জীবনেরডায়েরি২
পার্ট: ১৮
ডক্টর এর চেম্বারে বসে আছি কিন্তু ডক্টর আসার নাম নেই একজন নার্স বললো অপারেশন করছেন নাকি ডক্টর, বসে বসে ডক্টর এর জন্য অপেক্ষা করছি আর একটু পর কি হতে চলেছে আনমনে হয়ে ভাবছি হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো হাতে নিয়ে দেখি শ্রাবন, রিসিভ করলাম
–হ্যালো
–তমা তুমি কোথায়
–বলেছিলাম না অন্য জায়গায় যাবো চলে এসেছি
–আমাকে না বলে
–গত রাতে তো বলেছি
–হুম নিপা কে দেখতে আসবা না
–দুদিন পর তো ফিরে আসবো তখন নাহয় দেখবো
–আর যদি খারাপ কিছু হয়ে যায়
–কিছু হবে না ভয় পেয়ো না আল্লাহর উপর ভরসা রাখো
–হুম
–আচ্ছা এখন রাখি কাজ আছে
–ওকে
তাড়াতাড়ি ফোনটা রেখে দিলাম গলাটা কেমন যেন ধরে আসছে আর একটু কথা বললে হয়তো চোখ থেকে পানি পরতো কিন্তু আমার কান্না যে ওদের বুঝতে দেওয়া যাবে না
অনেকক্ষণ ধরে বসে আছি আর ডক্টর এর জন্য অপেক্ষা করছি কিন্তু কোনো খুঁজ নেই বুঝতে পারছি না ডক্টর তো বলেছিল সকাল ১০টায় অপারেশন করবে আর তো বেশি সময় নেই
প্রায় ১০টা বেজে গেছে কিন্তু ডক্টর আসছে না কি করবো বুঝতেছি না হঠাৎ আবার ফোনটা বেজে উঠলো, আবার শ্রাবন ফোন দিয়েছে
–হ্যালো
–তমা একটু পর নিপার অপারেশন হবে দোয়া করো
–অপারেশন হবে মানে
–চমকে উঠছ কেন জানই তো আজ ওর অপারেশন হবে
–কিন্তু কিডনি কোথায় পেলে
–আজব এমন সব কথা বলছ মনে হচ্ছে তুমি কিছুই জাননা, ডক্টরই তো কিডনি পেয়েছে
–কিন্তু
–তমা তুমি ঠিক আছ তো
–হ্যা আচ্ছা এখন রাখি
–ওকে
এইটা কি হলো বুঝতে পারছি না কিডনি দেওয়ার কথা আমার অথচ অপারেশন হয়ে যাচ্ছে তাহলে কিডনি দিল কে, মাথায় কিছু আসছে না কে কিডনি দিতে পারে নাকি কিডনি কিনতে পাওয়া গেছে কিন্তু এক রাতে পাওয়া কিভাবে সম্ভব যেখানে শ্রাবন তিনদিন খুঁজেও পায়নি, ডক্টরও তো আমাকে কিছু জানায়নি
প্রায় এক ঘন্টা হয়ে গেলো বসে বসে এসব ভাবছি কিন্তু কোনো কিছুর আগাগোড়া খুঁজে পাচ্ছি না মাথায় অনেক প্রশ্ন কিডনি কে দিলো যদি কিনতে পাওয়া যায় তাহলে এক রাতে কিভাবে সম্ভব….?
ফোনের রিংটোনে হুশ ফিরলো শ্রাবন ফোন দিয়েছে রিসিভ করলাম
–হ্যালো
–অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে
–আলহামদুলিল্লাহ্
–আচ্ছা তখন তুমি উল্টা পাল্টা বলছিলে কেন
–আসলে কাজে আছি তো মাথাটা ঠিক নেই
–বাসায় কবে আসবা
–জানিনা নিপার জ্ঞান ফিরলে জানিয়ো রাখি এখন
–ওকে
কি যে হচ্ছে মাথায় কিছু ঢুকছে না সবকিছু কেমন যেন রহস্যের মতো লাগছে, এতো তাড়াতাড়ি কিডনি পাওয়া গেলো অপারেশনও হয়ে গেলো কিছুই বুঝতে পারছি না
ডক্টর এর চেম্বারে বসে বসে রহস্য খুঁজছি হঠাৎ দেখলাম ডক্টর আসছেন হাসি হাসি মুখ, উনি এসে চেয়ারে বসতেই একসাথে প্রশ্ন করা শুরু করলাম
–চাচ্চু কিডনি কোথায় পেলেন অপারেশন যে হয়ে গেলো, একরাতে সবকিছু কিভাবে সম্ভব আর কিডনি পাওয়া গেছে আমাকে জানাননি কেন
–শান্ত হও একসাথে এতো প্রশ্নের উত্তর দিবো কিভাবে
–ঠিক আছে বলুন
–গতকাল রাতে তোমার সাথে কথা বলে ফোন রাখার পর জানতে পারি কিডনি পাওয়া গেছে তোমাকে জানাইনি ভেবেছি অপারেশন করে তোমাকে সারপ্রাইজ দিবো
–কিন্তু কিডনি দিল কে
–সেটা নাহয় অজানায় থাকুক
–না না চাচ্চু আমি জানতে চাই সবকিছু তে কেমন যেন রহস্য আছে
–হ্যা আছে কিন্তু বলা যাবে না নিষেধ আছে
–কার নিষেধ
–যে কিডনি দিয়েছে
–কিন্তু আমার যে জানাটা প্রয়োজন
–সময় হলে আমিই বলবো
–ঠিক আছে নিপার কি অবস্থা
–৬-৭ঘন্টার মধ্যে জ্ঞান ফিরে আসবে চিন্তা করো না
–হুম
–একটা কথা জানতো মা পৃথিবীতে স্বার্থহীন ভালোবাসার চেয়ে বড় আর কিছু নেই আমার মতে অন্যরা কে কি ভাবে জানিনা
–হঠাৎ এই কথা
–সময় হলে সবই বুঝতে পারবে
–হুম
–আমি বলি কি তুমি বরং নিপার কেবিনে যাও সবাই আছে ওখানে
–কিন্তু ওরা তো জানে আমি দুদিনের কাজে শহরের বাইরে আছি
–তাহলে আরো কিছুক্ষণ পর যাও আর বলবে কাজ শেষ নিপা কে দেখার জন্য চলে এসেছ
–ঠিক আছে
হসপিটালেই সারাটা সকাল কাটিয়ে দিলাম, রহস্য খুঁজতে খুঁজতেই সকালটা কেটে গেলো, এর মধ্যে শ্রাবন ফোন করে জানিয়েছে নিপার জ্ঞান ফিরেছে, বিকেলের দিকে রিয়া কে ফোন করে নিপার কেবিনে আসতে বললাম আমিও গেলাম ওখানে, কেবিনের সামনে নিপার আম্মু আর বোন বসা ভাবছি শ্রাবন কোথায় তখনি নিপার বোন এসে বললো শ্রাবন কেবিনের ভিতরে, ভাবছি যাবো কি যাবোনা ওদের ডিস্টার্ব করা কি ঠিক হবে এসব ভেবে আর ভিতরে গেলাম না বাইরে বসে রইলাম, কিছুক্ষণ পর রিয়া চলে আসলো
–কিরে তমা বাইরে বসে আছিস যে
–ভিতরে শ্রাবন
–তো কি হইছে
–না মানে ওদের ডিস্টার্ব করা কি ঠিক হবে
–হঠাৎ গেলেই তো বুঝা যাবে শ্রাবন কাকে ভালোবাসে
–মানে
–তোর এতো বুঝতে হবে না চল আমার সাথে
আমার হাত ধরে টানতে টানতে রুমের ভিতরে নিয়ে গেলো নিপা শুয়ে আছে শ্রাবন পাশে চেয়ারে বসা, আমাকে দেখেই শ্রাবন চমকে উঠলো হয়তো আমার এভাবে হুট করে আসাটা ঠিক হয়নি, নিপা তো আমাকে চিনে না এখন কি বলবে আর এই অবস্থায় নিপা কে সত্যিটা কিভাবে বলবে এসব ভেবেই হয়তো চমকে উঠেছে…..
চলবে?