#জীবনের_ডাকবাক্স
[ দশম পর্ব]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ
সাদা শাড়ী পড়া কাওকে দেখতে পেয়ে আসিফ ভয় পেয়ে পিছনে সরে আসতেই সে ফ্লোরের মধ্যে বসে পড়ে। ভয়ে আসিফের শরীর দিয়ে ঘাম বের হতে শুরু করে। আসিফ দেখতে পায় সাদা শাড়ী পড়া লোকটা নিঝুম। নিঝুমের মুখে সেই পরিচিত হাসিটা লেগেই আছে। এবার নিঝুম আসিফের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। পিছনে যেতে যেতে একটা সময় আসিফের পিট দেওয়ালে ঠেকে যায়। নিঝুম আসিফের খুব কাছে চলে যায়।
— তুমি এতো ভয় কেন পাচ্ছ রিহান? আমি তো তোমার নিঝুম। আমাকে দেখো। আমি তোমার ভালোবাসা।
— আপনি আমাকে বার বার রিহান কেন বলছেন আমি আসিফ। আমি রিহান নই।
নিঝুম এবার আসিফের কাছে গিয়ে আসিফের কপালে হাত রাখতেই আসিফ তার কিছু ফ্ল্যাশব্যাক দেখতে পায়। ফ্ল্যাশব্যাক গুলো ছিল নিঝুমের সাথে কাটানোর মুহুর্ত গুলো। সে দেখতে পায় নিঝুমের সাথে ঘুরাঘুরির মুহুর্ত গুলো। কতো সুন্দর ভাবেই কেটেছে সময়।
ফ্ল্যাশব্যাক
_______________
রিহানের আজ কলেজের প্রথম দিন তাই সে রেডি হচ্ছে। তখন নিঝুম ও রেডি হচ্ছে। কারণ নিঝুম ও আজ কলেজে যাবে। দু’জন একি কলেজে আর সেম ইয়ারে পড়ছে। রিহান রেডি হয়ে নিঝুমের জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকে। তখনই রিহানের কাছে আসে রহিম মেয়া।
— রিহান তোমরা কি এখনও রেডি হওনি? কলেজে তো যেতে হবে। আজ প্রথম দিন তাই একটু তাড়াতাড়ি যাওয়া দরকার তোমাদের।
— আরে চাচা আমি তো রেডি হয়ে বসে আছি। কিন্তু নিঝুম ওর কোনো খোঁজ নেই।
তখনই তাদের কথার মাঝে চলে আসেন জাহানারা বেগম।
— কি নিয়ে কথা হচ্ছে তোমাদের মধ্যে?
রিহান বলল — কাকে নিয়ে আবার? আপনার মেয়েকে আমি কখন বলছি রেডি হতে সে এখনও রেডি হয়ে আসেনি। মনে হচ্ছে সে আজ কলেজে পাত্র দেখতে যাবে।
রিহানের কথা শুনে সবাই হেসে উঠে। কিছুক্ষণের মধ্যেই নিঝুম সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে শুরু করে। নিঝুমকে দেখে রিহান হা করে তাকিয়ে থাকে। নিঝুম এমনিতেই সুন্দরী। আজ আরো বেশি সুন্দর লাগছে। নিঝুম কখন যে রিহানের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে রিহান খেয়ালি করেনি।
— এই-যে মিস্টার চলুন।
রিহানের কানে নিঝুমের বলা শব্দ টা পৌছায়নি। নিঝুম এবার একটু জোরেই বলল।
— যাবে নাকি আমি একাই চলে যাবো?
— ওহ হ্যাঁ চলো।
এবার দু’জনেই বেরিয়ে পড়ে কলেজে যাওয়ার জন্য। কিছুক্ষণের মধ্যেই দু’জন কলেজে পৌছে যায়। তারপর ক্লাসে। তাদের সাথে কয়েকজনের পরিচয় হয়। হঠাৎ একটা মেয়ে আসে রিহানের কাছে।
— হাই আমি নীলা।
— আমি রিহান।
— আমরা কি ফ্রেন্ট হতে পারি?
— হুম অবশ্যই।
দু’জনকে কথা বলতে দেখে নিঝুম নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছেনা। নিঝুম নিজের যায়গা থেকে উঠে বিহানে কাছে এসে বলল,
— রিহাম উঠো কথা আছে তোমার সাথে।
— ওকে।
দু’জন উঠে বাহিরে চলে যায়।
— কি হইছে তোমার? হঠাৎ ক্লাস থেকে বের করে নিয়ে আসলে কেন? কিছুক্ষণের মধ্যেই তো ক্লাস শুরু হয়ে যাবে।
— ওহ ক্লাস মিস হবে নাকি ঐ মেয়েটার সাথে কথা বলতে পারছো না বলে সমস্যা হচ্ছে?
— কি বলছ এসব? তোমার কি শরীর টরীর খারাপ করছে নাকি?
— না।
— তাহলে এগুলো কি বলছ?
— কিছুনা আমি ক্লাসে যাই।
এই কথা বলে নিঝুম চলে গেলো। রিহান অবাক হয় তাকিয়ে আছে। এখানে নিঝুম তাকে ডেকে এনে কিছু না বলেই চলে গেলো? এই মেয়ের কোনো কিছুর ঠিকঠাক লাগছেনা। রিহান ও এবার ক্লাসে চলে গেলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই ক্লাস শুরু হয়ে গেলো। প্রথম দিনে তেমন একটা ক্লাস হয়নি। কিছুক্ষণের মধ্যেই ক্লাস শেষ করে বেরিয়ে আসে। দু’জন গাড়ির সামনে আসে। রিহান লক্ষ্য করে নিঝুম কোনো একটা কারণে সে এখনও রেগে আছে। কিন্তু রাগের কারণ এখনও অজানা রিহানের। এবার দু’জন গাড়ির সামনে যায়। নিঝুম গাড়িতে উঠে ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসে। এটা দেখে রিহান অবাক হলো। তারপর রিহান যখনই গাড়িতে উঠতে যাবে তখনই নিঝুম বলল,
— গাড়িতে উঠবেনা একদম। আজকে তুমি পায়ে হেঁটে বাসায় যাবে।
— কি বলো? আমি বুঝলাম না তুমি কেন এমন করছ আমার সাথে?
