জীবনেরডায়েরি২
পার্ট: ৭
তুলি বলতে শুরু করলো….
আপু তুমি যখন আব্বুকে চিঠি লিখে বাসা থেকে চলে আস তখন আব্বুর আগে আম্মু চিঠিটা পায়, চিঠিটা পড়ে আম্মু খুশি হয়েছিল সেটা বুঝেছিলাম আম্মুর মুখ দেখেই কিন্তু আম্মুর প্ল্যান বুঝতে পারিনি
যেদিন তোমার ফোন ছিনতাই হয় সেদিন আব্বু হার্ট এট্যাক করেন কারন আম্মু তোমার ফোন ছিনতাই করিয়ে বলেছিল তুমি নাকি এক্সিডেন্ট করে মারা গেছ, কথাটা সত্যি কিনা যাচাই করতে পারিনি তার আগেই আব্বু এই কথা শুনে হার্ট এট্যাক করেন, আব্বুকে নিয়ে হসপিটালে যাই আমরা
সেদিন রাতেই আম্মু আব্বুর ঘুমন্ত অবস্থায় সিগনেচার নিয়ে বাসা বিক্রি করে দেয়
আব্বু সুস্থ হবার পর আমাদের নতুন বাসায় নিয়ে যায় বাসাটা কার জানো আকাশ ভাইয়ার মামা রাকিব এর, আব্বু চুপচাপ সব দেখছিলেন কিছু বলার মতো অবস্থা আব্বুর ছিল না কারন আব্বু তখন জানতো তুমি মারা গেছ
এভাবে মধ্যে দুইটা বছর কেটে যায় আব্বু আমি ওই বাসায় জীবন্ত লাশের মতো বেঁচে থাকি
হঠাৎ আব্বু আমি দুজনেই বুঝতে পারি আম্মু আর রাকিবের মধ্যে সম্পর্ক আছে, আব্বু আম্মুকে শান্ত ভাবে বুঝায় এসব পাপ ভালো হয়ে যেতে কিন্তু আম্মু বুঝে না তাই আব্বু আম্মুকে বলে দেয় আব্বুকে যেন ডিভোর্স দিয়ে রাকিবের কাছে চলে আসে, আম্মু তাতেও রাজি না কারন আব্বুর একটা জমি আছে যে জমিটা রাকিবের প্রয়োজন
যখন আব্বুকে বলে জমিটা আম্মুর নামে লিখে দিতে তখন আব্বু জানায় জমিটা তোমার নামে করা আর তুমি মারা গেলে জমিটা এতিমখানার নামে হয়ে যাবে, তুমি মারা গেছ তাই এখন জমিটা এতিমখানার নামে হয়ে গেছে
তখন আম্মু আর রাকিব জানায় তুমি মারা যাওনি বেঁচে আছ, আব্বু তোমাকে ফিরে পাবার জন্য অস্থির হয়ে যায়, এদিকে জমির জন্য রাকিবও তোমাকে খুঁজতে শুরু করে একসময় পেয়েও যায় কিন্তু আব্বু বা আমাকে তোমার ঠিকানা দেয়নি
এভাবে অনেকদিন কেটে যায় আম্মু আর রাকিব আমাদের আটকে রাখে শুধুমাত্র জমিটার জন্য, রাকিব আব্বুকে বলেছিল তোমার সাথে দেখা করিয়ে দিবে জমিটা যেন দিয়ে দেন আব্বু না করেন তাই রাকিব আব্বুকে প্রচুর মারধর করে আব্বুর সামনে আমাকেও মারে আর আমার গর্ভধারিণী মা দেখে দেখে হাসে
গত তিন দিন আগে আব্বু আর আমি জানতে পারি আম্মু আর রাকিব মিলে নারী পাচার করে, এই ব্যবসা ওদের অনেক দিনের
গতকাল আম্মু আর রাকিবের মধ্যে কথা হয় আমাকে বাহিরে পাচার করে দিবে আর এই কথা শুনে ফেলি আমি, আব্বুকে বলার পর আজ খুব কষ্ট করে আব্বুকে ওই বাসায় একা রেখে আমি পালিয়ে এসেছি তারপর তোমার সাথে দেখা হলো….
তুলির কথা গুলো শুনে বুবা হয়ে গেলাম একজন মা কিভাবে পারে নিজের মেয়েকে পাচার করতে, একজন স্ত্রী কিভাবে পারে স্বামীর উপর এভাবে অত্যাচার করতে
রিয়া: এই তমা কি ভাবছিস
আমি: আব্বুকে ওখান থেকে আনতে হবে
তুলি: ওরা বাসা চেঞ্জ করে ফেলেছে আমি চিনি নতুন বাসা
একটু পর শ্রাবন আর আকাশ হসপিটালে আসলো, ওদের সবকিছু বললাম
শ্রাবন: তাহলে আমাকে ওদের দুজনকে এরেস্ট করারই দায়িত্ব দিয়েছে, আমি এখনো ফাইল খুলে ওদের ছবি দেখিনি
আমি: তাহলে এরেস্ট করছ না কেন
শ্রাবন: এই শহরে আসলামই তো মাত্র আগামীকাল অফিসে গিয়ে দেখি
আমি: তাড়াতাড়ি কিছু কর আব্বু কিন্তু ওদের কাছে
শ্রাবন: ভয় পেয়ো না তোমার আব্বুকে নিয়ে আসবো
তিনদিন হসপিটালে থাকলাম তুলি কে নিয়ে, তুলি সুস্থ নাহলে রাকিব এর বাসায় নিয়ে যেতে পারবে না তাই এতো দিন শ্রাবন কিছু করতে পারেনি, আজ শ্রাবন পুলিশ নিয়ে তুলি কে সাথে নিয়ে রাকিব কে এরেস্ট করতে গেলো
সেই দুপুরে ওরা গিয়েছিল সন্ধ্যা নেমে আসলো কিন্তু ওদের কোনো খবর নেই শ্রাবন ফোন রিসিভ করছে না এদিকে টেনশনে আছি সবাই
সন্ধ্যা সাতটার দিকে শ্রাবন ফোন করে বললো বাসায় আসছে, কিছুক্ষণ পর কলিংবেল বেজে উঠলো দৌড়ে গিয়ে দরজা খুললাম, দরজা খুলেই আব্বুকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলাম, কতোদিন পর আব্বুকে দেখছি আর এভাবে জরিয়ে ধরে কাঁদছি, আব্বু তুলি আর আমাকে বুকে জরিয়ে ধরে কাঁদছেন আমরাও কাঁদছি সাথে কাঁদতেছে শ্রাবন, আকাশ, মেঘা আপু, রিয়া, আন্টি, মা
আমাদের কান্না দেখে সবাই কাঁদতেছে
এই কান্না কোনো কষ্টের কান্না না বাবা মেয়ে এক হবার সুখের কান্না…..
চলবে?