জীবনের ডাকবাক্স পর্ব-০৯

0
109

#জীবনের_ডাকবাক্স
[ নবম পর্ব]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

কান্নার শব্দ শুনে আসিফের চোখ একটা যায়গায় আঁটকে যায়। সে দেখতে পায় একটা মেয়ে কান্না করছে। মেয়েটার মুখ দেখা যাচ্ছেনা। আসিফ মেয়েটার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। তখনই পিছন থেকে কেউ তার হাত চেপে ধরে।

— আসিফ তুই কোথায় যাচ্ছিস?

— ওখানে একটা মেয়ে কান্না করছে। মেয়েটার হয়তো কোনো সাহায্যের প্রয়োজন।

— আসিফ ওখানে তো কাওকে দেখতে পাচ্ছিনা। আর কীসের কান্নার শব্দের কথা বলছিস তুই?

— তুই কি আসলেই দেখতে পাচ্ছিস না কিছু?

— না।

নিলয়ের কথা শুনে এবার আসিস সেই দিকে আমার তাকায়। অদ্ভুত ভাবে মেয়েটা সেখান থেকে গায়েব হয়ে যায়। আসিফ বুঝতে পারে এটা একটা আত্মা ছিলো। এবার দু’জন নিজের বাসায় চলে যায়। বাসায় গিয়ে ভাবতে থাকে কি করা যায়! আসিফ তার আগের স্মৃতি গুলো মনে করার চেষ্টা করে। কিন্তু আসিফের কোনো কিছুই মনে পড়ছেনা।

নিলয় আসিফকে বলল — আসিফ আমার মাথায় একটা প্ল্যান এসেছে।

— কি প্ল্যান?

— তোর তো টিউশনির সময় হয়ে এসেছে। তুই ওখানে চলে যা। আর তাদের সাথে কথা বল তুই। দেখ কোনো কিছু বের করতে পারিস কিনা।

— আমার খুব ভয় করছে।

— দেখ ওরা তোর কোনো ক্ষতি করবেনা। আমি যতটা বুঝতে পারছি।

— ঠিক আছে।

— আমিও আসবো নাকি তোর সাথে?

— না।

— মনে করে অবশ্যই সব কিছু জিজ্ঞেস করবি। প্রয়োজনে আমাকে কল করিস।

— ঠিক আছে।

এই কথা বলে আসিফ বের হয়ে পড়ে। সকালে সে বাড়ির সামনে সে পুরনো বাড়ি দেখেছে সেই বাড়ি আবার নতুনের মতো হয়ে গিয়েছে। আসিফ বুঝতে পারে তারা তাহলে ফিরে এসেছে। আজ যেভাবেই হোক এর রহস্য বের করবে। এসব ভাবতে ভাবতে আসিফ বাসার ভিতরে গিয়ে সোফায় বসে। কিছুক্ষণের মধ্যেই নিঝুম আর নিঝুমের আম্মু আসিফের সামনে আসে। আসিফ তাদের সাথে নরমাল আচরণ করতে শুরু করে। সে ভুলেই গিয়েছে এখানে আসার আসল কারণ। সে নিঝুমকে পড়াতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। সেই আগের দিন গুলোর মতো। আসিফ লক্ষ্য করে নিঝুম অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকে আসিফের দিকে। নিঝুমের মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে সে যেনো কোনো এক অজানা কারণে হারিয়ে যায় নিঝুমের মাঝে। হঠাৎ করে নিঝুম আসিফকে বলল,

— স্যার আমার সাথে একটু আসুন। আম্মু বলছে আপনাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

— আচ্ছা ঠিক আছে।

এই কথা বলে আসিফ নিঝুমের পিছনে যেতে থাকে। অদ্ভুত ভাবে নিঝুম রুমে না সিঁড়ি দিয়ে উপরের দিকে যাচ্ছে। আসিফ ও নিঝুমের পিছনে যেতে থাকে কোনো প্রশ্ন ছাড়াই। এবার কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা ছাদের উপরে চলে আসে। আসিফ ছাদের উপরে এসে দেখে সেখানে দাঁড়িয়ে আছে জাহানারা বেগম। আসিফ নিঝুমের আম্মুকে দেখে বলল — আন্টি আমাকে এখানে কেন নিয়ে আসলেন?

— তোমাকে কিছু কথা বলার আছে আমার। আমি চাই তুমি আমার কথা গুলো মন দিয়ে শুনবে।

— আমাকে কি বলবেন?

— আসলে,,

এই কথা বলতেই আচমকা হাওয়ার সাথে মিলিয়ে যায় নিঝুম আর জাহানারা বেগম। আসিফ অবাক হ’য়ে গেলো। সে আসেপাশে তাকাই সে হতবাক হয়ে গেলো। এতক্ষণে যে নিজের মধ্যে ফিরে এসেছে। সে ছাদের উপরে দাঁড়িয়ে আছে। ভূতুড়ে একটা পরিবেশ। চারপাশ নিস্তব্ধতা। হঠাৎ করে কেউ আসিফের ঘাড়ে হাত রাখতেই আসিফ ভয়ে একটা চিৎকার দিয়ে উঠে।

— আসিফ আমি নিলয়।

নিলয়ের কণ্ঠ শুনে আসিফের ভয় কিছুটা কেটে যায়।

— তুই ছাদের উপরে কেন আসলি?

— আমি জানিনা। আমি তো গিয়েছিলাম নিঝুমের রুমে। আমি ছাদের উপরে এলাম কখন? আর তুই এখানে?

— আমি তোকে ফোন দিচ্ছিলাম তোকে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু দেখলাম ফোন অফ। তাই আমি আর দেরি না করে চলে এলাম। মনের মধ্যে কেমন একটা ভয় কাজ করছিলো। তারপর এখনে এসে দেখি তুই ছাদে। আচ্ছা জিজ্ঞেস করছিস?

