জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ২৫/অন্তিম পর্ব

0
3214

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ২৫/অন্তিম পর্ব

লেখিকা: সুলতানা তমা

সকালে পানির ঝটকায় ঘুম ভাঙ্গলো, ঘুম ঘুম চোখে থাকিয়ে দেখি শ্রাবন একদম আমার মুখের কাছে ওর মুখ এনে থাকিয়ে আছে আমার দিকে, ওর প্রতিটা গরম নিঃশ্বাস আমার মুখের উপর পড়ছে কেমন যেন এক অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে
–মহারাণীর ঘুম ভাঙ্গলো অবশেষে
–শান্তিতে তো ঘুমুতেও দেওনি
–বিয়ের দিন আবার এতো ঘুম কিসের
–বিয়ের দিন তুমি হবু শশুড়ের বাসায় কেন
–বউটারে দেখতে আসছি
–হূহ
–আজকে আমি তোমার ঘুম ভাঙ্গিয়েছি আগামীকাল সকাল থেকে তোমার ভেজা চুলের পানি দিয়ে আমার ঘুম ভাঙ্গবা হিহিহি
–তুমি না অনেক ফাজিল হয়ে গেছ
–ইসসসসসস লজ্জা পেলে আমার বউটার মুখ অনেক সুন্দর লাগে

(এইযে স্যার অনেক রোমান্স হয়েছে এবার এই রুম থেকে বের হও কথাটা শুনে দুজনেই থাকালাম মেঘা আপু আর রিয়া দাড়িয়ে হাসছে, শ্রাবন লজ্জা পেয়ে আমাকে ছেড়ে দূরে গিয়ে বসল)
রিয়া: এখন বের হও দুলাভাই আপনার বউকে গোসল করাব
শ্রাবন: আমার বউয়ের কাছে আমি থাকব তাতে তোমাদের কি আমি যাবোনা
মেঘা আপু: যাবা না দাড়াও
দুইজন মিলে ওকে ঠেলে রুম থেকে বের করে দিল হিহিহি

সবাই বিয়ের কাজ নিয়ে ব্যাস্ত আর রিয়া মেঘা আপু আমাকে নিপা কে সাঝাতে ব্যাস্ত ওরা পারে তো আজ আমাদের বউ না সাঝিয়ে পরী সাঝাতে চাচ্ছে, রিয়া আমাকে সাজাচ্ছে আমি চুপ করে বসে আছি আর ভাবছি আজ আম্মু থাকলে কতো ভালো হত এতো কষ্টের পর সুখের দেখা পেয়েছি আম্মু তো খুব খুশি হতো, একজন আম্মু যেও পেয়েছিলাম উনি স্বার্থের কারনে আমাকে উল্টো মারতে চাইল আজ উনি থাকলেও তো অন্তত সালাম করতে পারতাম
রিয়া: এই তমা কাঁদছিস কেন
আমি: কই নাতো
রিয়া: এতো কিছুর পর বিয়েটা হচ্ছে কই তুই খুশি হবি তা না বসে বসে কাঁদছিস আর মেকাপ নষ্ট করছিস
আমি: আম্মুর কথা মনে পড়ছে রে
রিয়া: আল্লাহ্‌ যা করেন ভালোর জন্য করেন কাঁদিস না তো মেকাপ নষ্ট হলে শ্রাবন আমাকে মেরেই ফেলবে
আমি: কেন
রিয়া: ও আমাকে বলে দিয়েছে তোকে যেন পরীর মতো সাঝাই নাহলে আমার বারোটা বাজাবে
আমি: ও না পারেও বটে
রিয়া: হ্যা এখন দয়া করে না কেঁদে চুপ করে বসে থাক
আমি: হুম

