#ধারাবাহিক গল্প
#জীবনের গোপন ডাকবাক্স
শেষ পর্ব
মাহবুবা বিথী
“মা আমি আর ঐ বাড়িতে কোনোদিন ফিরে যাবো না।”
—-এটা তুই কি বলছিস? স্বামী স্ত্রীর মধ্যে এরকম হালকা পাতলা মান অভিমান হয়েই থাকে। তাই বলে কেউ নিজের সোনার সংসার ফেলে আসে? এটা একমাত্র বোকারাই করে।
—-মা এটা হালকা পাতলা নয়। তুমি কিছু জানো না বলেই একথা বলছো। এখন এবিষয়ে আর কিছু বলতে চাইছি না। আমি প্রচন্ড ক্ষুধার্ত।আমাকে কিছু খেতে দাও।
—-তুই ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে আয়। আমি তোর জন্য খাবার আনছি।
সাথী ক্লসেট থেকে একটা ম্যাক্সি বের করে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। আসলে ওর পুরো শরীরে প্রচন্ড ব্যথা। ঢিলাঢালা জামা পড়তে ইচ্ছা করছে। এমনকি মাথার চুলের গোড়াগুলো পর্যন্ত প্রচন্ড ব্যথা করছে। ওয়াশরুমে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে কামিজটা খুলে ম্যাক্সিটা পড়তে গিয়েই আয়নাতে রোশানের আঘাতের চিহ্নগুলো চোখে পড়লো। ঘাড়ের কাছে, বুকে কোমরে তলপেটে ওর আঘাতের চিহ্নগুলো কালশিটে হয়ে আছে। রোশান ওকে বলতো এমন জায়গায় আঘাত করবে যা ও কাউকে দেখাতে পারবে না। হঠাৎ ওর মনে পড়লো সারাজীবন ওর বোন দিতির পিছনে ও লেগে ছিলো। সবসময় দিতির ক্ষতি করার চেষ্টা করতো। কিন্তু দিতি নিরবে ওর অত্যাচারগুলো হজম করেছে। শুধু ফাহিমভাইকে যখন ও মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ফাসিয়ে দিলো সেদিনই ওকে শুধু একটা থাপ্পড় দিয়েছিলো। বিনা অপরাধে ও বোনটার পিছনে সারাজীবন লেগেছিলো। অথচ আজ রোশান ওকে বিনা অপরাধে এভাবে দু,মাস ধরে আঘাত করে গেল। ও দুমাস সহ্য করে সম্পর্ককে জলাঞ্জলি দিয়ে ফিরে আসলো। আর ওর বোনটা এতোদিন ধরে সহ্য করে গেল। হয়তো সেই অপরাধের ফল ওকে এভাবে ভোগ করতে হলো। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে ওর মা সালেহা খাতুন প্লেটে করে ভাত নিয়ে এসেছেন। সাথী দুগাল খাইয়ে দিতেই ও আর খেতে চাইলো না। দিতির সাথে করা অপরাধের গ্লানি ওকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেতে লাগলো। ও পানি খেয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। ওর মা জোর করলো কিন্তু এতে কোনো লাভ হলো না। কিচেনে এটো প্লেট রেখে হাত ধুয়ে সালেহা বেগম মেয়ের পাশে এসে বসলেন। এবং মেয়েকে শ্বশুর বাড়িতে ফিরে যাওয়ার জন্য বুঝানোর চেষ্টা করলেন। মায়ের কথায় বিরক্ত হয়ে সাথী একসময় শোয়া থেকে উঠে বসলো। তারপর ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
—-তোমার কাছে আমার জীবনের মুল্য বেশী নাকি আমার বড় লোক শ্বশুর বাড়ির মুল্য বেশী।
—-থাক,এতো বড় বড় কথা বলতে হবে না। ডিভোর্স হয়ে গেলে এই সমাজ তোর দিকে আঙ্গুল তুলে বলবে তুই ডিভোর্সি। তোর চরিত্রে ঝামেলা আছে বলেই তোকে ডিভোর্স দেওয়া হয়েছে। সমাজের এই কটু কথাগুলো সইতে পারবি তো?
—-আগে হলে পারতাম না। এখন সব সয়ে নিতে পারবো। কারণ এগুলো আমার পাপের শাস্তি।
এরপর ওর ঘাড়ের কাছে চুলগুলো সরিয়ে মাকে দেখালো। ওখানে একটা তীব্র কালশিটে দাগ পড়ে আছে। সালেহা বেগম চমকে উঠলেন। সেদিকে তাকিয়ে সাথী কাষ্ঠ হাসি হেসে বললো,
—-এটা তো কিছুই না। আমি তোমার সামনে উলঙ্গ হতে পারলে বুঝতে ও আমাকে কিভাবে নির্যাতন করেছে। সেই বিয়ের দিন থেকে কাল অবধি একদিনের জন্য ও বাদ দেয় নাই। প্রতিরাতে মদ খেয়ে এসে আমার উপর অত্যাচার করতো। ছোটোবেলা থেকে বাবা মায়ের আদর ভালোবাসা না পেয়ে বড় হয়েছে। তাই ওর মাঝে মায়া মমতা ভালোবাসা কোনো কিছুর অবশিষ্ট নাই। আমার পক্ষে ওর সাথে আর থাকা সম্ভব নয়।
সালেহা বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেয়ের রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। সোলেমান সাহেব রাতে অফিস থেকে বাড়ি ফিরে সবটা শুনে বললেন,
—-তোমার মেয়ে নাকি ভালোবেসে বিয়ে করেছে? তাহলে ছেলের এই বিষয়গুলো ওর চোখে পড়েনি? আমার তো প্রথম দেখেই মনে হয়েছিলো এই ছেলের চরিত্রে ঘাপলা আছে। তখন তো মা মেয়ে ছেলের হয়ে সাফাই গাইলে।
ছেলের টাকা পয়সা দেখে তোমরা মা মেয়ে চোখে ঠুলি পড়েছিলে।
সালেহা বেগম শুনেই গেলেন। আজকে উনার আর কিছু বলার মুখ নেই। সোলেমান সাহেব মাগরিবের নামাজ পড়ে সান্ধ্যকালীন চা খেয়ে সাথীর রুমে গিয়ে দেখেন, ও ঘুমের মধ্যে ডুকরে ডুকরে কাঁদছে আর বলছে,
“রোশান তুমি আমাকে এভাবে আর কষ্ট দিও না। আমি নিতে পারছি না। প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও।” ডিম লাইটের মৃদু আলোতে সাথীর মুখটা দেখে উনি চমকে উঠলেন। মেয়ের মুখটা বড্ড ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে। উনি একসময় সাথীর মাথায় হাত রাখেন। সাথে সাথে ওর ঘুম ভেঙ্গে যায়। সাথী চমকে উঠে ওর বাবার দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। সোলেমান সাহেব আলতো করে ধাক্কা মেরে বললেন,
—–তুই ওভাবে কেন তাকিয়ে আছিস। ভালো করে দেখ আমি তোর বাবা।
একসময় ঘুমের রেশ কেটে গেলে সাথী অনেকটা স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরে আসে। তারপর বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,
—-আব্বু কাল আমাকে একটু কোর্টে নিয়ে যাবে?
—+কেন?
—-ফাহিম ভাইয়ের উপর করা আমি আমার মামলাটা তুলে নিবো।
সোলেমান একটা বড় দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
—-সেই তো সঠিক লাইনে ফিরলি তবে বড্ড দেরী হয়ে গেল।
আমেনা খাতুন ঘরে বসেই বুঝতে পারছেন সাথীর সাথে খারাপ কিছু একটা হয়েছে। উনি ভাবছেন,কর্মফল মানুষকে আসলেই ভোগ করে যেতে হয়। হঠাৎ উনার দরজায় কড়ার নাড়ার শব্দ শুনে ভাবছেন,
এখন আবার কে এলো? সোলেমান তো রাত দশটার দিকে এসে দেখা করে যায়। আর সালেহা বেগম তে ভুলেও উনার মুখ দর্শন করেন না। এখন তো রাত আটটা বাজে। হাঁক দিয়ে বললেন,
—-কে?
—-আমি সাথী দাদীমা।
উনি এসে দরজা খুলে সাথীর দিকে তাকিয়ে অবাক হলেন। মেয়ের চেহারার একি হাল হয়েছে। সাথীর দিকে অপলক তাকিয়ে থাকলেন,
সাথী দাদীর দিকে তাকিয়ে বললো,
—-আমাকে তোমার ঘরে ঢুকতে দিবে না?
সম্বিত ফিরে পেয়ে বললেন,
—-আয়,ভিতরে আয়।
—-অবশেষে আসতে বললে আমায়,ভেবেছিলাম দরজা থেকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিবে।
—-সবাইকে নিজের মতো ভাবা ঠিক নয়।
সাথী জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে দৃষ্টিটা মেলে ধরে বললো,
—+দাদী আমার সংসারটা ভেঙ্গে গেছে।
ও আর কিছু বলতে পারলো না। কান্নাগুলো গলার কাছে দলা পাকিয়ে আসলো। চোখের কোন বেয়ে দু’ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। আমেনা বেগমের চোখ এড়িয়ে ও মুছে ফেললো। সাথীর কথা শুনে আমেনা বেগমের মনটা খারাপ হয়ে গেল। উনি একদম নিশ্চুপ হয়ে গেলেন। ভাবছেন উনার ছেলে এই কষ্ট কিভাবে সামলাবে? দুটো মেয়ের জীবনে সুখ আসলো না। দাদীকে চুপ থাকতে দেখে সাথী বললো,
—–কিছু বলছো না যে?
—+কি বলার আছে এখানে? তুই তো নিজে পছন্দ করে বিয়ে করেছিস। ছেলেকে ভালো করে দেখিসনি?
—আসলে এগুলো আমার পাপের শাস্তি। আর একটা কথা তুমি শুনলে খুব খুশী হবে। কাল কোর্টে গিয়ে ফাহিম ভাইয়ের কেসটা তুলে নিবো।
এ কথা বলে সাথী আর অপেক্ষা করলো না। ওঘর থেকে বের হয়ে নিজের ঘরে এসে বিছানায় শুয়ে পড়লো। রাতে ও ডিনার না করেই শুয়ে পড়লো। কিন্তু ঘুমাতে পারলো না। সারা রাত এপাশ ওপাশ করে পার করে দিলো। আসলে ছোটো বেলা দিতির উপর ও অনেক অন্যায় করেছে। আজ সেগুলো ওর অন্তরটাকে তুষের আগুনের মতো পুড়িয়ে মারছে।
খুব ভোরে উঠে ও রেডী হয়ে সোলেমান সাহেবকে তাড়া দিতে লাগলো। সোলেমান সাহেব ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন,
—-কেবল তো আটটা বাজে। কোর্ট বসবে দশটায়। এতো আগে গিয়ে কি করবো?
সালেহা বেগম মামলা তুলে নেওয়ার কথা শুনে রেগে গিয়ে সাথীকে বললো,
—-আইনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দেওয়া উচিত।
সোলেমান সাহেব রেগে গিয়ে বললেন,
—+নিজের মেয়ের এতো বড় সর্বনাশ ঘটার পরেও তুমি পরিবর্তন হলে না। একেই বলে কুত্তার লেজে হাজারো তৈল মর্দন করলে তা কখনও সোজা হয় না।
সাথী ওর মায়ের উপর রেগে গিয়ে বললো,
–+-তুমি আমার ব্যাপারে আর নাক গলাবে না। আমাকে পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে দাও।
সাথী আর সোলেমান সাহেব দ্রুত কোর্টে চলে গেলেন। উকিলের কাছে মামলা তুলে নেওয়ার দরখাস্ত জমা দিয়ে আসলো। এরপর কোর্ট থেকে শুনানী দিন ধার্য করা হবে। জর্জ সাহেব দুপক্ষের কথা শুনে এরপর মামলা তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা করবেন।
শুনানীর দিন সাথী আর ওর বাবা সোলেমান সাহেব যথাসময়ে কোর্টে পৌঁছে গেলেন। ওদিকে দুপক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারক মামলা তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা করলেন। সাথী কোর্টের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে দিতির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,
—-যদি পারিস আমাকে ক্ষমা করে দিস।
একথা বলে সাথী ওর সামনে থেকে চলে গেল। দিতি ওর গমন পথের দিকে তাকিয়ে অবাক হলো। শুনেছিলো অনেক বড় ঘরে ওর বিয়ে হয়েছে। তাহলে আজ ওর এ অবস্থা এমন হলো কেন? দিতির শরীরটাও ভালো না। একদম এ্যাডভান্স স্টেজে আছে। দিতির সাথীর সাথে কোনো কথা বলতে ইচ্ছে না। ও আসলে ফাহিমকে দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। মামলা তুলে নেওয়ার পর জেলগেটে গিয়ে ওরা দাঁড়ালো। হতবিদ্ধস্ত অবস্থায় দীর্ঘ আটমাস পর ফাহিম জেলখানা থেকে মুক্তি পেয়ে ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরলো। ছেলেকে বুকে পেয়ে আকরাম সাহেব নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারলো না। এদিকে সন্ধা নামতে শুরু করেছে। একটু আগে একপশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। ফাহিম এরপর দিতির কাছে এসে ওকে শক্ত কর জড়িয়ে ধরলো। ফাহিমকে পেয়ে আজ দিতির চোখের পানি বাঁধনহারা হয়ে ঝড়তে লাগলো। আকাশে তখনও মেঘ রয়েছে। মাঝে মাঝে বিদ্যুত চমকাচ্ছে। উনি দিতি আর ফাহিমকে তাড়া দিয়ে নিজে ড্রাইভারের পাশের বসলেন। পিছনের সীটে ফাহিম আর দিতি বসলো। ফাহিম বড্ড ক্লান্ত। গাড়িতে উঠেই সীটে পুরো শরীরটা এলিয়ে দিলো। দিতি ফাহিমের কাঁধের উপর মাথা দিয়ে রাখলো। আজ ওর বড্ড সুখের দিন। এই মানুষটার জন্য ও কত নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে তা আল্লাহপাক জানেন। দিতি কাঁদছে ফাহিম গাড়ির ভিতর অন্ধকারে বসে ঠিক ন্বুঝতে পারছে। ফাহিম দিতির চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে ফিস ফিস করে বললো,
—-আজ থেকে তুমি আর কাঁদবে না। দেখলে তো সত্যের কল বাতাসে কেমন নড়ে।
ওদের বাড়ি পৌঁছাতে বেশ রাত হলো। দিতির ফুফু শাশুড়ী ক’দিনের জন্য যশোরে চলে গেলেন। বাড়ি পৌঁছে ফাহিম ওয়াশরুমে চলে গেল। কুসুম কুসুম গরম পানি দিয়ে ভালেভাবে শাওয়ার নিলো। দিতি মিনারা খালাকে টেবিলে ভাত বাড়তে বললো। ওরা দ্রুত ডিনার করে ঘরে চলে গেল। আজকের আবহাওয়া বেশ সুন্দর। বৃষ্টি হওয়াতে শীতল হাওয়া বইছে। ফাহিম ঘরে এসে দিতিকে বুকের মাঝে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
—-জেলখানায় বসে আমি আল্লাহপাকের প্রতিদিন প্রর্থনা করতাম। আল্লাহপাক যেন আমাদের দু’জনকে আবারও মিলিয়ে দেন। মৃত্যু ছাড়া আমাদের যেন আর কখনও বিচ্ছেদ না ঘটে। আল্লাহপাক আমার দোয়া কবুল করেছেন।
সারারাত আজ ওদের দু’জনের চোখে ঘুম ছিলো না। এতোদিনের জমানো কথাগুলো দু’জন দুজনের মাঝে শেয়ার করলো।
অপরাধ প্রমানিত না হওয়ায় ফাহিম ওর চাকরি ফিরে পেলো। দিতি আবারও পড়াশোনা শুরু করলো। দিতির সংসারে সুখ যেন উপচে পড়তে শুরু করলো। কিন্তু সাথীর অবস্থা ক্রমে অবনতির দিকে চলে গেল। রোশান ওকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিলো। কিন্তু দেনমোহরের টাকা সাথী পায়নি। যদিও অনেকে সোলেমান সাহেবকে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছিলো। কিন্তু উনি রাজী হননি। কারণ জলে বাস করে কুমিরের সাথে লড়াই করা সম্ভব নয়। সাথী আস্তে আস্তে সিজ্রোফেনিয়াতে আক্রান্ত হলো। ওকে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। খবর পেয়ে দিতি আর ফাহিম ওকে দেখতে গিয়েছিলো। সাথীকে দেখে দিতির অনেক কষ্ট হলো। সাথীর উপর ওর অনেক রাগ ক্ষোভ ছিলো। কিন্তু এমন শাস্তি ও কখনও চায়নি। দিতি ওর চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। সাথী দিতিকে চিনতে পারেনি। আপন মনে মনে বকবক করেই যাচ্ছে। দিতি ওকে কতোবার ডাকলো। কিন্তু সেই ডাক শোনার ব্যাপারে ওর কোনো হেলদোল নেই। সাথীর পৃথিবীটা যেন সবার থেকে আলাদা হয়ে গেছে। ওখানে কারো প্রবেশের অনুমতি নেই। ও এখন ওর নিজের পৃথিবী নিয়েই মহাব্যস্ত। সাথীর এমন পরিনতিতে ওদের পরিবারে সবাই একটা বড় ধাক্কা খেলো। সোলেমান সাহেব দিতির সংসারে ফিরে আসায় উনি খুশী হয়েছেন বটে তবে ছোটো মেয়ের এমন পরিনতি উনি মেনে নিতে পারেননি। সে কারনে সুস্থ মানুষ হঠাৎ স্ট্রোক করে বসলেন। দিতি এ্যাডভান্স স্টেজে থাকার কারনে বাপের পাশে দাঁড়াতে পারেনি। তবে ফাহিম জামাই হয়েও ছেলের দায়িত্ব পালন করে গিয়েছে। ছেলের এই অবস্থায় আমেনা বেগমও অনেকটা ভেঙ্গে পড়েছেন। সাথীকে হাসপাতালে ভর্তি করার পর সালেহা বেগম একদম নিরব হয়ে গিয়েছে। আপন মনে সংসারের কাজগুলো রোবটের মতো করে যায়। অথচ উনার একটু সহযোগিতায় এই সংসারটা কতনা সুখের হতে পারতো।
বন্ধুর এমন বিপদে আকরাম সাহেব সবকিছু ভুলে পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। নিয়মিত খোঁজ খবর রেখেছেন। এরমাঝে দিতি পুত্র সন্তানের জন্ম দিলো। এই দুঃখের মাঝেও এই খবরটা দিতিদের পরিবারে একটু আনন্দ বয়ে আনলো। জীবন যেন এমনি। এখানে সব সময় জোয়ার ভাটার খেলা চলে।
সমাপ্ত।