জীবনেরডায়েরি২
পার্ট: ১৯
শ্রাবন: তমা তুমি
আমি: অভাক হচ্ছ কেন আসতে পারি না নাকি
শ্রাবন: না আসলে তুমি তো কাজে গিয়েছিলে
আমি: হুম কাজ শেষ তাই চলে এসেছি
(নিপা আস্তে আস্তে চোখ খুলে আমাদের দিকে থাকালো, শ্রাবন মৃদু হেসে নিপার সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিল)
নিপা: আপু আপনি খুব ভাগ্যবতী
আমি: মানে
নিপা: সুস্থ হয়ে মানেটা বলবো এখন কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে (লক্ষ করলাম মেয়েটির চোখ বেয়ে দুফোটা পানি গড়িয়ে পরলো, নিজের কাছে কেমন যেন লাগছে মেয়েটার চোখের পানির জন্য আমি দায়ী নইতো)
শ্রাবন: তমা কি হল কি ভাবছ
আমি: হুম কিছু না
রিয়া: তমা বাইরে চল
আমি: হুম
রিয়া আমাকে নিয়ে কেবিনের বাইরে আসলো
রিয়া: কিরে কি হইছে তোর হঠাৎ এমন চুপ হয়ে গেলি
আমি: নিপা কাঁদছিল আমি লক্ষ করেছি ওর কান্নার জন্য তো আমিই দায়ী
–আমি বুঝি না সবসময় নিজের উপরেই দোষ টেনে নিস কেন
–দোষ টেনে নিলাম কোথায়
–নিপা তোকে ভাগ্যবতী কেন বলেছে বুঝেছিস
–নাহ
–কারন ও বুঝেছে শ্রাবন যে তোকে ভালোবাসে
–(মৃদু হাসলাম)
–হাসছিস কেন
–এমনি
–শ্রাবন তোকে ভালোবাসে এইটা বিশ্বাস হচ্ছে না তাই তো
–হতেও পারে
–একদিন ঠিক বুঝতে পারবি ও যে শুধু তোকেই ভালোবাসে তখন বুঝেও লাভ হবে না
তমা (ডাক শুনে পিছনে থাকালাম শ্রাবন এসেছে)
–হুম বল
–নিপার সাথে আমার একসময় রিলেশন ছিল তাই আমার কর্তব্য ছিল ওর বিপদে পাশে দাঁড়ানো এখন ও সুস্থ তাই আমি তোমাকে খুব শীঘ্রই বিয়ে করতে চাই
–সব কি তোমার ইচ্ছেতেই হবে আমার ইচ্ছের কোনো মুল্য নেই
–আমি কি তা বলেছি
–না আমি এখন বিয়ে করবো না আর তোমাকে তো একদমই না
–কেন অন্য কাউকে বিয়ে করার চিন্তা করছ নাকি
–হয়তো
–(ঠাস)
–মারলা কেন
–তো কি তোমাকে আদর করবো অন্য কাউকে বিয়ে করার চিন্তা করলে খুন করে ফেলবো বলেই হনহন করে চলে গেলো
গালে হাত দিয়ে ওর চলে যাওয়ার দিকে থাকিয়ে আছি হঠাৎ রিয়ার হাসিতে হুশ ফিরলো
–হাসছিস কেন
–তুই না বলিস ও তোকে ভালোবাসে না তাহলে তাপ্পর মারলো কোন অধিকারে, অন্য কাউকে বিয়ে করবি শুনে এতো রেগে গেলো কেন
–জানিনা চল আমার সাথে
–কোথায়
–চল
রিয়া কে নিয়ে ডক্টর এর চেম্বারে আসলাম
–চাচ্চু আসবো
–হ্যা আসো মা
–চাচ্চু….
–আমি জানি তুমি কেন এসেছ কিন্তু এখনো যে সময় হয়নি সবকিছু বলার
–হুম
–সময় হলে আমিই সব বলবো তোমার আসতে হবে না
–ঠিক আছে আসি তাহলে
–ওকে
চেম্বার থেকে বেড়িয়ে আসলাম, হাটছি আর ভাবছি কে এমন কিডনি দিয়েছে যে আমাকে এখন বলা যাবে না
–কিরে তমা কি ভাবছিস
–ভাবছি নিপা কে কিডনি কে দিলো
–যেই দেয় তাতে তোর কি নিপা সুস্থ হইছে এখন বিয়েটা করে নে
–রিয়া তুইও
–হুম আমিও
–চুপ থাক তো কথা বলতে ভালো লাগছে না
–ওকে
বাসায় চলে আসলাম অজতা হসপিটালে থেকে কি করবো আমার তো আর ওখানে প্রয়োজন নেই, নিপা ভালো হয়ে গেছে শ্রাবন খুশি আর কি চাই,
বারান্দায় বসে আছি হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো হাতে নিয়ে দেখি শ্রাবন রিসিভ করলাম না কেটে দিলাম, বার বার কল দিচ্ছে আর আমি কেটে দিচ্ছি শেষে বিরক্ত হয়ে রিসিভ করলাম
–কি হইছে এভাবে ফোন দিচ্ছ কেন
–সরি
–কেন
–তাপ্পর দেওয়ার জন্য
–তাপ্পর দিয়েছ ভালো করেছ রাগ করিনি খুন করে ফেললে আরো বেশি খুশি হতাম
–কি বলছ এসব
–যা শুনেছ তাই
–এমন করছ কেন বুঝতেছি না
–তোমার নিপা সুস্থ হয়ে গেছে আমাকে আর ফোন না দিলে খুশি হবো
–ঠিক আছে আর ফোন দিব না বাসা তো পাশাপাশি সামনে গিয়ে কথা বলবো
–বাসায়ও আসবা না
–আমার শশুড়ের বাসায় আমি যাবো তাতে তোমার কি
–দুর
ফোন কেটে দিলাম এসব ফাজলামো ভালো লাগছে না ইচ্ছে হচ্ছে দূরে কোথাও চলে যাই
–তমা (ডাক শুনে থাকালাম আব্বু এসেছেন)
–আসো আব্বু
–কি করছিস
–এইতো বসে আছি
–কথা ছিল
–বল
–শ্রাবন বিয়ের ব্যাপারে কথা বলছিল….
–আব্বু তুমি তো সব জানো
–হ্যা কিন্তু শ্রাবন তো তোকে বিয়ে করতে চাইছে
–অন্য মেয়েকে কষ্ট দিয়ে ও আমাকে বিয়ে করবে এতে কি আমি সুখি হবো
–তুই কি….
–আমি ওকে বিয়ে করতে চাচ্ছি নাহ খুব শীঘ্রই এখান থেকে আমরা চলে যাবো
–ঠিক আছে
আব্বু চলে গেলেন চোখ দুইটা বন্ধ করে বসে আছি হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো, হাতে নিয়ে দেখি ডক্টর রিসিভ করলাম
–হ্যালো
–হসপিটালে আসতে পারবে মা
–কেন চাচ্চু
–জানতে চেয়েছিলে না কে কিডনি দিয়েছে
–হ্যা
–যে ছেলেটি কিডনি দিয়েছে সে তোমার সাথে কথা বলতে চায়
–ছেলে, কোন ছেলে…?
–বলেছিলাম না পৃথিবীতে স্বার্থহীন ভালোবাসার চেয়ে বড় কিছুই নেই, এই ছেলেও স্বার্থহীন ভাবে ভালোবাসে
–কাকে ভালোবাসে আর এই ছেলেই বা কে
–তুমি আস কথা বল সব জানতে পারবে
–ঠিক আছে আসছি
ফোন রেখে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বাসা থেকে বেরুলাম, রিক্সায় বসে আছি আর ডক্টর এর বলা কথাগুলো ভাবছি, কে এই ছেলে কাকে ভালোবাসে এতোই স্বার্থহীন ভাবে ভালোবাসে যে কিডনি দিয়ে দিল, মাথায় অনেক গুলো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো কে এই ছেলে….?
চলবে?