জীবনের ডাকবাক্স পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব

0
135

#জীবনের_ডাকবাক্স
[ শেষ পর্ব]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

নিঝুম খাবার নিয়ে রিহানের রুমে যায়। নিঝুম রুমে গিয়ে দেখে রিহান ঘুমিয়ে আছে। নিঝুম রিহানকে ডেকে তুলে। রিহানকে নিজের হাতে খাবার খাইয়ে দিতে থাকে। খাবার খাওয়ানোর সময় নিঝুমের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে। আর সেটা চোখ এড়ায়নি রিহানের।

— নিঝুম তুমি কান্না করছ কেন?

— আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও রিহান। আমার জন্য আজ তোমার এই অবস্থা হইছে। প্লিজ ক্ষমা করে দাও।

— আরে কান্না করোনা। আমি ঠিক আছি। গাড়িটা তোমার। তুমি কাকে তুলবে কাকে তুলবেনা তোমার ব্যাপার।

–এভাবে বলোনা, তখন তুমি যদি।

এই কথা বলে থেমে যায় নিঝুম।

— যদি কি?

— কিছুনা খাবার খাও।

তারপর রিহান আর কোনো কথা বলল না। নিঝুম রিহানকে খাবার খাইয়ে দিয়ে ঔষধ খাইয়ে তারপর সে তার রুমে চলে গেলো। এভাবেই কেটে গেলো বেশ কিছুদিন। দুজনের মধ্যে আবার সব আগের মতো হয়ে গিয়েছে। একদিন রাতে হঠাৎ করে বাসার ইলেক্ট্রিসিটি চলে যায়। এটা দেখে রিহান বেশ অবাক হলো। এভাবে হুটহাট করে তো কারেন্ট যায়না। তাহলে কি কোথাও কোনো সমস্যা হয়েছে? এটা ভেবে রিহান নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এসে ড্রইংরুমের দিকে চলে যায়। ড্রইংরুমে প্রবেশ করতেই আচমকা আবার বিদ্যুৎ চলে আসে। আচমকা সব আলো এক সাথে জ্বলে উঠে। তখনই আসিফের কানে একটা শব্দ ভেসে আসে।

— হ্যাপি বার্থডে টু ইউ রিহান।

সবাই এক সাথে আসিফকে উইশ করে। আসিফ অনেক বেশি খুশি হয়। এভাবে আসিফের সুন্দর মুহুর্ত গুলো তার ফ্ল্যাশব্যাকে সামনে চলে আসে।
আর কেউ একজন আসিফের কানের কাছে এসে বলছে, আমাদের মুক্তি দাও রিহান। আমরা আর পারছিনা এভাবে থাকতে। প্লিজ আমাদের মুক্ত করো। তখনই আসিফের ঘুম ভেঙে যায়। আসিফ চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে সে তো নিজের রুমে আছে। তাহলে কি এতক্ষণ স্বপ্ন দেখেছে সে? কিন্তু এগুলো স্বপ্ন হলেও বাস্তব মনে হচ্ছিলো তার। তার বার বার মনে পড়ছিল কেউ তার কানের কাছে এসে বলছি তাদের মুক্ত করতে। আসিফ শোয়া থেকে উঠে বসে ভাবতে থাকে। ইতিমধ্যে নিলয়ের ঘুম ভেঙে যায়। সে আসিফকে বসে থাকতে দেখে বলল,

— কিরে এতো রাতে না ঘুমিয়ে তুই বসে আছিস কেন?

আসিফ নিলয়কে সব ঘটনা খুলে বলল।

— আরে ঘুমিয়ে পড় এগুলো হয়তো স্বপ্ন ছিলো।

— স্বপ্ন নয় নিলয়, এগুলো বাস্তব। আমার অনেক কাজ বাকি।

আসিফের কথা শুনে নিলয় তো হতবাক হয়ে গেলো। সে অবাক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আসিফের দিকে।

— কীসের অনেক কাজ?

— নিঝুম আর তার মা। এখনও বন্ধি রয়েছে সেই বাড়িতে। আমাদের আর দেরি করলে হবে না। ওরা অনেক কষ্ট পাচ্ছে।

— মানে? তুইও কি পাগল হয়ে গেলি? ওরা কষ্ট পাচ্ছে মানে কি?

— ওদের লাশ এখনও দাফন করা হয়নি। ওদের লাশ দাফন করতে হবে।

— তোর কোনো কথাই বুঝতে পারছেনা আমি।

— তোকে বুঝতে হবে না। তুই আমাকে একটু সাহায্য করলেই হবে। তুই এখন আমার সাথে ঐ বাড়িতে চল।

— কিহ! এতো রাতে ঐ বাড়িতে যাওয়া কি ঠিক হবে? আর তুই যে বলছিস লাশের কথা। ত্রিশ বছর আগের লাশ তুই এখন কোথায় পাবি?

— আমি জানি লাশ কোথায় আছে। চল আমাদের এখনই বের হতে হবে।

আসিফের কথা বলার ধরনে কেমন একটা অদ্ভুত পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। এই আসিফকে আগের আসিফ মনে হচ্ছেনা। কিন্তু নিলয় আসিফকে একা ছাড়বেনা। কারণ আসিফ তার এক মাত্র বন্ধু। দু’জনে দুইটা লাইট নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। রাস্তায় একটা কাকপক্ষীও নেই। শুনশান পরিবেশ। তারা দু’জন হেঁটে যাচ্ছে। কিন্তু কারোর মুখে কোনো শব্দ নেই। নিলয়ের মাঝে অদ্ভুত এক ভয় কাজ করছে। কিন্তু আসিফের মুখে ভয়ের কোনো চাপ দেখা যাচ্ছেনা। আসিফ আগে আগে যাচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই দু’জন সেই বাসার সামনে চলে গেলো। আসিফ একবার নিলয়ের দিকে তাকাল। আসিফ লক্ষ্য করল নিলয় খুব ভয়ে আছে। আসিফ নিলয়ের কাধে হাত রেখে বলল,

— আমি আছি তো ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমার উপরে বিশ্বাস রাখ।

এবার দু’জন সাহস করে ভিতরে চলে গেলো। বাড়ির ভিতরের পরিবেশ খুব ভয়ংকর। তারউপর মাঝ রাত। আসিফ সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে থাকে। তারপর সে একটা তালাবদ্ধ রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। যে রুমে এর আগে তারা একবার ও যায়নি। এই রুম আগে থেকেই তালাবদ্ধ। কারণ এই রুমে থাকতেন রিহান। তাই এই রুমে কেউ আসেনি। পুলিশ ও এই রুম তল্লাশি করেনি। কেন করেনি কারণ এই রুমে রিহানের সব স্মৃতি রয়েছে।

— নিলয় এই রুমের ভিতরে আছে সব কিছু। এই তালাটা তোকে ভেঙে দিতে হবে।

— আমি কেন?

— তোকে যেটা বলেছি তুই সেটা কর।

নিলয় এবার তালা ভেঙে দেয়। দু’জন ভিতরে প্রবেশ করে। নিলয় হা হয়ে তাকিয়ে আছে আসিফের দিকে। আসিফকে যেনো আজ সে চিন্তেই পারছেনা। ওর মাঝে কোনো ভয় কাজ করছেনা। আসিফ তার রুমে থাকা ফ্রিজের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে।

— আসিফ আমার খুব ভয় করছে। আমার মনে হয় এখান থেকে আমাদের চলে যাওয়া উচিৎ।

— আমার আর একটু কাজ বাকি।

এই কথা বলে আসিফ জোরে টান মেরে ফ্রীজ খুলে ফেলে। তখনই একটা পঁচা গন্ধ আসে নিলয়ের নাকে। নিলয় সাথে সাথে নাক বন্ধ করে ফেলে। কিন্তু এই তীব্র গন্ধ আসিফের নাকে লাগছেনা। নিলয় আর আসিফ খেয়াল করে ফ্রীজের মধ্যে কিছু হাড়গোড়। এগুলো হাত দিয়ে আসিফ একটা বেগের ভিতরে ভরতে শুরু করে। এতো দিনে মা মেয়ের শরীরের সব গোস্তো নষ্ট হয়ে হাড় গুলো রয়ে গিয়েছে। এগুলো দেখে নিলয়ের দমবন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। নিলয় বমি করতে শুরু করে। সব বেগের ভিতরে নিয়ে আসিফ নিলয়ের সামনে এসে বলল।

— আমার সাথে চল।

— এই গুলো নিয়ে কোথায় যাবি তুই?

— গোরস্থানে।

— কিহ! আমি যেতে পারবোনা।

— ঠিক আছে তুই থাক আমি একাই যাচ্ছি।

আসিফ এই কথা বলে চলে যেতে থাকে। নিলয় কোনো উপায় না পেয়ে সেও আসিফের পিছু করতে থাকে। যদিও নিলয় প্রচন্ড ভয় পাচ্ছে। নিলয় একটা জিনিস বুঝতে পারছেনা ভীতু ছেলেটার এতো সাহাস হঠাৎ করে কীভাবে হয়ে গেলো? নিলয় যে আসিফকে কোনো প্রশ্ন করবে সেই সাহস ও পাচ্ছেনা নিলয়। এবার আসিফ একটা গর্ত করে। আর সেখানেই দাফন করে দেয় মা মেয়ের লাশ। তখনই খুব জোরে একটা বাতাস শুরু হয়ে যায়। নিলয়ের ভয়ে অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুরো স্তব্ধ হয়ে যায় এই যায়গা টা। আসিফ তাকিয়ে আছে কবরের দিকে। নিলয় আসিফের কাধে হাত রাখে। তখনই আসিফ পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে নিলয় দাঁড়িয়ে আছে।

— নিলয় আমরা এখানে কীভাবে এলাম? আর গোরস্থানে কি করছি আমরা?

আসিফের এই কথা শুনে নিলয় যেনো আকাশ থেকে পড়লো। তাহলে কি এতক্ষণ আসিফের শরীরে অন্য কেউ ছিলো?

নিলয় আসিফকে বলল — তোকে আমি বাসায় গিয়ে সব বলব আগে এখান থেকে বের হতে হবে।

এবার দু’জন তাড়াতাড়ি করে নিজের বাসায় চলে যায়। বাসায় গিয়ে হাঁপাতে থাকে দু’জন। কিছুক্ষণ পরে আসিফ বলল,

— আমরা ওখানে গেলাম কেন? আমি তো ঘুমিয়ে ছিলাম।

— তুই এখন থেকে মুক্ত।

— মানে?

নিলয় এবার প্রথম থেকে সব বলতে শুরু করল। সব কথা শুনে আসিফ যেনো হতবাক হয়ে যায়। নিলয় বুঝতে পারে আসিফের শরীরে তখন রিহান ছিলো। তারপর থেকে আসিফের সব কিছুই পরিবর্তন হয়ে যায়। এরপর থেকে তারা তাদের নতুন জীবন শুরু করে।

সমাপ্ত।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে