জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ২

0
2678

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ২

লেখিকা: সুলতানা তমা

এক দৃষ্টিতে সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষটি কে দেখছি তার চোখেও পানি, চোখে তো পানি থাকবেই কারন সামনে যে দাড়িয়ে আছে সে তো আর কেউ না আমার পাগলী বান্ধবী রিয়া, দৌড়ে গিয়ে ওকে জাপটে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিলাম, দুজনেই কাঁদছি এতো দিনের জমানো সব কষ্ট উড়িয়ে দিচ্ছি হঠাৎ মেঘা আপু এসে দুজনকে ছাড়িয়ে বললো চারদিকে থাকিয়ে দেখতো, আমি চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখলাম এয়ারপোর্ট এ থাকা অনেক মানুষ আমাদের দিকে অভাক হয়ে থাকিয়ে আছে, থাকুক তাতে আমাদের কি এতো দিন পর আমার হারিয়ে যাওয়া বান্ধবী কে না না বান্ধবী বললে ভুল হবে রিয়া তো আমার বোন, আমার বোন কে ফিরে পেয়েছি মানুষ হাসুক বা অভাক হউক তাতে আমার কি

রিয়া এসে আমাকে জরিয়ে ধরে বললো
–কোথায় হারিয়ে গেছিলি
–আমি হারায়নি ভাগ্য আমাকে তোদের কাছ থেকে আলাদা করে দিয়েছিল
–আচ্ছা এসব পরে শুনবো খিদা লেগেছে চল পাশের কোনো রেস্টুরেন্টে যাই
–হুম
‘বান্ধবী কে পেয়ে আমার কথা ভুলেই গেছ’ কথাটা শুনে সামনে থাকালাম রিয়ার স্বামী পিয়াস কে দেখে রিয়া আমি দুজনেই লজ্জা পেলাম, পিয়াসের সাথে একটু কথা বলে সবাই পাশের একটা রেস্টুরেন্টে গেলাম

সবাই রেস্টুরেন্টে বসে আছি হঠাৎ মনে পরলো আকাশ কিভাবে রিয়া কে পেলো
আমি: আকাশ তুমি রিয়া কে কোথায় পেলে
আকাশ: এয়ারপোর্ট একটা কাজে এসেছিলাম হঠাৎ রিয়া কে দেখতে পাই ভালো করে চিনি না বিয়ের দিন দেখেছিলাম মাত্র পরে কথা বলে সিউড় হলাম এটাই তোমার বান্ধবী রিয়া
পিয়াস: তমা তোমার বান্ধবী এই দুইটা বছর আমাকে বাংলাদেশে আসবে বলে পাগল বানিয়ে দিয়েছে কাজের জন্য আসতে পারিনি কিন্তু এই শেষ দুই মাসে ওর জিদের কাছে হার মানতে হলো, অনেক বার বলেছি দেশে গিয়ে কোথায় খুঁজবে কিন্তু ওর একটাই কথা সারা বাংলাদেশ খুঁজে তোমাকে বের করবে
রিয়া: দুই মাস আগে আমি যার খুঁজ পেয়েছি তার কথা যদি তমা কে না বলি আমার শান্তি লাগবে না এজন্যই দেশে এসেছি
আমি: কিসের খুঁজ পেয়েছিস
রিয়া: শ্রাবনের

নামটা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলাম বুকের মধ্যে কেমন যেন চিনচিনে ব্যাথা হচ্ছে, এই মানুষটা কে আমি কতো খুঁজেছি কতো কেঁদেছি মানুষটার জন্য
রিয়া: এই তমা কি হল তোর
আমি: হুম কিছু না
রিয়া: চুপ হয়ে আছিস যে
আমি: কোথায় পেলি ওকে
রিয়া: দুমাস আগে পিয়াস ফোনে কথা বলছিল আমি একটু শুনে ছিলাম কন্ঠটা পরিচিত মনে হয়েছিল তারপর পিয়াস কে জিজ্ঞেস করতেই ও বললো পিয়াসের ফ্রেন্ড শ্রাবন, তারপর শ্রাবনের পিক দেখে সিউর হলাম
আমি: ওহ
রিয়া: শ্রাবনের সাথে আমার কথা হয়েছে সবকিছু বলেছি ওকে ও তোর সাথে দেখা করতে চায়
আমি: দেখা করে আর কি হবে ও তো এখন আর আমায় ভালোবাসে না
রিয়া: কে বলেছে বাসে না দেখা কর আগে সব রহস্য বেড়িয়ে আসবে
আমি: কিসের রহস্য
রিয়া: অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে যা আমরা দুজন জানতাম না
আমি: শ্রাবন এখন কোথায় আছে
রিয়া: কক্সবাজার পুলিশে চাকরি করে আগামীকাল তোর সাথে দেখা করতে আসবে
আমি: (তারমানে কক্সবাজার আমি ওকেই দেখেছিলাম ভুল দেখিনি)
রিয়া: কিরে কি ভাবছিস
আমি: কিছুনা
রিয়া: এখন বাসায় চল
আমি: হুম

সবাইকে নিয়ে আমার বাসায় চলে আসলাম, এসে রাতের রান্না করে সবাই খেয়ে নিলাম, সবাই খুব ক্লান্ত তাই ঘুমিয়ে পরলো কিন্তু আমার চোখে ঘুম নেই, অপেক্ষা করছি আগামীকালের কখন সেই মানুষটাকে দেখতে পারবো, মাথায় হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে শ্রাবন কি আমায় এখনো ভালোবাসে…? শ্রাবনের মা কি আমাকে মেনে নিবে….? রিয়া কিসের রহস্যের কথা বললো….?
এসব ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পরেছি জানিনা

সকালে রিয়ার ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো
–কিরে তমা তোর শরীরে এতো জ্বর আসলো কিভাবে
–জানিনা
–জ্বরে তো শরীর পুরে যাচ্ছে এই অবস্থায় শ্রাবনের সাথে দেখা করতে যাবি কিভাবে
–কিছু হবে না পারবো
–যেতে হবে না আমি বাসার ঠিকানা বলে দিচ্ছি শ্রাবনকে ও এখানেই আসবে
–হুম

নিজেও বুঝলাম না এতো জ্বর আসলো কিভাবে রাতে তো ভালই ছিলাম, বিছানায় শুয়ে রইলাম রিয়া আর মেঘা আপু রান্নাবান্না করলো, সবাই খেতে বসেছি কিন্তু আমার গলা দিয়ে খাবার নামছে না, অপেক্ষার প্রহর যেন কাটছেই না বার বার মনে পরছে শ্রাবনকে কবে দেখতে পাবো, না খেয়েই উঠে চলে আসলাম

রুমে এসে ফোন হাতে নিয়ে দেখি এতিমখানা থেকে রহিম চাচার ফোন এসেছিল, কল ব্যাক করলাম
–হ্যা চাচা
–কিরে মা দুদিন ধরে এতিমখানায় আসো না যে
–একটু ব্যস্ত আছি বাসায় মেহমান আর জ্বরও উঠেছে তুমি ওই দিকটা একটু সামলে নাও
–ঠিক আছে সুস্থ হয়েই এসো
–আচ্ছা

ফোন রেখে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম, দূর আকাশের দিকে থাকিয়ে ভাবছি কি হবে আমার ভবিষ্যৎ শ্রাবনকে কি ফিরে পাবো ও কি এখনো আমায় ভালোবাসে হঠাৎ কাধের উপর কারো হাতের ছোঁয়ায় কেঁপে উঠলাম এই স্পর্শটা আমার খুব চেনা, বুকের মধ্যে যেন কেউ হাতুড়ি পিটাচ্ছে আস্তে আস্তে পিছন ফিরে থাকালাম, এক দৃষ্টিতে থাকিয়ে আছি শ্রাবনের দিকে, হ্যা শ্রাবন ফিরে এসেছে, দুজন দুজনের চোখের দিকে থাকিয়ে আছি, আমার চোখ থেকে জল গড়িয়ে গালে নেমে আসতেই ও দুহাত দিয়ে আলতো করে মুছে দিল, আমার নাকের সাথে ওর নাকটা লাগিয়ে বললো আর তোমার চোখের পানি ঝরাতে চাই না আগের মতো ভালোবাস তো পাগলী…….

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে