জীবনেরডায়েরি২
পার্ট: ২৪
খুব ভোরে চেঁচামেচি শুনে ঘুম ভাঙ্গলো, তাড়াতাড়ি ড্রয়িংরুমে গেলাম, ড্রয়িংরুমের অবস্থা দেখে তো আমি অভাক সবাই একসাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে, সবাই বলতে নিপার পরিবার, হৃদয়ের পরিবার, আকাশের পরিবার, শ্রাবনের পরিবার আর আমার পরিবার তো আছেই, সব পরিবারের মানুষ এক হয়েছে, সবাই সবার মতো আড্ডা দিচ্ছে আমি যে এখানে দাড়িয়ে আছি কেউ দেখছেই না, ভাবছি এতো সকালে সবাই এখানে আসলো কিভাবে হঠাৎ কে যেন আমার হাত ধরে এক ঝটকায় টান মেরে কোথায় নিয়ে গেলো, থাকিয়ে দেখি তুলির রুমে আর পাশে শ্রাবন দাঁড়ানো আমার দিকে থাকিয়ে হাসছে
–উফফফফ এভাবে কেউ হাত ধরে টান দেয় আমার হাতটা ভেঙ্গেই গেছে মনে হয়
–হূহ ঘুম থেকে উঠতে এতোক্ষণ লাগে কখন থেকে অপেক্ষা করছি তোমাকে একবার দেখবো বলে
-আমার রুমে গেলেই হতো
–সবাই ড্রয়িংরুমে বসা কিভাবে যাই লজ্জা আছে না
–ওমা তোমার আবার লজ্জাও আছে
–কি বলতে চাইছ আমার লজ্জা নেই
–বিয়ের আগেই যে বাসর নিয়ে কথা বলে তার আবার লজ্জা কিসের
–ঠিক আছে তুমি যেহেতু বলেছ নেই যেটুকু আছে সেটুকু উড়িয়ে দেই
–মানে
–অনেক তো কষ্ট পেয়েছ আমিও পেয়েছি এখন নাহয় সব রোমান্স একসাথে করি বলেই আমার দিকে এগুতে শুরু করলো, ও এগুচ্ছে আর আমি পিছিয়ে যাচ্ছি একসময় আমি দেয়ালে আটকে গেলাম ও যেই আমার কাছে এসে মুখ এগুলো তখন কে যেন বলে উঠলো
–দুলাভাই বিয়ের আগে এসব ঠিক না (থাকিয়ে দেখি তুলি)
–দূর শালি আসার আর সময় পাইলা না
–থ্যাংকু তুলি এখন আসার জন্য বলে ওর মুখের অবস্থা দেখে একটা হাসি দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে আসলাম
ড্রয়িংরুমে সবাই আড্ডা দিচ্ছে কিন্তু আব্বুকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না তাড়াতাড়ি আব্বুর রুমে গেলাম, আব্বু চেয়ারে বসে আছেন মুখ মলিন করে
–আব্বু আসবো
–আয় মা
–মন খারাপ কেন আব্বু
–নাতো
–তোমার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে
–ও তুই বুঝবি না যখন তোর মেয়েকে বিয়ে দিবি তখন বুঝবি (বুঝেছি আমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে তাই আব্বু কষ্ট পাচ্ছেন আর কিছু না বলে আব্বুর পাশে মাথা নিচু করে বসে রইলাম, কেন জানি খুব কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে না চাইতেও চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি পড়তে শুরু করলো)
–এই পাগলী মেয়ে কাঁদছিস কেন
–কই নাতো (তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিলাম আমি কাঁদলে যে আব্বুও কাঁদবেন)
–মেয়েদের জীবনটা এমনই রে মা কান্না করিস না (খুব অভাক হচ্ছি আব্বু নিজের চোখের পানি লুকিয়ে আমাকে কতো সুন্দর ভাবে বুঝাচ্ছেন)
–যা মা সবার সাথে গিয়ে আড্ডা দে মন ভালো হবে
–তুমিও চলো
–যা তুই আসছি
–আচ্ছা
তাড়াতাড়ি আব্বুর রুম থেকে বেড়িয়ে আসলাম কখন আবার বাপ মেয়ে দুজনেই কান্না শুরু করে দেই তার তো নিশ্চয়তা নেই, মেয়েদের জীবনটা সত্যি অদ্ভুত বিয়ে নামক এই নিয়মে আপনজনদের ছেড়ে নতুন কোথাও চলে যেতে হয়, আপন মানুষদের মায়া কাটিয়ে নিজেকে সবার সাথে মানিয়ে নিতে হয় আর মা বাবা তারা তো আরো বেশি কষ্ট পায় ছোট থেকে লালন পালন করে একটু একটু করে বেড়ে তুলা সন্তান কে অন্যের হাতে তুলে দেওয়া সত্যি কষ্টকর
–আপু (হঠাৎ কারো ডাকে ভাবনায় ছ্যাদ পরলো থাকিয়ে দেখি হৃদয়)
–হ্যা কেমন আছ
–ভালো আপনি
–এখন তো সবারই ভালো থাকার কথা
–হ্যা আপু সব তো ঠিক হয়ে গেলো, অনেক কিছুই সম্ভব হয়েছে আপনার জন্য থ্যাংকস আপু নিপা কে আমার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য
–আমাকে থ্যাংকস দেওয়ার প্রয়োজন নেই তোমার ভালোবাসা সত্যি তাই ফিরে পেয়েছ আর শেষ মুহূর্তে তুমি না এলে সবকিছু ঠিক হতো না
–সবকিছু ঠিক হবার জন্যই মনে হয় সেদিন হঠাৎ নিপা কে ফোন দিয়েছিলাম তারপর এতোকিছু হলো
–হয়তো
–(ভাই বোন এখানে কি করছ, কথাটা শুনে পিছনে থাকালাম নিপা এসেছে খুব হাসি খুশি মুখ যাক মেয়েটা তো খুশি আছে অন্তত নিজেকে অপরাধী মনে হবে না)
হৃদয়: ভাই বোন আড্ডা দিচ্ছি তুমিও আসো
নিপা: আপু ও যে আপনাকে বোন ডেকেছে জানেন
আমি: তাই নাকি
নিপা: হ্যা
আমি: তার মানে আমি এখন তোমার ননদ
নিপা: হ্যা আগে ছিলা অন্যকিছু বলেই হাসতে শুরু করলো
আমি: আচ্ছা তোমরা কথা বলো আমি আসছি
রিয়াটা কে খুঁজে পাচ্ছি না পিয়াস কে আসার কথা বলেছে কিনা জানিনা বলতে তো হবে, অবশেষে খুঁজে পেলাম পাগলী কোমর বেঁধে কাজ করছে
–রিয়া
–হুম
–পিয়াস কে বলেছিস আসবে
–মনে নেই
–যেভাবে কোমর বেঁধে কাজে লেগেছিস স্বামীর কথা ভুলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক
–কাজ করবো না আমার একমাত্র বান্ধবী+বোনের বিয়ে বলে কথা
–তাই বলে পিয়াস কে আসার কথা বলবি না
–আচ্ছা বলব
–এখনি বল গিয়ে রাতের ফ্লাইটে যেন চলে আসে
–ওকে
সবাই কাজ করছে চারদিকে বিয়ের আমেজ ভালই লাগছে দেখতে, সবাই কতো খুশি মনে কাজ করছে
সারাটা দিন কিভাবে যেন কেটে গেলো সবার সাথে হাসি খুশিতে মেতে ছিলাম যেন এক ঘুরের মধ্যে ছিলাম, এখন রাত নেমেছে সবাই ঘুমের রাজ্যে আর আমি বারান্দায় দাড়িয়ে রাতের আকাশ দেখছি, আজ আকাশটাও দেখতে সুন্দর মন ভালো থাকলে মনে হয় সবকিছুই সুন্দর লাগে, হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো রুম থেকে ফোনটা নিয়ে এসে বারান্দায় বসলাম শ্রাবন ফোন দিয়েছে
–হ্যালো
–এতো রাতে বারান্দায় কি কর
–আমি যে বারান্দায় তুমি জানো কিভাবে
–আমি ছাদে এখান থেকে তোমাকে দেখা যায়
–তুমি এতো রাতে ছাদে কি করো
–বাসর রাতের চিন্তায় ঘুম আসছে না হিহিহি
–তুমি আসলেই একটা ফাজিল
–যার বউ এতো লজ্জাবতী তাকে তো ফাজিল হতেই হবে নাহলে কি রোমান্স জমবে
–সারাক্ষণ মাথায় দুষ্টুমি ঘুরে তাই না
–জ্বী বিয়ের পর দুষ্টুমি আরো বেড়ে যাবে
–এখন কি কম
–অনেক কম
–হইছে যাও ঘুমাও গিয়ে
–তুমি ঘুমাও কারন আগামীকাল রাতে তুমি ঘুমাতে পারবে না
–কেন
–ওমা বাসর রাতেও তোমাকে ঘুমাতে দিব নাকি যাও লক্ষী বউয়ের মতো গিয়ে ঘুমিয়ে পর
–ওকে
জানি ফাজিলটার সাথে যতো কথা বলবো ততোই ওর দুষ্টুমি বাড়বে তাই ফোনটা রেখে এসে শুয়ে পড়লাম, শ্রাবনের কথা ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতেই পারিনি….
চলবে?