— তুমি কখনও বুঝবেনা।
এই কথা বলে নিঝুম গাড়ি নিয়ে চলে যায়। রিহান কিছুই বুঝলোনা। রিহান এবার নিজের পকেটে হাত দিয়ে দেখে মানিব্যাগ টাও নেই। মানিব্যাগ ও হয়তোনিঝুমি নিয়ে গিয়েছে। এই মেয়ের মাথায় কখন কি চলে বলা মুসকিল। হেঁটে যাওয়া ছাড়া আর তো কোনো উপায় ও নেই। অন্য একটা গাড়িতে যে উঠবে সেই টাকাও সাথে নেই। কি আর করার পায়ে হেঁটে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। এইদিকে আকাশের অবস্থা ভালো না। মনে হচ্ছে ঝুম বৃষ্টি নামবে। বৃষ্টিতে আবার রিহানের শরীর খারাপ হয়ে যায়। তাই তাড়াতাড়ি হাঁটতে শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই বৃষ্টি শুরু হয়। রিহান ভিজতে ভিজতে চলে যায় বাসার দিকে। অনেক সময় পরে সে বাসার সামনে গিয়ে দরজায় নক করতেই জাহানারা বেগম এসে দরজা খুলে দেয়।
— রিহান তুমি বৃষ্টিতে ভিজলে কেন?
— কি আর করব? আপনার মেয়ে আমাকে রেখেই চলে আসছে।
— তোমাদের কি ঝামেলা হইছে নাকি?
— আমিও জানিনা। সকাল থেকেই দেখছি মেডাম রেগে আছে।
— আচ্ছা আমি দেখছি তুমি গিয়ে তাড়াতাড়ি করে ফ্রেশ হয়ে নাও।
রিহান চলে গেলো ফ্রেশ হওয়ার জন্য। তারপর সবার সাথে দুপুরের খাবার খেতে বসে। নিঝুম ও এসেছে। কিন্তু সে চুপচাপ খাবার খাচ্ছে কারোর সাথে কোনো কথা বলছেনা। খাওয়া দাওয়া শেষ করে রিহান নিজের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে এলো। কিন্তু রিহান এখনও রুম থেকে বের হয়নি। তাই রহিম মেয়া রিহানের রুমে যায় রিহানকে দেখার জন্য। উনি রিহানের রুমে গিয়ে দেখে রিহান এখনও ঘুমিয়ে আছে। রহিম মেয়া রিহানের শরীর স্পর্শ করতেই দেখে রিহানের পুরো শরীর আগুনের মতো হয়ে আছে। কপালে হাত দিয়ে দেখে জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে রিহানের শরীর। রহিম মেয়া তাড়াতাড়ি করে সবাইকে ডেকে নিয়ে আসে। সাথে নিঝুম ও আসে। জাহানারা বেগম তাড়াতাড়ি করে ডাক্তার নিয়ে আসতে বলে। রহিন মেয়া চলে যায় ডাক্তার আনতে।
জাহানারা বেগম রাগি কণ্ঠে নিঝুমকে বলল,
— আজ তোর জন্য ছেলেটার এই অবস্থা হইছে। তুই ওরে একা রেখে না আসলে হয়তো ছেলেটা এতো অসুস্থ হতোনা।
নিঝুম কোনো কথা না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই রহিম মেয়া ডাক্তার নিয়ে আসে। ডাক্তার রিহাকে দেখে বলল।
— শরীরের তো অনেক জ্বর। এতো জ্বর কীভাবে আসছে?
রহিম মেয়া বলল — আসলে বৃষ্টিতে ভিজে কলেজ থেকে এসেছে। এর পর থেকেই জ্বর।
— আচ্ছা ঠিক আছে আমি ঔষধ লিখে দিয়েছি। ঠিক ভাবে খাওয়াবেন। আর আজকে রাতে একটু খেয়াল রাখবেন। আর একটু পর পর জলপট্টি দেওয়ার চেষ্টা করবেন।
এই কথা বলে ডাক্তার চলে গেলো। জাহানারা বেগম আবার বলল — নে এবার খুশি হইছিস না? ছেলেটা অসুস্থ হলো।
নিঝুম এবার কান্না করছে। তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। সে সবার আড়ালে নিজের চোখের পানি মুছে ফেলে। দেখতে দেখতে রাত হয়ে গেলো। রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে জাহানারা বেগম যখন যখন রিহানের জন্য খাবার নিয়ে যাচ্ছে তখনই নিঝুম তার আম্মুকে বলে,
— আমাকে দাও আমি রিহানকে খাইয়ে দেবো। আর তোমরা গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো আজ আমি রিহানের দেখাশোনা করব।
জাহানারা বেগম কোনো কথা না বলেই নিঝুমের হাতে খাবারের প্লেট ধরিয়ে দেয়। উনি হয়তো বুঝতে পেরেছেন নিঝুম নিজের কাজের জন্য অনুতপ্ত। তাই তিনিও কোনো কথা বলেন নাই। নিঝুম খাবারের প্লেট হাতি নিয়ে বিহানের রুমের দিকে অগ্রসর হয়।
চলবে?