বিয়ের স্টেজে নিপা আর আমি বসে আছি, চারদিকে শুধু আলো আর আলো সবাই বিয়ে পড়ানো নিয়ে ব্যাস্ত, ভাবছি আকাশের সাথে বিয়ে হবার সময় তো কবুল মুখ দিয়ে আসছিল না এখনো কি এমন হবে
রিয়া: এই তমা কি ভাবছিস সবাই কবুল বলতে বলছে শুনছিস না
আমি: হুম কখন
রিয়া: উফফফ কোন জগতে হারিয়ে যাস বুঝিনা
রিয়ার দিকে অসহায়ের মতো থাকালাম আজো কষ্ট হচ্ছে খুব, ভালোবেসে বিয়ে করলেও কষ্ট হচ্ছে সবকিছুর আগে তো মা বাবা, আমি যে আব্বুকে ছেড়ে চলে যাবো তাই হয়তো এতো সুখের মাঝেও কষ্ট হচ্ছে, মেয়েদের জীবনটাই তো এমন অদ্ভুত বড়ই অদ্ভুত

আমি আর নিপা তো কবুল বলতে একটু দেরি করেছি শ্রাবন আর হৃদয় ফাজিল দুইটায় হাসতে হাসতে এক দমে তিনবার বলে দিয়েছে হিহিহি

বিয়ের কাজ শেষ এখন বিদায়ের পালা বেশি দূর তো যাবো না পাশের বাসায় তাও খুব কষ্ট হচ্ছে মনে হচ্ছে আব্বুর কাছ থেকে আমাকে কেউ ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, আচ্ছা আমি তো শ্রাবন কে ভালোবাসি ওর সাথে বিয়ে হয়েছে তাহলে এতো কষ্ট হচ্ছে কেন
মেঘা আপু: আর কতো কাঁদবা এবার থামো (আপুর কথায় চারদিকে থাকালাম সবাই আমার দিকে থাকিয়ে আছে নিপাও কাঁদছে, আব্বুকে কোথাও দেখছি না চারদিকে খুঁজলাম কোথাও নেই তাড়াতাড়ি দৌড়ে আব্বুর রুমে গেলাম, দরজার কাছে যেতেই শুনলাম আব্বু কাঁদছেন আর বলছেন “আজ তোমার মেয়েটাও আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে আমি যে খুব একা হয়ে গেলাম সেদিন যদি তুমি এভাবে চলে না যেতে আজ আমাদের মেয়েটার এতো কষ্ট পেতে হতো না” আব্বু কার সাথে কথা বলছেন ভেবে পেলাম না দরজা খুলে ভিতরে থাকাতেই দেখি আব্বু আম্মুর ছবির দিকে থাকিয়ে কাঁদছেন আর এসব বলছেন, আমাকে দেখেই চোখ মুছে নিলেন আমার কাছে এসে হেসে হেসে বললেন
–তোর তো বিয়ে দিয়ে দিলাম তাই তোর আম্মুকে বলছি (কথাটা শুনে অভাক হলাম বাবারা সত্যি সব পারেন চোখের পানি মুছে কতো সুন্দর অভিনয় করছেন এখন)
–কিরে মা কথা বলছিস না কেন
–(কিছু না বলে আব্বুকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলাম চোখের পানি যে আর আটকিয়ে রাখা সম্ভব না আব্বুও কাঁদছেন আমাকে জরিয়ে ধরে)

সন্ধ্যা হয়ে এসেছে নিপা আর হৃদয় চলে গেলো হৃদয়দের বাসায়, রিয়া আমাকে আর শ্রাবন কে ওদের বাসায় দিয়ে আসলো

সব নিয়মকানুন শেষ করে আমাকে শ্রাবনের রুমে নিয়ে আসা হলো, খুব সুন্দর করে সাঝানো হয়েছে সারা রুম কাঁচা ফুল দিয়ে সাঝানো আর বিছানায় বেলী ফুল এইটা ফাজিলটার কাজ বুঝেছি

