্ধ সহ্য করতে পারিনা। আর এগুলো তো শরীর পক্ষে খারাপ। প্লীজ এগুলো আপনি খাইয়েন না।” বলে আবার সিগারেট টা কেড়ে নিতে হাত বাড়ালো।
তামিম এবার শক্ত করে ঐশীর হাত চেপে ধরে বলল “কষ্ট দিবি অবিশ্বাসের চাদরে আকরে ধরে রাখবি। আবার আমাকে কষ্ট কমাতেও দিবি না। তুই কি চাস আমি মরে যাই। মারতে যখন চাস একবারে মেরে ফেল।”
ঐশী ছলছল নয়নে তামিমের দিকে তাকালো। তামিম সিগারেটের ধোয়া মুখে নিয়েই ঐশীর ঠোঁট আকরে ধরে সব ধোয়া ওর মুখে ছেড়ে দিলো। কিছুক্ষণ পর ঐশীর ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে বলল “আমি যা খুশি তাই করবো তুই কিছু বলতে পারবি না।”
ঐশীর কাশি উঠে গিয়েছে। ও দৌড়ে বাথরুমে গিয়ে হরহর করে বমি করে দিলো। ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে বমি করে মেয়েটা। ধীর পায়ে রুমে এসে দেখলো তামিম সোফায় বসে আছে। আর জ্বলন্ত সিগারেট হাত চেপে ধরে রেখেছে। এমনটা দেখে ঐশী তামিমের কাছে যেতেই তামিম হনহনিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। তামিমের এমন ব্যবহারে অনেক কষ্ট পেলো ঐশী। কিছু ভালো লাগছে না তার। বুক ফেটে কান্না আসছে তার। ভালোবাসার মানুষের থেকে এমন ব্যবহার সহ্য হচ্ছে না তার। ঐশী রুমে চারপাশে তাকিয়ে পাশে থাকা একটা কাচের ফুলদানি ভেঙে দিলো। কাঁচের টুকরোটা ওর হাতের শিরা কাটতে নিবে তার আগেই একটা থাপ্পড় পরলো তার গালে। থাপ্পড়টা তামিম দিয়েছে ঐশীর গালে। ঐশীর হাত থেকে কাচের টুকরোটা কেড়ে নিয়ে মুখ চেপে ধরে চেঁচিয়ে বলে উঠলো
“তুই মরবি এতো শখ তোর। তোর সাহস তো কম না তুই আমার জানকে মেরে ফেলতে চাস। তোর সবকিছুর উপর আমার অধিকার। এমনকি মরতে হলেও আমার পারমিশন লাগবে বুঝলি তুই।” বলেই ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। তামিম আবার চলে গেলো। ঐশী কান্না করতে লাগলো। আচ্ছা সবকিছু আর কোনো দিন কি ঠিক হবে না। হাউমাউ করে কান্না করতে লাগলো ঐশী। ভালোবাসার মানুষের অবহেলা সহ্য করা সত্যিই খুব কঠিন। দুইজনই কষ্টের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। মনের কষ্টগুলো একত্র হয়ে আন্দোলন শুরু করেছে। ঐশী বারান্দায় বসে আসে বেতের দোলনায় চোখ বন্ধ করে রয়েছে। চোখের কার্ণিশ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পরছে। কিছু ভালো লাগছে না তার। মাথাটা খুব ধরেছে। হয় তো সকালের পর থেকে কান্না করার কারণে। হঠাৎ সামনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে ঐশী বাম হাতের পিঠ দিয়ে চোখ মুছে চোখ খুলে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলো নিলয়। হাতে একটা কফির মগ। ঐশী একটা মুচকি হাসি দিয়ে কফির মগটা হাতে নিয়ে এক চুমুক দিয়ে বলল
“আচ্ছা ওনি কোথায়?”
নিলয় ফুস করে নিশ্বাস ছেড়ে বলল “পাশের রুমে ড্রিংকস করছে হয় তো”
ঐশী কপাল কুচকে বলল “ড্রিংকস করছে মানে আচ্ছা যাইহোক আমি যাবো ওনার কাছে।”
নিলয় বলল “না না যেও না। ও কিন্তু এখন হুশে নেই আবার রুমও লক করে রেখেছে।”
ঐশী তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল “হুশে থাক বা না থাক আমি তো ওনাকে কষ্ট দিয়েছি। সেটাতে তো আমাকেই মলম দিতে হবে। আচ্ছা ভাইয়া আমাকে ওই রুমের ডুবলিকেট চবিটা দেও তো।”
নিলয় বলল “কিন্তু”
ঐশীর করুণ দৃষ্টি দেখে নিলয় আর কিছু না বলে চাবিটা দিয়ে দিলো। ঐশী কফির মগটা রেখে দৌড়ে বাহিরে চলে গেলো। নিলয় ঐশীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলতে লাগলো
“আল্লাহ ওদের সম্পর্কটা ঠিক করে দেও। ওদের কোনোদিনও আলাদা করে দিও না। ওরা যে একজন আরেকজনকে ছাড়া থাকতেই পারবে না।”
ঐশী দৌড়ে গিয়ে পাশের রুমের দরজা খুলে ঢুকে থমকে গেলো। সারারুমে ঐশীর বিভিন্ন ছবি। কোথাও ফাকা নেই। এমনকি ওর কনে সাজা অজ্ঞান হওয়া আর তামিমের কোলে নেওয়া পিক ও দেখলো ঐশী। পুরো রুম ড্রিংকসের বোতল ছড়ানো। সোফার দিকে তাকাতেই আঁতকে উঠলো ঐশী। মেঝেতে সিগারেটের অবশিষ্ট অংশ পড়ে রয়েছে।
তামিমের হাতে রক্ত শুকিয়ে আছে। ঐশী দৌড়ে গিয়ে তামিমের কাছে যেতেই পায়ে কাঁচ দিয়ে পা কেটে গেলো। সে সেইটা পাত্তা না দিয়ে তামিমের কাছে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে পরলো। ওর হাত ধরে ধীরে ধীরে তার ঠোঁট এগিয়ে নিয়ে গেলো। আলতো করে একটা কিস করতেই তার চোখের পানি টুপ করে তামিমের হাতে পরলো। ঐশী পরম যত্নে ব্যান্ডেজ করে দিলো তামিমকে। ঐশী এবার তামিমের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। কিছুক্ষণ এমন করেই একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আলতো করে কিস করলো তার কপালে। কপালে কিস করায় ঐশীর চোখে পানি তামিমের চোখের পাতায় পরতেই
(চলবে)