জীবনেরডায়েরি২
পার্ট: ২১
–তমা (হঠাৎ রিয়ার ডাকে চোখ খুলে থাকালাম)
–হুম
–শ্রাবন এসেছে
–তো
–দেখ তমা তোর থেকে আমি কম বুঝিনা যে….
–কি বলতে চাইছিস সুজা বল
–শ্রাবনের কথায় মনে হয় ও এখনো তোকেই ভালবাসে তাই যা করবি ভেবে চিন্তে করিস
–হুম
–তোর আব্বুর সাথে কথা বলতে এসেছে শ্রাবন, আঙ্কেল বলে দিয়েছেন তোর সিদ্ধান্তই উনার সিদ্ধান্ত
–হুম
–কি হুম হুম করছিস
–যাতো একা থাকতে দে
–থাক একা
রিয়া রাগ করে চলে গেছে আর ভালো লাগছে না এসব আব্বুকে বলে আগামীকালই এই শহর ছেড়ে চলে যাবো
–তমা
–হুম (শ্রাবন এসেছে)
–আর একটা সুযোগ কি দেওয়া যায় না, তোমার আব্বুও জানিয়ে দিয়েছেন তোমার সিদ্ধান্তই উনার সিদ্ধান্ত
–দেখ শ্রাবন যা হবার হয়ে গেছে এখন নিপা সুস্থ হয়েছে আমি চাই তুমি ওকে বিয়ে করো আর আমি আগামীকাল এখান থেকে চলে যাচ্ছি
–চলে যাচ্ছ মানে কোথায় যাইবা
–কোথায় যাবো জানিনা তবে এই শহর ছেড়ে চলে যাবো
(কথাটা বলার সাথে সাথে শ্রাবন আমার সামনে হাটু গেড়ে বসে পরলো অঝরে কাঁদছে ও আর দুই হাত জোর করে বলতে লাগলো)
–তমা প্লিজ এতো বড় শাস্তি আমাকে দিও না আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি থাকতে পারবো না তোমাকে ছাড়া একটা সুযোগ অন্তত দাও প্লিজ
–কি করছ তুমি উঠে দাড়াও
–না বল তুমি আমাকে ছেড়ে যাইবা না
আর কিছু না বলে ওকে এই অবস্থায় রেখেই রুমে এসে শুয়ে পড়লাম
সকালে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠলাম, আজ আমি সবার জন্য নাস্তা বানালাম তারপর সবাইকে ডেকে ডাইনিং এ আনলাম, নাস্তা খেতে খেতে আব্বুকে বললাম
আমি: আব্বু আমি আজকেই এই শহর ছেড়ে চলে যেতে চাচ্ছি
আব্বু: (নিশ্চুপ)
আমি: আব্বু কথা বলছ না কেন
আব্বু: আমার কিছু বলার নেই
আমি: কেন
রিয়া: বুঝছিস না কেন আঙ্কেলও চাইছেন তুই শ্রাবনকে ক্ষমা করে দে
আমি: আব্বু তুমি কি এটাই চাইছ (আব্বু কিছু না বলে খাবার না খেয়েই উঠে রুমে চলে গেলেন)
রিয়া: তমা বুঝার চেষ্টা কর শ্রাবন তোকে ভালো না বাসলে এতোকিছুর পরো ফিরে আসতো না
আমি: এতো যে বুঝিস এইটা বুঝিস না কেন ও নিপা কে কি করবে
রিয়া: তমা….
আমি: রিয়া বাদ দে তুই আমার সাথে আপাদত যেখানে যাচ্ছি সেখানে চল আর পিয়াস কে ফোন করে বল তোকে নেওয়ার ব্যবস্থা যেন করে
রিয়া: হুম
আমি: তুলি আব্বু আর তোর জিনিসপত্র গুছিয়ে নে আমরা বিকেলে চলে যাবো
তুলি: আপু
আমি: কি তুইও এখন জ্ঞান দিবি আমাকে
তুলি: না বলেই উঠে চলে গেলো সাথে রিয়াও চলে গেলো
সবাই আমার সাথে এমন করছে কেন, এমন মনে হচ্ছে যে আমি সব দোষ করেছি কিন্তু এখানে তো কারো দোষ নেই
বিছানায় বসে বসে কাপড়চোপড় গুচাচ্ছি তখন হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো, বের হয়ে দেখি ড্রইংরুমে হৃদয় বসা, বুঝলাম না এই ছেলে আমার বাসা চিনল কি করে আর হসপিটাল থেকেই বা এতো তাড়াতাড়ি রিলিজ নিল কেন, এসব ভাবতে ভাবতে ড্রইংরুমে গেলাম
–আপু কেমন আছেন
–ভালো তুমি
–ভালো
–আমার বাসা চিনলে কিভাবে
–কষ্ট করে চিনে নিলাম
–হঠাৎ আমার বাসায় কোনো প্রয়োজন
–বিকেলে চলে যাচ্ছি এখান থেকে তাই ভাবলাম আপনার সাথে দেখা করে যাই
হৃদয়ের সাথে বসে গল্প করছি হঠাৎ কারো বাহ বাহ কথা শুনে দরজার দিকে থাকালাম, শ্রাবন আগুনের মতো চোখ করে আমার দিকে থাকিয়ে আছে
–এজন্যই তো বলি আমার কাছে ফিরে আসছ না কেন
–মানে
–খুব সহজ নতুন কাউকে পেয়ে গেছ তাই আমাকে ক্ষমা করতে পারছ না (কথাটা শুনে খুব রাগ উঠলো চিৎকার করে বললাম)
–এই ছেলেকে দেখে কি তোমার তাই মনে হয় ও তো আমার ছোট ভাইয়ের মতো আর তুমি এসব ভাবছ
–হ্যা ভাবছি নাহলে তুমি আমার কাছে ফিরে আসছ না কেন, আসলে এই ছেলের সাথে তোমার সম্পর্ক আছে
–এতোটাই রাগ উঠলো ঠাস করে ওর গালে একটা তাপ্পর মেরে চিৎকার করে বললাম নিজে যেমন আমাকেও তেমন ভাবছ, আমার চিৎকার শুনে ততোক্ষণে আব্বু রিয়া তুলি সবাই ড্রইংরুমে এসে পরলো, সবার সামনে এভাবে তাপ্পর দেওয়া উচিত হয়নি ও কিছু না বলে আমার দিকে একবার থাকিয়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে গেলো, আমি দফ করে সোফায় বসে পরলাম কি থেকে কি হয়ে গেলো বুঝতেই পারছি না, যাকে ভালো রাখার জন্য এতোকিছু করলাম তাকেই আমি তাপ্পর দিলাম
রিয়া: তমা এখন একটু বেশিই করে ফেলেছিস এভাবে সবার সামনে ওকে অপমান না করলেও পারতি
হৃদয়: আমার জন্য সব হলো
রিয়া: ওর দোষটা শুধু দেখলি ভালোবাসা দেখলি না ও তোকে ভালো না বাসলে অন্য ছেলের সাথে কথা বলতে দেখে রেগে যেতো না
আব্বুর দিকে থাকালাম আমার দিকে কিছুক্ষণ থাকিয়ে রুমে চলে গেলেন, এখনো আমিই দোষী আর ও যে আমার ভালোবাসা কে অপমান করলো এইটা কিছু না, এতো ভালোবাসি ওকে আর ও কিনা ভাবলো এই ছোট ভাইয়ের বয়সী ছেলের সাথে আমার সম্পর্ক আছে তাপ্পর দিয়েছি বেশ করেছি
আর বেশিক্ষণ দেরি করলাম না এখানে যতো বেশি সময় থাকবো ততোই অশান্তি বাড়বে তাই আধাঘণ্টার ভিতরে সবাইকে রেডি হতে বললাম, আমিও রেডি হয়ে নিলাম হৃদয়ও রয়েছে একসাথে বেরুবো তাই
সবার মুখ মলিন কিছু করার নেই বেড়িয়ে পরলাম সবাইকে নিয়ে…..
চলবে?