কখন থেকে লম্বা ঘোমটা দিয়ে বসে আছি শ্রাবন আসার নাম নেই এতো লম্বা ঘোমটা দিয়ে বসে থাকা যায় বুঝি, হঠাৎ দরজা খুলার শব্দ পেলাম বুঝেছি শ্রাবন এসেছে, ও এসেছে ভেবেই কেমন যেন ভয় লাগছে লজ্জা লাগছে আবার ভালোও লাগছে কেমন অনুভূতি হচ্ছে নিজেই বুঝতেছি না

শ্রাবন এসেই দফ করে খাটে শুয়ে পড়লো রেগে আছে কেন বুঝতেছি না
–ওই কি হইছে
–তোমার সাথে কথা নাই
–কি করলাম
–জানো আমি রিয়া কে কতো টাকা খাইয়েছি তোমাকে সাঝানোর জন্য
–রিয়া টাকা নিয়েছে
–হ্যা কম না দশ হাজার কথা ছিল তোমাকে পরীর মতো সাঝাবে ও তো কথা রেখেছে কিন্তু তুমি কান্নাকাটি করে মেকাপ নষ্ট করে ফেলেছ এখন তো তোমাকে পেত্নীর মতো লাগছে
–হিহিহি
–এখন হাসো তখন এতো কান্নার কি ছিল আমার সাথেই তো বিয়ে হয়েছে তো এতো কাঁদলা কেন
–মেয়েদের কষ্ট তোমরা বুঝবা না তোমাদের তো আর পরিবার ছেড়ে নতুন কোথাও যেতে হয়না
–হয়েছে আবার কান্না কইরো না যাও ফ্রেশ হয়ে আস
–আচ্ছা

ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি শ্রাবন রুমে নেই বারান্দায় চোখ পড়লো দরজা খুলা হয়তো বারান্দায়, আস্তে আস্তে বারান্দায় গেলাম ভয়ও হচ্ছে যদি ও না থাকে ভূতে তো আমার ঘার মটকে খাবে
–ভয় পেয়ো না আসো আমিই আছি
–(উফফফ ও যে কিভাবে আমার মনের কথা বুঝে)
–এতো ভিতু কেন তুমি
–হূহ এতো রাতে বারান্দায় কি
–বউটা রে নিয়া জোৎস্না বিলাস করবো তাই
–আহালে কি লোমান্তিক

ও এসে আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো ঠিক আগের মতো, দুজনেই আকাশ দেখছি
–তমা কতো কিছুর পর বিয়েটা হলো তাইনা
–হুম
–আর কখনো তোমাকে কাঁদতে হবে না ইনশাআল্লাহ
–আমার জীবনে তো কষ্টের শেষ নেই কখন আবার কোন কষ্ট চলে আসে কে যানে
–আসুক এখন তো আমি পাশে আছি আমার ভালোবাসা দিয়ে তোমার সব কষ্ট ভুলিয়ে দিব
–(চুপ হয়ে দাড়িয়ে আছি ওর দুই হাতের বাঁধনে আর ও আমার ঘাড়ে একটার পর একটা মায়া দিয়ে যাচ্ছে কেমন যেন এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে, হঠাৎ ও আমাকে কোলে তুলে নিল ওর পাঞ্জাবীর কলার ধরে থাকিয়ে আছি ওর চোখের দিকে কি গভীর চোখ দেখলেই চোখের গভীরতায় ডুব দিতে ইচ্ছে হয়, ও মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে আমাকে রুমে নিয়ে গেলো, বিছানায় শুয়ে দিয়ে কপালে একটা মায়া দিলো আমার ঠোটের মাঝে ওর ঠোট দুইটা ডুবিয়ে দিলো তারপর……

হা করে কি পড়ছেন তারপর আর বলা যাবে না আমার বুঝি লজ্জা শরম নাই যান ভাগেন??

(সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ধৈর্য নিয়ে গল্পটি পড়ার জন্য??
এভাবেই সবার মাঝে ভালোবাসা বেঁচে থাকুক আজীবন?)

#Happy_Ending?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে