#জীবনের_ডাকবাক্স
[চতুর্থ পর্ব]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ
ফোনের ওপাশ থেকে কিছু একটা শুনে স্তব্ধ হয়ে যায় নিলয়। আসিফ ব্যাপারটা বুঝতে পেরে নিলয়কে বলল,
— কিরে কি হইছে কে কল দিয়েছে?
— রিয়া।
— রিয়ার কিছু হইছে নাকি? আর তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন?
— রিয়ার কিছু হয়নি। কিন্তু,,
— কিন্তু কি?
— প্রিয়ার নাকি এক্সিডেন্ট হয়ে গিয়েছে। আর ওর অবস্থা নাকি বেশি একটা ভালো না।
— কি বলছিস? কীভাবে হলো?
— জানিনা। রিয়া আমাকে শুধুই এইটুকু বলল।
— নিলয় আমাদের একবার হাসপাতালে যাওয়া দরকার।
— এতো রাতে কীভাবে যাবি? রাস্তায় এতো রাতে গাড়ি ও নেই। আমরা নাহয় কাল গিয়ে দেখে আসবো।
— ঠিক আছে।
দু’জনের মাঝে নিরবতা বিরাজ করতে শুরু করে। হঠাৎ করে এমন একটা খবর আসবে কেউ ভাবতেও পারছেনা। আসিফ ভাবছে মেয়েটা তো খুব ভালো ভাবেই আমার সাথে কথা বলছিল। হঠাৎ করে কি থেকে কি হয়ে গেলো? আসিফের মাথা কাজ করছেনা। কি হচ্ছে এসব?
— আচ্ছা নিলয় এসব আমার জন্য হচ্ছেনা তো?
আসিফের কথা শুনে অবাক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নিলয়।
— তোর জন্য কেন এসব হবে?
— আমার কেন জানি মনে হচ্ছে, মেয়েটা আমার সাথে কথা বলার জন্য এমন হইছে।
— এটা তো একটা এক্সিডেন্ট। বাদ দে। এখানে তোর কি?
নিলয় আসিফকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আসিফ মনে মনে খুব ভয় পাচ্ছে। অজানা একটা ভয় তার মনের মধ্যে চলে আসছে। কোনো কিছুই যেনো তার সাথে ঠিকঠাক ভাবে হচ্ছেনা।
কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা নিজেদের বাসায় পৌছে যায়। বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে দু’জন ঘুমিয়ে পড়ে।
হঠাৎ করে আসিফের কানে একটা শব্দ ভেসে আসে। শব্দটা শুনে আসিফ চোখ মেলে তাকায়। সে দেখতে পায় দরজার সামনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। অন্ধকারে মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছেনা। আসিফ ভালো করে দেখার চেষ্টা করে। হালকা আলোতে আসিফ ভালো ভাবে বুঝার চেষ্টা করে। কিন্তু সে কিছুই বুঝতে পারেনা। তবে এটা যে কোনো মেয়ে সেটা সে শিউর হলো। মেয়েটা আসিফের দরজা থেকে চলে যায়। আসিফ এবার খাট থেকে নেমে এগিয়ে যেতে থাকে। আসিফ যত এগিয়ে যায় সে তত পিছনে যেতে থাকে। একটা সময় মেয়েটা সিঁড়ি বেয়ে ছাদের উপরে যেতে থাকে। আসিফ ও তার পিছনে যেতে থাকে। আসিফ এবার খেয়াল করে পড়নে সাদা শাড়ী। চুল গুলো এলোমেলো। আসিফ এখনও মেয়েটার মুখ দেখতে পায়নি। মেয়েটা ছাদের উপরে দাঁড়িয়ে আছে। আসিফ তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু একটা ঘটবে। এতো রাতে একা একটা মেয়ে এখানে কি করছে? আসিফ কিছুটা ভয়ে আছে। মেয়েটার অদ্ভুত আচরণ দেখে। আসিফ ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন করল,
— কে আপনি?
কোনো রেসপন্স নেই। এটা দেখে আসিফ আবার প্রশ্ন করল। তাও কোনো রেসপন্স নেই। আসিফ এবার অসম্ভব রকমের ভয় পেয়ে যায়। এতো রাতে একটা মেয়ে ছাদের উপরে কি করছে? আসিফ এবার মেয়েটার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল।
— কথা বলছেন না কেন? কে আপনি? এতো রাতে এখানে কি করছেন?
তাও কোনো রেসপন্স নেই।
— আপনি কি কানে শুনেন না? কথা কেন বলছেন না?
হঠাৎ করে দমকা হাওয়া শুরু হয়। এতে করে মেয়েটার চুল গুলো উড়তে শুরু করে। তখনই মেয়েটা আসিফের দিকে তাকায়। মেয়েটার মুখ দেখে আসিফ অনেক বড় একটা ঝটকা খায়। তার পায়ের তোলার মাটি যেনো সরে গেছে। সাথে সাথে আসিফ একটা চিৎকার দিয়ে উঠে।
— আসিফ কি হইছে তোর? এমন চিৎকার করছিস কেন?
— ও, ও,ও,
এই কথা বলে আসিফ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এদিকে নিলয় কিছুই বুঝতে পারছেনা এই আসিফের হঠাৎ করে কি হয়ে গেলো? নিলয় এবার পানি নিয়ে আসিফের চোখেমুখে ছিটিয়ে দেয়। তাও তার কোনো রেসপন্স নেই। নিলয় আসিফের গায়ে হাত দিয়ে দেখে আসিফের পুরো শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। হঠাৎ করে এতো জ্বর হলো কীভাবে? নিলয় আসিফের মাথায় জলপট্টি দিতে থাকে। জ্বর যেনো কমছেই না। এতো রাতে তো ডাক্তার ও পাওয়া যাবেনা। আসিফ আর কোনো উপায় না দেখে রিয়ার নাম্বারে কল দেয়। রাত অনেক হয়ে যাওয়ায় রিয়া ফোন রিসিভ করেনি। নিলয় খুব চিন্তিত হয়ে পড়ে। এবার নিলয়ের চোখ পড়ে জানালার দিকে। নিলয়ের কেনো জানি মনে হচ্ছে জানালার পাসে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। এতো রাতে এখানে কে থাকতে পারে? নিলয় এবার জানালার কাছে গিয়ে জানালা খুলে দেখে ওখানে কেউ নেই। নিলয় যখনই পিছনে ঘুরে দাঁড়ায় তখনই সে চমকে উঠে। নিলয় খেয়াল করে আসিফের পাশে বসে আছে একটা মেয়ে। নিলয় এটা দেখে পুরো অবাক হয় যায়। এই মেয়ে এখানে কি করে আসলো? নিলয়ের মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। নিলয়ের পা যেনো চলছে না। মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না। নিলয় দেখতে পায় মেয়েটা আসিফের চুলে হাত ভুলিয়ে দিচ্ছে। নিলয় নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা। এতো রাতে তাদের রুমে কোনো মেয়ে কীভাবে আসে? রুমের দরজা ও বন্ধ। কি হচ্ছে এসব? এটা কি আসলেই সত্যি নাকি চোখের ভুল? নিলয় নিজের চোখ বন্ধ করে আবার তাকাতেই সে দেখতে পায় ওখানে কেউ নেই। নিলয় বুঝতে পারে এটা তার মনের ভুল। সে এবার আসিফের কাছে গিয়ে মাথায় হাত দিয়ে দেখে জ্বর কমেছে নাকি। মাথায় হাত দিতেই নিলয় আরো বেশি অবাক হয়। কারণ আসিফের শরীরের কোনো জ্বর নেই। আসিফ তো আগের মতই নরমাল আছে। নিলয় এবার আসিফকে ডাক দেয়। নিলয়ের ডাক শুনে আসিফের ঘুম ভেঙে যায়।
— কি হইছে নিলয়? তুই এতো রাতে জেগে আছিস কেন?
আসিফের প্রশ্ন শুনে নিলয় পুরো থ হয়ে যায়। আসিফ কি কিছুই জানেনা আমি কেন জেগে আছি?
— আসিফ তোর কি হইছে সেটা বল।
— আমার কি হবে? আমার তো মাত্র ঘুম ভেঙেছে। তুই এতো ঘামাচ্ছিস কেন? শরীর ঠিক আছে তো?
— আমি ঠিক আছি, তুই ঠিক নেই।
নিলয়ের কথা শুনে আসিফ হেসে উঠে।
— আমি তো দিব্বি ঠিক আছি। কি হইছে বল। রিয়ার সাথে ঝগড়া হইছে নাকি?
— দেখ এটা ফাজলামো করার সময় না। একটু আগে তুই চিৎকার দিয়ে উঠলি, তারপর কিছু একটা বলতে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছিস। তারপর তোর শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছিলো।
নিলয়ের কথা শুনে আসিফ একটু অবাক হয়। এতো কিছু কখন হয়ে গেলো? আসিফ মনে করার চেষ্টা করে আসলেই কি তার সাথে এমন কিছু হয়েছে? কিন্তু সে কিছুতেই মনে করতে পারছেনা। তার শুধুই ঘুমানোর সময়ের কথা মনে আছে। তারপর কি হইছে তার কিছুই মনে নেই।
— আসিফ কিছু বল।
— আমি তো কিছুই মনে করতে পারছেনা। আমার সাথে এতো কিছু হয়ে গেল আর আমি জানবোনা। আমি বুঝতে পারছি। তুই আমাকে নিয়ে একটু বেশি চিন্তা করিস তাই হয়তো কোনো খারাপ স্বপ্ন দেখেছিস। আয় ঘুমিয়ে পড়।
আসিফের এমন নরমাল কথাবার্তা শুনে নিলয় চিন্তায় পড়ে যায়। তাহলে কি এগুলো স্বপ্ন দেখেছে? তখনই তার চোখে ভেসে ওঠে সেই মেয়েটা। নিলয় নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই নিলয় ও ঘুমিয়ে পড়ে।
সকালে ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙে যায় নিলয়ের। নিলয় ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে রিয়া কল দিয়েছে। আর রিয়া তো এতো সকালে কল দেয়না। তাহলে রিয়া আজ এতো সকালে কেন কল দিয়েছে? এসব চিন্তা করতে করতেই কল বাজতে বাজতে কেটে যায়। রিয়া আবার কল দেয়। এইবার দেরি না করে ফোন রিসিভ করে।
ফোন রিসিভ করে হ্যালো বলতেই রিয়া নিলয়কে কিছু একটা বলে যেটা শুনে নিলয় বাকরুদ্ধ হয়ে যায়।
চলবে?