#জীবনের_ডাকবাক্স
[দ্বিতীয় পর্ব]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ
আসিফ ছাত্রীর বাসায় এসে ভিতরে ঢুকতেই সে স্তব্ধ হয়ে যায়। কারণ কাল যে ছবিটা ছিলো সেই ছবিটা আর সেখানে নেই। ব্যাপারটা অদ্ভুত লাগছে তার কাছে। সে গিয়ে সোফায় বসে অপেক্ষা করে। কিছুক্ষণ পরে নিঝুম সিঁড়ি দিয়ে নামতে শুরু করে। নিঝুম একা সাদা জামা পড়েছে। আসিফ অপলক ভাবে তাকিয়ে আছে নিঝুমের দিকে। আসিফ মেয়েটাকে দেখলেই কেন জানি হারিয়ে যায়। এতো সুন্দর একটা মেয়ে, আজকে তাকে আরো বেশি সুন্দর লাগছে। সাদা ড্রেসটা যেনো মেয়েটাকে গিলে খাচ্ছে। আর মেয়েটার মুখে সেই পাগল করা মিষ্টি হাসি। নিঝুমযে কখন আসিফের সামনে এসে বসেছে আসিফ খেয়াল করেনি।
–স্যার!
অবশেষে নিঝুমের ডাকে নিজের মধ্যে ফিরে আসে আসিফ।
— স্যার এভাবে কি দেখছেন আপনি?
— কিছুনা, বই বের করো।
এবার নিঝুম বই বের করে। আসিফ কিছুক্ষণ নিঝুমকে পড়া বুঝিয়ে দিতে থাকে। একটু পরে নিঝুমের আম্মু চা নিয়ে আসে আসিফের জন্য। আসিফ হাতে চা নিয়ে ধন্যবাদ বলে চায়ের কাপে চুমুক দেয়। চায়ে চুমুক দিতেই নিজের অজান্তে একটা শব্দ বের হয়ে আসে আসিফের মুখ থেকে।
— অসাধারণ।
— বাবা চা কি ভালো হইছে?
— এতো ভালো চা আমি মনে হয় জীবনে প্রথম খেয়েছি। আপনার চা তো খুব ভালো হইছে আন্টি।
— ধন্যবাদ বাবা।
— আচ্ছা আন্টি একটা কথা বলার ছিলো।
— হ্যাঁ বলো।
— এতো বড় বাড়িতে কি আপনারা দু’জন থাকেন? আর কেউ নাই? মানে আংকেল কি আপনাদের সাথে থাকেনা?
মা-মেয়ে দুজন দু’জনের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আন্টি বলল,
— আসলে বাবা কীভাবে যে বলি। আসলে একটা গাড়ি দুর্ঘটনায় তোমার আংকেল গত হয়েছে।
— সরি আন্টি।
— সমস্যা নেই। আমি যাই রান্না বাকি আছে। আর এই খাম টা রাখো।
— কীসের খাম এটা?
— বাসায় গিয়ে দেখো।
এই কথা বলে ভদ্রমহিলা চলে গেলেন। আসিফ আবার নিঝুমের পাড়ায় মনোযোগ দেয়। পড়ানোর মাঝে আসিফ বলল,
— আচ্ছা নিঝুম তোমাদের কলেজের নাম যেনো কি?
— কথাটা শুনে নিঝুম একটু চুপচাপ হয়ে যায়।
— কি হলো? তুমি কোন কলেজে পড়ো?
— স্যার আমার ওয়াশরুমে যেতে হবে। এসে সব বলছি। পেটে প্রচন্ড ব্যাথা শুরু হইছে।
— আচ্ছা ঠিক আছে।
তারপর নিঝুম উঠে চলে যায় ওয়াশরুমের ভিতরে। আর আসিফ একাই বসে থাকে। আর সে পুরো বাড়িটা ভালো করে দেখছে। বাড়িটা খুব সুন্দর ভাবেই গুছিয়ে রাখা সব কিছুই। এতো বড় বাড়ি মাত্র দু’জন থাকে। কিছুক্ষণ পরে নিঝুম ফিরে আসে।
— স্যার আজকে আর পড়তে পারবোনা আমার শরীর খুব খারাপ লাগছে।
আসিফ নিঝুমের দিকে তাকিয়ে ব্যাপারটা বুঝতে পেরে সে সেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। বাড়ির দরজা থেকে একটু বাহিরে আসতেই তার মনে পড়ে আন্টি কে তো কিছু একটা জিজ্ঞেস করার কথা ছিলো। কিন্তু সেটা সে জিজ্ঞেস করতে ভুলেই গিয়েছে। (মানে সেই ছবিটার কথা) কাল মনে করে জিজ্ঞেস করবে বলে সে তার বাসার দিকে চলে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই আসিফ বাসায় পৌছে যায়।
নিলয় আসিফের কাছে এসে বলল,
— কিরে জিজ্ঞেস করছিস নাকি?
— না ভুলে গেছিলাম।
— হঠাৎ করে তোর এতো ভুলে যাওয়ার রোগ কীভাবে হলো? গ্রামে থাকতে তো তুই এমন ছিলি না।
— বাদ দে তো। হয়তো একটু বেশিই প্রেশার পড়ছে, সেই জন্য এমন হচ্ছে।
— হতে পারে, আচ্ছা তুই থাক আমি আজ আমার গার্লফ্রেন্ড এর সাথে মিট করব।
— কেন?
— আজ ওর জন্মদিন। আর জন্মদিনের পার্টির আয়োজন করছে, তুই যাবি নাকি?
— না,এসব পার্টি আমার ভালো লাগেনা।
— গেলে ভালো হবে আমার গার্লফ্রেন্ড এর সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে পারতাম।
— আচ্ছা ঠিক আছে যাবো।
এবার দু’জন বেরিয়ে পড়ে। কিন্তু রাস্তায় কোনো গাড়ি নেই। হঠাৎ করে গাড়ি সব কোথায় হাওয়া হয়ে গেলো? হঠাৎ তাদের সামনে একটা প্রাইভেট কার এসে দাঁড়িয়ে যায়। গাড়ির গ্লাস খুলতেই আসিফ দেখে যে নিঝুম।
— স্যার আপনি এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?
— আসলে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি। আমি আর আমার বন্ধু একটা পার্টিতে যাচ্ছি। কিন্তু এখন গাড়ি পাচ্ছিনা।
— আপনাদের যদি কোনো সমস্যা না হয় তাহলে আমি আপনাদের নামিয়ে দিয়ে আসতে পারি।
— তুমি কেন কষ্ট করবে?
— আরে উঠন তো।
— নিলয় ও আমার ছাত্রী নিঝুম।
— কে?
— এই-যে ও!
এই কথা বলে আসিফ হতবাক হয়ে যায়। এখানে তো কেউ নেই। তাহলে এতক্ষণ এখানে কে ছিলো? আসিফ তো স্পষ্ট নিঝুমকে এখানে দেখলো। তার সাথেও কথা হলো।
— ভাই তোর শরীর ঠিক আছে তো? রাস্তায় একটা কাকপক্ষী ও নেই। আমি টেনশনে আছি গাড়ি পাবো নাকি সেটা নিয়ে, আর তুই মজা করতে শুরু করলি।
— আমি মজা করছিনা। একটু আগে নিঝুম গাড়ি নিয়ে আমার সামনে এলো আর আমি ওর সাথে কথা বলছি। ও আমাদের লিভ দেওয়ার কথাও আমাকে বলছে।
— আমি কেনো কোনো গাড়ি এখানে দেখলাম না। আমি তো তোর সাথেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমার তো এখন মনে হচ্ছে তুই মেয়েটার প্রেমে পড়েছিস।
— আরে ভাই এমন কিছুই না।
— আচ্ছা বাদ দে। তুই মেয়েটার একটা ছবি তুলে এনে দিস আমাকে।
— ঠিক আছে।
–এখন আর এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে একটু হেঁটে যাই, যদি সামনে কোনো গাড়ি পাই উঠে যাবো।
দু’জনে হাঁটতে শুরু করে। আসিফ শুধুই নিঝুমের কথা চিন্তা করছে। নিঝুম বার বার তার ভাবনায় কেন আসে? এটা আদোও ভাবনা নাকি অন্য কিছু? এই মেয়ের মুখ কেন বার বার আসিফের সামনে ভেসে উঠে? এসব ভাবছে আর আনমনে হেঁটে চেয়ে চলছে আসিফ। নিলয় যে তার সাথে নেই সেটাও খেয়াল করেনি সে। নিলয় তাড়াহুড়ো করে হেঁটে আসিফের থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। আর এদিকে আসিফ আনমনে হেঁটে চলছে। সে কখন যে রাস্তার মাঝখানে চলে আসছে সে বুঝতেও পারেনি। অনেক গতিতে একটা ট্রাক তার দিকে এগিয়ে আসছে। সেদিকে তার কোনো খেয়াল নেই। ট্রাক জোরে জোরে হর্ণ দিতে থাকে। হর্ণেটের শব্দ আসিফের কানে আসছেনা। নিলয় হর্ণেটের শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখে আসিফ রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাঁটছে। এটা দেখে নিলয় ও চিৎকার দিয়ে আসিফ আসিফ বলে ডাকে। কিন্তু কোনো শব্দ আসিফের কানে আসছেনা। সে-তো হারিয়ে গিয়েছে নিঝুমের ভাবনায়। এদিকে নিলয় দৌড়ে আসতে থাকে। কিন্তু সে অনেক টা দূরে চলে গেছে হেঁটে। ট্রাক প্রচন্ড গতিতে আসছে। ট্রাক যখন আসিফের খুব কাছে চলে আসে তখন আসিফ খেয়াল করে। আসিফ এই সময় কী করবে বুঝতে পারছেনা। সে যে সরে যাবে সেই অবস্থায় ও নেই। নিলয় ও দাঁড়িয়ে গিয়েছে। সে বুঝতে আরে তার আর কিছুই করার নেই। তার চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করে।
এদিকে ট্রাক যখনই আসিফের সামনে চলে এলো তখন আসিফ নিজের চোখে বন্ধ করে ফেলে। আচমকা কিছু একটা আসিফকে জোরে একটা ধাক্কা দেয়। ধাক্কা খেয়ে আসিফ রাস্তায় এক সাইডে পড়ে যায়। আর খুব গতিতে ট্রাক চলে যায়। নিলয় ভয়ে কান্না করতে শুরু করে। ট্রাক চলে যাওয়ার পরে নিলয় খেয়াল করে আসিফ রাস্তার এক সাইডে দাঁড়িয়ে আছে। এটা দেখে নিলয় এক দৌড়ে আসিফের কাছে চলে আসে।
— আসিফ তুই ঠিক আছিস তো? তোর কোথাও লাগেনি তো? আমি তো খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম।
— আমি ঠিক আছি কিন্তু আমাকে কে বাঁচিয়েছে? তাকে তো দেখতে পারছিনা।
— আমি তো সব আশা ছেড়েই দিছিলাম। তুই ঠিক আছিস এটাই অনেক।
— নিলয় কেউ তো এখানে আছে। যে আমাকে সব সময় সাহায্য করছে।
এই কথা বলতেই আসিফের চোখ একটা যায়গায় আঁটকে যায়।
চলবে?