জীবনের ডাকবাক্স পর্ব-০৫

0
70

#জীবনের_ডাকবাক্স
[পঞ্চম পর্ব]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

রিয়া কল দিয়ে নিলয় কে কিছু একটা বলে যেটা শুনে নিলয় বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। নিলয় বুঝতে পারে রাতে সে যা দেখেছে সেটা আসলে কোনো স্বপ্ন নই। গতরাতে যা হয়েছে সেটা তাহলে বাস্তব ছিলো।

— নিলয় কি হলো কথা বলছ না কেন? এতো রাতে তুমি আমাকে কল কেন দিয়েছ? কিছু হয়েছে কি?

নিলয় কি বলবে বুঝতে পারছেনা। নিলয় এবার আসিফের দিকে এক নজর তাকায়। সে দেখতে পায় আসিফ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। নিলয় অনেক বেশি ঘাবড়ে যায়। তার মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের হচ্ছেনা। ফোনের ওপাশে রিয়া হ্যালো হ্যালো বলতে বলতে একটা সময় কল কেটে দেয়। নিলয় এখনো ফোন কানের কাছে ধরেই রেখেছে। রিয়া যে কল কেটে দিছে সেদিকে তার কোনো খবর নেই।

কিছুক্ষণের মধ্যেই আসিফের ঘুম ভেঙে যায়। আসিফ ঘুমঘুম চোখে তাকাতেই দেখে নিলয় দাঁড়িয়ে আছে। আর তার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নিলয়ের তাকিয়ে থাকা দেখে আসিফ বলল,

— কিরে তুই এতো সকালে তুই ঘুম থেকে উঠে এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেন?

— কে তুই সত্যি করে বল।

নিলয়ের প্রশ্ন শুনে আসিফ যেনো আকাশ থেকে পড়ে। রীতিমতো সে অবাক হয়ে গিয়েছে। নিজের বন্ধুর মুখে এমন প্রশ্ন শুনে অবাক না হওয়ার কিছু নেই। আসিফ নিজেকে ঠিক রেখে আবার বলল,

— কি প্রশ্ন করছিস এগুলো তুই? আমি তো আসিফ।

— তুই আসিফ না, অন্য কেউ। সত্যি করে বল।

— তুই কি পাগল হয়ে গেছিস? আমি আসিফ।

এবার নিলয় আসিফকে কিছু একটা বলে। আর আসিফ সঠিক উত্তর দেয়। তখন নিলয় ক্লিয়ার হয় এটা আসলেই আসিফ। নিলয় এবার আসিফের কাছে সব বলে। কাল রাতে নিলয় যেটা দেখেছে সেটা কোনো স্বপ্ন ছিলনা। এটা বাস্তব ছিলো। কাল রাতে নিলয় আসিফের পাশে কাওকে দেখতে পেয়েছে আর এটা সত্যিই ছিলো। এবার আসিফ ও ভয় পেয়ে যায়। তার সাথে এসব কি ঘটছে। তখনই আসিফ নিলয়ের কাছে একটা জিনিস শেয়ার করে সেটা হলো। নিলয় যখনই কোনো স্বপ্ন দেখে সেই স্বপ্নে আসিফ একটা বাক্স দেখতে পায়। যেই বাক্সর কথা আজ অব্দি আসিফ নিলয়কে বলেনি। প্রথমে আসিফ বুঝতে পারছিলোনা এই বাক্সটার রহস্য। কেন বার বার তার স্বপ্নে এই বাক্সটা আসে।

— আসিফ আমার মনে হয় আমাদের এই বাক্সটা খুঁজে বের করতে হবে। হয়তো এই বাক্সটার মধ্যেই কিছু লুকিয়ে আছে।

— কিন্তু কিভাবে এই বাক্স আমরা বের করবো? আর এই বাক্সটা কোথায় আছে আমি তো সেটাও জানি না।

— তোর মনে আছে ঐ বাড়িটার কথা যে বাড়িতে তুই তোর ছবি দেখেছিস। সেই ছবির ব্যাপারে কিছু জানতে পেরেছিস? তাদের থেকে কি কোনো উত্তর জানতে পেরেছিস?

— আমি পরের বার যখন গিয়েছি তখন আর ছবিটি সেখানে ছিলনা। আমি তো ভেবেছি ওটা আমার মনের ভুল ছিলো। তাও ভেবেছি জিজ্ঞেস করব। কিন্তু আর জিজ্ঞেস করতে পারিনি। আমি একটা জিনিস বুঝিনা। আমি যতবার তাদের জিজ্ঞেস করবো ভাবি ছবিটির কথা ততবারই আমি ভুলে যাই। তারা যখন আমার সামনে থেকে চলে যায় ঠিক তখন মনে পড়ে।

— আমার মনে হয় ঐ বাড়িতে কিছু লুকিয়ে আছে। আমার মনে হয় আমাদের এখন ওখানে একবার যাওয়া দরকার।

— এতো ভোরে?

— হ্যাঁ, আমি চাইনা খারাপ কিছু একটা হয়ে যাক। ওখানে গেলে আমরা তো কিছু একটা পাবো।

— ঠিক আছে। কিন্তু তারা তো হয়তো এখন ঘুমিয়ে আছে।

— আমরা তাদের বাসার ভিতরে যাবো না। জাস্ট বাড়িটা দেখে চলে আসবো। আর বেশি দরকার হলে বাড়ির ভিতরে যাবো। তোকে তো তারা চিনেই এটা আমাদের জন্য প্লাস পয়েন্ট হবে। কিছু জিজ্ঞেস করলে বলব মর্নিং ওয়ার্ক এর কথা বলা যাবে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই দু’জন বেরিয়ে পড়ে। সবে সকালের আলো ফুটতে শুরু করেছে। রাস্তায় কোনো গাড়ি নাই। শুনশান পুরো এলাকা। রাস্তায় কোনো মানুষ নাই। দু’জনে পায়ে হেটে চাপ যেতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা সেই বাড়ির সামনে চলে যায়। বাড়িটার সামনে গিয়ে আসিফ তো হতবাক হয়ে যায়। কারণ বাড়ির গেটে তালা ঝুলছে। বাড়ির অবস্থা এমন দেখাচ্ছে যে এই বাড়িতে কয়েকবছর ধরে কোনো মানুষ থাকেনা। কিন্তু এই বাড়ি কাল ও তো ঠিকঠাক ছিলো। এদিকে হঠাৎ করে আসিফ থমকে দাঁড়িয়ে যাওতে নিলয় বলল,

— কিরে তুই এখানে দাঁড়িয়ে গেলি কেন?

— এটাই সেই বাড়ি, যে বাড়িতে আমি পড়াতে আসি।

— কিহ? এই বাড়িতো অনেক পুরোনো দেখে যা মনে হচ্ছে।

তাদের কথার মাঝে এক ভদ্রলোকের আগমন ঘটে।

— তোমরা কারা এখানে কি চাও?

হঠাৎ কারোর কণ্ঠ শুনে দু’জন পিছনে ফিরে তাকায়। নিলয় লোকটার কাছে গিয়ে বলল,

— আচ্ছা আংকেল এই বাড়িতে কেউ থাকেনা?

— বাড়িটা দেখে কি মনে হয় তোমাদের? এই বাড়িতে ৩০ বছর ধরে কেউ থাকেনা। এটা এভাবেই পড়ে আছে।

দুজনেই খুব অবাক হয়। নিলয় আবার বলল।

— আংকেল এই বাড়িটা আসলে কার? মানে এখানে আগে কারা থাকতো জানেন কিছু?

— ৩০ বছর আগে একজন মহিলা আর তার মেয়ে এই বাড়িতে থাকতেন। হঠাৎ করেই তারা কোথায় যেনো হারিয়ে যায়। তারপর থেকে তাদের মা মেয়ের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তারপর থেকেই এই বাড়িটা এভাবে পড়ে আছে।

— আচ্ছা আংকেল এই বাড়িতে যে মেয়ে থাকতেন সেই মেয়ের নাম কি নিঝুম?

— সেটা তো আমি জানিনা। তবে আমার বাবা বলতে পারবেন। আসলে আগে এই বাসার দারোয়ান ছিলো আমার বাবা।

— আপনার বাবা কি বেঁচে আছেন?

— হ্যাঁ। কিন্তু উনি খুব অসুস্থ। খাট থেকে উঠতে পারেনা। আচ্ছা তোমরা কারা? আর আমাকে কেন এতো কিছু জিজ্ঞেস করছো?

আসিফ কিছু বলতে যাবে তখনই নিলয় বলতে শুরু করলো,

— আসলে আংকেল আমরা সাংবাদিক। আমরা টিবি চ্যানেল থেকে এসেছি। আমরা পুরনো বাড়ির উপরে কিছু তথ্য তৈরি করি।

— ওহ আচ্ছা।

— আচ্ছা আপনি কি আপনার বাবার সাথে আমাদের দেখা করিয়ে দিতে পারবেন? উনি যেহেতু এই বাসার সব কিছুই জানেন তাহলে ওনার সাথে কথা বললে আমাদের সুবিধা হতো।

নিলয়ের কথা শুনে লোকটার সন্দেহ হয় ওদের উপরে। আর তাদের দেখেও কোনো সাংবাদিক ও মনে হচ্ছেনা।

— তোমরা যদি সাংবাদিক হতে তোমাদের ক্যামেরা কই?

প্রশ্ন শুনে দু’জন দু’জনের মুখের দিকে তাকায়। তখনই নিলয় আবার বলল,

— আসলে আংকেল আমরা আগে খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য এসেছি। প্লিজ আপনার বাবার সাথে আমাদের কথা বলিয়ে দেন।

— ঠিক আছে, কিন্তু আমি তোমাদের সাথে সময় দিতে পারবোনা। আমি তোমাদের বাবার কাছে নিয়ে গিয়ে আবার ফিরে আসবো।

— ঠিক আছে।

এবার দু’জনে ভদ্রলোকের সাথে তার বাসার দিকে চলে যায়। তারা ভাবছে ওখানে গেলে কিছু একটা তো তারা জানতে পারবে। হয়তো এই লোকের থেকেই সব কিছুর রহস্য জানা যাবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই বাসার সামনে চলে যায়। ভদ্রলোক ওদের বাহিরে দাঁড়াতে বলে সে ভিতরে চলে যায়। কিছুক্ষণ পরে উনি আবার বের হয়ে আসে।

— বাবা তোমরা ভিতরে যাও আমি তাহলে এখন যাই। আর বাবা ভিতরে আছে।

এই কথা বলে ভদ্রলোক চলে যায়। নিলয় আসিফ দু’জন দু’জনের দিকে তাকিয়ে ভিতরে চলে যায়। তারা রুমের ভিতরে গিয়ে দেখে একজন ৮০ বছর বয়সের লোক শুয়ে আছে। আসিফ আর নিলয় বয়স্ক লোকের সামনে গিয়ে তাকে সালাম দেয়। লোকটা সালাম নেওয়ার সময় আসিফের দিকে তাকিয়ে স্তব্ধ হয়ে যায়। বয়স্ক লোকটি হঠাৎ করে কেমন যেনো হয়ে যায়। এই লোকের এমন অবস্থা দেখে দু’জনেই অবাক হয়ে যায়। লোকটা আসিফের দিকে তাকিয়ে এমন করছে। কিন্তু লোকটার এমন করার কারণ কি?

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে