জীবনেরডায়েরি২
পার্ট: ৯
বাসায় চলে এসেছি তুলিটা খুব কাঁদতেছে আজ থেকে তুলিও যে মা হারা হয়ে গেলো, বড় বোন নাকি মায়ের সমান তুলিকে বুকে জরিয়ে নিলাম ওকে মায়ের অভাব বুঝতে দিব না, আমি যে কষ্ট পেয়েছি সে কষ্ট ওকে পেতে দিব না
আকাশরা বাসায় চলে গেছে, শ্রাবন মা কে নিয়ে নতুন বাসায় উঠেছে, এখন বাসায় শুধু আমি, রিয়া, আব্বু আর তুলি আছি
রাতে রিয়া আর আমি বারান্দায় বসে আছি তখন আব্বু আসলেন
আব্বু: তমা একটা কথা বলার ছিলো
আমি: বল
আব্বু: আমি চাচ্ছি খুব শীঘ্রই শ্রাবনের সাথে তোর বিয়েটা দিয়ে দিতে
রিয়া: হ্যা আঙ্কেল আমিও তাই ভাবছিলাম
আমি: আব্বু আমাদের সবার উপর দিয়ে অনেক দকল গেছে আর কিছু দিন পর বিয়েটা হলে ভালো হবে
আব্বু: ঠিক আছে এখন বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে রাখি
আমি: আচ্ছা
আব্বু চলে গেলেন, রিয়া আর আমি গিয়ে তুলির পাশে শুয়ে পড়লাম
রিয়া: অনেক জামেলা হয়েছে এবার বিয়েটা ভালো ভাবে হলেই হয়
আমি: আমার তো ভাগ্য অনেক খারাপ দেখ কখন আবার কোন জামেলা সৃষ্টি হয়ে যায়
–একদম অলুক্ষণে কথা বলবি না
–যা সত্যি তাই তো বললাম
–কচু সত্যি
–সেই ছোট বেলা থেকে একটার পর একটা কষ্ট আমাকে ঘিরে রেখেছে ভবিষ্যৎ এ যে আমার জীবনে আর কষ্ট আসবে না তার নিশ্চয়তা কি
–প্লিজ তমা এসব বলিস না সব ঠিক হয়ে যাবে, শ্রাবনের সাথে বিয়েটা হয়ে গেলে তুই অনেক সুখি হবি দেখিস
–বিয়েটা হলেই হলো
–হবে চিন্তা করিস না এখন ঘুমিয়ে পড়
–হুম
রাতে রিয়ার সাথে বক বক করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম মনেই নেই, সকালে শ্রাবনের ফোনে ঘুম ভাঙ্গলো
–হ্যালো
–ম্যাডাম একটু এই বাসায় আসতে পারবেন
–কেন
–খিদায় পেট জ্বলতেছে
–নাস্তা করোনি
–আম্মু ঘুমিয়ে আছেন তাই আর ডাকিনি
–ঠিক আছে আমি আসছি
ফোন রেখে ফ্রেশ হয়ে রান্না ঘরে গেলাম, গিয়ে দেখি রিয়া নাস্তা বানাচ্ছে
–রিয়া নাস্তা কি হইছে
–না কেন
–মা নাকি ঘুমে শ্রাবন নাস্তা করেনি
–দেরি হবে তো
–ঠিক আছে তুই এখানে নাস্তা বানা আমি ওকে নাস্তা বানিয়ে দিয়ে আসি
–ওকে
শ্রাবনের বাসায় আসছি সেই কখন থেকে কলিংবেল বাজিয়ে যাচ্ছি দরজা খুলার নাম নেই, অনেকক্ষণ পর দরজা খুললো, শ্রাবনের দিকে থাকিয়ে তো আমি হা হয়ে গেছি সারা শরীরে ময়দা লেগে আছে, ওর পুরো শরীরে একবার চোখ বুলিয়ে ফিক করে হেসে দিলাম
–হাসছ কেন
–তোমার শরীরের যে অবস্থা না জানি রান্নাঘরের কি হাল করেছ
–পারলে তাড়াতাড়ি দুইটা পরোটা করে দাও প্রচন্ড খিদা লাগছে
–সেটা তো আপনার অবস্থা দেখেই বুঝা যাচ্ছে, রান্নাঘর কোন দিকে নিয়ে চল
–হুম চলেন
রান্নাঘরে পা দিয়েই আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো হাসব নাকি কাঁদবো বুঝতেছি না, মেঝেতে ময়দা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, তেলের বুতল মেঝেতে পালানো, চুলায় কড়াই বসানো তেল পুরে ধুয়া উড়তেছে কি অবস্থা
–এই এসব কি
–আমি কি কখনো রান্না করেছি নাকি
–তাই বলে এই অবস্থা
–বেশ করেছি তাড়াতাড়ি রান্না করো
কি আর করার পরোটা বানাতে শুরু করলাম
–ভাবছি বিয়েটা এবার করেই ফেলবো (পিছনদিক থেকে আমাকে জরিয়ে ধরলো)
–বিয়ে করার ইচ্ছে থাকলে বিয়ে করো রান্নার সময় দুষ্টুমি কেনো
–বিয়ের পর তো আমি রোজ তোমার সাথে এভাবে দুষ্টুমি করবো
–এই এইটা কি করলে
–কেন দেখনি তোমার গালে ময়দা মেখে দিয়েছি
–কেমন ফাজিল গালে ময়দা লাগিয়ে আবার বলতেছে
–আমি কি অন্য কারো বউয়ের গালে ময়দা লাগাইছি
–না তোমার বউ এর গালেই এবার ছাড়ো
–ছাড়তে পারবো না আমি এভাবেই তোমাকে জরিয়ে ধরে রাখবো আর তুমি রান্না করবা
–উউউফফফফফফ
পিছন থেকে জরিয়ে ধরে রাখলে বুঝি রান্না করা যায়, কি আর করার কোনো ভাবে রান্না করে নিলাম
–শরীরের অবস্থা তো বারোটা বাজিয়ে ফেলছ যাও ফ্রেশ হয়ে আস টেবিলে নাস্তা দিচ্ছি
–ওকে
টেবিলে নাস্তা এনে বসে আছি ফাজিলটা আসার নাম নেই, অনেকক্ষণ পর আসলো
–মা কে কি ডাকবো
–না ঘুমিয়ে আছেন যেহেতু থাক উঠলে পর বলবো আম্মু তোমার বউমা নাস্তা বানিয়ে রেখে গেছে খেয়ে নাও
–হইছে খাও এখন
–হুহ বউ পাশে থাকতে নিজে খাবো কেন
–এখন কি খাইয়েও দিতে হবে
–অবশ্যই
আর কিছু না বলে খাইয়ে দিতে শুরু করলাম জানি এই পাগলের সাথে বক বক করে লাভ হবে না শেষে আমাকেই খাইয়ে দিতে হবে
–বিয়ের পর লক্ষী বউ এর মতো সবসময় এভাবে খাইয়ে দিবা বুঝছ
–হুম তুমি তো পিচ্ছি বাবু প্রতিদিন খাইয়ে দিতে হবে
–হিহিহি বুঝার জন্য থ্যাংকস
রাগি চোখে থাকালাম ওর দিকে তখনি ওর ফোনটা বেজে উঠলো, ফোনটা হাতে নিয়ে আমার দিকে একবার থাকালো তারপর আমাকে অভাক করে দিয়ে দূরে গিয়ে ফোন রিসিভ করলো, বুঝলাম না কে এমন ফোন দিল যে লুকিয়ে কথা বলতে হবে……
চলবে?