— না, এই বাড়িতে কিছু একটা তো আছে। এই বাড়িতে আমি আসলেই অদ্ভুত ভাবে সব ভুলে যায়। আর নিঝুমকে দেখলেও আমি কেমন যেনো একটা হয়ে যাই।

— এটা হয়তো তাদের মায়া। আচ্ছা তোকে নিঝুম রুমে কেন নিয়ে আসে?

— নিঝুমের আম্মু আমাকে কিছু একটা বলতে চেয়েও বলতে পারেনি। হয়তো তারা তোর উপস্থিতি টের পেয়েছে।

— হুম। এই বাড়িটা একবার ভালো ভাবে চেক করলে কেমন হয়?

— ভালো কিন্তু পুরো বাড়ি তো ঘুটঘুটে অন্ধকার। এখানে তো কিছুই দেখা যায়না। আর সব থেকে বড় কথা এই বাড়িতে ইলেক্ট্রিসিটি ও নেই।

— আমাদের কাছে ফোন আসছেনা? ফোনের প্লাস অন কর।

এবার দু’জন ফোনের প্লাস অন করে সব গুলো রুমের ভিতরে যায়। কিন্তু সেখানে সব কিছুর পুরনো। আর ধুলোময়লা। হঠাৎ করে তাদের মনে হলো কেউ তাদের দেখছে। দু’জন ভয় পেয়ে যায়। ভয়ে তাদের শরীর কাঁপতে শুরু করে। হটাৎ তাদের কানে কারোর হাঁটার শব্দ আসে। বুঝতে পারে তাদের আশেপাশে হয়তো কেউ আছে। তারা সেটা দেখার জন্য রুম থেকে বেরিয়ে আসে। কিন্তু বাহিরে কেই নেই। দু’জনে খুব বেশি ভয় পেয়ে যায়। এই বাড়িতে থাকার শক্তি তারা হারিয়ে ফেলছে।

— আসিফ এই যায়গা টা আমার কাছে ভালো লাগছে না। আমাদের বাসার দিকে যাওয়া উচিৎ। সন্ধ্যা হয়ে আসছে।

— হ্যাঁ। আমার কাল সকালে একবার এখানে আসবো।

— সেটাই ভালো হবে মনে হচ্ছে।

এই কথা ভেবেই তারা সেই বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা নিজেদের বাসায় পৌছে যায়। রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে ঘুমাতে আসে দু’জন। হঠাৎ আসিফের ফোন বেজে উঠে। অপরিচিত নাম্বার দেখে আসিফ ফোন রিসিভ করে। ফোনের ওপাশ থেকে ভেসে আসে একটা মেয়ের কণ্ঠ।

— কে আপনি?

— ভুলে গেলেন এতো তাড়াতাড়ি?

— দেখুন আমি আপনাকে আসলেই চিনতে পারছিনা। নিজের পরিচয় না দিলে ফোন রেখে দিন।

— এতো রেগে যাচ্ছেন কেন? আপনাকে দেখে তো শান্ত মনে হয়। আর এতো সুইট একটা ছেলেকে রেগে গেলে ভালো দেখায়না।

— ফাজলামো না করে পরিচয় দেন। নাহলে ফোন রাখছি বায়।

— আরে এই-যে মিস্টার, আমি প্রিয়া বলছি।

— ওহ, আপনি?

— হ্যাঁ। কি করছেন?

প্রিয়ার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে আসিফ কল কেটে দেয়। মেয়েটা খুব বেশি কথা বলে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ে আসিফ। হঠাৎ করে আসিফের ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম ভেঙে যেতেই আসিফ চোখ খুলে নিজেকে অন্ধকার একটা রুমের মধ্যে আবিষ্কার করে। রুম পুরো ঘুটঘুটে অন্ধকার। কোনো কিছুই ভালো ভাবে দেখতে পারছেনা। বিছানার পাশে হাত দিয়ে সে নিলয়কে খুঁজতে থাকে। কিন্তু নিলয় তার পাশে নেই। আসিফ ভাবতে থাকে, এই নিলয় আবার কোথায় চলে গেলো? আসিফ বিছানা থেকে উঠে লাইট অন করতে গিয়ে বুঝতে পারে সে তার নিজের বাসায় নেই। তখনই সে ভয়ে আঁতকে উঠল। সে বুঝতে পারছেনা সে কোথায় আছে! আর এখানে সে কীভাবে এলো? হঠাৎ সে সাদা কিছু একটা দেখতে পায়। অন্ধকারের মধ্যে সেদিকে পা বাড়ায় আসিফ। ভয়ে তার শরীর ঘামতে শুরু করে। তবুও সে বুকে সাহস রেখে এগিয়ে যেতে থাকে সামনের দিকে। সে যতটা সামনে যায় সেই সাদা জিনিস টা পিছনে সরতে থাকে। রুম থেকে বের হতেই সে কিছুটা আলো দেখতে পায়। এবার সে এতক্ষণ যেটাকে সাদার কাপড় ভেবেছে সেটা আসলে একটা মানুষ। মানুষ নাকি অন্য কিছু সেটা আসিফ এখনও শিউর হতে পারেনি।

— কে ওখানে?

এই কথা বলে আসিফ এগিয়ে যেতে থাকে। আর সাদা কাপড় পড়া মানুষটা সামনের দিকে চলে যায়। কিছুদূর যেতেই সে দাঁড়িয়ে যায়। আসিফ এবার তার সামনে চলে যায়। এটা কে দেখার জন্য আসিফ মুখের দিকে তাকাতেই ভয়ে সে পিছনে সরে আসে। আর মাটির মধ্যে পড়ে যায়।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে